source
আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব 💞ভালোবাসা দিবস। সবাইকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।এই দিনে সবাই চেষ্টা করে প্রিয় মানুষকে নিয়ে সময় কাটানোর।বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারির কোন অস্তিত্ব আমি খুজে পাইনা। একটা সময় অনেক অপেক্ষায় থাকতাম কখন ১৪ই ফেব্রুয়ারি আসবে। আজ আপনাদের সাথে ১৪ই ফেব্রুয়ারি নিয়ে আমার জীবনের কিছু স্মৃতি শেয়ার করব। |
💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘
source
সালটা ২০০৪ তখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো ছিলাম কিন্তু খেলাধুলার প্রতি আগ্রহটা ছিল অনেক বেশি। আমাদের বাসা ছিল আবাসিক এলাকায়। দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় একটি মেয়েকে খুব ভালো লেগেছিল। সেই মেয়েটির বাসা ছিল দোতলায় আর আমাদের বাসা ছিল তৃতীয় তলায়। সেই মেয়েটির নাম ( ছদ্মনাম)শিমু । শিমু তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।২৬ মার্চ ২০০৪ একদিন দুপুরবেলা গোসল করে ছাদে গিয়েছি সেখানে শিমু এবং তার সাথে আরও কেয়কজন ছিল। সেদিন আমি অনেক সাহস নিয়ে সবার সামনে বলেছিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি।এ কথাটা শোনার পর আশেপাশের সবাই হেসে ছিল কিন্তু সে কোন কথা না বলে বাসায় চলে গিয়েছিল। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই। বাসায় যেয়ে ওর বাবা মাকে বলে দেয় নাকি।এই ঘটনার পর থেকে ওর সামনাসামনি আমি হতে পারতাম না সবসময় একটা ভয় কাজ করত।এভাবেই প্রায় ১৫ দিন কেটে গেল। আমিও কোন কথা বলতাম না দেখা হলেও। শিমু এই ঘটনার পর আমাদের বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে। পড়াশোনা এবং লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারতে ছিলাম না ঠিক তার এক মাস পরে আমি মনে মনে ভাবলাম আমি বলেছি যে আমি ওকে পছন্দ করি কিন্তু সে হ্যাঁ বা না কোনটাই তো বলে নি।তারপর ঠিক করলাম ওর সামনাসামনি হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করবো। যেহেতু আমাদের বাসা একই বিল্ডিং এ তাই বাসার ছাদও একটাই। বিকেল তিনটার সময় ছাদে আসে। তারপর ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওকে আমি জিজ্ঞেস করি,আমিতো তোমাকে খুব পছন্দ করি এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি। প্রথমে তেমন কিছু বলে না, বারবার জিজ্ঞেস করার পর সে আমাকে বলে আমিও আপনাকে ভালোবাসি। সেখান থেকেই আমাদের দুজনের একসাথে পথ চলা শুরু। ওর মুখ থেকে যখন হ্যাঁ শব্দ টা বের হয়েছে তখন আমার মনে হলো আমি এভারেস্ট জয় করে ফেলেছি। |
suorce
💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘
আমরা দুজন খুব চিঠি দেওয়া নেওয়া করতাম। যখন একটা চিঠি ওকে দিতাম ও তারপরে একটা আমাকে দিত। ওর দেওয়া চিঠি পড়তে এত ভাল লাগত ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি শিমুর সাথে সম্পর্কের ব্যাপারটা নিয়ে সব সময় অনেক উত্তেজিত থাকতাম কারণ জীবনের প্রথম প্রেম ছিল শিমু। ওর সাথে সম্পর্ক হওয়ার আগে জীবনে কখনো রমজান মাসের ৩০ টা রোজা করিনি কিন্তু ২০০৪ সালে আমি ৩০ টা রোজা করেছি শুধুমাত্র ওর অনুপ্রেরণায়। শিমুর সাথে আমার দেখা হওয়াটা ছিল খুব সহজ ব্যাপার কিন্তু ওকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো টা ছিল অনেক কঠিন। ওকে নিয়ে জীবনে প্রথমবার ঘুরতে বের হয়েছিলাম ঈদুল ফিতরের দিন। আমাদের আবাসিক এর পাশে রেললাইন আছে সেই রেললাইনের চারপাশে অনেক গাছ ছিল।আছরের নামাজের পরে সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে ওকে নিয়ে রেল লাইন দিয়ে হাত ধরে হেটেছিলাম অনেকক্ষণ।সেদিন সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত রেললাইন দিয়ে দুজনে হেঁটে ছিলাম। তারপরে আবাসিকের ভিতরে এসে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করি সাথে আরও কয়েকজন ছিল এ কারণে কোনো সমস্যা হয়নি। তখন সাইকেল নিয়ে স্কুলে যেতাম। আমাদের বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। শিমু স্কুলে যেত স্কুলবাসে করে। আমাদের স্কুলের সময় ছিল সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে গোসল করে ছাদে যেতাম।ও স্কুল যাওয়ার আগে গোসল করে ছাদে আসত। তখন দুজনে কথা বলতাম তারপর বিকালে স্কুল থেকে আসার পর আবার ছাদে উঠতো।আমি যদি খেলতে যেতাম তাহলে মাগরিবের আজানের পরে ছাদে দেখা করতাম দুজনে। এভাবেই আমরা দুজন দুজনের অনেক অনুপ্রেরণা হয়ে চলতে ছিলাম এবং দিনগুলো অনেক ভালোই লাগছিল। শিমু অনেক শান্ত স্বভাবের ছিল কারো সাথে খুব বেশি দরকার না হলে কথা বলত না।এই ব্যাপার গুলো আমার অনেক ভালো লাগতো। |
