|| কলকাতায় বন্ধুর জন্মদিন পার্টি | ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্যে ||
নমস্কার বন্ধুরা।কেমন আছেন সবাই?
আমি ভালো আছি।সকলকে ভালোবাসা জানিয়ে আমি আজকে আমার লেখা শুরু করছি।
আজ বলবো আমার এক বন্ধুর জন্মদিন পার্টির কথা।বন্ধুটির সাথে আমার পরিচয় আমার অন্য একটি বন্ধুর মাধ্যমে।কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমার সেই বন্ধুর সাথে তার কোনো কারণে মনোমালিন্য হওয়ায় তাদের মধ্যে আর আগের মতো সুসম্পর্ক নেই।কিন্তু আমার সাথে সেই বন্ধুটির যোগাযোগ এখনও রয়ে গেছে। যাইহোক,সেসব কথা আমার আলোচ্য বিষয় নয়,তাই সেই আলোচনা করছি না।আমি আমার টপিকে ফিরে যাই।
তো সেই বন্ধুটি আমাকে জন্মদিনের প্রায় ২ মাস আগে বলে রেখেছিল যে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যেনো আমি যাই,তো এখানে আমার না যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ছিল না।এই অনুষ্ঠানটি ছিল 04/07/2022 তারিখ,অর্থাৎ গত সোমবার।
অনুষ্ঠানটি তার নিজের বাড়িতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।মূল অনুষ্ঠানটি ছিল সন্ধে বেলা,তো সে আমাকে বলেছিল আমি যাতে তাড়াতাড়ি চলে যাই,কারণ আমাকে আবার বাড়ি ফিরতে হবে।আসলে তার বাড়ি কলকাতা তে, আর আমি যাবো নদীয়া থেকে।অর্থাৎ আমার বাড়ি থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
ট্রেনে করে যেতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা।
তো আমি ঠিক করি যেহেতু ও অতো রাতে আমার বাড়ি ফেরা সমস্যা,তাই আমি রাতে আমার দিদির বাড়ি চলে যাবো,সেখানে রাতটা কাটিয়ে পরদিন বিকেল বাড়ি ফিরে আসবো। ২ দিন আগেই আমি মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছিলাম কখন বাড়ি থেকে বেরোবো,কোন ট্রেন ধরে যাবো, কোন ট্রেনে ফিরবো-এসব।
যাইহোক অবশেষে এলো,সেইদিন অর্থাৎ সোমবার।
আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম যে সকাল সকাল সেই বন্ধুটির জন্যে একটি উপহার কিনে নিয়ে আসবো।তারপর দুপুর ২ এর দিকে কোনো একটা ট্রেন ধরে বেরিয়ে পড়বো তার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সমস্যায় পড়লাম সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হওয়ায়। আগেরদিন রাতে পড়তে বসেছিলাম, তো পড়া শেষ করে ঘুমাতে যেতে প্রায় রাত ০৪:০০-০৪:৩০ বেজে যায়,ফলে সকালে প্রায় ১১ এর দিকে ঘুম ভাঙে।
তাই সব দিক দিয়েই দেরি হয়ে যায়।
হাতে সময় কম থাকায় চা-বিস্কুট খেয়েই উপহারটি আনতে বেরিয়ে পরি ।
আমার এক বন্ধু আছে সে নিজে হাতে মেয়েদের বিভিন্ন গয়না তৈরি করে,তাই তার কাছেই বলে রেখে ছিলাম।
বন্ধুটির জন্যে আনা উপহার 👇🏻
তার বাড়ি থেকে উপহার টি নিয়ে বাড়িতে ফিরে হঠাৎ শরীর টা খারাপ করতে লাগলো,হয়তো গরমে।তারমধ্যে সকাল থেকে কিছু না খেয়ে ছিলাম, পেটে ভারী কিছু পড়েছিল না, তার জন্যও হতে পারে।
বাড়িতে এসে সবার আগে চোখে মুখে ভালো করে জল দিয়ে একটু ভাত খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে তারপর সুস্থ বোধ করলাম। ফলতো কিছুটা দেরি হলো, অগত্যা আমার পরের ট্রেনটা না ধরা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তো যাই হোক এরপর স্নান করে ০৩:২০ এর ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। যথাযথ সময়ে স্টেশনে পৌঁছে গেলাম এবং ট্রেনে উঠে বসলাম।
