হায় বন্ধুরা,আমি @Shafiq bd আজ ভিন্ন একটি ট্রপিক নিয়ে হাজির হয়েছি,,,

কেমন আছেন, আশা রাখি "আমার বাংলা ব্লগ " এর সকল সদস্য ভালো ও সুস্থ আছেন।মানুষ বড় বিচিত্র এক জিনিস, যার ভিতর লুকিয়ে আছে অনেক গুন,দোষ যা দূর থেকে দেখা বুঝা মুশকিল। অনেক মানুষের সাথে দির্ঘ দিন চললে ও বুঝা যায় না মানুষ টির ভিতর কি আছে কিন্তু হটাৎ যখন ঐ মানুষ টি এমন অদ্ভুত আচরণ করে বসে তখন তার সম্পর্কে আশেপাশের মানুষ অবগত হয় বা ধারনা আসে,,,
আজ সে রকম ই একটি ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো,,,,,

সন্ধ্যা গনিয়ে আসছে, রাস্তায় অনেক জ্যাম অটোর, গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে মনে হচ্ছে কর্মজীবি মানুষ গুলো কার আগে কে যাবে এমন প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে,কখন বাড়ি পৌঁছাবে সেটাই যেন প্রতিটা কর্মজীবি মানুষের চেহারায় ফুটে উঠেছে,, তো আমি দির্ঘক্ষন অটোতে জ্যামে আটকে আছি একটি জনবহুল বাস স্টানের কাছাকাছি,, ভাবতেছি নামবো নেমে হাটবো না কি আরো কিছুক্ষণ বসবো এমন ভাবতেছি,ঠিক এমন অবস্থায় চোখ পরলো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বয়স্ক বোরকা পরা মহিলার দিকে,,,,কোথায় হতে যেন একটু একটু করে কান্নার গোংগানীর শব্দ ভেসে আসছে,,তো আমি নেমে কাছে গেলাম জিজ্ঞেস করলাম আপনি কাঁদছেন কেন?তো আমি কয়েকবার প্রশ্ন করার পর উনি উত্তর দিলেন বাবা আমি খুপ বিপদে পরেছি,,, কারো কাছে বলতে ও পারছিনা আবার নিজের ভিতর রাখতে ও পারছিনা তাই এই কান্না ছাড়া আর কি ই বা করার আছে বলো,,বয়স আনুমানিক ৭০ হবে মে বি,,,তখন আমি বললাম আপনি নির্ভয়ে বলুন কি হয়েছে,,,আস্থার পরশ পেয়ে তখন যেন উনার কান্না আরো ভেড়ে গেল,,,তখন আমি বললাম শান্ত হয়ে বলুন কি হয়েছে? কেন এই রাস্তার ধারে আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করতেছেন,,, আসলে মানুষ যখন কোন বিপদে বা দূর্যোগ মুহূর্তে কারো কাছে আাশার বানী বা সাহায্যের চিহ্ন দেখতো পায় তখন তার ভিতর বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগে,চরম বিতৃষ্ণার মাঝে ও একটু আশার আলো খুঁজে পায়,,,তো মহিলার ও তেমন আকুলতা প্রকাশ পাচ্ছে উনার ব্যবহারে,,,তো মহিলার কথায় ও বুঝা যাচ্ছে শিক্ষিত ও ভদ্র ফেমিলীর সদস্য,,যাক বহুবার বলার পর উনার কান্না থামলো এখন বলুন কি হয়েছে? কেন কাঁদছেন? ভদ্র মহিলা বললো বাবা,আমি আজ অসহায় এই রাস্তার পাশে পরে আছি আমার ছেলেরা আমাকে ফেলে চলে গেছে,😥😥আমাকে আজ তাদের কাছে বোঝা মনে হয়, স্বামী মারা যাবার পর আমি আমার সন্তানদের উপর ভরসা করে সুন্দর ভাবে আমার সংসার চলে আসছিলো কিন্তু ৩ছেলের বিয়ে পর ই নেমে আসলো অশান্তির ছায়া 😥কত কষ্ট করে ছেলেদের পড়ালেখা করেয়েছি এই তার নমুনা,, তখন ভদ্র মহিলার মুখ দিয়ে কথা যেন বের হচ্ছে না
