♥"ভারাটি এখন বধু"♥১০%লাজুক খ্যাঁকের জন্য।
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি।
বন্ধুরা, টাইটেল দেখে অবাক হচ্ছেন তাইনা?
আসলে এটাই বাস্তবতা।মেয়েটির নাম কেয়া।ওরা দুই ভাই বোন।এবারও বাবা-মা মিলে প্রায় চার জনের পরিবার।তবে কেয়ার বাবার ঢাকায় একটি ছোট চাকরি করেন।মা বাসায় সেলাই কাজ করেন।তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে,,আমাদের পাশের বাড়ি অর্থাৎ আমার মামার বাসায় ভাড়া থাকতো।ওই বাসায় মামা মামি এবং মামার চার ছেলেমেয়ে থাকেন।
মামার দুই ছেলে দুই মেয়ে। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়ে গেছে আগেই।বড় ছেলের নাম নিশান এবং ছোট ছেলে নাম স্বাধীন।স্বাধীন লেখাপড়া করছে এবং নিশান এখন খুব ভালো একটা জব করছে।করোনাকালীন সময় নিশান বাসায় থাকায়। ভাড়াটিয়া কেয়ার সাথে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এক পর্যায়ে নিশান তার বাবা-মাকে বিয়ের কথা বলে।বাবা-মা প্রথমে রাজি হন না।তুই আমাদের ভাড়াটিয়ার সাথে বিয়ে করবি এটা আমরা মানতে পারব না।এরপর নিশান খুব জোর করে বসে।একপর্যায়ে বাবা-মা বাধ্য হয়ে রাজি হয়।কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়।নিশান কোনোভাবেই যৌতুক নেবে না।কিন্তু ওর বাবা-মা কোনোভাবেই এটা মানতে রাজি হয় না।
নিশানের মা আমার মামি।পরবর্তীতে আমার কাছে এসে ছেলের নামে নানা রকমের বিচার দেয়।ছেলেকে কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন বড় করেছি চাকরি নিয়ে দিয়েছি অনেক টাকা খরচ করেছি আর ছেলে নাকি এখন যৌতুক নেবে না এটা কি মানা যায়।একটা বিয়েতে কত খরচ।মামি নানারকম প্রশ্নে আমার মাথা ঘুরছিল।কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল।পরবর্তীতে আমি নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম মামিকে।বললাম আপনি একজন আদর্শ সন্তানের মা হিসেবে গর্ববোধ করা দরকার যে আপনার ছেলে নিজে থেকেই যৌতুক ছাড়া বিয়ে করতে চাচ্ছে।তাছাড়া আপনার ছেলেকে যেমন পড়ালেখা করাতে কিংবা চাকুরী নিয়ে দিতে অনেক টাকা খরচ করেছেন ঠিক তেমনি মেয়ের বাবা মা ও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে বড় করাতে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেছে।এবং তাদের মেয়েকে আপনার ছেলের হাতে তুলে দেবে চিরতরে।আপনি নিজেও তো মেয়ের মা বুঝেন না।নিজের কলিজার ধর্মকে অন্যের হাতে তুলে দিতে কতটা কষ্টের।মামি আমি অনুরোধ করব যৌতুকবিহীন এই বিয়েটা করান এতে করে আপনি,,আপনার মাথা অনেক উঁচু হবে।পারলে দেনমোহর টাকাটা বুঝিয়ে দিয়ে বিয়ে করাবেন।
মামি তাৎক্ষণিক আমার কথায় কিছুটা ক্ষেপে গেল।তবে আমিও নানারকম কৌতুহল করে মামিকে হাসানোর চেষ্টা করলাম।অনেক বোঝানোর পর অবশেষে মামী বুঝতে পারলেন।এবং আমি যখন হাত ধরে অনুরোধ করলাম ঠিক তখন মামী আমার হাত ধরে বলল ঠিক আছে মা একমাত্র তোর কথায় আমি ছেলের বিয়ে যৌতুক ছাড়াই দিব।আমি ভীষণ খুশি হলাম।অবশেষে পরশুদিন গায়ে হলুদ হলো।আর কাল বিয়ে সম্পন্ন হল।বিয়ে হলো তাদের গ্রামের বাড়িতে।আমরা সবাই মিলে বরযাত্রী গেছিলাম।অনেক মজা করেছি।বরযাত্রী যাওয়ার সময় আমি আর আমার বড় বোনের ছোট মেয়ে শ্যামা একসাথে বসে ছিলাম।শ্যামা আমার খুবই প্রিয়।
