গল্প ||| ছোট আরাফের ভালোবাসা ||| ১০% লাজুক শিয়ালের জন্য।
বাংলা ব্লগের সকল ভাই ও বোনদেরকে জানাচ্ছি লাল গোলাপের শুভেচ্ছা। আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে কোন রেসিপি, ডাই, কবিতা পোস্ট নিয়ে আসেনি। এসেছি একটি নতুন ছোটগল্প যার নাম "ছোট্ট আরাফের ভালোবাসা" আজ আপনাদের মাঝে উপহার দিতে। দুরন্তপনা ও দুষ্টুমিতে পাকা আরাফ। আরাফ নামের ছেলেটির বয়স সাড়ে তিন বছর। সে প্রচন্ড দুষ্টুমি, দুরন্তপনা, দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি,ঝাঁপাঝাঁপি করতে অনেক ভালোবাসে। সে ভালবাসে তার মাকে, ভালোবাসে তার বাবাকে। সে ভালোবাসে সবাইকে।
সবার সাথে মিশতেও পারে খুব সহজে।যখনই তার সামনে কোন ভালোবাসার কিছু প্রকাশ করা হয় সে অনেক মনোযোগ দিয়ে সে কথাগুলো শুনে এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী সেটা করার চেষ্টা করে। আমরা বড়রা যাই করি না কেন আমাদের বাচ্চারা যদি আমাদের পাশে থাকে তারা অনেক কিছুই আমাদের টা দেখে দেখে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। কিছু শিশু আছে চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে। কিছু শিশু আছে দুরন্তপনা ছোটাছুটি করতে ভালোবাসে। তবে সব শিশুর বৈশিষ্ট্য একরকম নয়।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাইতো শিশুদের বিকাশ ও মনুষ্যত্ব গড়ে তোলার জন্য তাদের কোনো কাজে বাধা দেওয়া উচিত নয়। তাদের বিকাশ গঠনে আমাদের সবাইকে তাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। যদি ঘরের ভিতরে তাদের বন্দি করে রাখি,তাদের মনের জানালাটা বন্ধ করে রাখি তাহলে কিভাবে তাদের বিকাশ ঘটবে। তাদেরকে আমাদের সময় দিতে হবে, তাদের নিয়ে বাইরের জগতটা কে দেখাতে হবে। কবির ভাষায় বলতে হয় থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে। বদ্ধ ঘরে থাকলে জগৎটাকে কিভাবে চিনবে তারা।
আরাফ দেখতে যেমন মিষ্টি, তেমনি দুষ্ট মিতেও ষোলআনা।সে যে কাউকে অতি সহজেই আপন করে নিতে পারে। যে কোন অপরিচিত মানুষের সাথে মিশতে পারে খুব সহজে।
আমি যখন বাংলা ব্লগে কাজ করি ঠিক তখন থেকেই আরাফ আামার সাথে বসে থেকে হ্যাং আউট শুনতো।যখন রেসিপি পোষ্ট গুলো রেডি করতাম এবং ছবি উঠাতাম তখন আমাকে শুধু বলতো আম্মু ওইগুলোর ছবি উঠাও কেন? এগুলা সবজির কি কেউ ছবি উঠায়। আমি বলতাম এগুলো বাবা আমার বাংলা ব্লগে পোস্ট করব। তোমার এক ইন্ডিয়ান মামা আছে সেখানে পোস্ট করি।আরাফ বলল ও আচ্ছা, তখন চুপ হয়ে যেত কোন ডিস্টার্ব করত না।আমি যখন নিরিবিলি তে বসে কবিতা লিখতাম তখন আরাফ এসে আমাকে বলে তুমি কি আমাদের ইন্ডিয়া মামার কাছে আবার ও পোস্ট লিখছো।
যখন আমি হ্যাং আউটে কবিতা বলতাম তখন সে চুপ করে পাশে বসে আমার কবিতা বলা শুনতো।আমাকে আরাফ সব সময়ই প্রশ্ন করে বিরক্ত করতো। যে কোন জিনিসের ব্যাপারে আগ্রহটা অনেক বেশি এবং ও সব ব্যাপারে আমাকে ফলো করতো। একদিন আমি চুপ করে বসে আছি ও আমার পাশে এসে বলল আম্মু তুমি আজ পোস্ট করোনি? এজন্য তোমার মন খারাপ? ইন্ডিয়ান মামা কি তোমাকে বকা দিয়েছে? আমি বললাম ইন্ডিয়ান মামা কাউকে বকা দেয় না সে অনেক ভালো মানুষ। সে সবাইকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে, সে সবার পাশে থাকে, সবাইকে ভালোবাসে। উত্তরে আরাফ আমাকে বলল আমি তাহলে সেই মামার সঙ্গে কথা বলব। সেই মামাকে একটু দেখবো এবং ভালবাসবো।
পরের সপ্তাহে যখন আবার হ্যাং আউট চলে আসলো এবং দাদা সেই সময় কথা বলছিলেন তখনই আমি আমার ছোট্ট আরাফকে বললাম বাবা এটাই তোমার ইন্ডিয়ান মামা। দাদার কথা শুনে আমার ছেলে বললো মামা তো অনেক ভাল। দাদার কথা প্রতিদিন আমার কাছ থেকে শুনে ওর মনের ভিতরে একটা ভালোবাসা জন্মায়।
