SBD recovery case #1 : beneficiary rme [round 27]
This post is made for recovering lost SBD : 1470
Recovered so far : 869.649 SBD
গল্প (রক্ত তৃষা) - পর্ব ২৬
Copyright Free Image Source : PixaBay
রাত এখন অনেক গভীর। চারিদিক ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে আসছে । শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা ডাক ছাড়া গ্রাম পুরো শব্দহীন এখন । মাঝে মাঝে গাঁয়ের রাস্তায় একটা দু'টো খেঁকি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে একটুখানি ডেকে উঠেই আবার চুপ হয়ে যাচ্ছে । গ্রামের প্রায় সব বাড়িরই একসময় আলো নিভে গেলো । ঘুমে তলিয়ে গেলো গোটা গ্রাম । কমলাদেবী এতক্ষণ ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন চন্ডের আগমনের জন্য । চারিদিক সব আলোহীন, শব্দহীন হতেই বুঝতে পারলেন যে মধ্যরাত্রি এখন । সময় আগত । যে কোনো সময় চণ্ডের আগমন ঘটবে জমিদারবাড়ির খিড়কির দোরে ।
কমলাদেবী ধীরে ধীরে অন্দরমহল থেকে বের হলেন । ন'মাসের গর্ভবতী এখন তিনি । চলাফেরায় বড্ড কষ্ট । তাও শত কষ্ট উপেক্ষা করে স্বামীর জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি দৃঢ় পদক্ষেপে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বাগানে এসে পড়লেন । তারপরে কেয়া ফুলের কেয়ারীর পিছন দিক থেকে অতি সন্তর্পণে বাড়ির খিড়কির দোরের দিকে অগ্রসর হলেন তিনি । আলকাতরার মতো কালো আঁধারে পথ চলার জন্য শাড়ির আঁচলের আড়ালে একটি ক্ষুদ্র মাটির প্রদীপ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন তিনি ।
পোয়াতি ভারী শরীরটা একরকম টেনে টেনে যখন তিনি খিড়করি দোরে এসে হাজির হলেন, তখন ভয়ে উত্তেজনায় তিনি রীতিমত হাঁপাচ্ছেন । এইটুকু পথ হেঁটে আসতেই যদি দম বেরিয়ে যায় তবে শ্মশান অব্দি যাবেন কিভাবে তিনি ? এইসব ভাবছেন আর হাঁপাচ্ছেন তিনি, এমন সময় দোরের বাইরে কারো পদশব্দ পাওয়া গেলো । এরপরে খুব মৃদু করাঘাত শোনা গেলো খিড়কির দ্বারে ।
এই শব্দটুকু শোনার জন্যই কমলাদেবীর কান এতক্ষণ ধরে উৎকর্ণ ছিল । এবারে একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললেন বড় করে । তারপরে খুব ধীরে ধীরে খিড়কির দ্বারের বিশাল কাঠের খিলটা খুলে দ্বার অর্গলমুক্ত করলেন । মৃদু ক্যাচঁ ক্যাচঁ শব্দ করে দরজা উন্মুক্ত হলো । বাইরের কালিগোলা আঁধারে একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখা গেলো । সেই মূর্তিটি সহসা খুব মৃদুকণ্ঠে বলে উঠলো -
"রানীমা, আমি চন্ড । চলুন, সময় হয়েছে ।"
"সময় হয়েছে" কথাটি শুনে কমলাদেবীর বুকের মধ্যে একটু ছ্যাঁৎ করে উঠলো । কথাটির মধ্যে কেমন যেন একটা গা শিরশিরে ভাব আছে । বুকটা একটু কাঁপছে তাঁর এখন ।
চন্ড তার কোমরের গেঁজে থেকে দু'টো চকমকি পাথর বের করে কয়েকবার ঠুকেই ফস করে একটা খুব ছোট মশাল জ্বালিয়ে নিলো । এরপরে কমলাদেবীকে তাকে অনুসরণ করতে বললো । গাঁয়ের রাস্তা ফেলে তাঁরা দু'জনে মাঠের পথ ধরলেন । গাঁয়ের রাস্তায় যাওয়ার ঝুঁকি আছে, যদি কেউ দেখে ফেলে তাঁদের ! তাই মেঠো পথ দিয়ে তাঁদের যাত্রা শুরু হলো । গন্তব্য গাঁয়ের শ্মশান ।
মাঠের ভেতর দিয়ে নামমাত্র রাস্তা । এবড়ো খেবড়ো বড্ড, আসলে তো এটা গাঁয়ের গরু-মোষ চলাচলের রাস্তা । ন'মাসের পোয়াতী কমলাদেবীর এমন রাস্তায় চলতে দারুন কষ্ট হচ্ছে । দাঁতে দাঁত চেপে সব কষ্ট সহ্য করে তিনি চলছেন । চন্ডকে বিন্দুমাত্র টের পেতে দিচ্ছেন না যে তাঁর কষ্ট হচ্ছে । মাঝে মাঝে দু'একটা ঝোপ জঙ্গল পড়ছে পথে । সে সব ঝোপ জঙ্গলে প্রচুর জোনাক পোকা উড়ছে, বৃষ্টির পরে এই আলোর পোকার ওড়াওড়ি খুব বেড়ে যায় ।
মাঝে মধ্যে দু'একটা ঝোঁপে ঝাড়ে কাদের জানি হিংস্র সবুজ চোখ আগুনের মতো জ্বলছে । ওগুলো শেয়াল । চন্ড মাঝে মধ্যে মুখ দিয়ে "হুট হ্যাট" শব্দ করছে, আর তাই শুনে শেয়ালেরা তফাৎ যাচ্ছে । শ্মশান আর বেশি দূরে নেই । তাই এত শেয়ালের আনাগোনা । জীবিত মানুষকে তারা ভয় পায়, কিন্তু মৃত মানুষের মাংসে তাদের উদরপূর্তি হয় । এই সব শেয়াল নরভূক । মানুষের মাংসে তাদের রুচি বেশি ।
[চলবে]
শেষের লাইনটা পড়েই যেনো একেবারে শরীরটা শিউরে উঠলো। মনে হচ্ছে সামনে ঘোর বিপদ কমলাদেবীর!
এতো মনোযোগ দিয়ে পুরো পর্বটা পড়লাম, মনে হচ্ছে গল্পের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। কতো কষ্ট করে কমলাদেবী হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে, সেটা বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছি। কমলাদেবীর মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। ভীষণ খারাপ লাগছে কমলাদেবীর জন্য। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
লেখাটা পড়ে, অনেকটাই শিহরিত হয়ে গিয়েছিলাম এই মাঝরাতে। বিপদ যে খুব সন্নিকটে, তা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছি। অপেক্ষায় রইলাম ভাই পরের পর্বের জন্য।
নমাসের পোয়াতি শুনে কেমন যেনো লাগলো। এ অবস্থায় কমলাদেবীকে মেরে ফেললে কেমন হবে ভাবতেই খুব কষ্ট লাগছে। কিন্তু শেষেরটুকু পড়ে আরো বেশি ভয় বেড়ে গেলো।
নরভূক শেয়ালের কথা শুনে অন্য রকম একটা শংকা জাগ্রত হলো হৃদয়ে, তাহলে কি ঘটতে চলেছে রানীমা’র সাথে?