আলোকোজ্জ্বল স্বর্ণালী সন্ধ্যায়,,,

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


আসসালামু আলাইকুম/আদাব


♦শিশির ভেজা স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা সবাইকে। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি। তবে এই মুহূর্তে আমি পাবনায় অবস্থান করছি।

IMG_20221230_073645.jpg


বন্ধুরা আমার ব্লগে আজ আমি সুন্দর একটি স্বর্ণালী সন্ধ্যার কোমল অনুভূতি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

IMG_20221230_074200.jpg


বন্ধুরা গতকাল 29 ডিসেম্বর, উত্তরণ পাবনার আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে আসার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলাম ভোর ছয়টায়। চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন।শীতের প্রকোপে যেন থরথর কাঁপছিলাম।কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা।এই কুয়াশাকে ভেদ করে চলে এলাম স্টেশনে। যথানিয়মে ট্রেন আসলো এবং আমি উঠে বসলাম।প্রচন্ড শীতে কাঁপতে ছিলাম অনেক।গতকাল ভোর বেলা কিংবা সারাদিনে ঈশ্বরদীর কোন ট্রেন ছিলনা নীলফামারী থেকে।তাই রাজশাহীর ট্রেনে করে এসে আব্দুলপুর নেমে গেলাম।সেখানে প্রায় 2 ঘন্টা ওয়েট করে এরপর ঈশ্বরদীর একটি লোকাক ট্রেন আসে।সেই ট্রেনে করে ঈশ্বরদী পর্যন্ত আসলাম।তারপর ঈশ্বরদী থেকে সিএনজি করে পাবনা চলে আসলাম।পাবনায় সিএনজি স্টানে সব কবি বন্ধুরা আমাকে স্বাগত জানালেন। ওপার বাংলা থেকে প্রায় 10 জন কবি-সাহিত্যিকরা এসেছেন।সেই দিদিদের সাথে আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে পাবনার ডাকবাংলোতে।


IMG_20221230_073813.jpg

IMG_20221230_073753.jpg


রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম।কয়েকজন কবি বন্ধু মিলে একসাথে খেলাম। খেয়ে আমরা সবাই মিলে পাবনার জেলা পরিষদ হল রুমে প্রবেশ করলাম।এবং আমরা একটি রেলিতে অংশগ্রহণ করলাম।রেলি শেষে প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, শুরু করতে করতে প্রায় ছয়টা বেজে গিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে আমার ভীষণ খারাপ লাগতেছিল।প্রচন্ড রকমের মাথা ঝিমঝিম করতে ছিল।বুকের বাম পাশটা কেমন যেন অস্থির লাগতেছিল।পুরো হল জুড়ে এদিক সেদিক হাটাহাটি করছি। বিভিন্ন সিটে বসছি। অনেকের সাথে কথা বলতেছি। কিন্তু কিছুই ভালো লাগছিলো না। আসলে এরকমটা হচ্ছিল শিপু চলে যাওয়ার পর থেকেই।


