☆꧁::.শিপুর জন্মদিনের অনুভুতি .::. ꧂☆
hr>
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সবসময় ভালো থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।
☆꧁::.শিপুর জন্মদিনের অনুভুতি .::. ꧂☆
26 মে আমার কোল জুড়ে এসেছিল শিপু। নীলফামারী মাতৃসদনে সকাল 11 টার দিকে ওর জন্ম হয়। যেদিন শিপু পৃথিবীতে আসবে সেদিন আমার পাশে তেমন কেউ ছিলনা। সিয়ামের দাদি তখন ছিল ঈশ্বরদী নিজের ভাইয়ের বাসায়। এদিকে সিয়াম ও ছোট ছিল।তাই বাসায় তেমন কেউ ছিলনা। কিন্তু 25 তারিখ আমার বড় বোন এসেছিল আমার বাড়িতে। তখন তারা গ্রামে থাকতো। আমি প্রায় জোর করে ওকে আটকিয়ে ছিলাম। এবং সেদিন রাতে ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। যাই হোক রাতে খাওয়া দাওয়া করে অনেক রাত পর্যন্ত দুবোন মিলে গল্প করেছি। এরপর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঠিক ভোরবেলা ঘুমের ঘোরে হঠাৎ করে আমার পেটে প্রচন্ড পেইন হচ্ছিল। এবং আমি আমার বোন কি সেটা বলি। আমাদের প্রতিবেশী এক আপা মাতৃসদনে চাকুরী করেন। আমার বড় বোন সেই আপাকে ডেকে আনলেন। তিনি আমাকে দেখে মাতৃসদনের যেতে বললেন। আমার বড় বোনের কোলে তখন শ্যামা।হঠাৎ করে কি করবো দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। আমার বড় বোন আমার মাকে খবর দিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু আমি চট করে আমার বড় বোনকে একটা কসম দিয়ে বসি। ওকে বললাম আপা তুই এখন কাউকে কিছু বলবি না আমার কসম লাগে।
কারণ ঠিক সেই সময় টা আমার বাবা ছিল ভীষণ অসুস্থ। এবং আমার মা আমার বাবাকে নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকতেন। আবার সংসারের সব কাজ কর্ম আমার মা একাই করতেন। তাই বাবা মাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চাই নি বলেই আপাকে কসম দিয়েছিলাম। এদিকে আমি আগে থেকেই সব কাপড় গুছিয়ে রেখে ছিলাম।আমার প্রয়োজনীয় যা যা লাগবে সব কিছু গুছিয়ে রেখে ছিলাম।আমাদের পাশের বাড়ির আমার এক ননদ ছিল ওর নাম রোকসানা।আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো।প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা নিয়ে রোকসানার সাথে চলে গেল মাতৃসদনে।
সেখানে ডাক্তার বলল আজকেই হবে তবে দেরি হবে।
আমরা মাতৃসদনে গিয়েছিলাম সকাল দশটায়। ঠিক সেই সময় যেমন ব্যথা ছিল না।অন্যান্য রোগীদের সাথে আমিও হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম। ঠিক সকাল 10 টা 45 মিনিটে হঠাৎ করে আমার প্রচন্ড পেইন শুরু হলে, আমি কেমন অস্থির হয়ে গিয়েছি। না চিৎকার করে কাঁদি নি।মনে মনে দোয়া ইউনুস করতেছিলাম আর দুই চোখ দিয়ে পানি ঝরতে ছিল।রোকসানা মাথায় তেল দিয়ে দিতে ধরেছে আমি নিষেধ করলাম।আমার প্রচন্ড কষ্ট হওয়া সত্বেও আমি চাইনি আমার জন্য রোকসানার কষ্ট হোক। তবে রোকসানা আমার জন্য অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছিল।আমি মন থেকে ওর কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। যাই হোক কিছুক্ষণ পর যখন সকাল 11 টা ঠিক তখন শিপু চলে আসলো,এই রঙিন ঝলমলে পৃথিবীতে। হাজারো যন্ত্রণায় যখন শিশুর কান্না শুনতে ছিলাম তখন কি যে আনন্দ হচ্ছিল বলে বুঝাতে পারব না। শিপুর ওজন হয়েছিল পৌনে চার কেজি। এত অল্প সময়ে নরমালে সাধারণত কারো বেবি হয় না।ডাক্তার এবং নার্স স্টাফ বলাবলি করতে ছিল। না তেমন কোন ওষুধপত্র লাগেনি।যখন আমাকে এবং শিপুকে বেডে নেয়া হলো।তখন অন্যান্য রোগীরা অবাক হয়ে গিয়েছিল।কিছুক্ষণ আগে এই মেয়েটা হাটাহাটি করছিল আর এখন ওর বাচ্চা হল এটা ভাবতেই অবাক লাগছে।এবং অনেকেই অনুমান করতে পারেননি যে আমার গর্ভে বাচ্চা ছিল। শিপু দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছিল।
