প্রবাস জীবন এবং কিছু অভিজ্ঞতা|| ১০% shy-fox এর জন্য

প্রবাস জীবন এবং কিছু অভিজ্ঞতা

pexels-photo-462671.jpeg
source

জীবনে যত বেশি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বেন ততবেশি শিখতে পারবেন। আমরা বাঙালিরা মানুষকে খুব সহজে বিশ্বাস করি,যার কারণে প্রতারিত বেশি হই । আমার প্রবাস জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

pexels-photo-88214.jpeg
source
💖💖💖💖💖💖💖💖💖💖💖💖💖💖

২০১৪ সালের মার্চ মাসে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ভিসা এবং বিমান টিকেট হাতে পাই। যখন হাতে পাই তখন সত্যি অনেক আনন্দিত এবং উত্তেজিত ছিলাম। আমার খুব কাছের একজন মানুষ আমাকে মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা এবং ভিসা করে দিয়েছে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসের ৪ তারিখ আমার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে টিকিট কাটা হয়। রাত সাড়ে আটটার সময় বিমানবন্দরের সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিমানে উঠি। জীবনের প্রথম বিমান যাত্রা তাই কিছুটা আনন্দিত এবং ভীত ছিলাম। তিন ঘন্টা ১৮ মিনিট এর বিমান যাত্রা শেষে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করল আমাদের বিমান।

pexels-photo-2389473.jpeg
source

বিমান থেকে নেমে যখন ইমিগ্রেশনের জন্য লাইন ধরলাম। তখন আমি সহ আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আলাদা একটি রুমে বসিয়ে রাখা হলো।যেহেতু আমাদের ছিল স্টুডেন্ট ভিসা তাই সকাল না হওয়া পর্যন্ত, কলেজ কর্তৃপক্ষ এখানে না আসা পর্যন্ত আমাদেরকে ছাড়া হবে না। সকালবেলা যখন আমার কলেজ থেকে লোক আসলো সেখানে আমি দেখতে পেলাম আমার সেমিস্টার ফির প্রায় ৫০ পার্সেন্ট বাকি।সেই টাকা না দিলে তারা আমাকে নিয়ে যাবে না। কিন্তু দেশে থাকতে আমি সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে এসেছি। এ পরিস্থিতির সময় আমার মনে হলো আকাশ ভেঙ্গে পড়ল আমার মাথায়। নিজেকে সামলে আমি দেশে ফোন দিলাম এবং আমার এজেন্ট আমাকে জানাল যে আমার ব্যাগের ভিতর একটি প্যাকেট দেওয়া আছে সেখানে বাকি টাকা গুলো আছে সেই টাকাগুলো তাদের দিয়ে দিতে। যাই হোক ব‍্যাগ থেকে টাকা বের করে আমি কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে দিলাম হতারপর তারা আমাকে ইমিগ্রেশন এর কাজ সম্পন্ন করে কুয়ালালামপুরে একটি কলেজে নিয়ে গেল।

pexels-photo-3909000.jpeg
source

সারাদিন কলেজে বসিয়ে রাখল এবং প্রসেসিং শেষ করে আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হল। কলেজ থেকে আমাদের যে রিসিভ করবে সেই লোক রাত্রে আটটার সময় আসলো। সারাদিন শুধু একটু রুটি খেয়ে ছিলাম। নতুন জায়গায়, ভয়াবহ একটি দিন পার করেছি। রাত আটটার সময় আমাদেরকে একটি ফ্লাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের রুম ঠিক করে দেওয়া হয় ১৬০ মালয়েশিয়ান রিংগিত মাসে। তারপর কয়কদিন যাওয়ার পর নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে শুরু করলাম। মানুষকে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম। যেহেতু স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছি কলেজের পাশাপাশি আমাকে পার্টটাইম কাজ করতে হবে। এখানে আসার পর অনেকে পার্টটাইম কাজ খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু সবাই আশ্বাস দিয়েছিল কেউ কোনো কাজ যোগার করে দিতে পারেনি। পরে বাধ্য হয়ে প্রায় একমাস পর আমি নিজে কাজ খুজতে বেরিয়ে পড়লাম। মালয়েশিয়া জীবনে প্রথম কাজ পাই আমি কোরিয়ান রেস্টুরেন্টে।

pexels-photo-9908248.jpeg
source

বিকেল ৫ টা থেকে রাত একটা পর্যন্ত কাজ করতাম । ভালোই কাটছিল এখানে দিনগুলো কিন্তু একটা সময়ে খাবারে সমস্যার কারণ এই কাজটা ছেড়ে দিতে হয়েছিল আমাকে। তারপর আরো ৬ থেকে ৭ টা চাকরি আমি বদলিয়েছি। এখানে সবগুলো চাকরি আমি নিজেই খুঁজে নিয়েছি কারণ যাদেরকে বিশ্বাস করতাম তারা কেউ আমাকে একটা চাকরি দিতে পারেনি ।সেই সব মানুষগুলো আমাকে অনেক বিপদে ফেলেছে এবং অনেকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে। তারপর থেকে আমি আর মানুষকে বিশ্বাস করিনা। মালয়েশিয়ার অনেকগুলো ফাইভ স্টার হোটেলে আমি কাজ করেছি সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায়। মালয়েশিয়া থাকা অবস্থায় এমনও সময় গেছে আমার পকেটে ৫ রিংগিত নিয়ে ঘুরতাম।

pexels-photo-928205.jpeg
source

এটা শেষ হয়ে গেলে আমার খাবার পয়সা থাকবে না। এভাবে অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। এই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে না গেলে হয়তো আমি মানুষ চিনতে পারতাম না। তারপর অনেকদিন মালয়েশিয়া ছিলাম এবং শেষে অনেক ভালো ছিলাম । মালয়েশিয়ার কঠিন জীবনের মুহূর্তগুলো আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে এবং সেই সব স্বার্থপর মানুষ থেকে দূরে থাকতে শিখিয়েছে। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি কিন্তু মন থেকে বিশ্বাস আর কাউকে করি না। বর্তমান সমাজের মানুষজন বিশ্বাস শব্দটাকে গলাটিপে হত্যা করে ফেলেছে। আজ একজন মানুষকে উপকার করবেন একটা সময় সেই মানুষটা আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করে এটাই সবচেয়ে কষ্ট লাগে। তাই বলে কিন্তু সমাজের সব মানুষই খারাপ না এখনো কিছু ভালো মানুষ আছে বলে সমাজটা এখনো টিকে আছে।

pexels-photo-8599136.jpeg
source

যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি খারাপ পরিস্থিতিতে না পড়বেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি জীবনের অনেক কিছুই শিখতে পারবেন না। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলকে অনেক ধন্যবাদ

আমার পরিচয়

আমি মো: সেলিম রেজা। বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি লেখালেখি, বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করতে বেশি পছন্দ করি।

Sort:  
 3 years ago 

বন্ধু সত্যিই তাই একমাত্র বিপদে না পরলে বন্ধু চেনা যায় না।
ঐ বিপদের সময় যারা তোমাকে সহযোগিতা করেছিলো এরাই প্রকৃত মানুষ।
তোমার চমৎকার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে ভাগ করে নিলে। সত্যিই অনেক অজানা অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।
ভালো থেকো আর সত্যিকারের মানুষদের মনে রেখো। ❣️
তার পরেও কিছু মানুষকে বিশ্বাস করতেই হবে 💜

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 80502.73
ETH 3190.86
USDT 1.00
SBD 2.77