বাইক এক্সিডেন্ট ডিপ্রেশনে মা🥲

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লগ বাসী বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই।আশা করছি ভালো আছেন। আমিও পরম করুনা ময়ের কৃপায় ও আপনাদের আশির্বাদে ভালো আছি সুস্থ আছি।আজ আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব একটি বাইক দূর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যু ডিপ্রেশনে।

IMG_20240615_175731.jpg

তো চলুন দেখা যাক ঘটনাটি।

আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে তবে আমি যে পথে স্কুলে যেতাম সেই রাস্তার ধারেই খুব সুন্দর সাজানো গোছানো একটি পরিবারের বসবাস। শিক্ষীত ও রুচিসম্মত বাড়ির সব কটি সদস্য। কাজল ও ওনার স্ত্রী দুজনেই কলেজের টিচার।কাজলের বাবা, মা দুজনেই স্কুলের টিচার ছিলেন। মা মারা গেছেন অনেক আগেই বাবা বেঁচে আছেন। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো পরিপাটি সংসার ওনাদের। বাড়িটি যেন ঝকঝক তকতক করে সব সময়। বাড়ি ভর্তি ফল ও ফুলের গাছ।নানান রকমের বাহারি ফুল দেখলে নজর কারবে যে কোন মানুষের। ওনাদের বাড়ির সামন দিয়ে গেলে একনজরে বাড়ির দিতে তাকাতেই হবে এরকম সুন্দর সিনেমার মতো বাড়িটি।
কাজল ও ওনার স্ত্রীর কোল আলো করে এসেছে দুটি পুত্র সন্তান। দুটি ছেলে সন্তান। যে কেউ দেখলে ভাববে জমজ সন্তান। আসলে দুজন জমজ নয় পিঠাপিঠি দুই ভাই।সারাক্ষণ দুষ্ট মিষ্টি দুষ্টমীতে মেনে থাকতো।দাদুর সাথে সময় কাটাতো বেশি সময় বাগান বাড়িতে বসে।মা, বাবা চাকুরি করতেন জন্য তাদেরকে দেখাশুনা করার জন্য এক মহিলা ছিলেন তিনি সব কিছু করতেন বাচ্চাদের। কখনো মায়ের সাথে যেতেন স্কুলে।বাবার বাইকে উঠে ঘুরতেন। অনেক সুখী পরিবার ছিলো তাদের।
আস্তে আস্তে ছেলে দুটো বড়ো হয়ে গেলো। এসএসসি পাশ করেছে দুজন এক সাথেই। পিঠাপিঠি হওয়ার কারণে তারা একই সাথে এসএসসি পাস করেছেন এবং দু'জন গোল্ডেন পেয়েছে এসএসসিতে।বাবা মায়ের তো আনন্দের সীমা নেই।ছেলেদের সাফল্যে তারা ভীষণ খুশি।
ভর্তি করিয়ে ছিলেন কলেজে। ছেলেদের বাইকের প্রতি দূর্বলতা এবং পছন্দ জন্য মা,বাবা একটি ভালো ব্রান্ডের বাইক কিনে দেন ছেলেদের কে।এটাই কাল হয়ে দারায়। তাদের সাজানো গোছানো সুখী পরিবারের জন্য। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে এক ছেলে মারা যায়।মা,বাবা পাগল প্রায়। আমি ঘটনাটা শুনেছি কিছু দিন আগে।
কয়েকদিন আগে আমি গাইবান্ধা গিয়েছিলাম হঠাৎ বলতে শুনি মা একটু চাপো তখনি খেয়াল করলাম যে কলেজের ম্যাডাম। আমাকে অটোতে একটু সরে বসতে বল্লেন ওনিও হয়তো কোথাও যাবেন। খুব সুন্দর মিষ্টি চেহারা ও স্মার্ট ছিলেন কিন্তুু এখন কেমন জানি বিরর্ণ লাগছে।ওনার কলেজে আমার কাকাত বোন পড়ে ওর কাছে শুনেছি ম্যাডাম না কি কারো সাথে কথা বলেন না।ক্লাস নেন তবে ভুলে যান কখন কি পড়া দেন।ক্লাস শেষ না কি বারান্দার এক কোনে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং চোখের জল ফেলেন।
আমিও সেদিন লক্ষ্য করলাম ওনার বেঁচে থাকাটা মনে হয় খুব কষ্টের।চোখের নিচে কালি পড়েছে । চুপচাপ হয়ে গেছে একদমই। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে শুধু ভাবছিলাম আসলে আমরা বাবা,মায়েরা সন্তান কে অন্ধের মতো ভালোবাসি আর ভালোবাসার জন্যই তাদের আশা আকাঙ্খা পছন্দ অপছন্দ গুলোকে প্রধান্য দিয়ে থাকি।ছেলের প্রতি ভালোবাসার জন্য ই তো ভালোবেসে বাইকটি কিনে দিয়েছেন।আর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা যায় এক ছেলে।এখন হয়তো ভাবেন আর কষ্ট পান এই ভেবে যে ইস যদি বাইক না দিতাম তাহলে হয়তো আমার সন্তান টিকে আজ হারাতাম না।কেন কঠোর হলাম না কেন বল্লাম না যে বাইক এখন কিনে দেব না প্রতিষ্ঠিত হয়ে কিনে নিও। আসলে বাবা,মা সন্তানের ভালোবাসায় অন্ধ।
মাঝে মাঝে কাজল নামের ঐ লোকটির সাথেও দেখা হয় রাস্তা ঘাটে।ওনাকে দেখলেই বোঝা যায় কতোটা কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে বেঁচে আছেন মরার মতো।তরতাজা একটি সন্তান নিমিষেই এক্সিডেন্ট করে চোখের সামনে মৃত্যু কিভাবে মেনে নেবেন। যার যায় সেই শুধু বোঝে অন্যরা তো শুধু সহমর্মিতা জানায়।এই কষ্ট মা,বাবার আমৃত্যু। মৃত্যুর পরেও এই কষ্ট থেকে যায়। কথায় আছে সব থেকে কঠিন ও কষ্টের সময় হলো বাবার কাঁধে ছেলের লাশ।
ওনাদের কে যখনি দেখি তখনি আমার বুকের ভীতরটা কেমন একটা মোচর দিয়ে ওঠে।সাজানো গোছানো সুন্দর একটি পরিবার কিভাবে তছনছ হয়ে গেছে ভেবে খুব খারাপ লাগে।সন্তানের বাইক এক্সিডেন্টের কারণে মা আজ ডিপ্রেশনে চলে গেছে।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20240526_180422.jpg