বেডে আসার পর এক এক করে আমার বাবা-মা বোন ভাই সবাই চলে আসলো মাতৃ সদনে।এসে সবাই জাস্ট অবাক হল।আমার পাশে শিপুকে দেখে। আমার আব্বা অনেক অসুস্থ অবস্থায় মাতৃসদনে গিয়েছিল।শিপুর মুখটা দেখে কি যে খুশি কি যে আনন্দ সেটা আর ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। হাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছিল আল্লাহ আমার মেয়েটাকে একটা রাজপুত্র দিয়েছে। আব্বার আনন্দ দেখে মনে হয়েছিল সব অসুখ ভালো হয়ে গেল এক নিমেষে। বেলা তিনটার পর বাসায় চলে আসলাম।প্রতিবেশীরা দলবেঁধে দেখতে আসলো শিপুকে। এবং সবাই বলাবলি করতে লাগল কি করে বাচ্চা হলো আমরা কেউ টেরই পেলাম না। বন্ধুরা আমার দুই ছেলে নরমাল ভাবেই হয়েছে।মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে।এবং খুবই সীমিত খরচে।এভাবেই শিপু পৃথিবীতে এসেছিল 26 মে।তবে শিপুর সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হত। এত বেশি ফর্সা আর মিষ্টি চেহারা।হাসলে যা সুন্দর লাগতো।আমিতো অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতাম ওর দিকে।
যাইহোক প্রতিবছর জন্মদিন ওর পালন করি সবাই মিলে কেককেটে ধুমধামে। কিন্তু এ বছর ওর জন্মদিন পালন করা হলো না আগের মত করে। তবে ২৫ তারিখ রাত থেকেই আমি বেশ ছটফট করছিলাম।রাত বারোটার পর ওকে উইশ করেছি। এবছর আমার ভাই এবং বোনের ছেলে মেয়েরা তেমন কেউ বাসায় নেই।সিয়াম নেই।শিপুর বন্ধুরাও সবাই ঢাকায়।তাছাড়া ভার্সিটি এক্সাম নিয়ে সবাই লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত। তাইতো হঠাৎ করে মাথায় একটি আইডিয়া চলে আসলো।ওকে নিয়ে আমাদের নীলফামারীতে বাণিজ্যমেলা লেগেছে সেখানে গেলাম।জন্মদিনের উপহার হিসেবে টি-শার্ট কিনে দিলাম।নিতে চায়নি জোর করেই দিলাম।এরপর একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে মজা করে দুজন মিলে ছোট একটা কেক কেটে মজা করে খেলাম। এবং ওর জন্য বাসায় খুবই সুন্দর করে মুরগি রান্না করেছিলাম।বাসায় এসে আবারো মজা করে খেলাম মা ছেলে মিলে।সিয়ামকে অনেক বেশি মিস করেছি।ওর এবারের জন্মদিনটা ঠিক এভাবেই পালিত হল।আপনারা সকলে দোয়া করবেন শিপু যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে।
দুজন মিলে মেলায় ঘোরাঘুরি করে বেশ ইঞ্জয় করলাম।তবে বেশিক্ষণ থাকিনি। কারণ আগামী ২৯ তারিখে রাজশাহী ভার্সিটির এক্সাম হবে। তাই 28 তারিখ ওকে নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হব ইনশাআল্লাহ।শিপুর জন্মদিনের এলোমেলো অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে, ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা সকলের জন্য।
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
প্রথমে জানাই আপু আপনার ছেলের জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন শুভ জন্মদিন। প্রতিবছর যেন আপনার ছেলের জীবনে এই দিনটি ফিরে আসে এই দোয়াই করি। আপনার ছেলের জন্মদিনের অনুভূতি পড়ে সত্যি ভালোই লাগলো আপু। আপু আপনি আপনার ছেলের জন্মদিনের উপহার হিসেবে টি-শার্ট কিনে দিয়েছেন জেনে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
অনেক দেরিতে হলেও অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা আপনার প্রতি।♥♥
শিপু ভাইয়াকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। মা ছেলে তাহলে বেশ ইনজয় করেছিলেন নীলফামারী বাণিজ্য মেলাতে গিয়ে এবং উনার জন্মদিন উপলক্ষে আপনি উনাকে একটা টি-শার্ট উপহার দিয়েছিলেন এবং রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুজনে মিলে বেশ ভালোই খাওয়া দাওয়া করেছিলেন। কেক কেটে বেশ মজা করে খেয়েছিলেন মা- ছেলে। সব মিলিয়ে শিপু ভাইয়ার জন্মদিনের অনুভূতিটা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে সম্পূর্ণ টা। দোয়া করি যেন শিপু ভাইয়া মানুষের মত মানুষ হতে পারে এবং জীবনে অনেক ভালো কাজ করে এভাবেই আপনাকে খুশি রাখতে পারে।
মা ছেলে মেলেই হালকা একটু বিনোদন করেছি নীলফামারী শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় গিয়ে।অনেক দেরিতে রিপ্লাই দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।♥♥