শৈশবের সেই স্মৃতি কথায় আজকে ফিরে যাই,মধুময় সেই স্মৃতিগুলো আজ কোথাও নাই||~~।

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)


আসসালামু আলাইকুম/আদাব

সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন এটাই প্রত্যাশা করি।


শৈশবের সেই স্মৃতি কথায় আজকে ফিরে যাই
মধুময় সেই স্মৃতিগুলো আজ কোথাও নাই

IMG_20230808_040303.jpg
ছোটবেলার শিপু,,,


শৈশবের কিছু কথা কিছু স্মৃতি নিয়ে-

"শৈশবের গল্প"

সময়টা ছিল ৯০ দশকের। ১৮ই মার্চ ১৯৮৭ নীলফামারী জেলায় আমার জন্মগ্রহণ হয়। এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল বাহালিপাড়া রামনগর ইউনিয়নে।আমার দাদাকে আমি চোখে দেখিনি তবে শুনেছি তিনি অনেক নামকরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন।এবং অত্র এলাকায় দাদার অনেক জমি ছিল।এবং আমার দাদীয় ছিল খুব প্রভাবশালী ঘরের কন্যা।এক কথায় অর্থ এবং সম্পদে ছিল পরিপূর্ণ। দাদীর মুখে দাদার অনেক গল্প শুনেছি।কারণ শৈশবে আমি বেশিরভাগ সময়টা দাদীর কাছে ঘুমাতাম।দাদি হাত মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে নানা রকম গল্প শোনাতো।কিভাবে দাদার সাথে বিয়ে হল দাদা কিভাবে আদর করতো।সেই সময়ে শাড়ি গহনা কিভাবে কিনে দিত, ইত্যাদি অনেক গল্প।

এদিকে আমার নানা বংশ বিশাল প্রভাবশালী।আমার নানার এত এত সম্পদ ছিল এত জমের মালিক ছিল তিনি নিজেও জানতেন না কতদূর পর্যন্ত তার জমি।অত্র এলাকায় যেদিকে চোখ যায় আমার নানার জমি ছিল।পর্যায়ক্রমে সেগুলো বিক্রি করেছি কিংবা অনেকেই আত্মসাৎ করেছেন। আমার নানা অনেক সম্পদের মালিক ছিল বিধায় অনেকেই তার মাথা নষ্ট করার জন্য অনেক কিছু খাইয়েছিলেন নানাকে পাগল বানানোর জন্য। শৈশবে এসব গল্প অনেক শুনেছি।কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আমার নানার দেওয়া জমিতে এখন বিশাল মসজিদ।যে জমিটা আমার নানা দান করে গিয়েছিলেন। এবং আমার দাদির জমিতে এখন দুই তলা মসজিদ।প্রায় ৮ থেকে ১০ বিঘা জমি মসজিদের জন্য বরাদ্দ রেখে গেছেন আমার দাদি।

এবার হয়তো একটু খানি আন্দাজ করতে পারছেন আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড। ছোটবেলায় আমরা যখন নানি বাড়িতে যেতাম তখন পুকুরে মাছ ধরতাম।খালাতো মামাতো ভাই-বোনেরা সবাই দলবেঁধে।আম বাগানে আম কুড়াতে যেতাম ঝড় বৃষ্টির দিনে।আমার নানি খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ শেষ করে নানা রকমের পিঠা বানাত।আর আমাদের নাম ধরে ধরে ডাকতো। সেই পিঠা পায়েস খাওয়ার জন্য।নানি বাড়িতে অনেকগুলো কাজের মানুষ ছিল।যারা বাড়ির কাজ এবং ক্ষেত খামারে ফসলের কাজ করতো।তবে সবাই মিলে একসাথেই খেতাম।দারুন মজা হতো, খাওয়ার সময় কত গল্প কত হাসাহাসি।এবং আমার কয়েকটা নানা ছিল যারা এত পরিমান দুষ্টুমি করত আমি যখন পারতাম না তখন কেঁদে ফেলতাম। নানা-নানি মামা মামি সবাই ভীষণ আদর করতো।যেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।