তার পর থেকেই ও চেয়ারে বসে সব সময় ভাঙ্গা একটা ক্যালকুলেটর দিয়ে ফোন করে আর বলে হ্যালো ইন্ডিয়ান মামা তুমি কেমন আছো? আমাদের বাসায় কবে আসবে? মামী কেমন আছে? তোমার মন ভালো? নাকি খারাপ? আমি একটু তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই? তুমি রাগ হয়ে থাকলে আমি কথা বলবো না। তোমার রাগ এখনো কমেনি ইত্যাদি নানান ধরনের কথা। আরও অনেক কথা বলে,যা শুনে খুব মজা লাগে, এত ভালো লাগে, আসলে ভালোবাসাটা না দেখেও যে অনেক গভীরতার হতে পারে একটি ছোট বাচ্চার কথার মাধ্যমেই তা বোঝা যায়।
আমার ছোট্ট আরাফ দাদাকে দেখেনি তার শুধু কথাগুলো শুনেছে তাতেই তার প্রতি যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু দিলেই ভালোবাসা হয় না মানুষের ভালোবাসা বিশাল কিছু না দেখার ভেতরেও ভালবাসা জন্ম নিতে পারে।
আমি মোছাঃ সায়মা আক্তার। আমি একজন ব্লগার, উদ্যোক্তা এবং শিক্ষিকা।রেসিপি তৈরি করতে,কবিতা লিখতে এবং বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন তৈরি করতে পছন্দ করি। যেকোনো বিষয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে ভালো লাগে।
বিষয়ঃ- গল্প "ছোট্ট আরাফের ভালোবাসা"।
কমিউনিটিঃ- আমার বাংলা ব্লগ।
আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমার গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ.......
শিশুদের প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হচ্ছে তার পরিবার ।পরিবারের সদস্যের কাছে প্রথম শিক্ষা পায় ।আরাফের ফোন আমার খুব ভালো লেগেছে iphone pro max ,হাহাহা। দাদার সাথে ওকে একদিন কথা বলিয়ে দেন ওর আশাপূরণ হয়ে যাবে ।
অবশ্যই আপু চেষ্টা করবো।
ছোট বাচ্চা তার বাবা-মা পরিবেশের সবকিছুই অনুকরণ করে। তার দেখা সবকিছুই নতুন এবং নতুনত্বের সাথে পরিচিত হতে চায়। যেটা আপনার কাছে অনেকবার প্রশ্ন করেছে এগুলোর কেন ছবি তুলছেন আসলে এভাবেই একসময় অনেক বড় হবে তার ভালোবাসার পূর্ণতা দেখে ভালো লাগলো।
দোয়া করবেন ভাই আমার বাচ্চার জন্য যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে।
ঠিকই বলেছেন আপু বাচ্চারা অনেক অনুকরণপ্রিয় হয়। এবং বাচ্চাদের কৌতূহল সবসময়ই বেশি হয়। সেদিক থেকে আপনার ছেলে আরাফ আপনাকে অনেক কম বিরক্ত করে। বেশ শান্তশিষ্ট মনে হচ্ছে দেখে।
না ভাই অনেক দুষ্ট এবং চঞ্চল সবসময় আমাকে দৌঁড়ের উপর রাখে।
এই কথাটা একদম ঠিক বলেছেন আপু শিশুরা অনুকরণ করতে পছন্দ করে। বিশেষ করে আমরা যদি তাদের সামনে ভালো কিছু করি তারাও সেই ভালো টার দিকেই যাবে। আবার আমরা যদি কোন খারাপ কিছু করি তাহলে তারা সেই খারাপটার দিকে যাবে। এই যে আপনি ওকে দাদার সম্পর্কে এত সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছেন এমনকি মামা হিসেবে পরিচিত করে দিয়েছেন। তার সাথে আবার হ্যাংআউটের কথাও শুনিয়েছেন এইজন্য আস্তে আস্তে ও আপনার সেই ভালো কথাগুলো শুনে অভ্যস্ত। সেই দিকগুলো আস্তে আস্তে ও নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে শুরু করে। এই বিষয়টা আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগলো। সত্যি ছোট আরাফের এরকম ভালোবাসা দেখে ভীষণ ভালো লাগবে। ওর জন্য অনেক শুভকামনা রইল আপু।
জি আপু ওর জন্য দোয়া করবেন। আর ও সবসময়ই নিজে নিজেই ফোনে কথা বলে হ্যালো ইন্ডিয়ার মামা।
অহেতুক ক্লাব ট্যাগ করা থেকে বিরত থাকুন। ধন্যবাদ।
জি ভাই ঠিক আছে। সুন্দর দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।