আমরা বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরেই মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হয়।বৃষ্টির মধ্যেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।এবং বৃষ্টি হালকা কমে গিয়ে নিলে আমাদের খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হয়।বৃষ্টির কারণে আমরা নিজেরা বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছিলাম তাই খাওয়ার সময় ছবি তুলতে পারি নাই।তবে বরের খাওয়ার একটি ছবি আমি তুলেছিলাম।
এরপর বউ বিদায় হওয়ার আগেই বৃষ্টি কমে গেলে আমরা চলে আসি।কারণ তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।গ্রামের রাস্তা অনেক কাদা কাদা হয়েছিল।তাই আর দেরি না করে সবার কাছে বিদায় নিয়ে আমরা আগে আগে চলে আসলাম।
এমনি করেই ভাড়াটিয়া হলো বধু।
মনে অনেক শান্তি লাগছে যে যৌতুকবিহীন বিয়ে টা দিতে পারলাম।আফতাবের সকলেই আমার মামাতো ভাই এবং ভাবী অর্থাৎ নবদম্পতির জন্য দোয়া করবেন তারা যেন সুখে শান্তিতে সুখময় জীবন যাপন করতে পারে।
আর সেই সাথে বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলি
যৌতুক কে না বলি
না মানে না।
শিশু বিয়ে কে না বলি
না মানে না
নির্যাতন কে না বলি
না মানে না
সারাজীবন সুখে থেকো
এই দোয়াই করি,,
সুখে-দুখে আনন্দে
আহা!! মরি মরি।
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
কে জানত ভাড়াটিয়াই একদিন পরিবারের সদস্য হয়ে যাবে। কার কপালে কাকে লিখে রেখেছেন আল্লাহ্ ভাল জানেন। তবে যৌতুক না নিতে আপনার ভুমিকার প্রসংশা করতে হয়। যৌতুক নিয়ে আসলে বিয়ে করা উচিত না। মেয়ের ফ্যামিলির উপর চাপ দিয়ে কোন কিছু আদায় করা ঠিক না। সাধ্য মতো নিজের মেয়ের জন্য তারাই যা করার করবে। ভাল লাগলো আপনার লেখা পড়ে। শুভ কামনা রইল নব দম্পতির জন্য।
আমি সেই ছোটবেলা থেকে যৌতুক বিরোধী আন্দোলন করে আসছি।নজর ভাই সহ,প্রতিবেশী আত্মীয় অনেকেরই যৌতুকবিহীন বিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।শিশু বিয়ে প্রতিরোধ করেছি অনেক ।পারিবারিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনেক কাজ করেছি♥♥
যাক পুরো কাহিনী টা পড়ে ভালই লাগলো। প্রথমে টাইটেল পড়ে আমি অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমিতো ভাবলাম সিয়াম ভাইয়াকে বিয়ে করিয়ে দিয়েছেন😁।পরে বুঝলাম মামাতো ভাইয়ে বিয়ে।
আপনার এ কথাগুলে মন ছুঁয়ে গেলো। সবাই যদি এভাবে ভাবতো৷ আর আপনার বোনের ছোট মেয়ে শ্যামা থেখতে বেশ মিষ্টি।
এটা সত্য কথা আপু সবাই যদি আমার মতো করে ভাবতো তাহলে সমাজটা এতদিনে আরও সুন্দর হতে পারতো।গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।♥♥
