রহিমা খালার জীবনের গল্প//১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁকের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)


আসসালামু আলাইকুম

সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভালো আছি

বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে একজন রহিমা খালার গল্প নিয়ে এসেছি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।



IMG_20220416_230415.jpg

রহিমা খালাকে সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখেছি,, ডালিতে করে চুরি, ফিতা, দুল বাড়িতে বাড়িতে বিক্রি করতে।সেই সুবাদে আমাদের বাসায় আসত এবং আমাকে বেটি বেটি করে ডাকতো।আমার কোন কিছুর প্রয়োজন না হলেও উনার কাছে অনেক কিছু কিনতাম কারন ওনাকে সহযোগিতা করার মনোভাব ছিল সেই ছোটবেলা থেকে। খুবই রসিক ছিলেন রহিমা খালা। মলিন চেহারার এই রহিমা খালাকে কিছুদিন আগে দেখেছিলাম ডালিতে ককরে বাদাম বিক্রি করতে।বেশ বড় বড় ভাজা বাদাম নেমে আসতো আর সাথে থাকত ঝাল লবণ।

IMG_20220416_230153.jpg

রহিমা খালার 2 মেয়ে 1 ছেলে।স্বামী মারা গেছে প্রায় বহুবছর।ছেলেমেয়েদের একটু খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন তিনি।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে ঠিকই,, বিয়ে হয়েছে ছেলেমেয়েও পেয়েছে তারা।সবাই নিজের নিজের সংসার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে বৃদ্ধ মাকে দেখার কিংবা খবর নেয়ার সময় তাদের হাতে নেই। খানের এখন অনেক বয়স হয়েছে।হাত-পা কাঁপছে অবিরত। এখন তিনি চুরি, ফিতা কিংবা বাদাম কোনটাই আর ডালিতে করে বিক্রি করতে পারে না। এখন খুব অসহায় হয়ে ভিক্ষা করছে আর নিজে রান্না করে খাচ্ছে অনেক কষ্ট করে।ছোট্ট একটা ঘরে একলা বসবাস করেন তিনি।
আজ প্রায় এক বছর পর তিনি আমার বাসায় এসেছেন।লাঠি ধরে বাসায় ঢুকছেন আর বেটি বেটি করে ডাকছেন।তার চেহারাটা এতই রুক্ষ ও শুষ্ক এবং মলিন হয়েছিল যে প্রথমে আমার চিনতে একটু কষ্ট হল। তাছাড়া দাঁত গুলো পড়ে গেছে সব। এবং এর আগে উনাকে আমি লাঠি হাতে দেখিনি কখনো।এরপর থেকে বসলেন আমিও তার পাশে বসলাম।এরপর আমি বললাম খালা একই আপনার অবস্থা।তখন তিনি কেঁদে কেঁদে তার দুঃখের সব কথা আমাকে বলছিলেন।তিনি কোনদিন কখনো কারো কাছে হাত পাততে চাননি। কিন্তু, আজ বাধ্য হয়েছেন।কেঁদে কেঁদে বলছিল ছেলে তার বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বাসায় থাকেন।বড় মেয়ের জামাই প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন।ছোট মেয়ে জামাই সংসার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে মায়ের খবর নেয়ার সময় নেই।সব মিলিয়ে কেঁপে কেঁপে লাঠি ধরে দু একটা বাড়ি বেরিয়ে কিছু ভিক্ষে করে এনে এরপর নিজেই রান্না করে এর পরে তিনি খান অনেকটাই কষ্ট কর।এবং অমানবিক।

IMG_20220416_230226.jpg

যে সন্তানদের বড় করার জন্যও তিনি এত পরিশ্রম করলেন আজ সেই সন্তানদর তার খবর নেয়ার মত সময় নেই। খানার জীবনের গল্প শুনতে শুনতে আমি কেঁদে ফেললাম।এরপর সিয়াম আমাকে কিছু টাকা দিলেন।সেই টাকা পেয়ে অনেক খুশিতে আত্মহারা।মুহূর্তেই মলিন চেহারাটা হাস্যজ্জল হয়ে উঠলো।এবং তিনি সিয়ামের র মাথায় হাত দিয়ে দোয়া দিলেন। এবং সিয়াম যে রুমে বসে কাজ করে সেই রুমে তার পাশে গিয়ে বসলেন কিছুক্ষণ। সামান্য টাকায় তার মুখের হাসিটা দেখে আমার কাছে কোটি টাকার হাসি মনে হয়েছিল।
আসুন আমরা যারা যারা,, মনুষ্যত্ববোধ এতটুকু হলেও উপলব্ধি করি, তারা সবাই এরকম হাজারো খালার দিকে হাত বাড়িয়ে দেই।তাদের পাশে দাঁড়াই তাদের মুখে হাসি ফোটাই।পবিত্র মাহে রমজানের,,, মহিমা ছড়িয়ে দেই মানুষে- মানুষে।জয় হোক মানবতা। মানবতা জেগে উঠুক। ভাল থাকবেন সবাই আজকের মত এখানেই।

