বিশেষ প্রেমের কবিতা "খায়রুন্নাহার বলছি"♥♥
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভালো আছি।
"খাইরুন নাহার বলছি"
আমি নাটোরের গুরুদাসপুর
থেকে খাইরুন নাহার বলছি,,
বর্তমান সময়ের চাঞ্চল্যকর খবর।
সমস্ত মিডিয়া জুড়ে আজ আমি ভাইরাল।
কিন্তু এমন কি হওয়ার কথা ছিল??
আজ আমি তোমাদের সকলের কাছে
কিছু কথা বলে যেতে চাই,,
আশাকরি সকলেই মনোযোগ সহকারে শুনবেন।
আজ থেকে প্রায় ঊনিশ বছর আগে
আমার দাম্পত্য জীবন শুরু হয়েছিল।
আমারি সহপাঠী র সাথে।
কিন্তু তখন সে বেকার ছিল।কোন এক সময় সে অটোরিকশা চালিয়েছে এটাও ঠিক।
এরপর সে একটি কলেজে ঢুকে কিন্তু তখন তার বেতন হয় না।।আমার একার বেতনের টাকা দিয়ে পুরো সংসার চালাতে প্রায় হিমশিম খাচ্ছিলাম।
ইতিমধ্যে আমি দুই সন্তানের জননী।উনিস বছর পর এসে কেন আমার সংসারকে ভাঙবো বলতে পারেন??
কারণ সেই সংসারেও অবহেলা অবজ্ঞা আর শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করা ছাড়া কিছুই মেলেনি আমার।।হাজারো যন্ত্রণা সইতে না পেরে এক পর্যায়ে তাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হলাম।
কারণ তখন মান-অভিমানের ক্ষেত্রটি
বিশাল আকার ধারণ করেছে।
যখন ওর সাথে ডিভোর্স হয়ে গেল,, তখনো কিন্তু আত্মীয়-স্বজন,, সমাজ সংসারের,, নানান রকমের লোক নানা ধরনের মন্তব্য করল আমাকে নিয়ে।।সেই সাথে আমার কলেজের সহকর্মীরাও আমাকে ছেড়ে দিল না।ঊনিশ বছর ধরে যে সংসার তিল তিল করে গড়ে তুললাম, সেই সংসার থেকে চলে আসা আমার কি কষ্টের বিষয় ছিল না।??
অতঃপর নিজের সন্তানদের ছেড়ে থাকা,,
আত্মীয়-স্বজনের কটু কথা,,
বাচ্চাদের মানুষ করার জন্য
সার্বিক খরচের দায়িত্ব,,
এবং একাকিত্বের করুন সুর
আমাকে বিষিয়ে তুলছিল।
নানা রকমের মানসিক দুশ্চিন্তা
আমাকে কুরে কুরে খেত।
ডিপ্রেশন আমার আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা
কেন আমার মনের অবস্থাটা কেউ বুঝতে চায় না।। কেন বোঝার চেষ্টা করে না??
নানা রকম প্রশ্ন আমাকে ঘিরে থাকতো।
বাধ্য হয়ে প্রতি রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতাম
যখন বিষাদে বিষাদে জর্জরিত আমার হৃদয়।
ঠিক তখনই ফেসবুকে পরিচয় হয় "মামুনের"সাথে,,,প্রতিদিন চ্যাটিং হতো,
তার সাথে এক পর্যায়ে নাম্বার নিয়ে কথা হতো। এরপর দেখা হলো,,,আস্তে আস্তে গভীর
প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হই দুজনে।
আমার বিগত জীবনের সমস্ত অতীতের
কথাগুলো খুলে বলি মামুনকে ??