Sort:  
 5 days ago 

খুবই বেদনাদায়ক একটি ঘটনা লিখেছেন আপু আসলে বাবা মায়ের অসতর্কতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ছেলে ম্যাচিউর না হলেও তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে একটা বাইকের চাবি।চাবি তো নয় যেনো তুল দিল নিজের ছেলের হাতে মিত্যুর টিকিট। তার পরিবারের জন্য সমবেদনা এই শোক শেষ হবার নয়।

 5 days ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া। আজকে ঘটনাটি লিখে পোস্ট করলাম একটু পর আমার ভাই ঈদের ছুটিতে আসলো সেও বাইক এক্সিডেন্ট করেছে হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করা 😪।খারাপ লাগছে অনেক।ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

 5 days ago 

বাইক এমন হাজারো যুবকের প্রাণ নিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। খুবই খারাপ লাগলো ঘটনাটি পড়ে। কিছুক্ষণ আগেও আমাদের বাড়ির পাশের একজন মারা গেল বাইক এক্সিডেন্ট করে। একদমই স্পট ডেট । সত্যি আপু এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কঠিন।

 5 days ago 

খুব দুঃখজনক ঘটনা আপু আমার ভাই আজকে ঈদের ছুটিতে বাইক নিয়ে বাড়ি আসার সময় এক্সিডেন্ট করেছে।

 4 days ago 

মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া আর মৃত্যুর ঘন্টা বাজিয়ে দেওয়া সেইম কথা। আমাদের অধিকাংশ ছেলে মেয়ে, বাবা মায়ের কাছে বাহানা করে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য। অনেক সময় বাবা-মা বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল কিনে দেয়। আর তার প্রতিদান হিসেবে পায় সন্তানের মৃত্যু। তাই বাবা মাকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি সতর্কতামূলক এবং শিক্ষনীয় পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 4 days ago 

ঠিক ব'লেছেন ভাইয়া মোটরসাইকেল জিনে দেয়া আর মৃত্যুর ঘন্টা বাজিয়ে দেয়া একই কথা।ধন্যবাদ সাবলীল মন্তব্য করার জন্য।

 3 days ago 

অনেক সময় ছেলে-মেয়েদের জেদের কাছে বাবা-মায়ের সতর্কতা হেরে যায়। অনেক সময় অন্ধ-ভালোবাসার কারনেও এমনটা হয়। সর্বোপরি, এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। আমার চাচা রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। আমি জানি এর অনুভূতি কতটা ভয়ানক। একজন মা হিসাবে নিজ উদরের সন্তানের মৃত্যু মেনে নেয়াটা খুবই বেদনাদায়ক।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 64928.52
ETH 3525.30
USDT 1.00
SBD 2.36