এমন যেন বুঝা যাচ্ছে, আমি তখন বললাম চলুন একটি জায়গায় বসে আপনার কথা গুলো শুনি আসুন,,,
আসলে মা তো মা ই, দশ দশ দিন পেটে ভিতর গর্বে ধারণ করে তাকে লালন পালন করেছে আর সেই সন্তান যদি এমন আচরণ করে তখন কার কাছে বলবে এই দুঃখ। 😥😥
যাক তো ভদ্র মহিলা কে আমি একটি হোটেলে নিয়ে গেলাম এবং কি খাবেন উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,,উনি রাজি হচ্ছিল না,, আমি একপ্রকার জোর করে বললাম খান আমি আপনার ছেলের মতো, খান যা মন চায় নিশ্চয়ই অনেকক্ষন হয়েছে আপনি কিছু খাননী,তো উনাকে জোর করে ভাত খাওয়ালাম দেখে মনে হচ্ছিল পেটে প্রচুর খিদা,,, তো উনি খাওয়া শেষ করে আমার হাতটি ধরে বললো, বাবা পৃথিবীতে বিশ্বাস শব্দ টি আজ দিরে দিরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে,, স্বার্থের কাছে মায়া,মমতা,মানুষ আজ মূল্যহীন,,স্বার্থ মানুষ কে পশু বানিয়ে দেয়,, আজ তেমনই হয়েছে আমার সন্তানেরা,,
আমার ৩ সন্তানের মধ্যে ২সন্তান সরকারি চাকরি করে,,একজন খুলনা থাকে আরেক জন ঢাকার বাড্ডায় থাকে শশুরের বাড়িতে,ওদের অনেক কষ্ট করে হেটে বাড়ি বাড়ি টিউশনি করে পড়ালেখা করিয়েছি আর ছোট ছেলে কে তেমন পড়া লেখা করাইতে পারি নাই,, এমন ও দিন গেছে আমাদের সংসারে দু'বেলা দুমুঠো খাবারের টাকা যোগার করতে হিমসিম খেতে হতো,, তবুও ছেলেদের পড়ালেখা বন্ধ করিনি, ভেবেছি ছেলেরা পড়ালেখা করে বড় হবে তখন মানুষ হবে আর আমাদের দু্ঃখ থাকবেনা,,,ওদের বাবা মারা যাবার পর পরের বছর ই বড় ছেলে কে বিয়ে করাই, আমাদের পরিচিত আত্মীয় মাধ্যমে,, সংসার ভালো ই চলছিল,, এর ঠিক ২বছর পর দ্বিতীয় ছেলে কে বিয়ে করাই কারণ তখন আমি টাইফয়েড জরে আক্রান্ত হয়ে খুবই অসুস্থ হয়ে পরি,, বড় ছেলের ঘরে আলো করে আসে সুন্দর ফুটফুটে একটি সন্তান,,, তখন ছোট ছেলে সবে মাত্র একটি কিন্ডারগার্টেনে চাকরি নিছে আমাদের এলাকা থেকে দূরে ডেমরাতে,,,আমার স্বামী মারা যাবার পর তেমন কোন সম্পত্তি রেখে যায় নি নিজ বসত বাড়ি আর ঐ গ্রামের ছোট জমি টি ছাড়া,, তো দিন দিন ঘরের বৌয়ের কেমন জানি বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে সংসারে,,আমাদের বাড়ির সব কাজ এক সময় আমি ই করতাম রান্না বান্না সহ,এখন বয়সের তাড়নায় চাইলেই আগের মতো পারিনা,তো একদিন বড় বউ মা আমাকে বলে আম্মা আপনি তো সারাদিন বসেই থাকেন, তো একটু একটু সংসারের কাজ কাম করলেই পারেন,,তাহলে তো একটু এগোয়, আমরা সারাদিন সব কাজ করি,,,তখন আমি ভাবলাম ওদের একটু সহযোগিতা করলে তো পারি তখনও বুঝিনি যে ওদের মনের উদেশ্য,,, এর মধ্যে ছোট ছেলে ঐ কিন্ডারগার্টেনের একটি মেয়ের সাথে প্রেম করে ঐখানে ই থাকে সংসার করে,,, মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়,, আমার বড় ছেলের নাতনী টি আমাকে খুব মায়া করে,,ওর মা বারণ করা সত্ত্বেও আমাকে দুধ দিয়ে যায়, ফল দিয়ে যায় আমি না নিতে চাইলেও,,, একদিন দেখে ফেলে ওর মা, আমার নাতনী টি কে প্রচুর মারে,,