সঠিক সময়েই ট্রেন ছাড়লো। আড়াই ঘন্টার রাস্তা, একা একা সময় কাটানো বেশ কষ্টকর ছিলো। তাই আমি ভাবলাম যেহেতু সেদিনকে সোমবার ছিল এবং রাত্রেবেলা আমার লেভেল ০৩ এর ভাইবা পরীক্ষা ছিল, তাই level ০৩ এর কিছু ইম্পর্টেন্ট টপিকস একটু চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম।
এইভাবে বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। তারপর হঠাৎ একটু খিদে পাচ্ছিল। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে ছোটবেলা থেকে যখনই ট্রেন জার্নি করি ট্রেনে উঠে কিছু না কিছু খেতে খুব ভালো লাগে, যতই পেট ভরা থাক, ট্রেনের কোন খাবার না খেলে মনে হয় যেন ট্রেন জার্নিটা সম্পূর্ণ হলো না। ছোটবেলায় যখন বাবা-মার সাথে ট্রেনে করে কোথাও যেতাম তখন তাদের কাছে আবদার করতাম। আর এখন অধিকাংশ সময় একাই জার্নি করি, তাই নিজের আবদার নিজেই মেটাই।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পরে ট্রেনে বাদাম ছোলা ভাজা এইসব উঠল। দেরি না করে আমি এক প্যাকেট বাদাম কিনে খেতে লাগলাম, কিছুটা সময় তো অন্তত কাটবে।
যাইহোক এভাবেই পুরো সময়টা কেটে গেল এবং আমার গন্তব্য স্টেশন দমদম চলে আসলো। আমার বন্ধুটির বাড়ি যেতে গেলে দমদম থেকে মেট্রো করে 'নোয়াপাড়া' নামতে হবে ।সেখান থেকে খানিক হাঁটলেই তার বাড়ি। তারপর আমি দমদম নেমে আবার মেট্রোতে উঠলাম।
মেট্রো করে নোয়াপাড়া পৌছালাম। দমদমের একটা স্টপেজ পরেই নোয়াপাড়া। তারপর সেখানে নেমে বন্ধুটিকে ফোন করলাম, তারপর তোর এড্রেস শুনে হেঁটে পৌঁছে গেলাম তার বাড়িতে। মেট্রো স্টেশন থেকে দশ মিনিট মত লাগলো হেঁটে যেতে। তার বাড়ি ঢুকতে ঢুকতে প্রায় সন্ধে ০৬:০০ টা বেজে গেল।
তারপর তার বাড়িতে পৌঁছে দেখি অলরেডি ২-৩ জন বন্ধু আগে থেকে ছিল। তাদের সাথে গল্প গুজব হলো, আড্ডা মারা হলো। তারপর আমরা সবাই মিলে বেলুন ফোলাতে গেলাম।
এভাবে আরো কিছুটা সময় পেরিয়ে গেল। যেহেতু আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাব, তাই তাড়াহুড়ো করছিল ওরা। কিন্তু কেক আসতে দেরি হয়, তাই সবকিছুই দেরিতে হচ্ছিলো।
কেকটা আসলে অনলাইনে বুক করা হয়েছিল, তাই ডেলিভারি হতে সময় লাগছিল।কেকটা আসতে আসতে প্রায় রাত আটটা বেজে গেল।
তারপর সবাই রেডি হয়ে কেক কাটার তোড়জোড় করলো। এরপর কেক কাটা হলো, সবাই মিলে অনেক আনন্দ হল।
আমি ভেবে রেখেছিলাম ওদের বাড়ি থেকে ০৯:০০-০৯:১০ এর মধ্যে বেড়িয়ে পড়বো,কিন্তু কোনো কিছুই সময় মতো চলছিল না।কেক কাটা পর্ব শেষ হওয়ার পর,যাদের বাড়ি যাওয়ার তাড়া ছিলো, তারা সবাই একসাথে খেতে বসে পড়লো।
অর্থাৎ আমিও তখন খেতে বসে পড়লাম,কারণ রাতে আবার level ০৩ এর ভাইবা পরীক্ষা ছিল,তাই আমারও বাড়ি যাওয়ার তাড়া ছিল।কোনো মতে খেয়ে উঠে আমি আরও দুটো বন্ধু সেখান থেকে বেরিয়ে গেলাম।তারপর তারা দুজন একসাথে গেলো, এবং আমি একা গেলাম।
ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ৮ মিনিট মতো হাঁটলেই অটো স্ট্যান্ড আছে,সেখান থেকে আমার দিদি বাড়ি যাওয়ার অটো পাওয়া যায়।তো আমি একাই অটো স্ট্যান্ড এ গেলাম।যেহেতু রাত হয়ে গেছিল,তাই অটো ওয়ালা গুলো আমার দিদি বাড়ির একদম সামনে যাবেনা বললো।যেখান নামাবে,সেখান থেকে আরও ১০ মিনিট হাঁটলে তবে দিদি বাড়ি ।অগত্যা আমাকে ওই অটোতেই উঠতে হলো।
