অনুভূতির গল্প ||| নিয়তি বড়ই অসহায় ||| ১০% লাজুক শিয়ালের জন্য।
আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগের সকল ভাই ও বোনদেরকে জানাই লাল গোলাপের শুভেচ্ছা। আশা রাখছি দূর-দূরান্তের সকল ভাই ও বোনেরা ভাল আছেন? আমিও আপনাদের দোয়ায় ও বিধাতার রহমতে অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে কোন রেসিপি পোষ্ট কবিতা নিয়ে আসিনি এসেছি একটি গল্প নিয়ে ।
আমার গল্পের নাম "নিয়তি বড়ই অসহায়"। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে গল্পটি শুরু করা যাক। গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আশা।আশা সব সময় আনন্দ খুশিতে থাকতে ভালোবাসত। ছোটদের সঙ্গে খেলাধুলা এবং গ্রামের বয়স্ক বৃদ্ধরা যদি কখনো তার কাছ থেকে কোন কাজ বা কিছু চাইতো সে কখনও দ্বিধাবোধ করত না। তাদের হুকুম পালন করত। মোটকথা ছোট বড় সকলের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অনেক ভালোবাসতো।আশা দেখতে যেমন চমৎকার, অপরূপ হাসিটা ও থাকে সবসময় মুখে। আসা সকলের মাঝে চলতে-ফিরতে কখন যে,সে বড় হয়ে গেল।তা তার মা বুঝতেই পারলো না। একসময় দেখা গেল ও স্কুল শেষ করে এসএসসি পরীক্ষার পিপারেশন নিচেছ।সামনে পরীক্ষা ভীষণ টেনশন। চারদিকে ঘোরা ফেরা বন্ধ ওর মন খারাপ হয়ে গেল। আজ পরীক্ষা সামনে এসে গেছে আমি আর ঘুরতে পারবো না বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে পারব না একটু এখানে-সেখানে বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলতে পারবোনা আমাকে পড়ার টেবিলে ব্যস্ততার সাথে সময় কাটাতে হবে মনে অনেক চিন্তা।
তারপরও তার বাবা-মার সাথে তাল মিলিয়ে সে নিজের মনের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দিল। একসময় তার এসএসসি পরীক্ষা সামনে চলে আসতে লাগল মাত্র কয়েক দিন পরেই তার এসএসসি পরীক্ষা। তখন পরীক্ষা নিয়ে সে খুব টেনশন ফিল করতে লাগল এবং তার মা তাকে বলল, পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করতে হবে তা না হলে তাকে আর বাইরে আনন্দ-ফুর্তি করতে দিবেনা। রীতিমতো সে এসএসসি পরীক্ষায় দিল। পরীক্ষার যখন রেজাল্ট বের হলো তখন সব সাবজেক্টে ভালো মার্কস পেয়েও তার একটি সাবজেক্টের মার্কস খারাপ আসছে এজন্য দ্বিতীয়বার তাকে আবার প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দিতে হলো। দ্বিতীয় বার সে অনেক ভাল রেজাল্ট করে এবং মার্কস ভালো নিয়ে অনেক খুশি মনেদিনযাপন করতে লাগলো। তারপর সে আবার এইচএসসিতে ভর্তির জন্য প্রিপারেশন নিল এইচএসসি ভর্তি হয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েও ভালো রেজাল্ট করল।
এমনিতেই গ্রামের বাড়ি সবাই বলছে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। মেয়েকে পার করতে হবে। মেয়েকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিতে হবে। আসার বাবা-মার কাছে সবাই এই ধরনের কথা বলে কান ভারি করে দিচ্ছে। কিন্তু আসার বাবা-মার ইচ্ছা মেয়েকে আর একটু পড়াবে অনার্স কমপ্লিট করে ভালো একটি চাকরি মেয়েকে নিয়ে দিবে। মেয়ের নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছা নেই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু ভাগ্য বলে তো একটি কথা আছে আমরা সবাই বিধাতার একথাটি মানি জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তিনটা বিধাতার হাতে। বিধাতা যখন হুকুম করবে তখনই তা কার্যকর হবে। রীতিমতো আসারও সেই কাজটি হয়েছে। আসার বিয়ের জন্য একটি সম্বন্ধ এসেছে এবং আশাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আশাকে দেখে ওরা এতটাই পছন্দ করেছে যে তারা খুব শীঘ্রই আশাকে তাদের ছেলেকে দিয়ে বিয়ে পরিয়ে নিয়ে যাবে ওই মাসেই। তারা দিনক্ষণ ঠিক করে আসার বিয়ের ব্যবস্থা করল এবং দুই পক্ষোই খুব ভালোভাবে ধুমধাম করে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেললো।