source
💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘
২০০৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাস আসলো জীবনের প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করবো দুজনে। কিভাবে দুজনে ঘুরতে বের হব সেটা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করতেছিলাম। শেষে ঠিক করলাম শিমু স্কুল পালাবে ওই দিন। আমার বাসা থেকে বের হওয়ার তো কোন সমস্যা নাই।কারন বাসায় আমার ফিরতে দেরি হলে মনেকরে অবশ্যই কোথাও খেলতে গেছি ।১৪ই ফেব্রুয়ারি বাসা থেকে বের হলাম। শিমু একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পড়তো। ও স্কুলে ঢুকে আবার বের হয়ে ওর এক বান্ধবীর বাসায় যেয়ে পোশাক পরিবর্তন করে। তারপর রিক্সা নিয়ে শহর থেকে একটু দূরে হাইওয়ে রোডে দাঁড়িয়ে রইলাম। গন্তব্য স্বপ্নপুরী কিছুক্ষণ পর একটা বাসে দুজনে স্বপ্নপুরীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। শিমুকে নিয়ে বাসের পাশাপাশি সিটে বসে যাচ্ছি কিন্তু তখনো আমার বুক ধরফর করতেছে। এইবুঝি কেউ দেখে ফেলবে। তারপর নিজেই নিজেকে সাহস দিতে শুরু করলাম যা হবার হবে। জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে নিয়ে বাসে পাশাপাশি সিটে বসে যাচ্ছি সত্যি আমার কাছে অন্যরকম অনুভূতি। ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে আমরা নামলাম এখান থেকে একটি রিক্সা নিলাম। ফুলবাড়ি থেকে স্বপ্নপুরী দূরত্ব মোটামুটি ভালই তখন অটো বা সিএনজি এ সব কিছুই ছিল না। রিক্সা বা টেম্পুতে করে যেতে হতো। রিক্সা নিয়ে স্বপ্নপুরী পৌঁছে গেলাম। |
source
💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘
তারপর টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম।এর আগে স্বপ্নপুরী এসেছিলাম আমি কয়েকবার তাই মোটামুটি ভিতরে কোথায় কি আছে আমার অভিজ্ঞতা আছে। স্বপ্নপুরী ঘোড়াটা আমাদের কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল নিরিবিলি একটা জায়গায় বসে দুজনের গল্প করবো।আমরা সেদিন ভিতরে কোথাও ঘুরিনি । যেখানে বসার স্থান আছে নিরিবিলি,সেখানে দুজনে বসে গল্প করলাম। সময় গুলো কিভাবে দ্রুত চলে গেল বুঝতেই পারলাম না। সাথে কিছু খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। দুপুর যখন দুটো বাজে তখন আবার স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে কারণ চারটার আগে স্কুলে থাকতেই হবে তা না হলে তো ধরা খেয়ে যাবে বাসায়। তারপর আবার রিকশা নিয়ে এসে ফুলবাড়ী থেকে বাসে ওঠে আমাদের গন্তব্যস্থলের অনেক আগেই নেমে যেতে হল।সেখান থেকে অন্য একটি রিক্সায় স্কুলে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর ওর বান্ধবীর বাসায় যেয়ে আবার পোশাক পরিবর্তন করে স্কুলে যখন ছুটি হয় তখন সেখানে চলে যায়। |
source
💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘
এভাবে আরো কত ঘুরে বেড়িয়েছি দুজনে।বৃষ্টিতে ভিজেছি,এক ছাতার নিচে ছাদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করেছি। এখনো মনে আছে ছাদে দাঁড়িয়ে দুজন দুজনকে কথা দিতাম কোনদিন আমরা ছেড়ে যাবো না। শিমু রজনীগন্ধা ফুল খুব পছন্দ করত আমি সবসময়ই সাধ্যমত চেষ্টা করতাম ওকে নিয়মিত ফুল দেওয়ার জন্য। সবচেয়ে বেশি দিতাম ১৪ ই ফেব্রুয়ারি তে। ওই সময় ঈদে কার্ড দেওয়ার একটা প্রচলন ছিল।আমি ঈদকার্ড দিতাম ও আমাকেও দিত। ২০০৫ সালটা আমাদের দুজনের অনেক ভালো কাটলো। ২০০৬ সালও আমাদের জীবন অনেক আনন্দেই কেটে গেল। ২০০৭ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে ওকে নিয়ে রামসাগর গিয়েছিলাম। একসময় এসএসসি পাস করে ফেলল কলেজে ভর্তি হল সবকিছু ঠিকঠাক ছিল আমাদের। আমাদের জীবনের কালো অধ্যায় শুরু করলো ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। সেই সময় আমার এবং ওর পরিবার আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জেনে যায়। কোন পরিবার ভালো ভাবে ব্যাপারটা মেনে নিতে চায় না। পারিবারিক চাপে এবং আরো অনেক সমস্যার কারণে ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ও আমার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। |
