ছোট গল্প |||| আদর্শ ছেলে শেষ পর্ব।
কারণ শফিক মিয়া নিজেই একটি ভাড়া বাসা ঠিক করে তার মা ও ভাইকে রেখে এসেছিল। কারণ সে তার ভাই ও মাকে ছাড়তে পারবে না। এদিকে তার স্ত্রীকেও বলতে পারবেনা। তাইতো দুদিকে সামলে নিয়ে সে যুদ্ধ করছে নিজের সঙ্গে। রীতিমতো কেটে যায় প্রায় সাত মাস। তার স্ত্রী একদিন শফিক মিয়া কে জিজ্ঞাসা করল তুমি তোমার মার কোন খোঁজ নিয়েছো।শফিক মিয়া বলল না তুমিই তো তাদেরকে বের করে দিয়েছো তাহলে আমি কোন মুখ নিয়ে তাদের খোঁজ নিব।তখন রীতি মতো বলল ভালো করেছো আমাদের সংসারে আর অশান্তি থাকবে না আর বেশি মানুষের ঝামেলাও থাকবে না খরচও হবে না।
শফিক মিয়া তার স্ত্রী সোনালীকে জিজ্ঞাসা করল কেন কথাটা তুমি বললা। সোনালী বলল তোমাকে একটু যাচাই করে দেখলাম তুমি ঠিক আছো কিনা। এদিকে সোনালী তার বাবার বাড়িতে যাবে তার মা প্রচন্ড অসুস্থ।তাই শফিকের কাছে ফল ও বিভিন্ন জিনিস আনার জন্য বলল।শফিক বললো কোথায় যাবে আর কি হয়েছে। তখন সোনালী শফিক কে বলল আমার মা অসুস্থ তাকে দেখতে যাব।কিন্তু শফিক তাকে আর বাধা দিল না।কারণ শফিক জানে একটি মা এই পৃথিবীতে কতটা আপন।তাই তো সোনালীকে সে বাধা দেয়নি। ইচ্ছে করলে বাধা দিতে পারতো এবং প্রতিশোধ নিতে পারত। কারণ সে তার মায়ের আদর্শে বড় হয়েছে।
শফিক রীতি মতো চিন্তা করতে লাগল কিভাবে তাদের পরিবার একসঙ্গে থাকবে। তাইতো তার মায়ের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে অনেকক্ষণ মায়ের সঙ্গে প্ল্যান করলো।মা আমি বাড়িতে চলে যাব আর সোনালী কখনো তোমার কাছে ফোন করলে বা খোঁজ করলে তুমি উল্টা সোনালীকে দোষ দিবে।কারণ সোনালীরও একটু বোঝা উচিত ভালোবাসা হারিয়ে গেলে কেমন লাগে।সেই প্ল্যান মাফিক একদিন শফিক বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল । কিছুদিন গোপন ভাবে লুকিয়ে থাকলো।সোনালী তার বাড়িতে যাওয়ার পর যখন বাসায় চলে এলো এবং ফোন করেও শফিক মিয়াকে পাচ্ছিল না।
তখন চারদিকে খোঁজাখুঁচি শুরু করে দিল।এক প্রকার মাথায় যেন বাচ পড়ে গেল।তাই বাধ্য হয়ে তার মাকে ফোন দিল। যে মা অনেকদিন হলো শফিক বাসায় আসছে না খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আপনার কাছে কি গিয়েছে। তার মা তাকে উত্তরে বলল না। আমরা চলে আসার পর তোমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই আমাদের।তুমি আমার ছেলেকে কি করেছ। আমার ছেলের কিছু হলে তোমাদেরকে আমি ছাড়বো না। একটি সময় সোনালী টেনশন করতে করতে তার বাবার কাছে সব খুলে বলে। তার বাবা জানতো না যে শফিক মিয়া তার ছোট ভাই ও মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