আশার হাজব্যান্ড মোটামুটি ভালই একটা জব করতো সেলারিও অনেক পেত। আশার হাজবেন্ডের নাম ছিল আসিফ। আসিফ মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে। আসিফদের দুই ভাই এক বোন নিয়েই তাদের পরিবার। হঠাৎ একদিন প্রাইমারির সার্কুলার যখন হল তখন আসিফ আশাকে বলল যে আশা তুমি প্রাইমারির চাকরির জন্য অ্যাপ্লাই করো, রীতিমতো সে করল। আসা সেই সার্কুলার অনুযায়ী প্রাইমারির পরীক্ষা দিল।রেজাল্ট যখন হল তখন ওর রোল নং টাও ছিল পত্রিকায়।
সেই রোল নং দেখে খুশিতে আত্মহারা চিৎকার করে আসা আসিফ কে বলল আমার চাকরি হয়ে গেছে। আসিফ ও খুশি রীতিমতো তাদের সংসারের জীবন তখন প্রায় ছয় মাস। যখন তারা সাত মাসে পা দিলো তখন তাদের একটি সুখবর এলো।আশা ও আসিফ অনেক খুশি তাদের ঘর আলো করে কেউ আসছে।আশা ও সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করছে।প্রাইমারিতে চাকরির পাশাপাশি সে তার নিজের যত্ন এবং তার যে গর্ভে বেবি আছে তার যত্ন ও নিচছে।সব মিলে সে ভালোভাবেই দিনযাপন করছিল।
তার ঘর আলো করে যখন একটি ছেলে সন্তান এই পৃথিবীতে এলো। তাদের সংসারে ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পেল। আসিফ আশাকে এক মুহূর্ত না দেখলে থাকতে পেত না আশা ও তার ব্যতিক্রম নয়। দুজন দুজনার প্রতি এতোটা ভালোবাসা ছিল যে, এলাকার মানুষ বলতে শুরু করল এদের মধ্যে এত ভালোবাসা কেন?
আসিফ ও আশার ভালবাসাটা এতই ছিল যে স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বাভাবিক। একদিন আসিফ যখন অফিসে যাচ্ছিল সেদিন অফিসে যাওয়ার আগে সে আশাকে বলল, আশা আজ আমার মনটা মনটা খুব খারাপ তোমাকে আর বাবুকে রেখে অফিসে কেন জানি যেতে ইচ্ছে করছে না । তারপরও আসিফ অফিসের দিকে রওনা হলো এবং আশা ও তার স্কুলের দিকে চলে গেল বাচ্চাটিকে কাজের মেয়ের দায়িত্বে রেখে।আসিফ অফিসে পৌঁছে কিছু ফাইল ঘাটাঘাটি করতে হঠাৎ তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হলো এবং অফিসের ভিতরে চিৎকার করতে লাগল আমার প্রচন্ড বুকের ব্যথা।
অফিসের কর্মরত যারা ছিল তারা তাকে নিয়ে শুয়ে দিতেই ব্যাথা আরো বেড়ে গেল। একজন ডাক্তারের খোঁজ করল এবং ডাক্তারকে নিয়ে আসতে না আসতেই আসিফ এই দুনিয়ায় শেষ ঘুম ঘুমিয়ে পড়ল তাকে আর জাগানো গেল না। এই খবর আসার কাছে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই আসা নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলোনা। সে বারবার সেন্সলেস হয়ে পড়ছে এবং মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছে সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে পাগলের মতো হয়ে গেছে। আশা আর আগের মত নেই সেই হাসিখুশি আশা।
আমি মোছাঃ সায়মা আক্তার। আমি একজন ব্লগার, উদ্যোক্তা এবং শিক্ষিকা।রেসিপি তৈরি করতে,কবিতা লিখতে এবং বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন তৈরি করতে পছন্দ করি।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি একটি সহযোগিতামুলক এবং নিরপেক্ষ একটি কমিউনিটি। তাই এই কমিউনিটির একজন সদস্য হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি।
বিষয়ঃ- অনুভূতি "নিয়তি বড় অসহায়"।
কমিউনিটিঃ- আমার বাংলা ব্লগ।
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সদস্য ও সকলের পরিবারের সদস্যের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি.......
আহা এতো কষ্টের একটা সমাপ্তি মেনে নিতে পারলাম না। অনেক গুলো প্রশ্ন রয়ে গেলো। আশার বাবুর কি হবে? ওদের সংসার চলবে কিভাবে। সামনে কি আরো কোনো পাঠ আসবে?
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।