আর বলতে থাকে আমি নাকি ওকে শিখিয়ে দিছি এসব আনতে,,,এই নিয়ে আমাদের বউ-শাশুরীর মাঝে ঝগড়া হয় সাথে ছোট টা ও যোগ দেয়, 😥
রাতে ছেলেরা আসে তাদের সব বলি কিন্তু ছেলেরা বউদের পক্ষ নিয়ে বলে চুপ থাকলেই পারো তখন আমার অনেক কষ্ট হয়,,
এভাবেই চলতে থাকলো অনেক দিন, এর মাঝে ই বুকে চাপা কষ্টে ব্যাথা বাসা বেঁধেছে ধুকু ধুকু কাশি,,
দিন কে দিন যেন বউদের চোখের কাঁটায় পরিনত হচ্ছি,,,আর বেড়ে চলেছে বউদের দূর্ব্যবহার,,এরই মাঝে একদিন ছোট ছেলে আসে আমায় দেখতে,,ছোট ছেলে কে বলি সব ঘটনা ও বলে মা কি করবা একটু মানিয়ে নেও,,তখন মনে হচ্ছিল আমি আজ ওদের কাছো মূল্যহীন,,কোন গুরুত্ব নেই আমার,আমি আর ওর সাথে বেশি কথা না বলে চলে যেতে বলি,,,ও চলে যায়,, রাতে শুরু হয় বুকের যন্ত্রণা,,, প্রচুন্ড কাশি হচ্ছিল তখন,,,, রাতে ছেলেরা আসতে চাইলেও বউরা আসতে দিলনা বরং উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে ঘরে আটকে রাখলো,,,এভাবেই আমার দেহের ভিতরে নানান রোগের বাসা বাঁধতে শুরু করলো,,,ছেলেরা চলে যাবার পর ওরা আমাকে দিয়ে ঘরের কাজ করাইতো চায় আমি অসুস্থতার কারণে করি না বলে দিন দিন আরো ব্যবহার নিচের দিকে নামতে শুরু করলো,,,,এর ই মাঝে নাতনীর স্কুলের অভিভাবকদের সাইন দিতে হবে বলে দরখাস্তে কবে যেন আমার বাড়ি আর জমি টুকুও লিখে নিছে জানি না,,,ভদ্র মহিলার কষ্টের😢কথা যেন শেষ হচ্ছিল না,,,
আমি তখন আনমনে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু শুনতেই ছিলাম,,, তার পর ভদ্র মহিলা একদিন ছেলেদের ডেকে তার সমস্ত অভিযোগ ছেলেদের কাছে বললো কিন্তু কোন লাভ হলো না উল্টো ছেলেরা বললো আমারা সারাদিন অফিস করে,কাজ করে আসি এসব শোনার সময় নেই, তুমি চুপ করে থাকলেই পারো,,,আধুনিক যুগ মানিয়ে নিলেই পারো,,ততক্ষণে ১ঘন্টা পার হয়ে গেছে হোটেলে বসেই,,,এবার আমি উনাকে শান্ত দিয়ে বিদায় নিতে চাইতেই দুচোখ বেয়ে অস্রু গরগর করে বয়ে যাচ্ছে, তখন আমি বললাম ঠিক আছে বলুন আপনার বাসায় কোথায় আমি না হয় গাড়ি তে উঠিয়ে দেই,,,বৃদ্ধ মহিলা তখন বললো আমি কিভাবে বাসায় যাবো আমার যে যাবার জায়গায় নেই কারণ আমাকো আমার সন্তানরা নারায়ণগঞ্জ পপুলারে ডাক্তার দেখিয়ে আর বিভিন্ন টেস্ট এর বিল দেখে এখানে এনে ফেলে চলে গেছে এই বলে বৃদ্ধ মহিলার অস্রু ছেড়ে দিছে😭,,,
তখন আমার আমার দুচোখ কান্না চলে আসলো চোখের কোন ঘেঁষে 😢,,,,এর জন্য ই একজন মা পৃথিবীতে সন্তানদের পৃথিবীতে আনে?এর জন্য ই কি বাবা-মা রা বৃদ্ধ বয়সে একটু সুখে থাকবে স্বপ্ন দেখে?যাক,,,আমি আর বেশি কথা না বলে যেভাবেই হোক বুঝিয়ে, সুঝিয়ে মদন পুরের একটি বাসে উঠিয়ে দিয়ে ভাড়া দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলে দিয়েছি যেন উনা মদনপুর বাস স্টানে নামিয়ে দেয় তাহলে উনি বাড়ি যেতে পারবে কারণ উনার বাড়ি মদনপুর,,,,,,