IMG_20221230_074045.jpg


পরে আমার এক কবি আপু খুবই প্রিয় ঠিক মায়ের মত।তিনি আমার প্রবলেমটা একটু বোঝার চেষ্টা করেছিলেন।এবং তিনি সাইডে ডেকে আমাকে বলছিলেন সাথী তোমার কি খুব খারাপ লাগতেছে। এত ছটফট করছো নিশ্চয়ই তোমায় শরীর এবং মন দুটোই খারাপ। তখন আমি মৃদু স্বরে বলছিলাম আপু শরীরটা কেমন যেন খারাপ লাগছে বুঝতে পারছি না এমন লাগছে কেন।তখন আপু আমাকে নিয়ে হলের বাইরে চলে গেল।এবং বলল চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি তোমার ভালো লাগবে।আমি বললাম আপু এই শীতের সন্ধ্যায় দুজন মিলে কোথায় যাব।তিনি বললেন আমি যেখানে নিয়ে যাব আমার সাথে চলো। এরপর আমরা একটা রিকশায় করে খোলা হাওয়ার মধ্যে দিয়ে,পাবনা শহর থেকে একটু দূরে, খুবই চমৎকার একটি রিসোর্ট।চারিদিকে শুধু আলোকসজ্জা ঝিলমিল করছে।এত ধরনের আলোকসজ্জা দেখে মুহূর্তেই মনটা ভাল হয়ে গেল।এরপর তিনি আমাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন।এবং ভেতরে গিয়ে চাওমিন আর কফি অর্ডার করলেন।আর এই ফাঁকে তিনি আমাকে রিসোর্টটি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন।বিশ্বাস করুন আমার মুহূর্তেই মনটা ভীষণ ভাল হয়ে গেল।এরপর আমরা একটি পুকুর ধারে বসে দুজন মিলে কফি খেতে খেতে হয়ে গেল বেশ কিছু কবিতা।কফি আড্ডায় কবিতা দারুন ব্যাপার তাইনা।এরপর আপু নানা রকম কথা বলে আমাকে একটু বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করলেন।আমারও বেশ ভালো লাগতেছিল কিন্তু তারপরেও কেন যেন একটি শূন্যতা কাজ করতেছিল।ক্ষণে ক্ষণেবুকের ভেতরটা হাহাকার করছিল। তবে আপু অনেক বিচক্ষণ তাই বুঝতে পারছিল আমার বিষয়গুলো।এরপর তিনি আমার কয়েকটি ফটো তুলে দিলেন।পাবনা আমি বহুবার এসেছি কিন্তু কখনো এই রিসোর্টটিতে আসা হয়নি।এই রিসোর্টের পরিবেশটা যথেষ্ট নিরিবিলি।


IMG_20221230_073558.jpg


একদিকে প্রোগ্রাম চলছে। আর অন্যদিকে আমরা দুই বোন মিলে একটু একান্তে কিছু সময় কাটালাম।শীতের এই স্বর্ণালী সন্ধ্যায় এই আলোকোজ্জ্বল নদী দ্বীপে কাটানো সন্ধ্যাটি দারুণভাবে উপভোগ করলাম।এখানে বাঁশ দিয়ে তৈরি চেয়ার টেবিল গুলো দেখতে কিন্তু খুবই ভালো লাগছিল।2012 সালে এই রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।এই রিসোর্টে সত্যি গতকাল সন্ধ্যা টা আমায় যেন সুস্থতার পরশ ছুঁয়ে গেল দিল।।অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় শিমুল আপুকে।আমাকে এত সুন্দর একটি আলোকোজ্জ্বল সন্ধ্যা উপহার দেয়ার জন্য।আপু অনেক সুন্দর সুন্দর কাব্য এবং জোকস আমাকে শোনাচ্ছিলেন এবং হাসানোর চেষ্টা করছিলেন সত্যি সত্যি আমি প্রাণ খুলে হেসে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ।এরপর আমরা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম।এবং পুনরায় এসে প্রগ্রামে অ্যাটেন্ড করলাম তখন প্রোগ্রাম শেষের দিকে।ওপার বাংলার সকল কবি-সাহিত্যিকরা মিলে আবারো একটি চমৎকার চা-চক্র হয়ে গেল।তার ফাঁকে আমি একটু খানি হ্যাংআউটে জয়েন করেছিলাম।


IMG20221229213139.jpg


বৃহস্পতিবারেই হ্যাংআউট আমি কখনই মিস করতে চাইনা।এদিকে চা আড্ডা দিচ্ছিলাম আর কানে এয়ারফোন লাগিয়ে হ্যাংআউটে উপস্থিত ছিলাম।সবমিলিয়ে খুবই চমৎকার একটি প্রাণবন্ত সন্ধ্যা উপহার দিলেন আমাকে আমার প্রিয় শিমুল আপু।দুজনের কাটানো এই একান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যাটির কাটানো কিছু সময় সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে মনের মনিকোঠায়।