কিন্তু তার বাবা যখন সবকিছু শুনতে পেল তার বাবা অনেক কষ্ট পেল। তার বাবা মেয়েকে বলল কি করেছো মা এটা তুমি ঠিক করো নি।যে মা সন্তানের জন্য এত কষ্ট করেছে বছরের পর বছর।সেই মাকে তুমি বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো। আর এটা কেউ কখনো ক্ষমা করবে না। আমিও তোমাকে ক্ষমা করব না। তুমি তোমার শাশুড়ি ও দেবরকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো এবং তাদের কাছে ক্ষমা চাও।সোনালী তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার বাবার কাছে প্রথমে ক্ষমা চাইলো তারপর তার শাশুড়িকে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য তার বাবার কাছে সাহায্য চাইল। সোনালী ও সোনালীর বাবা সেই শফিকের দেওয়া ভাড়া বাড়িতে গিয়ে শফিকের মা ও শফিকের ছোট ভাইকে নিয়ে আসার চেষ্টা করে।
কিন্তু শফিকের ছোট ভাই কিছুতেই সেই বাড়িতে আর ফিরে আসতে চাইলো না।অনেক বোঝানোর পর শফিকের মা ও ছোট ভাই শেষে বাড়িতে চলে এলো। এদিকে শফিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।তারপরও এক সপ্তাহ শফিক গা ঢাকা দিয়ে রইল।কারণ শফিকের অভাবটা যেন তার স্ত্রী সোনালী বুঝতে পারে সেজন্য শফিক এই প্ল্যান করেছে।তারপর হঠাৎ একদিন শফিক যখন তার মাকে ফোন দিল তখন তার মা তাকে বলল বাবা আমরা বাড়িতে চলে এসেছি তুমি যেখানেই থাকো চলে আসো।বৌ-মা তার ভুল বুঝতে পেরেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শফিক চলে এলো তার সুখের নীড়ে এবং সোনালী কে নিয়ে বলল দেখো একটি মানুষের জন্য সুখের একটি নীড় কিভাবে ভেঙ্গে যায় । তুমি কি বুঝতে পেরেছ তোমার সমস্যাটি কি ছিল।পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটানো মা-বাবা ভাই-বোন নিয়ে সুখের সংসার হলো আসল সংসার।একা কোন জিনিসের তৃপ্তি পাওয়া যায় না।মিলেমিশে থেকে যেকোনো কাজ সুখে দুঃখে পাশে থেকে করাই আদর্শ পরিবার। আমি কখনো চাইনি আমি আমার মাকে দূরে ঠেলে দিব মার মনে এতটুকু কষ্ট দিব। কারণ আমি দেখেছি অনেক ছোট থেকেই আমার মা অনেক কষ্ট করেছে এবং আমি আমার মার জন্য নিজের জীবনটা দিতেও প্রস্তুত তাই তো মাকে আলাদা বাসা ভাড়া করে সেখানে মার সঙ্গেই আমি যোগাযোগ করেছি। আর তোমাকেও ভালো রেখেছি তোমাকে তোমার কষ্টটি বুঝতে দেয়ার জন্য।
তারপর তাদের পরিবারেরই আদর্শ ছেলের জন্য আবার সুখের দিন চলে আসলো।আর যেকোনো পরিবারের এই আদর্শ ছেলের জন্যই পরিবারটিকে থাকে।
বন্ধুরা আমার ছোট গল্পটি কেমন লাগলো। আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমি চেষ্টা করি সামাজিক কিছু গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হতে।আজ যাচ্ছি আবার হাজির হব নতুন কোন গল্প নিয়ে।
আমি মোছাঃ সায়মা আক্তার। আমি একজন ব্লগার, উদ্যোক্তা।কবিতা লিখতে, নতুন কোনো রেসিপি তৈরি করতে এবং নতুন নতুন ডিজাইন সৃষ্টি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকতে এবং অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে খুব ভালো লাগে।তাই সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি এবং তাদের সহযোগিতায় নিজেকে সব সময় সম্পৃক্ত রাখি।
বিষয়ঃ-ছোট গল্প "আদর্শ ছেলে শেষ পর্ব"।
কমিউনিটিঃ- আমার বাংলা ব্লগ।
আপনার হাজার ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করে আমার এই পোস্টটি পড়ে এবং সুন্দর মতামত প্রদান করে সহযোগিতা করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।