প্রিয় বন্ধুরা,,,,,,
আসলে এই বিষয় বড় আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে,,,
বর্তমানে শিক্ষিত সমাজে আজ বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে দেখবেন বেশিরভাগ শিক্ষিত ও বড় লোকদের ই আত্মীয় স্বজন,আজ শিক্ষার অবক্ষয়ে সমাজ ধংষের ধার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে,,,

তাই,,,,,,,,
আমাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষি করে তুলতে হবে,তবে প্রকৃত শিক্ষা যদি না পায় সে শিক্ষার মূল্য অর্থহীন,,,আমার সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, তাদের মায়া মমতা, ভালবাসা কি জিনিস শিখাতে হবে,,,

আসলে লিখতে গিয়ে যে এতো বড় হবে ভাবিনি,
তাই,,
প্রিয় পাঠক বৃন্ত লিখতে গিয়ে যদি কোন ভুল -ভ্রান্তি শব্দ চয়নে হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন কারণ আমি আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য,আপনাদেরই আপনজন,আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করুন এবং উৎসাহ দিন,

,, আর যারা এতো সময় নিয়ে এই ঘটনা টি পড়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অফুরন্ত ভালবাসা ❤️❤️
তো আজ আর নয় অন্য দিন, অন্য কোন সময়, অন্য কোন ট্রপিক নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে ততক্ষণ আপনারা ভালো ও সুস্থ থাকুন,,,
আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন,,,

বেঁচে থাকুক"আমার বাংলা ব্লগ "❤️❤️
বেঁচে আমাদের ভালবাসা ❤️

Sort:  
 3 years ago (edited)

খুবই মর্মান্তিক একটি ব্যাপার। দিন দিন আমাদের সমাজের মানুষেরা পশুতে পরিণত হচ্ছে। যে সন্তান তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার সাথে এমন ব্যবহার করে তাদেরকে মানুষ বললে মানবতার অপমান হয়। যে মা জন্ম দেয়া থেকে শুরু করে এত কষ্ট করে তাদেরকে লালন পালন করে বড় করল স্ত্রীর প্ররোচনায় সেই মায়ের সাথে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করলো। এ ধরনের মানুষ এখন সমাজে ভরে গিয়েছে। আসলে আমাদের দেশে মেয়েদের শত্রু মেয়েরাই। ছেলের বউরা যদি শাশুড়ির সাথে জঘন্য আচরণ না করতো তাহলে এই সমস্যার সূত্রপাত হতো না। যাহোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। এরপর থেকে চেষ্টা করবেন কপিরাইট ফ্রি একটি ছবি অন্তত ব্যবহার করতে। আর আপনি যত দ্রুত পারেন মার্কডাউনের ব্যবহারটা শিখে নিন। তাহলে আপনার পোষ্টের কোয়ালিটি আরো অনেক সুন্দর হবে। আর নিজের তোলা ছবি হলে তো আরো ভালো হয়।

অসংখ্য ধন্যবাদ এভাবে আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করার জন্য ❤️❤️❤️

 3 years ago (edited)

আমার বাংলা ব্লগের ডিসকর্ড গ্রুপের steemit-discord-linkup এই চ্যালেনটিতে নিজের স্টিম আইডি এবং ডিসকর্ড আইডির লিংক শেয়ার করো, তাহলে সেখানে তোমাকে ভেরিফাই করা হবে, ফলে ডিসকর্ড গ্রুপের সকলের সাথে কথা বলে অনেক কিছু সহজেই শেখা যাবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.12
JST 0.026
BTC 60313.79
ETH 2889.34
USDT 1.00
SBD 2.47