IMG20221229213105.jpg


রিসোর্টের কিছু ফটোগ্রাফি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি,,,,


IMG_20221230_092059.jpg

IMG_20221230_092023.jpg

IMG_20221230_091956.jpg

IMG_20221230_091903.jpg

IMG_20221230_091828.jpg

IMG_20221230_091801.jpg


নদী দ্বীপ রিসোর্টে কাটানো সন্ধ্যাটি সত্যি আলোকোজ্জ্বল ছিল। এবং মনটা অনেক ভরে গিয়েছিল। আপনারা পাবনা আসলে এই রিসোর্টে ঘুরে যাবেন। প্রত্যাশা রাখলাম। নিশ্চয়ই আপনাদের ভালো লাগবে,,, তো বন্ধুরা আজকের মত এখানেই। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আর শীতের পোশাক পরে সাবধানে থাকবেন।কোনভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লাগে।কারণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত হচ্ছে সুস্থতা। তাই সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানেই।
টা টা,,,

dropshadow_1629707620635.jpg

আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।




New_Benner_ABB.png


🌼ধন্যবাদ🌼

Sort:  
 2 years ago 

ওপার বাংলা থেকে আসা কবি সাহিত্যিকদের সাথে পাবনার ডাকবাংলোতে খুব সুন্দর সময় পার করছেন নিশ্চয়ই। রিসোর্ট টি আসলেই খুব সুন্দর। আলোকসজ্জা গুলো দারুন লাগছে দেখতে। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভালো লাগলো আপু। দিনগুলো সুন্দরভাবে উপভোগ করেন এই কামনা করি। শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

সাহিত্যিকদের মিলনমেলা এ যেন অন্যরকম অনুভূতি আপু! আপনার সৌভাগ্য ওপার বাংলার কবি সাহিত্যিকদের সাথেও দেখা করতে পারলেন। ডাক বাংলোতো সময়টা ভালোই কেটেছে। শিমুল আপু ঠিকই বুঝে গিয়েছিল আপনার মনটা ভালো নেই! নিমিষেই মনটা ভালো করে দিলেন 🌼

 2 years ago 

সাহিত্যিকদের এই মিলন মেলায় অংশগ্রহণ করার পুরো বিষয়টি আমাদের সাথে ভাগ করে নিলেন আপু। সত্যিই পোস্টটি পড়ছিলাম আর বেশ ভালো লাগছিলো। শিপুর জন্য খারাপ লাগা থেকে শরীর খারাপ লাগলেও একজন আপু আপনার মন ভালো করার চেষ্টা করেছেন। সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো ব্যাপারটি দেখে যে অন্য একজন আপু আপনার সমস্যাটি বুঝতে পেরেছে এবং আপনাকে স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করেছে। আর নদী দ্বিপ রিসোর্টটি সত্যি অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে। বিশেষ করে আলোকসজ্জা চোখ ধাঁধানো ছিল। এর মধ্যেই আমাদের হ্যাং আউটে অংশগ্রহণ করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এই চমৎকার অনুভূতি মেশানো পোস্টটি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 2 years ago 

আপনি অনেক কষ্ট করে নীলফামারী থেকে পাবনা এসেছেন। অনেক যানবাহন পরিবর্তন করতে হয়েছে আপনাকে। আপনার কবি বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে নিশ্চয়ই অনেক আনন্দ হয়েছিল। হঠাৎ শরীর খারাপ হয়েছে শুনে আমারও খারাপ লাগছে। আশা করছি এখন সুস্থ্য আছেন। রিসর্টের ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

ওপার বাংলার কবি সাহিত্যিকদের সাথে খুব ভালো সময় কেটেছে আপনার। তার ফাঁকে আবার বোনোর সাথে একান্তে ঘুরাঘুরি করেছেন। খুব ভালো লাগলো আপু আপনার কাটানো মূহুর্ত গুলো তুলে ধরেছেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58430.93
ETH 2504.31
USDT 1.00
SBD 2.39