মামুন অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করত, আমার অতীতের
কষ্ট দুঃখ গুলোকে।
ও নতুন করে আমাকে বেঁচে থাকার
স্বপ্ন দেখায়,, নতুন করে জীবনকে
উপভোগ করার জন্য ওর নানা রকম
আয়োজনে মুগ্ধ হই আমি।
আস্তে আস্তে ওর প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থা
আমার বেড়ে যেতে লাগল।।
একসময় মামুনের মিষ্টি কথায় ভুলে দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়ে করবো।
কিন্তু সেখানেও একটি বড় বিষয়
দেয়াল হয়ে সামনে দাঁড়ায়।
আমি একজন সহকারী অধ্যাপিকা।
আমার বয়স চল্লিশ বছর।
কিন্তু মামুনের বয়স মাত্র বাইশ বছর,
এবং সে অন্য আরেকটি কলেজের ছাত্র।
দুজনার এই বয়সের অসমতার জন্য
ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম আমি।
সমাজের মানুষ আমাকে কি বলবে?
সেক্ষেত্রেও মামুন আমাকে সাহস যুগিয়েছে।
অবশেষে গত বছর বারই ডিসেম্বর দুই হাজার একুশ আমরা দুজনে লুকিয়ে বিয়ে করি।
এবং আমাদের সম্পর্কটাকে বৈধ করি।
সেই সাথে দুজনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই
মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত আমরা দুজনে
একসাথে থাকব।সত্যি বলতে মামুনের ব্যবহার ও ভালোবাসায় আমি এতটাই মুগ্ধ যে , মামুন ছাড়া যেন কিছুই ভাবতে পারিনা।
অবশেষে শুরু হলো জীবনের নতুন অধ্যায়।
নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে
আমি খাইরুন নাহার আমার পরিবারকে বলছি,,,
আমার অপরাধ কি বলতে পারো?
আমিতো একটু সুখে শান্তিতে, হাসিমুখে
বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম।
নতুন একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম বাঁচার জন্য,
কেন তোমরা আমার পাশে এলে না
কি অপরাধ আমার,,,আমি কি ব্যভিচার করেছি,
আমি কি পরকীয়া করেছি??
আমি শুধু একটু হাসিমুখে বাঁচতে চেয়েছি -
সেও তো সবার জন্য।
তোমাদের নিন্দা,, কুরুচিপূর্ণ কথা,,
না রকম অপবাদ আমাকে যেনো
তিলে তিলে ক্ষয়ে দিচ্ছিল।।
নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে
আমি খাইরুন নাহার এই সমাজকে বলছি,,,,
আমার অপরাধ কি?
বাঁচতে চেয়েছিলাম বলে শিক্ষিকা হয়ে বিয়ে করেছিলাম অন্য কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে।
এটাই কি ছিলো আমার খুব বড় অপরাধ!
কাঁটার আঘাত সহ্য করা গেলেও
তোমাদের মুখের কথার আঘাত সহ্য
করা আমার পক্ষে সম্ভব হলনা।
অবশেষে সমাজ তথা ভার্চুয়াল বিশেষজ্ঞদের মুখে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতেই ,,
এই অনাকাঙ্খিত পথই বেছে নিলাম ভাবছেন,,
না।তবে নিজেকে বারংবার বলছিলাম
নারী তোমায় শুধু অশান্তি, অন্যায়, অত্যাচার,
অপমান সহ্য করাতেই মানায়।
সুষ্ঠু ভাবে বাঁচার অধিকার তোমার নেই।
আহা সমাজ! আহা ভার্চুয়াল বুলিং
!কি মনে হয় আমার অপরাধের শাস্তি কি
মিলেছে আমার -
প্রশ্ন রেখে গেলাম।
ভাবছো হয়তোবা এই সমাজের কিছু
নোংরা মানুষের জন্য আত্মহত্যা
করতে বাধ্য হলাম,,না।
মানুষের মুখের কথা বিষাক্ত তীরের চেয়ে ও খারাপ, সমাজের মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কথায় আজ ভয়ংকর রুপ নিয়েছে, জানি,,এর জন্য দায়ী এই সমাজ!মানুষের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে ট্রল
করতেই যেন আমরা চির অভ্যস্ত!
"মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারেনা
এইটা বলা অনেক সহজ, কিন্তু অসভ্য সমাজের মানুষের মন্তব্য উপেক্ষা করে বেচে থাকাটা যে এভাবে অসম্ভব হয়ে পরবে আগে বুঝিনি "
আজ আমার এই আত্মহত্যার দায়
এই সমাজ কে'ই নিতে হবে।
এখন বুজলাম, বরং ভালবাসা শুধু
কাছেই টানে না, অনেক দূরেও ঠেলে দেয়।
যেখান থেকে আর ফিরিয়ে আসা সম্ভব হয় না!
যারা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী,
হে আল্লাহ তাদেরকে মাফ করো
এই সমাজ উৎসাহ দিতে জানে না,
পারে না দুঃখির মুখে হাসি ফুঁটাতে,
পারে শুধু কষ্ট দিতে!
আমার এই অসম বিয়েতে সমাজ আমাকে
কি উপহার দিয়ে দিলো?
ধিক্কার জানাই এই সমাজকে,
এই সমাজ-ব্যবস্থাকে।
বয়সের তারতম্য হয়েছে কিন্তু আমরাতো
কোন অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়নি,
তাহলে সমাজ কেন মানতে পারলো না?
সমাজ কারোর ভালো থাকার
দায়িত্ব নিতে পারে না,
সমাজ পারে শুধু কানে বিষ ঢেলে দিতে।
যারা ট্রল করেছেন তারাই এখন
মানবতার ঝুড়ি নিয়ে সমবেদনা
জানাতে শুরু করবেন, এটাই সমাজ!
মানুষের জীবনে ভালবাসা
যেকোনো সময় আসতে পারে। আমি একজন শিক্ষিকা বলে কি আমার জীবনে প্রেম- ভালোবাসা থাকতে পারেনা এটা কোন ধরনের অপরাধ??
নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে
আমি খাইরুন নাহার আমার
অতি প্রিয় মামুনকে বলছি,,,,
আমার অপরাধ কি?
পরিবার, সহকর্মী, সমাজ মিডিয়া
সকলের কথা উপেক্ষা করে শুধু তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছি এটা ছিল আমার চ্যালেন্জ।
তোমার সুন্দর পরিপাটি♥ ভালাোবাসায়
খুঁজে পেয়েছিলাম সুখের ঝর্নাধারা।
খুঁজে পেয়েছিলাম নির্ভরতায় নিমজ্জিত নির্ভরতা।
আমাদের বিয়ের প্রায় আট মাস
ইতিমধ্যে তুমি যখন যা চেয়েছ সবই দিয়েছি,,
তুমি কি নতুন বাইক কিনে দিয়েছি
তোমার বাড়ি ঘর পাকা করে দিয়েছি।
শুধু ও দুজনে সুখে শান্তিতে থাকবো।
কিন্তু হঠাৎ করে তোমার আসল চেহারাটা
আমার চোখের সামনে বহিঃপ্রকাশ হল,,
মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না
যে মুখে শুনেছিলাম,,সেই মুখেই তুমি নেশা করো
যা মেনে নিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল
হঠাৎ আমার প্রতি তোমার উদ্ভট আচরণে
আমি বিস্মিত না হয়ে পারলাম না।।
পৃথিবীর সকলের মন্তব্যকে ঠেকিয়ে
গন্তব্যে পৌঁছাতে চেয়েছিলাম।।
কিন্তু তুমি সেই গন্তব্যের এখানেই ইতি টানলে
সেদিন রাতে তোমার সাথে কি কি হয়েছিল
তা শুধু তুমি আর আমি জানি।
সেসব কথা জাতির সম্মুখে আনতে চাই না।
আচ্ছা আমাকে ছেড়ে থাকতে কি
এখন কমফোর্ট ফিল করছো-
খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
আমাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি
আত্মহত্যা করেছি তা শুধু তুমি খুব ভালো জানো।
"মামুন নাহার" দম্পতি এক প্রেমের ইতিহাসের নাম
শিক্ষিকার সাথে ছাত্রের বিয়ে
সেও এক নতুন ইতিহাস
