বিভীষিকাময় কাল রাতের স্মরণীয় ঘটনা- @10 শতাংশ শিয়াল মশাই এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

-

২০১৫ সালের জুন মাসের দিকে ঘটনা

IMG_4823.JPG

তখন আমরা কয়েকজন বন্ধু বান্ধব মিলে বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এর রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। পাঁচজন মিলে পড়তাম সেই সুবাদে পদার্থবিজ্ঞান রসায়ন বিজ্ঞান সাধারণ গণিত এবং উচ্চতর গণিত করতে আমাদেরকে সাহায্য করতেন। অন্য চার জন বন্ধুর নাম রিয়াজ , আকিব, মেজবা (মহাবেয়াদব অর্থাৎ সেই লেভেলের শয়তানি), শান।

প্রতিদিনের মতোই আমরা সেদিন আমাদের বাড়ি থেকে আকিব এর বাসায় পড়তে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্যারের একটা দরকারে স্যার কিছুক্ষণ পরে ছুটি দিলেন। ছুটি বাড়াতে আমরা মহাখুশি। এই খুশিতে কাল সাপ হয়ে দাঁড়াবে তখনও বুঝতে পারিনি। তো এরপর আমরা বাড়ি থেকে বের হলাম অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম এরপর বাড়ির গন্তব্যে যাওয়ার সময় আকিবের সাইকেল নিয়ে একটু চালাতে চাইলাম। তখন সাইকেল নিয়ে নতুন নতুন শিখেছি।

বিপদটা এখানেই দাঁড়ালো। বিকেল নিয়ে যাওয়ার সময় একদম শেষ সময়ে রেখে বাড়িতে যাব তখনই শেষ শেষ প্যাডেল করার সময় ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। আর তখনই হঠাৎ করে আমার এক পা হাতের বাম সাইডে রোডের উপর রাখতেই পা পিছলে ড্রেন এর ভিতরে পড়ে যাওয়ায় আমার মাথা ড্রেনের উপরের শিরের সাথে লেগে গেল এবং আমার মাথা ফেটে গেল। মাথায় প্রচন্ড রকমের আঘাত পেলাম এবং সাথে সাথে মাথা থেকে রক্ত বের হওয়া শুরু হলো। প্রথমে অবশ্যই বুঝতে পারিনি পরে কয়েকজন আমাকে বলতে শুরু করল প্রচন্ড রকমের রক্ত বের হচ্ছে।

সেই সময় এর ছবি

imgonline-com-ua-twotoone-i5GgfI2qji.jpg

আসলে তখনও বুঝতে পারিনি যে কতটুকু ফেটে গেছে বা কেটে গেছে। তৎক্ষনাত কয়েকজন আমাকে নিয়ে পাশে একটা মসজিদের ওজুখানা এগিয়ে মাথায় পানি দেওয়া শুরু করলো। এবং আমি নিজেও তখনো বুঝতে পারছিলাম না যে আমার কতটুকু ফেটে গেছে বা রক্ত বের হচ্ছে। মাথায় পানি দেওয়ার পর হালকা একটু ভালো অনুভুতি পাচ্ছিলাম।

রাত প্রায় 10:00 টার কাছাকাছি ছিল। এজন্য মসজিদের বাহিরে হালকা ছোট একটি লাইট দেয়া ছিল। একটু অন্ধকারের মতো ছিল। তো আমি একজনকে বললাম না আমি কানে খুব ব্যথা করছে দেখতে কানে কি হয়েছে? তো এর মধ্যে একজন বন্ধু মোবাইলের লাইট টা বের করে কানের কাছে দেখার সাথে আশ্চর্য হয়ে বলল দোস্ত তোর কানের অর্ধেক খানি কেটে গেছে এবং মাথা থেকে অর্ধেকখানি কানের অংশ ঝুলে আছে।

এটা শোনার সাথে সাথেই আমার হৃদস্পন্দন আগের থেকে একটু হালকা বেড়ে গেল। খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। সেদিন বাসায় কেউ ছিল না। সবাই বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। তারপর ওখান থেকে বের হয়ে এসে বাজারের ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিলাম। নেওয়ার পাওয়ার আমার অবশ্য দেখলাম কান এক্সাইড থেকে রক্ত বের হওয়া বন্ধ হচ্ছে না। তোর সাথে সাথে এক বন্ধু বলল চল হাসপাতালে চল। তারপর সেখান থেকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল রাত্রের প্রায় 11 টার পর সেখানে পৌঁছেছিলাম। এটাই আমার প্রথম কোন হাসপাতালে যাওয়া ছিল নিজের চিকিৎসার জন্য। বিপদ যখন আসতে থাকে তখন চারদিক থেকে বিপদ আসতে থাকে।

যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেখি বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এবং বৃষ্টি আসার মত পরিবেশ তৈরি হয়ে যাচ্ছিল। যেটা ভেবেছিলাম সেটাই সত্যি হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি চলে আসলো এবং ইলেকট্রিসিটির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেল। তো এরপর সেখান কার ডাক্তারকে ডাকা হল ।

ডাক্তার কাম দেখার সাথে সাথেই বললো সেলাই করতে হবে। সেলাই না করলেই কাম মাথার অংশের সাথে জোড়া লাগা কঠিন হয়ে যাবে। এই বৃষ্টির মধ্যে ডাক্তার বলল সুতা লাগবে, ওষুধ লাগবে। ওই পরিবেশের মধ্যে বন্ধু বাইরে গেল এবং সব কিছুর ব্যবস্থা করেছিল।

আরেকটি বিষয় বলে রাখি আমরা 5 জন ছিলাম এবং আমাদের সামনে একটি মৃত লাশ ছিল। একদিকে আবহাওয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং অন্যদিকে মৃত মানুষের লাশ। পরিবেশটা একেবারেই অন্যরকম ছিল যা আসলেই ওই রকম পরিস্থিতি না হলে বোঝা যাবে না। তো একবার আমার অপারেশন শুরু হলো। ডাক্তার এত তাড়াতাড়ি করছিল যে আমি প্রচন্ড কষ্ট হয়েছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

যাই হোক আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে সেদিন অপারেশন সম্পন্ন হয়েছিল। তার কিছুক্ষণ পর বাসার দিকে যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু বৃষ্টি ছাড়ছিল না বাহিরে। রাতের প্রায় একটা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছিল এবং একটার পর টিপ টিপ বৃষ্টি বন্ধ হচ্ছিল না।

তো এরকম পরিস্থিতিতে আমার অন্য ফ্রেন্ডরা বলল এর মধ্যে বেরিয়ে যেতে হবে এই বৃষ্টি মনে হচ্ছে থামবে না। তুই একবার বের হয়ে রিকশা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে চলে আসলাম। তারপর ওরা সবাই আমাকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে নিজের নিজের বাসায় গিয়েছিল।

ছাত্রজীবনে বন্ধুবান্ধব সহপাঠী সবাই থাকবে। এর মধ্যে কিছু কিছু বন্ধুবান্ধব থাকে যাদের অবদান কখনো বলে শেষ করা যায় না। তেমনি আমার জীবনে সেরকম কিছু বন্ধুবান্ধব ছেলেও দাদার কথা আজকে শেয়ার করলাম। আসলে বন্ধুত্বের প্রতিদান একজন আরেকজনের কখনো দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এজন্য আমাদের উচিত প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করা এবং ছোট ছোট বিষয় সেক্রিফাইস করা।

জীবনের সামনের দিনগুলোতে এই দিনটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে যা কখনো ভোলার মত নয়।

পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে মাফ করবেন।

IMG_4724.JPG

Sort:  
 3 years ago 

আসলেই আপনার বন্ধুরা পাশে না থাকলে হয়তো বা বিষয়টি আরো বেশি খারাপ হতে পারতো। আর যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন অন্ধকার তার মধ্যে একটি লাশ সত্যি আসলে খুব ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার যাই হোক সব মিলিয়ে আল্লাহ আপনাকে ভালো রেখেছেন এটাই অনেক। এর চাইতেও খারাপ কিছু হতে পারতো কিন্তু তা যেহেতু হয় নাই তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ।

 3 years ago 

আসলে বন্ধু ছাড়া চলা যায় না। ছাত্র জীবনের বেশিরভাগ সময় পড়াশোনার সাথে বন্ধুদের সাথে সময় বেশি কাটে। হ্যাঁ ঠিক বলেছেন রাতে যে অবস্থা হয়েছিল তার থেকেও আরো কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হইতে পারতাম। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা।

 3 years ago 

বন্ধুরা শুধু সুখের সময় কিংবা দুঃখের সময় পাশে থাকে না। তারা বিপদ আপদ থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষণে আমাদের পাশে থাকে। তবে আপনার বিষয়টি শুনে খুব খারাপ লাগলো। এত ভয়াবহ একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।

 3 years ago 

হ্যাঁ অবশ্যই ঠিক বলেছেন। ওই রাতের অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকবে। কমেন্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

বন্ধুরা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তা বোঝা যায় বিপদের সম্মুখীন হলে। খুব বড় একটা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। বন্ধুরা না থাকলে আপনার জন্য সময়টা আরো প্রতিকূল হতে পারত। আপনার বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই।

 3 years ago 

নাহিদ ভাই আপনি ঠিক বলেছেন।ওই দিন ওরা না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হইতে পারত।আল্লাহ র রহমতে বেচে গিয়েছিলাম।আপনার কমেনট করার জন্ন শুভ কামনা।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.25
JST 0.039
BTC 97542.75
ETH 3458.83
USDT 1.00
SBD 3.15