এদিকে আমার বাবার বড় ভাই এবং ছোট ভাই যাদেরকে আমি বড় আব্বা এবং ছোট চাচা বলে ডাকতাম।তারাও ভীষণ আদর করত আমাকে।বড়আব্বা কোলে নিয়ে বলতো পাগলি মা আমার।আদর করে অনেকেই আমাকে অনেক নামে ডাকত সেই শৈশবে। আমাদের পরিবারে আমরা দুই বোন তিন ভাই। সবার চেয়ে বড় হচ্ছে বোন এবং সবার ছোট হচ্ছে ভাই।আমাকে মেজ বলতে পারেন।তবে পরিবারের সবার কাছে আমি খুব আদরের ছিলাম।শৈশবটা যেন একটা মজার রুটিনে চলত।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মাদ্রাসায় যেতাম।সেখানে আরবি শিখতাম।মাদ্রাসা থেকে এসে হাত মুখ ফ্রেশ করে ধুয়ে নাস্তা খেতাম।এরপর রেডি হতাম স্কুলে যাওয়ার জন্য।স্কুলে গিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা ধরনের খেলা খেলতাম। আইসক্রিম, কুড়মুড়, পাপড় তেতুল জলপাই পিয়াজু এবং বুট বাদাম কিনে খেতাম। বাসায় ফিরে গোসল করতাম।খেতাম।এরপর পুতুল খেলতাম।পুতুল খেলার প্রতি আমার দারুন দুর্বলতা।এরপর হাতের লেখা লিখতাম।এবং বিছান একটু গড়াগড়ি দিতাম।আসরের আযানের পর বাড়ির সামনে খোলা মাঠে খেলতে যেতাম।চিবুড়ি, কানামাছি
দারিয়াবান্ধা ব্যাডমিন্টন, লুডু কেরাম, কিত কিত লুকোচুরি,আরো অনেক খেলা খেলতাম সন্ধ্যা পর্যন্ত।খেলতে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে কত ঝগড়া কতক্ষণ ছুটি হয়েছে।সেসব স্মৃতি এখন মনে পড়লে শুধুই হাসি পায়।

IMG_20221206_141613.jpg
কিশোর বেলার শিপু

এরপর সন্ধ্যা বেলা হাত মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে একটু নাস্তা খেয়ে পড়তে বসি। বাসায় লজিং মাস্টারের কাছে।সন্ধ্যে থেকে রাত ন'টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম।এরপর খাওয়া দাওয়া করে একটু টেলিভিশন দেখতাম।আর ঘুমাতে ঘুমাতে দাদীর গল্প শুনতাম।কি চমৎকার একটা রুটিন এর মধ্য দিয়ে আমাদের শৈশব টা কাটতো।শৈশবে পুকুরে গোসল করার অভিজ্ঞতা আছে অনেক।বান্ধবীদের সাথে বাজি করে ফুলন খেলতাম।আরো কত মধুমাখা স্মৃতি যা দোলা দেয় মনের মনিকোঠায়।কিন্তু এই প্রজন্মের শিশুরা প্রায় রোবটিক হয়ে যাচ্ছে।তারা প্রকৃতির সাথে মাটির সাথে নিবিড় ভাবে মিশর সুযোগ পাচ্ছে না।বিধায় আন্তরিকতা কমে যাচ্ছে।ভালোবাসা হচ্ছে রুক্ষ।ইন্টারনেট আর মোবাইলের স্ক্রিনে কেটে যাচ্ছে সময় গুলো।মায়া মমতা কমে যাচ্ছে।মেঘ দুনিয়ায় ব্যস্ততার কারণে।

তবে আমার জীবনে শৈশবটা পরিপূর্ণ উপভোগ করার আগেই, মা হতে হয়েছে আমাকে। ১২ বছরের মাথায় গিয়ে মা হলাম আমি।সবাই বলতে লাগলো শিশুর কোলে শিশু।এর পরের জীবনটা বাস্তবতার অন্য আর এক রূপ।মধুময় শৈশবটা পাল্টে গেল এক নিমিষেই।
আমার শৈশব ঘিরে আছে যত আনন্দ হাসিখুশি, উচ্ছল উদ্দীপনা। ততটাই আছে যন্ত্রণা তিক্ততা বেদনা আর ক্ষতবিক্ষত হওয়ার গল্প।

শৈশব জুড়ে এত এত স্মৃতি আছে যা এক পোস্টে লিখা সম্ভব নয়।যদি কখনো মনে পড়ে আবারো শৈশবের গল্প নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে আসবো।সকলেই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আজকের মত এখানে

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

photo_2023-07-07_17-27-00.jpg

আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ" এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



বিষয়: শৈশবের গল্প"।

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......


Sort:  
 last year 

শৈশবের সেই মধুময় স্মৃতিগুলো সত্যি আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না। দাদি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে আর গল্প বলতো তার অনুভূতি সত্যি বেশি দারুন। আপনার জীবনের কিছু অংশের সম্পর্কে জানতে পেরে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আসলে আমি ১২ বছরের বিষয়টা বুঝি নি।

 last year 

একদম ঠিক শৈশবের এমন কিছু স্মৃতি আছে যেগুলো অনেক আনন্দ দেয় আবার এমন কিছু স্মৃতি আছে যেগুলো কষ্ট দেয়।সব মিলিয়েই শৈশবটা আজ পিছু ডাকছে।♥♥

 last year 

আপনার শৈশবের ছবিটা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম, এত আগের ছবি এখনো আপনার কাছে রয়েছে, ছোটবেলার নানী দাদির কাছে আমরা অনেক ধরনের গল্প শুনি যে গল্প গুলো শুনতে আসলেই ভালো লাগতো, আপনার অতীতের কিছু গল্প শুনে খুব ভালো লাগলো।

 last year 

আসলে আমার অনেক ছবি সংগ্রহে আছে।সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে আমি খুব বেশি পছন্দ করি।ছোটবেলার এমন কিছু স্মৃতি আছে যা ভীষণভাবে আনন্দ দেয়।♥♥

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.16
JST 0.029
SBD 2.55