ছোট গল্প ||| অভাব যখন গ্রাস করে।
আসসালামু আলাইকুম।আমার বাংলা ব্লগের সকল ভাই ও বোনেরা আশা করছি সকলের পরিবারকে নিয়ে সুস্থ ভাবে দিন যাপন করছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ও সৃষ্টিকর্তার রহমতে বেশ ভালো আছি।
আমি আজ আপনাদের মাঝে একটি ছোট গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি।কবিতা লেখার পাশাপাশি আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আপনাদের মাঝে গল্প নিয়ে হাজির হতে। জানিনা আমার গল্পগুলো আপনাদের কেমন লাগে তবে আপনাদের মনে যদি আমার গল্পগুলো একটু স্থান পায় তবেই আমার লেখা সার্থক।আর কথা না বাড়িয়ে চলুন গল্পের সূচনায় যাওয়া যাক। আমার গল্পের নাম "অভাব যখন গ্রাস করে"।
ছোট্ট একটি পরিবার। চারজনের সংসার। করিম মিয়ার দিন বেশ ভালোই যাচ্ছিল। অভাব বা কষ্টে থাকলে যে মানুষ সুখী হয় না তা কিন্তু নয়। মনের সুখই প্রকৃত সুখ।
করিম মিয়া দরিদ্র ছিল সে রিকশা চালিয়ে তার পরিবারকে সুখে রাখার চেষ্টা করত। বর্তমান সময়ে যে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। তাই এই অবস্থায় তার সংসার চালানো একটু হিমশিম হয়ে যাচ্ছিল। করিম মিয়ার দুটো মেয়ে। মেয়ে দুটোকে করিম মিয়া প্রচন্ড ভালোবাসত। মেয়ে দুটোর মুখের হাসির জন্য সে সারাদিন পরিশ্রম করত। নিজের যে একটু শরীরে রেস্ট দিতে হয় সেটাও সে ভুলে যায়।সারাদিন রিকশা চালাতো আর রাতে একটি ভাড়া করা সেলাই মেশিনের কাজ করতো।এভাবেই চলে যাচ্ছিল তাদের দিন। মেয়ে দুটোর নাম আলো আর হাসি।
দুই মেয়ের মুখে হাসি ও জীবনে উজ্জল আলো আনার জন্য তার এত পরিশ্রম। আসলে প্রত্যেক বাবারাই তার সন্তানের জন্য জীবনের সর্বস্ব দিতে রাজি। বাবারা মনে হয় এমনি হয়।নিজের পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের দিকে না তাড়িয়ে তার পরিবারের সুখের জন্য সারাদিন পরিশ্রম করে গেলেও তার কোন শারীরিক সমস্যা হয় না।
এটা শুধু গরিব মানুষের জন্য নয়। এই নীতিটা ধনী গরিব সকল বাবাদের মধ্যে কাজ করে। সংসারটাকে সুখে রাখার জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম করতো। সেই করিম মিয়ার ভাগ্যে আজ এ কি নেমে আসলো।রাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছিল তার কিছু অর্ডারি কাজ ছিল সেই কাজ করে যখন একটু ক্লান্ত লাগছিল তখন সে ঘুমিয়ে পরল।তার শরীরের একটু রেস্ট দেওয়ার জন্য। কিন্তু সকালে যখন রিক্সাটা নিয়ে বেরিয়ে ছিল তখন এক গাড়ি এসে তার রিক্সার ওপর দিয়ে নিয়ে গেলে তার পায়ে অনেক ক্ষতি হয়ে য়ায়।বলতে গেলে পায়ের এক সাইডের মাংস অনেকটাই সমস্যা হয়েছে। ভাগ্যের জোরে হয়তো করিম মিয়া বেঁচে গেছে।
তার এই অবস্থায় ইনকাম করার মত তার পরিবারে আর কেউ ছিল না। সে নিজে ইনকাম করতো।কিন্তু করিম মিয়া আজ বড়ই দুর্ভাগা।অসুস্থ হয়ে পড়ে রইল। ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেক টেস্ট করার প্রয়োজন কিন্তু নেই তার ঘরে টাকা।অনেক লোকজনকে ধরে পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিছু টাকা পেল। সেই টাকা দিয়ে চলতে থাকলো তার চিকিৎসা। কিন্তু পরের টাকা দিয়ে কদিন চলে সংসার।
চারদিক থেকে নেমে এলো কষ্টের ছায়া। মেয়েদুটো আর না খাওয়ার কষ্ট সহ্য করতে পারছে না।আলো আর হাসি কেবলই ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তার মা তাদের কষ্ট দেখে আর সহ্য করতে না পেরে মানুষের বাসায় কাজ করতে যায়। কিন্তু বর্তমান যুগ হচ্ছে ডিজিটাল যুগ। কারো নাম পরিচয় না থাকলে এবং চেনা জানা না থাকলে কেউ কাউকে কাজে নিতে চায় না। এভাবে বেশ কয়েকটি বাসায় কাজের জন্য খোঁজ করতে থাকে। ভাগ্যক্রমে তার একটি বাসাও কাজের জন্য ঠিক হলো না। পরে সে নিরুপায় তাই বাধ্য হল করিম মিয়ার শেষ সম্বল রিক্সাটি নিয়ে বের হওয়ার জন্য।
আমি মোছাঃ সায়মা আক্তার। আমি একজন ব্লগার, উদ্যোক্তা এবং শিক্ষিকা।কবিতা লিখতে, নতুন কোনো রেসিপি তৈরি করতে এবং নতুন নতুন ডিজাইন সৃষ্টি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকতে এবং অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে খুব ভালো লাগে।তাই সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি এবং তাদের সহযোগিতায় নিজেকে সব সময় সম্পৃক্ত রাখি।
বিষয়ঃ- ছোট গল্প "অভাব যখন গ্রাস করে-১"।
কমিউনিটিঃ- আমার বাংলা ব্লগ।
আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ..........
গল্পটা বেশ দুঃখজনক ছিল। আসলে অনেক সময় অনেক মানুষকেই এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। আর হ্যাঁ একটা কথা ঠিক বলেছেন অনেক বাবারা এমনই হয় যারা নিজের সন্তানের খুশির জন্য নিজের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো বিলীন করে দেয়। যাইহোক শেষে করিম এক্সিডেন্ট হলো আবার করিম মিয়ার স্ত্রী ও কোন কাজ খুঁজে পেল না। শেষে আর উপায় না পেয়ে করিম মিয়ার সে সম্বল রিক্সা নিয়ে বের হতে হলো তাকে সত্যিই অভাব যেন তাদেরকে একদম গ্রাস করে ফেলেছে। যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে এই সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
সুন্দর মন্তব্য করে উৎসহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
আপু আপনি খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন। আপনার এই গল্প সত্যিই খুবই দুঃখজনক। এমন গল্প পড়তে অনেক ভালো লাগে। গরীব হলেও করিম মিয়ার সংসারে সুখ ছিল। কিন্তু দেখেন ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। একটা এক্সিডেন্ট করিম মিয়ার সংসার তছনছ হয়ে গেলো। মেয়েদের মুখে হাসি ফুটাতে তার স্ত্রী বাসার কাজ খুঁজে কিন্তু তাও কপালে জোটেনি। অবশেষে করিম মিয়ার শেষ সম্বল নিয়ে বের হতে দ্বিধাবোধ করেনি। ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।
জি আপু গরিব মানুষদের সংসারে এখন সুখ খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু বড়লোকদের সংসারে সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না।