জীবন থেকে নেয়া সেরা গল্প,,,"কবিতার ভক্ত পাঠক"১ম পর্ব
ন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব গল্প শেয়ার করতে যাচ্ছি।এমনও হতে পারে এই গল্পটি আপনারহৃদপিন্ডে সরাসরি স্পর্শ করতে পারে। গল্পে শিরোনাম,,,,
কবিতার ভক্ত পাঠক
বিষয়টি অপ্রিয় হলেও সত্য। আজ আমি আপনাদের সাথে কোন রূপকথার গল্প নিয়ে আসিনি।চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হানডেট পারসেন সত্য ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ছেলেটির নাম শাহিন।গায়ের রং শ্যামলা দেখতে ছিমছাম।তার বাড়ি আমাদের নীলফামারী জেলায় একটি উপজেলায়।কিন্তু শাহিনের বড় বোন এবং দুলাভাই নীলফামারী সদরে বাড়ি ভাড়া করে থাকেন।কারণ দুলাভাই এখানে চাকরি করতো।সেই সুবাদে শাহিন বড় আপুর বাসায় থেকে কলেজে লেখাপড়া করতো।তখন আমি মিউনিসিপ্যাল হেলথ পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে কাজ করতাম মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে। এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছাপানো হত।সবাই আমার লেখার খুব প্রশংসা করত। তখন আমি বাটন ফোন ব্যবহার করতাম।তাই ফোনে লোড দেয়ার জন্য একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানে গিয়ে আমার নাম্বারটা লিখে দেই রিচার্জ করার জন্য।রিচার্জের দোকানের এক সাইডে শাহিন দাঁড়িয়েছিল।আমি লক্ষ্য করিনি।এবং ওকে আমি চিনতাম ও না। কিছুক্ষণ পরে আমার ফোনে একটা কল আসলো।আপনি কি সাথী বলছেন।জ্বী বলছি। কিন্তু আপনি কে? প্রতি উত্তরে বললেন আপনার কবিতার একজন ভক্ত পাঠক। আপনাদের নীলফামারীর স্থানীয় পত্রিকায় যতগুলো আপনার লেখা কবিতা ছাপানো হয়েছে প্রতিটি কবিতা আমার সংগ্রহে আছে।তাই বুঝি?আমি মনে করেছি ঠিক কোন বাচাল কিংবা ভন্ড ধরনের লোক হবে।তাই পাত্তা না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম।
এভাবে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করে কল দিত।ম্যাডাম নতুন কোন কবিতা লিখেছেন?? কবিতাটি কি আমাকে দেয়া যাবে।আমি পড়ব। আপনার কবিতা আমার খুব ভালো লাগে।প্লিজ ফোনটা কাটবেন না।আমি বিরক্তি প্রকাশ করে বলতাম আপনি কখনো আমাকে ফোন দিবেন না। আপনার ফোনে আমি বিরক্ত হই।বলে ফোন রেখে দিতাম।এভাবে প্রায় এক মাস।এক মাস পর একটা অন্য নাম্বার থেকে আমাকে কল দিল। কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললাম কে।অপরপ্রান্ত থেকে বিনয়ের সুরে একটা কথা ভেসে আসলো প্লিজ ফোনটা কাটবেন না।দয়া করে আমার কথা শুনুন।আমি বললাম ঠিক আছে বলুন। তিনি বললেন দেখুন ম্যাম আমি আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি।আগামীকাল থেকে আর আপনাকে এভাবে বিরক্ত করব না।আগামী পরশু আমার ফ্লাইট।আমি সিঙ্গাপুরে চলে যাচ্ছি।যাওয়ার আগে আপনার কাছে একটি আকুল আবেদন।আপনার লেখা বইটি আপনার কাছ থেকে আমি শুভেচ্ছা মূল্য দিয়ে নিতে চাই।।সেই সাথে আমার প্রিয় লেখিকাকে একটু সামনাসামনি দেখতে চাই।সত্যি বলতে ম্যাম আমি আপনার কবিতার অনেক ভক্ত পাঠক আমি ।আপনার কবিতা না পড়ে কোন দিনও আমি ঘুমাতে চাই না।আজ সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যাব।বিকেলে যদি আপনার বাড়ির সামনে বই টা নিয়ে বের হতেন খুব উপকার হত।আমি বললাম ঠিক আছে।