IMG20220416115653.jpg

dropshadow_1629707620635.jpg

আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।




3zpz8WQe4SNGWd7TzozjPgq3rggennavDx3XPY35pEAVnpq77jw4XPQMecE5Rz5bgPEz1Z1oZLbNW5N67oF5YfojwgQAL2FYSdD4RtUiqqjd7JEiagRSFFDh1UcFPpKDSFF7LXFTUzQazXN5piXY.png


🌼ধন্যবাদ🌼

Sort:  

সত্যি আপনি বোঝেন গরিব অসহায় মানুষগুলো কত কষ্ট করে।রোজগার করে দুই মুঠো খাবার এর জন্য । এরকম বৃদ্ধ বয়সে মানুষ গুলো দেখলে আরো বেশি কষ্ট হয়। এ রকম করে আমিও কারো পাশে দাঁড়াবো ইনশাআল্লাহ ‌।দোয়া করি আল্লাহ যেন ওনাকে ভালো রাখেন সুস্থ রাখেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য। মানবতা জেগে উঠুক।❤️❤️❤️

 2 years ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্য দেখে অনেক খুশি হলাম এভাবেই মানবতার জয় হোক♥♥

 2 years ago 

মায়েরা অনেক ছেলে মেয়েদেরকে কে খাওয়াতে পরাতে পারে।কিন্তু অনেক গুলো মিলে একটা মাকে খাওয়াগে পরাতে পারে না।এটাই দঃখের বিষয়।আপনার রহিমা খালার জন্য খারাপ লাগলো।আল্লাহ তার সহায়ক হোক।ধন্যবাদ

 2 years ago 

আমি আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি এই ভাবনাটা আমার ভেতরে অনেক বেশি কাজ করে।♥♥

 2 years ago 

সত্যি খুব কষ্ট লাগে আন্টি। যেই বাবা মা এতো পরিশ্রম করে সেই বাবা মায়ের জন্য ছেলে মেয়ের টাকা হয় না। যেই মানুষ কোন দিন কারো কাছে হাত পারে নাই সে আজ হাত পেতে খায় এটাই ভাগ্যের খেলা 😭😭

 2 years ago 

আসলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সম্পর্কে আমরা আগে থেকে কেউ জানি না জানতেও চাই না এবং সেই অনুযায়ী সচেতন ও। হতে পারিনা♥♥

 2 years ago 

আসলেই আপু সুখ কিনতে মনে হয় বেশী থাকার প্রয়োজন নেই, এই মানুষগুলো অল্পতেই খুশি হয়। কেবল বোধয় আমরাই পারি না অল্পতেই খুশি হতে। 😢

 2 years ago 

আমি আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি আমরা কেন যেন এমন ♥♥

 2 years ago 

যে সব সন্তান মা বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে এভাবে অসহায় করে ফেলে চলে যায় তাদের কপালেও আল্লাহ সেইম কাহিনী লিখে রাখে। অনেক খারাপ লাগে এমন বিষয়গুলো যখন নজরে আসে।

 2 years ago 

আমরা একটা কথা বিশ্বাস করি যেমন কর্ম তেমন ফল।কখনো কখনো আবার এর উল্টোটাই দেখেছি অনেক♥♥

 2 years ago 

আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছে। বুঝিনা কোনো মানুষ কিভাবে নিজের বাবা মা কে এভাবে ফেলে দিতে পারে। তারা কি একবার ও ভাবে না, যে মাকে অবহেলা করছে সে মায়ের পায়ের নিচে তার জান্নাত। আল্লাহ যদি কোনোদিন আমাকে তৌফিক দান করে তাহলে মানুষের এই ফেলে দেয়া জান্নাতগুলোর জন্য কিছু একটা করবো।

