|| উৎসবে ওরাও হাসুক ||
আজকে আমি আপনাদের সাথে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের একটা পোস্ট শেয়ার করতে চলেছি। যারা আমাকে অনেক আগে থেকে চেনেন বা যারা আমার পরিচিতি মূলক পোস্টটি পড়েছিলেন তারা হয়তো জানেন যে আমি একটি NGO এর সাথে যুক্ত আছি,যার নাম Webstar Services Society। ( আমি আমাদের NGO এর ফেসবুক পেজের লিংকটি এখানে শেয়ার করলাম, আপনারা সেখানে গিয়ে আমাদের সমস্ত কর্মকান্ড দেখতে পারবেন)। সারা বছর ধরেই আমাদের এই এনজিওর কিছু না কিছু কর্মকাণ্ড চলতেই থাকে। কিন্তু প্রতি বছরে আমাদের সব থেকে বড় যে প্রজেক্ট তার নাম হলো "উৎসবে ওরাও হাসুক"।
এখানে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে বিভিন্ন জায়গায় যে সকল বাচ্চারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে পুজোর সময় তাদের মুখে একটু হাসি ফোটাবার চেষ্টা। বিগত ছয় বছর ধরে আমাদের এই সংস্থা এই কাজটি করে আসছে। এই বছর নিয়ে আমরা সপ্তম পর্ব পদার্পণ করলাম। গত বছর আমরা আড়াই হাজার শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছিলাম। আর এই বছরে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা তিনহাজার শিশু।
এই প্রোগ্রামটি পুজোর আগে আমরা বিভিন্ন জেলা জুড়ে করে থাকি। এই বছর আমাদের প্রোগ্রামের শুভ সূচনা হয়েছে আমাদের জেলার মাধ্যমে।
গত রবিবার অর্থাৎ ৪ঠা সেপ্টেম্বর কৃষ্ণনগরে আমরা এই অনুষ্ঠানটি করি।আমরা দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করি। আমাদের প্রথম কর্মসূচি ছিল "রক্তার্পণ উৎসব"। অর্থাৎ রক্তদানে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।
কম বেশি আপনারা অনেকেই জানেন রক্তের আকালের কথা। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে রক্তের আকাল দেখা দেয়। একমাত্র যারা এই সমস্যার ভুক্তভোগী তারাই এই ভোগান্তি টা বোঝেন এবং এটাও বোঝেন যে সেই সময় রক্ত না পাওয়া গেলে কিরকম বিপর্যয় হতে পারে, এই বিষয়ে আর বিস্তার আলোচনা করছি না। সাধারণত সারা বছর আমাদের কাছে রক্তের জন্য বিভিন্ন ফোন আস্তে থাকে। নদিয়া জেলা জুড়ে আমাদের কয়েকজন মেম্বারের ফোন নাম্বার ডিস্ট্রিবিউট করা আছে রক্তের প্রয়োজনে ফোন করার জন্য। সাধারণ মানুষ যখন ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পায় না তখন তারা আমাদের সেই সমস্ত নাম্বার গুলিতে যোগাযোগ করে এবং আমরা বিভিন্ন ডোনারের মাধ্যমে তাদেরকে রক্তের যোগান দিয়ে থাকি। মূলত আমাদের চেরা পরিচিত পরিজনদের থেকেই এই ডোনার বেছে নেওয়া হয় এবং কখনো কখনো আমাদের নিজেদের মেম্বাররা এমনকি আমিও রক্ত দিয়েছি।এই রক্তের ঘাটতি মেটাতে আমরা রক্তদানের একটা কর্মসূচি নিই।
সকালবেলা দশটা থেকে ছিল আমাদের রক্তদান পর্ব। আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি ভ্রাম্যমান বাস সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে একটি বাস জোগাড় করেছিলাম যার মধ্যে ডোনারের থেকে রক্ত নেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
সকাল ১০ টা থেকে এই কর্মসূচি আমাদের বেলা দুটো অবধি চলে। আমাদের নিজেদের মেম্বারদের মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন ডোনার সেদিনকে রক্ত দান করেছিল।সেদিন আমি নিজেও রক্ত দিয়েছিলাম।
দুপুরের পরে সন্ধে ছটা থেকে ছিল আমাদের বস্ত্র প্রদান পর্ব।
কাছাকাছি একটি ইটভাটার কিছু শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের যে সমস্ত ছোট শিশু রয়েছে তাদেরকে জামা কাপড় দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলাম। আমরা আগে থেকেই বেশ কিছু জায়গায় সার্ভে করে বিভিন্ন মাপের জামা কাপড় কিনে রেখেছিলাম। বস্ত্র প্রদানের এই অনুষ্ঠানে আমরা তাদের সকলকে সেই সমস্ত জামা কাপড় পুজোর উপহার হিসেবে দিই।
খুবই ভালো লাগে সেই ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলি পুজোর আগে নতুন জামা কাপড় পেয়ে যখন মিষ্টি হাসে, তাদের মুখগুলি দেখে মনটা সত্যিই আনন্দে ভরে যায়। এই আনন্দ কারো সাথে তুলনা করা যায় না। তাই আমরা চেষ্টা করি সব সময় কোন না কোন ভাবে তাদের মুখে এরকম ভাবে হাসি ফোটাবার, "সেই কারণেই আমাদের পণ উৎসবে ওরাও হাসুক।"
তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের উৎসবে ওরাও হাসুকের প্রথম পর্ব। এরপরে আমাদের আরো কয়েকটি পর্ব বিভিন্ন জায়গায় চলবে, যেগুলি আগামী দিনে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
একটি খবরের চ্যানেল এসেছিলো আমাদের খবর করতে,সেই লিংক এখানে দেওয়া থাকলো।আপনারা চাইলে এখান থেকেও বিশদে জানতে পারবেন।
এই ধরনের কাজ সবার দ্বারা সম্ভব নয়। আর সবাই পারেও না। এটার জন্য আলাদা মন থাকা চাই। অনেকেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে হয়তো কিন্তু আমার কাছে শুধু টাকা টাই সব না,, এভাবে সময় দিয়ে কজন আছে যে পেছনে লেগে থাকে!!! অনেক মহৎ একটা কাজের সাথে যুক্ত আছো ভাই। আমার বিশ্বাস ভগবান তোমাদের সবার ভালো টাই করবেন সব সময়। 🙏
আশীর্বাদ কোরো দাদা,যাতে সবসময় এরকম কিছু করে যেতে পারি।