꧁::ননদ ভাবীর খুনসুটি ::. ꧂a
☆꧁::ননদ ভাবীর খুনসুটি ::. ꧂☆
ভাই বোনের সম্পর্কের
চিরদিনের দেয় ছুটি,
কারণ হলো ননদ ভাবির
ঈর্ষা ভরা খুনসুটি।
মধু মাখা স্নেহে ভরা
মিষ্টি ভাই আর বোন,
ভাবীরা কেন ভাঙ্গে তাদের
কোমল দুটি মন।
বাস্তবতার নিরিখে আজ
এই আয়োজন,
এই লেখাটি সবারই আজ
পড়া প্রয়োজন।
বন্ধুরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জেলা নীলফামারীর নীলাঞ্চল থেকে আমি সেলিনা সাথী এক রাশ লাল গোলাপের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আপনাদের সকলকে। আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি ও ভালো আছি।
বন্ধুরা আজ আমি মজার একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। টাইটেল দেখে ইতিমধ্যে আপনারা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। জি বন্ধুরা আপনারা ঠিক ধরেছেন, ননদ ভাবির খুনসুটি প্রায় পরিবারই লেগে আছে। তবে সব পরিবারের সব গল্প তো তুলে আনা সম্ভব হয় না। আজ আমি একটি পরিবারের ননদ ভাবির খুনসুটির গল্প নিয়ে এসেছি। না গল্পটি কোন কাল্পনিক নয়। তবে, চরম বাস্তবতা তুলে আনার চেষ্টা করেছি মাত্র। হয়তো অনেকের সাথে কমন পড়ে যেতে পারে।গল্পের কিছু কিছু অংশ। শুরু করি তাহলে।
꧁::ননদ ভাবীর খুনসুটি ::. ꧂a
একটি সুন্দর ফুটফুটে ফুলের বাগানে দুজন পরিচ্ছন্ন মালি ছিলেন। তাদের স্বপ্ন ছিল ফুলে ফুলে ভরে উঠবে তাদের বাগান। সুসজ্জিত সেই ফুলের ঘ্রাণে তারা তাদের প্রাণ জুড়িয়ে নেবে। মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সেই বাগানে পরপর পাঁচটি ফুল ফুটল। দুটি মেয়ে ফুল আর তিনটি ছেলে ফুল মিলে পরিপূর্ণতা পেল সেই বাগানটি। পরম যত্নে লালন পালন করতে লাগলো সেই ফুলগুলোকে মালি দুজন।কত ঘাত প্রতিঘাত সয়ে শুধুমাত্র ফুলগুলোকে ভালো রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তারা। ইচ্ছে ছিল তাদের ফুলগুলো একদিন আলোকিত ফুলে রূপান্তরিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই নির্মম। এই সমাজের বর্বরতার কাছে হাজারো স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যায় প্রতিদিন। প্রতিক্ষণ প্রতি মিনিট প্রতি সেকেন্ডে।
সমাজের উশৃংখল হায়েনাদের জন্য, মেয়ে ফুল দুটোর বিয়ে হয়ে গেল সেই বাল্যকালে। বড়ফুলটির বিয়ে যেখানে হল সে বেশ সুখী ছিল। কিন্তু ছোট ফুলটির দুঃখ কষ্ট জ্বালা যন্ত্রণার কথা একটি মানুষও বোঝার চেষ্টা করেনি। তবে তারা পাঁচ ভাই বোন খুব বেশি আনন্দঘন সময় কাটিয়েছিল। তাদের দেখে পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন সবাই খুব বেশি প্রশংসা করেছিল।এত সুন্দর ভাই বোনের মেয়ের এর আগে তারা আর কোথাও লক্ষ্য করেনি।খুবই মধুময় মায়াময়, স্নিগ্ধ মুগ্ধতায় ভরা ছিল তারা পাঁচ ভাই বোন।
তবে ছোট বোনটির বিয়ের সময় তার বড় ভাইয়ের সামনে আসতেই পারেনি। কারণ ছোট বোনের বিদায় বেলাটায় সে সহ্য করতে পারবে না বলে। আসলে ভাই বোনের এই নিবিড় শৈশবের সম্পর্ক গুলো অমলিন হয়ে থেকে যায় হৃদয়পটে আজীবন।
যাইহোক ছোট বোনটির কথা বলি। সে তার ছোট ভাই বড় ভাই বোনদের খুব বেশি ভালোবাসতো।এমনকি তাদের বাবা-মাকেও প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো মেয়েটি। কিন্তু শৈশব কাটিয়ে ওঠার আগেই বিয়ে হয়ে গেল। অন্য একটি অজানা অচেনা পরিবারে।আস্তে আস্তে করে তার শ্বশুরবাড়িতেই বেড়ে ওঠা ইতিমধ্যে পরপর তিন ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেল। ভাবিদের সাথেও তার সম্পর্ক খুবই ভালো। এক বান্ধবী কিংবা বোনের মত। কোনদিনও ননদ ভাবির মাঝে কোন কিছু হয়নি। তবে সেতু বন্ধন টা ছিল গভীর থেকে গভীরতর। তারা কোন প্রোগ্রামে একই রকম শাড়ি পরতো কিংবা একই রকম ড্রেস। এমনকি গহনা গুলো একই ধরনের। সবাই দেখে জাস্ট চমকে যেত কেউ বুঝতে পারতো না তারা ননদ ভাবি। ভাবিদের মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেত সেই ছোট ননদটি। বিশ্বাস করুন ননদ- ভাবির এত মধুর সম্পর্ক এই যুগে এতো সহজে আর মেলেনা।
