কষ্টকর মৃত্যু

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

হ্যালো,

বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করছি ভাল আছেন। আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। গবাদি পশুর মৃত্যু নিয়ে একটি বেদনা দায়ক গল্প।

IMG20231111120958.jpg

কিছুদিন আগে গ্রাম বাংলা লাম্পি নামক গবাদি পশুদের ভাইরাস জনিত একটি রোগ হয়েছিল । আর লাম্পি রোগে গ্রামের পর গ্রামের সবার ঘরে ঘরেই এই গবাদি পশু গরুর মৃত্যু হয়েছে অনেক। আমাদের বাড়িতেও একটু একটি শখের গরু আছে। নাম তার খুকুমনি বলতে পারেন শখ করেই পোষায় এই গরু। খুব আদরের গরুটি। যত্নের কোন অভাব নেই। পাশের বাড়ির ফুল মিয়া কাকা এই গরুটির সেবা যত্ন করে থাকেন। মাঠ থেকে কচি ঘাস এনে দেন। কখনো বা কিনে এনে দেন ঘাস। খড়,গুড়া,ভুষি খায় গরুটি।আস্তে আস্তে গরুটি অনেক বড় হয়ে গেল। একসময় সে মা হতে চলছিল। বাড়িতে কেউ ছিলনা আমি গোয়ালে কয়েল লাগাতে গিয়ে দেখি গরুটি অসুস্থ এই অসুস্থ কোন রোগের কারণে নয় বরং নতুন মা হওয়ার জন্য । পাশের বাসার ভাবিকে ডাকলাম উনি এসে ডেলিভারি করালেন। উনি এলাকার সবার গরুর ডেলিভারি করিয়ে থাকেন। পশু ডাক্তারের মতোই অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। যথা সময়ে গরুটি মা হলো এবং একটি খুব সুন্দর ফুটফুটে বাছুরের জন্ম দিলো।বাছুরটি খুব শক্তিশালী ছিল জন্ম নেয়ার একটু পরেই যেন মায়ের দুধ খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো।বারবার উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছে এবং পড়ে যাচ্ছে ওর মা ও ব্যস্ত হয়ে বাছুরকে আদর করতে লাগলো। আমাকে তো কাছে ঘেষতেই দিচ্ছিল না। আমিও ভয়ে যাচ্ছিলাম না।

PhotoCollage_1699634088579.jpg

ভালোই চলছিল মা গরু এবং বাছুর গরুর খুনসুটি। হঠাৎ গরুটির খাওয়ার রুচি কমে গেল। একদম খেতে চাইছিল না। দুদিন পর পুরো শরীর লাম্পি নামক ভাইরাসে ভরে গেল। আসলে ভিতরে ভিতরে অসুস্থ অনুভব হচ্ছিল জন্যই খাচ্ছিল না। পশু ডাক্তার দেখানো হল।ডাক্তার এসে ছোট বাছুর দেখে ঘাবড়ে গেলেন। প্রসূতি মা এই অবস্থায় যদি হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যায় কিংবা ইনজেকশন তাহলে গরুর বাছুর দুধ পাবে না গরুর দুধ নাকি বসে যাবে। এমত অবস্থায় উনি কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। বলে দিলেন এগুলো দিয়ে যদি সুস্থ না হয় তখন যেন ওনাকে ফোন করি।বাছুর কে দিলেন এন্টিডোর যাতে করে ভাইরাস আক্রমণ করতে না পারে ছোট বাছুর ভাইরাস আক্রমণ করলে বাঁচানো সম্ভব হবে না। কিন্তু ওর মায়ের দিন দিন অবনতি হয়ে যাচ্ছিল বাধ্য হয়ে আবার ফোন করা হলো পশু ডাক্তার কে। তিনি এসে এবার হাই পাওয়ারের সব ঔষধ ইনজেকশন দিলেন। আর বাছুরকে উঠানা দুধ খাওয়াতে বললেন। ওর মায়ের অবস্থা আশঙ্কা জনক ছিল উঠতেই পারত না পায়ে প্রচন্ড ব্যথা ছিল। তারপর আস্তে আস্তে
মা গরুটি গেরে ওঠে। কিন্তু এবার বাছুর আক্রান্ত হয়ে যায় সে মায়ের দুধ খেতে পারছিল না ব্যথায়। হাঁটতে পারছিল না। ধরে ধরে খাওয়াতে হয়েছিল। দাঁড়াতে পারছিল না জন্য। মা গরুটির দুধ ছেকে নিয়ে ফিডারে ভরিয়ে খাওয়ানো হত বাচ্চাদের মত। ফিডারও এক সময় টানতে পারছিল না ব্যথায়। ঔষধের কাপে ভরিয়ে দুধ খাওয়ানো হতো তাকে। ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঔষধ খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো হতো।