বিকেলবেলা উনি আমার বাড়ির সামনে এসে একটা কল দিল।আমায় লেখা প্রথম কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত।বইটি হাতে নিয়ে বাইরে গেলাম।কেমন যেন ভয় ভয় করছিল।ছেলেটাকে দেখিনি কখনো।সে ভাবে কথা ও বলিনি।যাইহোক সাহস করে বাড়ির গেটের সামনে গেলাম।দেখলাম সাদা শার্ট পরা একটি ছেলে,,আমার সামনে এসে সালাম দিলেন।এবার বললা ম্যাম আমি শাহিন।কোনদিনও আপনি আমার নাম টি ও শুনতে চাননি।তাই সৌজন্যতার খাতিরে আজ একটু পরিচিত হই।যাইহোক আপনার বইটি আমাকে দিন।আমি হাত বাড়িয়ে বইটি দিয়ে দিলাম।উনি একটা খামে আমাকে শুভেচ্ছা মূল্য দিচ্ছিলেন।আমি বললাম লাগবেনা।বলে বাড়ির ভেতরে যেতে ধরলে এমন সময় শাহিন বলল ম্যাডাম জাস্ট এক মিনিট। আমি পিছন থেকে তার দিকে তাকাতেই দেখলাম তার শার্টের বোতাম খোলা।এবং আগে থেকেই ওর গেঞ্জির ভিতরে বুকের সাথে আমার লেখা বইটি। আমি অবাক হয়ে বললাম আপনার কাছে তো আগে থেকেই আমার বইটা ছিল তবে আজকে নতুন করে নেয়ার দরকার কি ছিল।শাহিন বললেন আপনার এই বইটির যেদিন মোড়ক উম্মোচন হয়েছে সেদিনই আমি সংগ্রহ করেছিলাম।কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে ছিল আপনার লেখা বইটা আপনার হাত থেকে নেয়ার।যাইহোক অনেক বিরক্ত করেছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। আর মনে রাখবেন আমি আপনার একজন কবিতার ভক্ত পাঠক।এই বলে শাহিন চলে গেল। আমিও বাসায় আসলাম।মজার বিষয় ছেলেটি চলে যাওয়ার পর ওর কথা একবারও আমার মনে পড়েনি আমার।
শাহিন প্লেনে ওঠার আগে আমাকে একটা এসএমএস দিয়ে ছিলেন।ম্যাম আপনার লেখা বইটি বুকে করে নিয়ে যাচ্ছি। কি যে প্রশান্তি,,আপনাকে ভাষায় বোঝাতে পারব না।আপনার লেখা প্রতিটি শব্দ আমার কাছে মহামূল্যবান।জানিনা আপনার নতুন লেখা আর কবে পড়তে পারবো।
চলবে,,,,,,,
গল্পের শেষ পর্ব পযর্ন্ত পড়ার অনুরোধ রেখে আজ এ পর্যন্ত
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
আসলে আপু ভালোলাগা ভালোবাসা মনের অজান্তে হয়ে। আর আপনি এমন একজন মানুষ এবং কি এমন একজন কবি যে কবিতা গুলো মানুষের বাস্তব জীবন নিয়ে লেখেন। এবং কি যেখানে থাকে মধুরতা, ভালোবাসা, অবহেলা, বিরহ, কান্না, অর্থাৎ একটা মানুষের জীবন নিয়ে লিখেন আপনি। তাইতো মানুষ এত বেশি ভালোবাসে। সেই সাথে আমিও আপনার কবিতা গান খুব ভালোবাসি। আমাদের সাথে আপনার কবিতার ভক্ত পাঠক গল্পটি পড়ে বেশ ভালই লেগেছে। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
আমি সেই শুরু থেকে দেখছি প্রিয় ভাইয়া। আপনি আমার কবিতার একজন অনেক বড় ভক্ত পাঠক। সেইসাথে ভালো একজন মন্তব্যকারী। যিনি সবসময় আমাকে সুন্দর সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহ এবং উজ্জীবিত করে থাকেন। আপনার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।♥♥
কবিতার ভক্ত পাঠক গল্পটি পড়ে বেশ দারুন লাগলো। সত্যি বলতে আপনার কবিতার কবিতার ভক্ত পাঠক আমি ও একজন। আপনার প্রতিটি কবিতা আমার রিদয় ছুঁয়ে যায়। সত্যি আপনি একজন আমার মনের মতো কবি। আর আপনার কবিতা আবৃত্তি নিয়ে তো কোনো ভাষা নেই আমার।এক কথায় অসাধারণ হয়। আপনার জন্য মন থেকে অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। এভাবেই এগিয়ে যান। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।❤️❤️❤️
আপনি আমার কবিতার ভক্ত পাঠক কে জেনে খুশি হলাম।এভাবেই সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকবেন সবসময় প্রত্যাশা রাখছি।♥♥
গল্পের পর্বটি দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন। মনে হচ্ছে নিজের চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি। বাস্তব জীবনের এমন অনেক কাহিনী স্বচক্ষে দেখার সুযোগ না পেলেও আপনাদের মতন লেখকদের কাছ থেকে আমরা সে সুযোগ পেয়ে থাকি। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে নতুন নতুন গল্প ও চরিত্র নিয়ে আসার জন্য। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকবো। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আসলে গল্পটি হচ্ছে নিজের জীবন থেকে নেয়া। এবং সত্যিই গল্পটি শেষপর্যন্ত শুনলে চোখের পানি ধরে রাখা অনেক কষ্টকর।♥♥