জীবন দিয়ে হলেও একটি ইতিহাস
রচনা করে গেলাম,, এটাই আমার সার্থকতা।
ভালো থেকো তুমি ভালো থেকো তোমরা।
ক্ষমা করো আমায়,,,,,,
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
আপু অনেক ভাল লাগলো আপনার পরিচিতি পর্বটি পড়ে।
প্রিয় আপু মনি পোস্টটি আগে ভালো ক, রে দেখুন পরে এরপরে মন্তব্য করুন আসলে আপনি যে মন্তব্যটি করেছেন সেটা কি সঠিক হয়েছে কিনা।ধন্যবাদ♥♥
আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে কখন যে দু চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে বুঝতেই পারিনি। আসলে আমরা শুধু মানুষকে অপমান করতে জানি কিন্তু তার দুঃখের ভাগীদার হতে জানিনা। হয়তো সবাই নিজের সুখের কথা চিন্তা করে ভালো থাকতে চায়। কিন্তু এই সমাজ তাকে ভালো থাকতে দেয় না। এমনকি যার উপর ভরসা করে ভালো থাকতে চায় সেই মানুষটিও বদলে যায়।
আপনার মত করে আমিও কবিতাটি লেখার সময় অনেক চোখের পানি ঝড়িয়েছি।।আসলে কোন একটা বিষয় অনুভব এবং উপলব্ধি অনুভূতির সৃষ্টি হয়।♥♥
আপু কবিতাটি ভালো ছিল ৷প্রায় কযেকদিন খবরের কাগজে গুমজন ৷যে মেয়েটা প্রেমের টানে তার ছাত্র কে বিয়ে করলো ৷আজ সেই মেয়েটি মারা গেলো ৷এর পিছনে কি কারন ৷
যাই হোক খুব খারপ লাগলো
পৃথিবীতে যখন মানুষ সবার অত্যাচার সহ্য করতে পারে। ঠিক তখন খুব কাছের মানুষটি যদি এতোটুকু সহায় নাহয় তবে ও কিন্তু আমাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
আপু আপনার লেখা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে পড়ার পর চোখ দিয়ে এমনিতেই জল চলে আসলো।
কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, শুধুমাত্র একটা কথায় বলতে চাই খাইরুন নাহার এর এই পরিস্থিতির জন্য আমাদে ঘৃণিত সমাজ দ্বায়ী।
জি আপু, সত্যি অনেক খারাপ লেগেছে বিষয় টি।
আসলে কি বলবো সেটা বুঝতে পারছি না।
তবে আপনার লেখা অনেক সুন্দর ছিল।
মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ♥
আমি উনাদের ঘটনাটা অনেক ভিডিওতে জেনেছি। তবে সত্যি বলতে কি কোন মানুষ যদি বিপদে পড়ে তাকে উদ্ধার করা মানুষ দুনিয়াতে খুবই কম রয়েছে। অনেকেই ছেলেটাকে খারাপ বলতো তবে আমি একটা কথা বলতে পারি মহিলাটাকে আত্মহত্যার পথ থেকে বাঁচিয়ে ছিল একদিন এই ছেলেটা। মহিলাটার প্রথম স্বামীর সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরে উনি খুবই ডিপ্রেশন এ ভুগতেন। আর সেই থেকে উদ্ধার করেছিল ছেলেটা। আমাদের ঘুনে ধরা সমাজ কিন্তু এমন মহৎ কাজে সহজে হাত বাড়ায় না। বরং যারা ভাল কাজে পা বাড়ায় তাদেরকে বিভিন্নভাবে থামিয়ে দেওয়া হয় বা কটুক্তি করা হয়। যাইহোক মনটা কেমন হবে কি হয়ে যাচ্ছে। আপনি সুন্দরভাবে কবিতার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন পড়ে ভালো লাগলো।
আমি নিজেও বহুবার বিপদে পড়েছি সেদিন দেখেছি।খুব কাছের মানুষ গুলোই সবার আগে মুখ ফিরিয়ে নেয়।♥♥