ছোট গল্প ||| অভাব যখন গ্রাস করে-২।
আসসালামু আলাইকুম।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল ভাই ও বোনদের প্রতি রইল ধন্যবাদ।আশা করি সকলে অনেক সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করছেন এবং সুন্দরভাবে সময় অতিবাহিত করছেন।আমিও আপনাদের দোয়ায় ও ভালোবাসায় সুন্দরভাবে জীবন যাপন করছি এবং সুন্দর সময় অতিক্রম করছি।
আপনাদের সকলের সহযোগিতা এবং উৎসাহ মূলক মন্তব্য পেয়ে গল্পটি শেষ করার আগ্রহ পেলাম। তাই আজকে এই গল্পের শেষ পর্ব আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
অসুস্থ হয়ে পড়ে রইল।করিম মিয়া তার স্ত্রীকে অনেক নিষেধ করেছে রিক্সা না চালানোর জন্য। কিন্তু তার ছেলে মেয়ের কথা ও তার স্বামীর কথা ভেবে কোন দিক কুল খুঁজে পাচ্ছিল না । তার মাথায় যেন একটি পাহাড়ের বোঝা বহন করে আছে।
করিম মিয়ার স্ত্রী শেফালীর আজ অনেক দায়িত্ব পড়ে গেছে। একদিকে তার স্বামী অপরদিকে দুই মেয়ের দায়িত্ব। তার যেন কষ্টের সীমা নেই। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন বাসায় ফিরে তখন তার স্বামী তাকে দেখে শুধু দু চোখের জল ফেলতে থাকে। কারণ একটি সময়ে এই করিম মিয়া হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতো এবং তার সংসারের সুখের জন্য নিজের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়েছিল। আজ সেই কাজটি তার বউকে করতে হচ্ছে। শেফালির অনেক ইচ্ছা ছিল তার মেয়ে দুটোকে স্কুলে পড়াবে। সবার মনে এক ধরনের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা থাকে। তাই শেফালিরও অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল মেয়ে দুইটাকে দুই এক কলম লেখাপড়া শিখিয়ে কিছুটা কষ্ট দূর করবে। তাইতো বাড়ির পাশে একটি সরকারি বিদ্যালয় ছিল সেখানে এক শিক্ষকের সাথে পরামর্শ করল। সেই শিক্ষককে বলল স্যার আমার অনেক ইচ্ছা মেয়ে দুটোকে দুয়েক কলম লেখাপড়া শেখানোর। স্যার তাকে ভালো পরামর্শ দিতে ভুল করল না ।
বলল শেফালীকে রিক্সা চালানো বাদ দিয়ে তার স্কুলের আয়ার কাজ নেওয়ার জন্য এবং স্কুলের বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য একটি লোকের দরকার ছিল সে জায়গায় শেফালী ইচ্ছা করলে তুমি কাজ করতে পারো।
এতে তোমার মেয়েরাও স্কুল করবে এবং তুমিও কাজ করবে। তোমার মেয়ের পড়ালেখার খরচ আমি কিছু দিব আর কিছু তোমাকে জোগাতে হবে। পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ আছে এজন্য হয়তো বা পৃথিবীটা টিপে আছে বলে শেফালী স্যারকে অনেক দোয়া করতে থাকলো। শেফালী রীতিমত তার হাজবেন্ডকে সব কথা বলল এবং তার হাজবেন্ড সমস্ত সিদ্ধান্ত মেনে নিল।
এরপর একদিন হাসি ও আলোকে স্কুলে ভর্তি করে দিল এবং শেফালী সেই স্কুলে আয়ার কাজে জয়েন করলো।মোটামুটি ভালই চলছিল তাদের দিন। স্কুলের কাজ করতে করতে তার যখন চোখ মুখ খোলা হয়ে গেল। চারদিক সম্পর্কে জানাশোনা ও পরিচিতি লাভ করল। ঠিক তখন শেফালী তার পরিবারকে আরেকটু ভালো রাখার জন্য এবং তাদের চাহিদা পূরণের জন্য স্কুল ফান্ড থেকে কিছু টাকা চুরি করল আরও সংসারটি ভালোভাবে চলার জন্য।
চুরি করে অবশেষে ধরাও পরলো স্যারের কাছে । স্যার বিশ্বাস করেছিল তাদের খুব। কিন্তু বিশ্বাসের এতটা অমর্যাদা করবে সেজন্য স্যার তাকে এবং তার দুই মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে স্কুল থেকে তার দুই মেয়েকে নিয়ে চলে আসে। অভাব যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। এদিকে করিম মিয়ারও শারীরিক অবস্থা ভালো না। হয়তো কয়েকটি দিন একটু হলেও ভালোরেখেছিল বিধাতা তাদের। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস কেন জানি তাদের ভাগ্যে বারবার অভাব দেখা যায়। অভাব যেন তাদের নক করতেই থাকে। তবে কি এই অভাব হতে তারা মুক্তি পাবে না। কথায় আছে সততাই সর্বকৃষ্ট পন্থা। আর লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। আর এজন্যই হয়তোবা শেফালির ভাগ্যে অভাব বারবার নক করছে। আমার গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো। আজ যাচ্ছি আবার নতুন কোন ছোট গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।
আমি মোছাঃ সায়মা আক্তার। আমি একজন ব্লগার, উদ্যোক্তা এবং শিক্ষিকা।কবিতা লিখতে, নতুন কোনো রেসিপি তৈরি করতে এবং নতুন নতুন ডিজাইন সৃষ্টি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকতে এবং অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে খুব ভালো লাগে।তাই সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি এবং তাদের সহযোগিতায় নিজেকে সব সময় সম্পৃক্ত রাখি।
বিষয়ঃ- ছোট গল্প "অভাব যখন গ্রাস করে-২"।
কমিউনিটিঃ- আমার বাংলা ব্লগ।
আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ..........