এদিকে ক্লাস ও শুরু হয়ে গেছিল। অটো তে থাকতেই লেভেল ০৩ এর ডিসকর্ড চ্যানেল এ মেসেজ করে জানলাম মিনিট ১৫ পড়ে আমার ভাইভা হবে।এদিকে তখনও আমি দিদি বাড়ি ঢুকতে পারিনি।এর ১০ মিনিট পর আমার স্টপেজ চলে আসলো, আমি আবার level ০৩ এর চ্যানেল এ মেসেজ করে জানলাম আমার পরীক্ষার সময় চলে এসেছে।সেই সময় কোনো উপায় না দেখে রাস্তার ধারে একটি বাস স্টপে বসেই আমি পরীক্ষাটি দিলাম।
কারণ বাড়ি পৌঁছে পরীক্ষা দিতে গেলে দেরি হয়ে যেত, আর রানিং এ পরীক্ষা দিতে গেলে নেটওয়ার্ক সমস্যা হতো। তাই আমার কাছে কোন উপায় ছিল না। এরপর পরীক্ষা দিয়ে আমি দিদির বাড়ি ঢুকে গেলাম, তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম যে আমি level ০৩ এর ভাইবাতে পাশ করতে পেরেছি। সারাদিন যখন টেনশন হচ্ছিল, তখন দিনের শেষে এই মেসেজটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার আজকের গল্প, এখানেই শেষ করছি আজকে। ভালো থাকবেন সকলে।
পোস্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে বন্ধুর জন্মদিন অনেক চমৎকার একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন এবং সেই মুহূর্তটা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সুন্দর এই মুহূর্ত আমাদের মাঝে চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।
বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে,আর সেটা যদি এরকম ভাবে কোথাও ঘুরতে গিয়ে হয়,তালে তো কোনো কথাই নেই।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্যে।
আপনি বিস্তারিত ভাবে খুব সুন্দর উপস্থাপন করেছেন বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি সম্পর্কে। বেশ ভালো লেগেছে আপনার এই লেখাগুলো। আশা করি খুব আনন্দঘন একটি মুহূর্ত পার করেছিলেন দিনটিতে।
আমি বন্ধুদের সাথে থাকতে সবসময়ই ভালোবাসি।ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য এবং কমেন্ট করার জন্যে।
দুই মাস আগে থেকেই জন্মদিনের পার্টির দাওয়াত দিয়ে রেখেছে শুনে ভালো লাগলো। তাহলে তো না যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু এত দূর থেকে আপনি অনেক কষ্ট করে জন্মদিনের পার্টিতে এটেন্ড করলেন। পুরো ট্রেন জার্নি থেকে শুরু করে সবকিছুই অনেক ভালো লাগলো। সবশেষে সুন্দরভাবে জন্মদিন উদযাপন করতে পেরেছেন ভালো লেগেছে। আর হচ্ছে সবশেষে লেভেল তিন এর পরীক্ষাটা পাস করতে পেরেছেন এই মেসেজটা পেয়ে খুশি হয়েছেন।
হ্যাঁ আপু,অনেক ভালো কেটেছে দিনটা।ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্যে।
এত অগ্রিম দাওয়াত আসলে এটা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। অনেকে তো শুনেই না বন্ধু বান্ধবের বার্থডে। যাই হোক অনেক মজা করলেন এবং সবকিছুর মাঝে ও লেভেল তিনের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন এটা দেখে খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে বন্ধুত্ব অটুট থাকলে সবই সম্ভব হয়।
ভালো থাকবেন আপনিও।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!