 2 years ago 

আপু তারা যদি জানতো মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত তাহলে কি মাকে এতটা অসম্মান করত।♥♥

 2 years ago 

আপু আপনি বরাবর অনেক ভালো লিখেন আপনার প্রতিটা লেখা অনেক ভালো লাগে,মাঝে মাঝে কান্না ও চলে আসে তাই আজকে আর গল্পটা পড়লাম না।রহিমা খালাকে নিয়ে লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।শুভ কামনা রইল

 2 years ago 

সত্যটা এভাবে বলার জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা অনেক সময় গল্প না পড়েই মন্তব্য করি এটা মোটেও ঠিক না♥♥

 2 years ago (edited)

আপু আপনার গল্প পড়লে আমার মাঝে মাঝে চোখে পানি আসে, তাই কষ্ট নিতে চাই না

 2 years ago 

হাহাহাহা তাই বুঝি???

 2 years ago (edited)

রহিমা খালার মত দেশে অনেক অসহায় মানুষ আছে যারা অনেক কষ্টে সন্তানদের মানুষ করার পরেও আজ কষ্টে দিন পার করছে। এই মানুষ গুলো চাওয়া পাওয়া কিন্তু বেশি কিছু না , এর সামান্যতে অনেক খুশি হয়। তবে এদের সন্তানদের কপাল খারাপ বলে মনে করি , যে মাকে পেয়ে অবহেলা করে। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর কিন্তু পৃথিবীর মানুষ গুলো বহু রুপি। অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে এবং কারো জীবনের একটু সুখ ভাগ করে দেওয়ার জন্য। দোয়া এবং শুভকামনা রইল আপনার জন্য । এ রকম অসহায় মানুষের প্রতি আপানার ভালোবাসা আমার অহংকার।

 2 years ago 

সত্যিই আপনার সুন্দর মন্তব্য পড়ে আমি গর্ববোধ করছি। অনেক হ্যাপি হয়েছি আপনার মন্তব্য পড়ে।
ধন্যবাদ♥♥

 2 years ago (edited)

সত্যি কি নির্মম পরিহাস। এরকম মানুষদের দেখলে সত্যিই অনেক কষ্ট হয়। সত্যিই এখনকার ছেলেমেয়েরা মা-বাবা কিভাবে তাদেরকে মানুষ করেছে ভুলেই যায়। এটাযে কিভাবে সম্ভব বুঝতে পারি না। এত টাকা-পয়সা থাকা সত্ত্বেও মা-বাবার জন্য তাদের কোন টাকা পয়সা নেই। যে কখনো কারো কাছ থেকে হাত পাতিনি আজকে তাকে হাত পেতে খেতে হচ্ছে। এরকম অসহায় মানুষের প্রতি অনেক ভালোবাসা রইলো।

 2 years ago 

আসলে এই পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য আমরা নারীরা অনেকটা দায়ী। কারণ, আমরা শাশুড়িদের কে ঠিক মায়ের মত মানতে পারিনা খুব সহজে।♥♥

 2 years ago 

আপু,আপনার পোস্ট টি পড়ে চোখে জল এসে গেছে। রহিমা খালার মত হাজারো রহিমা এভাবে সন্তানের অবহেলায় জীবন কাটছে। যেই সন্তানদের জন্য হাজারো কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে তাদেরকে বড় করেছে সেই সন্তানরা বড় হয়ে তার মাকে চিনেনা তার মায়ের খবর রাখে না।আপু, এখন যেন আমাদের সমাজের এইটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছে।আমরা চাই না কোনো মা যেন তার সন্তানের কাছে অবহেলিত হউক। প্রতিটি মা যেমন সন্তানকে ছোটবেলায় আগলে রেখে বড় করেছিল সেই ভাবে বৃদ্ধ বয়সে মাকে যেন সন্তানরা আগলে রাখে।আপু, এমন মানুষকে দান করলে আল্লাহ খুবই খুশি হন।আমরাও আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব এমন মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।।

 2 years ago 

প্রিয় আপু মনি তোমার মন্তব্য পড়ে আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি। আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। এবং সমাজের প্রত্যেকটা সন্তানকে আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে বাবা মাকে কখনো অবহেলা করতে হয়না। কারন মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।♥♥

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 57558.50
ETH 2437.62
USDT 1.00
SBD 2.35