কিন্তু হঠাৎ করে ছোট ভাই ভাবির মধ্যে একটু ঝামেলা শুরু হয়। ভুল বোঝাবুঝি কিম্বা সন্দেহ নামক ব্যাধি থেকে। বেশ কিছুদিন দুজনের মধ্যে বেশ ঝামেলা চলতে থাকে, কিন্তু বাড়ির সপরিবারে সবাই ভাবির পক্ষ নিয়ে ছোট ভাইয়ের সাথে তর্ক করত বোঝানোর চেষ্টা করত। কিন্তু তাদের দুজনের মাঝে এত পরিমান ভুল বুঝাবুঝি হয়ে যায় যে, ছোট ভাই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় তীব্র রাগে ক্ষোপে দুঃখে। এই খবর পেয়ে বোনেরা এসে ছোট ভাবিকে বোঝাতে শুরু করলো। এবং ছোট ভাবিকে এভাবে বলল যে এবার ভাইয়ার পক্ষ নিয়ে একটু কথা বলে, ওকে শান্ত করে, এরপর পরিবেশ শান্ত করতে হবে। নতুবা সবাই তার বিপক্ষে বলতে গেলে যখন তখন একটা দুর্ঘটনা করতে পারে এবং সেরকম হুমকি দিয়েছিল।
এরপর বোনেরা তার ছোট ভাইকে বারবার ফোন দিয়ে অনুরোধ করলে সে আবার বাড়ি ফিরে আসে। সঙ্গে মিষ্টি রসমালাই এগুলো নিয়ে আসে। আবারও বোনদেরকে ফোন দিয়ে আসতে বলল যে আপনাদের ভাই মিষ্টি নিয়ে আসছে এসে খেয়ে যাবেন এবং একটু বুঝিয়ে যাবেন। দুই বোন একসাথে গিয়ে ভাইকে কাছে বসিয়ে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছিল। এবং একটু ওর পক্ষ নিয়েই কথা বলার চেষ্টা করছিল।থমথমে পরিবেশ টা কে শান্ত করার জন্য। ওদের দুজনকে পুনরায় মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই বিষয়টিতে ভাবি মন খারাপ করে বসে। এবং ননদের ভুল বুঝে এবার পরিবারের অন্য দুই ভাই ভাবিদের কানে বিষ ঢেলে দেয়।এমন বিষ ঢেলে দেয় যে ভাই ভাবীরা আর বন্ধুটিকে সহ্য করতে পারছিল না। তাদের ঘর তাদের পরিবার তাদের সম্পর্ক বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য, নানর দুটি চিরতরে খারাপ হয়ে গেল।
এমনকি ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলাটাও অন্যায় অপরাধ বলে মনে করে নানা রকম কটুক্তি করে পরিবারে অশান্তি তৈরি করে। ধীরে ধীরে ভাই বোনদের মধ্যে বিশাল একটি দূরত্ব তৈরি করে সেই ছোট ভাবি। এমনকি ঈদের দিনেও ভাই-বোনদের মধ্যে আর কোন কুশল কিংবা সালাম বিনিময় হয় না।ভাই বোনদের মধ্যে এরকম দূরত্ব তৈরি করে ভাবি এখন মহা সুখে আছেন। ওই যে কথায় বলে না উপকারের কাছে ছাল থাকে না। এই অবস্থা হয়েছে ওই পরিবারে। ননদ দুটি কিংবা বোন দুটির বাবার বাড়ির রাস্তা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। আরেকটি কথা বলা হয়নি আগে। সেই বাগানের মালি দুটির মধ্যে
একটি মালিক অকালেই ঝরে যায়। ফুলগুলোকে এতিম করে। আজ তাদের বাগান জুড়ে ঘ্রাণ থাকলেও, সেই সুভাষিত ঘ্রাণ আর নেই। একটি মালি মৃত্তিকার বুকে শুয়ে আছে, আরেকটি মালি নিবু নিবু প্রদীপের মতো জ্বলছে। তাদের সাজানো স্বপ্নের বাগানে আজ ফাটল ধরেছে। তাইতো নীরব চোখে অশ্রু ঝরে একাকী একলা ঘরে। আর প্রার্থনা করে তাদের পাঁচটি ফুলকে আবারও একত্রিত করতে।
আসলে কিছু কিছু ভাবিকে যতই বোনের মত মনে করেন না কেন, তারা কখনোই আপন হয় না। আবার কিছু কিছু ননদ ও আছে তারাও কোনদিন কখনো আপন হয়ে উঠে না।
আসুন এত মধুময় এত পবিত্র সম্পর্ক গুলোকে আমরা কোনদিন কখনো যেন ভেঙে দেওয়ার কথা চিন্তা না করি। ভাই বোনের এই সুন্দর সম্পর্ক গুলো সুন্দর হয়ে বেঁচে থাক আজীবন।
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ" এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
বিষয়: গল্প
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
আপু আপনার আজকের লেখাটি পড়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো । আসলে আমাদের সমাজে এই ঘটনাগুলো অহরহ ঘটছে ।কারো উপকার করতে গেলে পরবর্তীতে সেই তার শত্রু হয়ে দাঁড়ায় । আর সংসারে ননদ ভাবির সম্পর্ক সে তো চিরকালের শত্রুতার সম্পর্ক । একপক্ষ ভালো হলে অন্য কক্ষ খারাপ হবে এটাই নিয়তির নিয়ম । হয়তো কারো ভাবি খারাপ নয়তো কারো ননদ খুবই খারাপ। যাই হোক সব সংসারের এই সম্পর্ক গুলো ভাল থাকুক সেই কামনাই করি।ধন্যবাদ ।
একদম মনের কথা বলেছেন আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।