আপু একেবারে সিনেমাটিক আর নামটাও হয়েছে সিনেমার মতো ভাড়াটিয়া হলো বধু অসাধারন লেগেছে আমার কাছে। তবে নিশানের সিদ্ধান্তকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। দেখেই বুঝতে পারছি মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে আপনি বেশ আনন্দ করেছেন। আনন্দের মুহূর্ত টুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার কথায় আমি সহমত পোষণ করছি। নিশানকে আমিও অনেক স্যালুট করেছি। এবং আরও মজার বিষয় হচ্ছে নিশান নিজের আয় করা টাকা দিয়ে বিয়ে করেছে। বাবা-মায়ের একটি টাকাও খরচ করতে দেননি।♥♥
প্রথমে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনার জন্যেই যৌতুক ছাড়া বিয়ে করাতে আপনার মামি রাজি হয়েছে। আসলে এই যুগে এসে যৌতুক চাওয়ার টা সত্যিই অনেক অন্যায় ।কারণ যৌতুক একটি পরিবারের উপর বোঝা সেইসাথে সম্পর্কটাকে হারাম করে দেয়। একটি হারাম সম্পর্ক নিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া নিত্যান্ত মন্দ কাজ। তবে ছেলেটার জন্য গর্ব হচ্ছে যে তিনি নিজে যৌতুক ছাড়া বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছেন।এমন ছেলে পাওয়া কঠিন। অবশেষে ধুমধাম করে বিয়ে হল কিন্তু বউকে কেমন জানি মলিন লাগছে মনে হচ্ছে মন খারাপ। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনি দারুন সময় অতিবাহিত করেছেন। সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে।
যৌতুকের বিরুদ্ধে সেই ছোটবেলা থেকেই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছি আমার সামনে কোন বিয়ে হলে সেখানে যৌতুক নিয়ে কোন আলোচনা আমি হতে দেই না।এবং মজার বিষয় হলো আমাদের পরিবারের কেউ যৌতুক নেয় নি এবং যৌতুক দেয় নি।আমাদের পাঁচ ভাই-বোন আমরা কারোরই না।পরিবর্তনকে শুরু করেছি নিজের পরিবার থেকে।♥♥
বাহ!! যৌতুক বিহীন খুব ভালো লাগলো এমন একটি বিয়ের গল্প পড়ে। এখনও সমাজের মানুষ এই যৌথুক প্রথাকে বাধ্য করে ফেলেছে। আপনার মামাতো ভাই উচিত কাজটি করেছে আমি মনে করি। আপনারা বিয়েতে অনেক মজা করেছেন দেখে বুঝা যাচ্ছে। আপনার মামাতো বোন শ্যামাকে সুন্দর লাগছে সেই সাথে আপনাকেও। আপনার মতো আমিও বলতে চাই-
ধন্যবাদ আপু ❤️
সেদিন ডিসকোর্ড আপনার সাথে কথা হয়েছিল আপনি বললেন বরযাএী যাচ্ছি। কিন্তু বিয়ের পেছনে যে এত কাহিনী আছে সেটা অনুমান করতে পারিনি। আগেকার মানুষের চিন্তাভাবনা এখনো পরিবর্তন হয় নি। তারা এখনো যৌতুককে তাদের হক মনে করে। যাইহোক শেষ পযর্ন্ত যে যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এটা দেখে বেশ ভালো লাগল। আল্লাহ ওদের সংসার জীবন সুখের করুক।।
সেদিন আপনার সাথে কথা বলার সময় আপনি বললেন বরযাত্রী যাচ্ছেন। ছবি দেখেই বুঝতে পারলাম সেই বিয়ের গল্প নিয়ে ব্লগ লিখেছেন।
কিন্তু টাইটেলটি দেখে আসলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
বিয়ের পুরো গল্পটি পড়ে ভালই লাগলো। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আপনি আপনার মামি কে যৌতুক না নেয়ার জন্য মানাতে পেরেছেন এটাতে। আসলে কিছু কিছু মানুষ এখনও আগের কালের চিন্তা ভাবনা নিয়েই বসবাস করে। তাদেরকে বোঝানো একটু কষ্টকর তবে ভালো হবে বোঝালে পরিবর্তন আনা সম্ভব। আর আপনি সে কাজটি করে যাচ্ছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।