PhotoCollage_1699634763637.jpg

আর এই দুধ ঔষধ ও স্যালাইন খাওয়াতে পারদর্শী ছিল পাশের বাড়ির ভাবি। ভাবিকে সাহায্য করতেন দিদি।যিনি গরুর ডেলিভারি করিয়েছিলেন। এসব কাজে অনেক পারদর্শী তিনি। কিন্তু না কিছুতেই কিছু হচ্ছে না ঔষধ অনেক খাওয়ানো হচ্ছে কোন উন্নতি নেই। দিন দিন অবনতি। বাছুরটির নাম ছিলো খোকাবাবু, আদরের নাম।ওর মায়ের নাম খুকু মনি তাই মায়ের সাথে মিল রেখে নাম রাখা হয়েছিল খোকাবাবু। প্রানো চঞ্চল খোকাবাবু। দিন দিন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। ঔষধ কাজ করছে না এমন অবস্থা। মা মা করে ডাকত।দাঁড়াতে পারত না পাশে গিয়ে বাড়ির কোনো সদস্য বসলে চুপ হয়ে যেত। এখানে মুমূর্ষ কোন ছবি ব্যাবহার করিনি।আমি খোকা বাবুর কাছে গিয়ে বসতাম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম। শুধু কান্না করত। খোকাবাবুর কান্না দেখে বুকটা ফেটে যেত। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রর্থনা করতাম।হয় তুমি খোকাবাবুর রোগ থেকে মুক্তি দাও নইলে তাতে চিরমুক্তি দাও।ওর কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা ছিলো না।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে অঝোরে কান্না করতো।বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে থাকতো।সে হয় তো বুঝতে পেরেছিলো শেষ সময় ওর ঘনিয়ে এসেছে।

PhotoCollage_1699635282356.jpg

অবশেষে সৃষ্টি কর্তা খোকাবাবুকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিলেন😭।সকালে যখন শুনলাম খোকাবাবু আর নেই একটুও কষ্ট পাইনি কারণ সে কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে। মনে মনে বলছিলাম যাক ভালো হয়েছে কষ্ট থেকে মুক্তি মিলেছে। আসলে কিছু কিছু মৃত্যুর কামনা করতে হয় ভালোর জন্য। যেমনটি করেছি আমি খোকা বাবুর জন্য। প্রাণচঞ্চল একটি বাছুর সে কিভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল কষ্ট পাচ্ছিল তাই তার মুক্তির জন্য বাধ্য হয়েই মৃত্যু কামনা করেছিলাম। খোকাবাবুর কথা মনে পড়লেই দীর্ঘশ্বাস। আসে ওর মাকে দেখলেই খোকাবাবুর কথা মনে পড়ে। কিছুদিন ওর মা ওকে খুব খুজছিল হাম্মা হাম্মা বলে ডাকছি। হয়তো তার সন্তানের নাম ধরেই ডাকছিল আমরা তা বুঝতে পারি না। ভালো থাকুক খোকাবাবু পরপারে। এই কামনাই করি সর্বদা। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
পোস্ট তৈরি@shapladatta
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনগাইবান্ধা, বাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



Sort:  
 11 months ago 

সত্যিই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
মা গরু সেরে উঠলেও বাচ্চা গরুটা আর সেরে উঠলো না। পুরো ব্যাপারটা পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। আমরাও দোয়া করি বাচ্চা গরুটা পরপারে ভালো থাকুক।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া হৃদয়বিদারক ঘটনা।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 67494.82
ETH 2610.78
USDT 1.00
SBD 2.72