source
💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘
সেই ঘটনার পর আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পরি। এখনও অনুভব করি সেই সময়ের স্মৃতি গুলো। যে ছাদে দুজনে গল্প করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা,সেই ছাদ এখনও সেরকমই আছে শুধু সেই গল্প করা দুজন মানুষ নেই। স্বপ্নপুরীতে দুজন যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতাম সেই স্বপ্নপরী ঠিকই আছে কিন্তু তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা দুজন মানুষ এখন আর কাছাকাছি নেই। ২০০৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন্স ডে আসে ঠিকই কিন্তু আমার জীবনে তখন অন্ধকার। বিগত বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল আমার জীবনে স্বপ্নের মত। তারপর থেকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আসলে ওকে আমি খুঁজে ফিরি এখনো। কিন্তু সেতো হারিয়ে গেছে আর ফিরবে না কোনদিন। এখন প্রতি বছর যখন ১৪ই ফেব্রুয়ারি আসে।আমি চেষ্টা করি সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখার। আমাদের জীবন থেকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস স্মৃতি হয়ে গেছে। |
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘💘
বর্তমান জীবন নিয়ে আমি অনেক খুশি কিন্তু অতীতের কিছু স্মৃতি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে গেঁথে থাকে।সবাই চেষ্টা করে তাদের বর্তমান জীবনের সুখের সময় গুলো নিয়ে ভ্যালেন্টাইনস ডে গল্প লেখে কিন্তু আমি আমার স্মৃতি থেকে কিছুটা লিখলাম। অতীতের ভালো স্মৃতিগুলো মনে হলে এখনো অনেক ভালো লাগে। |
সেলিম ভাই সবার জীবনে এরকম কিছু ভালবাসা নিয়ে কাহিনী আছে । আপনার ভালোবাসার সত্য কাহিনী টা খুবই ভালো লাগলো। জীবনে চলার পথে এরকম ভাবে ঘটে যাওয়া কাহিনী আমাদের পেছনে পড়ে থাকে । পিছনে কথা মনে আসে না তেমন কিন্তু হঠাৎ করে একা একা যখন থাকি। তখন মনে পড়ে যায় তখন খুব কষ্ট লাগে। আপনাকে আশ্বাস দেয়ার মত আমার কিছুই নেই তবে জীবন থেমে থাকেনা । তাই সুস্থ থাকবেন ভাই ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্ট টি পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য করেছেন।শুভকামনা রইল আপনার জন্য
👌👌
ভাই আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো। আসলে জীবনে চলতে গেলে কিছু পুরোনো স্মৃতির ও প্রয়োজন আছে। অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে উপস্থাপনা করেছেন সত্যিই আমার ভিশন ভালো লেগেছে। আপনার পুরো পরিবারের জন্য শুভ কামনা রইলো। ভাইয়
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই।আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল
ভাই আপনার অতীত এর ভালোবাসার বাস্তব কাহিনীটি পড়লাম, সবই ঠিক ছিলো ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছেন এটাই ঠিক ছিল না।
খুবই দুঃখ হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছিল আপনার সেই সময়টা। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে শত কঠিন পরীক্ষার মাঝে থেকে আপনি নিজেকে ঠিক মত আবার সঠিক পথে পরিচালিত করতে পেরেছেন এটা শুনে ভালো লাগলো। আরেকটি বিষয় জানার ছিল সেই শিমু কিভাবে হারিয়ে গেল? আপনার কাহিনীটি পড়ে প্রথম অবস্থায় একটু ভালই আনন্দ পেয়েছি কিন্তু পরবর্তীতে আপনার ব্যথায় ব্যথিত হয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করে হালকা হওয়ার জন্য।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই।সময় নিয়ে আমার পোস্টটি পড়েছেন। ভাই পৃথিবীতে মানুষ দুই ভাবে হারিয়ে যায় এক হচ্ছে মারা যায় আর দুই হচ্ছে জীবিত থেকেও হারিয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে হয়েছে দ্বিতীয় টা। বর্তমান জীবনে আমি অনেক সুখী ভাই। শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য ভালো থাকেন
জি ভাই আমি আসলে সেটা জানতে চেয়েছি আমি ভেবেছিলাম মারা গেছে তাই। বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।