এই ছোট্ট গল্পটি আপনার জীবন বদলে দিতে পারে।

in আমার বাংলা ব্লগlast month (edited)

আসসালামু আলাইকুম

20210815_140104.jpg

Background Image Credit

প্রথমেই আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল সদস্যদেরকে আমার পক্ষ থেকে দোয়া এবং ভালোবাসা। সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি।

তো বন্ধুরা আজকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে এমন একটি গল্প শেয়ার করতে যাচ্ছি যা পড়ে আপনার মন ছুয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ

গল্পের শুরু

কাশিমপুর নামের একটা গ্রামে একজন শিক্ষক ছিলেন। যিনি তার কাজের মাধ্যমে বেশ পরিচিত। তার কাজের প্রশংসা পুরো গ্রামবাসী করে থাকে৷ আর করবে নাই বা কেন? তিনি অন্য শিক্ষকদের চেয়ে অনেক ভিন্ন। তিনি তার জীবনে কোন ছাত্র-ছাত্রীর গায়ে হাত তুলেন নি। ক্লাসে তিনি প্রবেশ করলেই সকল শিক্ষার্থী একদম চুপ হয়ে যেতো। ভাবছেন হয়তো বা শিক্ষককে ভয় পেয়ে সবাই চুপ হয়ে যায়৷ বিষয়টা একদম ভুল। আসলে রহিম স্যার যখনি ক্লাস করাতেন তখন তার টিচিং স্টাইল দেখে সবাই একপ্রকার মুগ্ধ হয়ে যেতো। ক্লাসের দুষ্ট ছেলেরাও স্যারের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনত। ক্লাসে কেউ না আসলে স্যার তাদের খবর নিতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে স্যারের মনে হয় বন্ধুদের মতো সম্পর্ক ছিল। কেউ কোন সমস্যায় পড়লে স্যার সমাধান করে দিতেন।

দেখতে দেখতে রহিম স্যারের অবসরগ্রহণের সময়ে চলে এসেছে। আর মাত্র ৩ দিন বাকি। হঠাৎ তিনি তার ১৫ তম ব্যাচের কথা মনে করলেন। সেই ব্যাচের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি অনেক ভালোবাসতেন। এবং তিনি ১৫ তম ব্যাচের সাথে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন। তিনি চিন্তা করলেন আগামীকাল বিকেলে তিনি তার বাড়িতে সবাইকে ডাকবেন।

কত বছর হয়ে গেছে এখন কি তাদের আবার এক ছাতার নিচে আনা সম্ভব। স্যারের কাছে কিছু শিক্ষার্থীর যোগাযোগ ছিল। তাদের সাথে তিনি কথা বললেন, তারা রাজি হলো। ইন্টারনেটের এই যুগে মানুষকে খুঁজে পাওয়া তেমন একটা কঠিন না। সারারাত জেগে তিনি সব ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করলেন। স্যারের ভরসা ছিল তারা আসবেই।

বিকেলবেলা

বিকেলবেলায় সব ছাত্র-ছাত্রীরা এক হলো। সবাই এখন স্যারের বাসায়। স্যার তাদের দেখে একদম কেঁদেই দিলো। এখন রহিম স্যারের এক ছাত্র ডাক্তার কেউবা ইঞ্জিনিয়ার আবার অনেকে ছোট ছোট চাকরি করে।
রহিম স্যারকে একজন সাহস করে বলেই ফেলে - স্যার সেদিন যদি আপনার কথাগুলো কাজে লাগাতাম তাহলে আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যেত। তবে আমি এখন যে চাকরি করি সেটা মোটেও খারাপ না। দিনকাল ভালোই চলে যায়

রহিম স্যার বললেন, দেখো বাবা তোমরা এখন অনেক বড়। যে জিনিসটা তুমি পাও নি সে জিনিসটা তোমার জন্য ছিল না তাই তুমি পাও নি। আর যে জিনিস তোমার ছিল তাই তুমি পেয়েছ।

তারপর রহিম স্যার বললেন আজ আমি নিজের হাতে তোমাদের চা খাওয়াব। চা বানানোর সময় তিনি ভাবলেন, তার ছাত্র-ছাত্রীদের একটা পরীক্ষা নেওয়ার৷ যেই কথা সেই কাজ তিনি চা তো নিয়ে আনলেন কিন্তুু সেই চা তিনি আলাদা আলাদা জায়গায় ভাগ করলেন।

কোন জায়গায় ছিল সুন্দর সুন্দর কফি মগ, কোন জায়গায় ছিল মাটির তৈরি ভার, কোথাও বা স্টিলের গ্লাস।
সবাই একপ্রকার জগড়া লেগে গেলো। কে কে কোনটা নিবে সবাই শুধু সুন্দর সুন্দর কফি মগ নিতে চাচ্ছে।
এইবারে শিক্ষক একটু থামতে বললেন এবং এক ছাত্র বললো স্যার আপনি আলাদা আলাদা ধরনের কাপ দিলেন কেন?

শিক্ষক বললেন এখন যে কথাগুলো বলব তা মনোযোগ দিয়ে শুনো-
তোমাদের মধ্যে কেউ ডাক্তার বা কেউ ইঞ্জিনিয়ার বা কেউ পাইলট! কিন্তুু আজ তোমরা কে কোন কাপটা নেবে তা নিয়ে তর্ক করছো। তোমরা সবাই শুধু সুন্দর মগেই চা খেতে চাইছো।

কিন্তুু তোমরা ভুলে যাচ্ছো কপি মগ হোক অথবা স্টিলের গ্লাস ভিতরে চা কিন্তুু এক-ই আছে! তোমরা কেউ কিন্তুু চা খাওয়ার পরে নিজের পছন্দের মগকে সাথে নিয়ে যাবে না। তোমরা প্রত্যেকেই কিন্তুু বাহিরের সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে ভেতরের সৌন্দর্যকে ভুলে গেছো।

এই ছোট্ট গল্পটা আমাদের সবার সাথে খুবই রিলেটেড। আমরাও আমাদের জীবনে কোন মানুষ হোক, কোন বস্তু হোক কিংবা কোন কাজ, সবকিছুতেই আমরা বাহিরে সৌন্দর্যকে দেখি। একটা সম্পর্ক তৈরি করার আগে আমরা মানুষটা কত সুন্দর সেটা দেখি।

একটা চাকরি দেওয়ার আগে আমরা কত টাকা পাব সেটা দেখি। কিন্তুু সেই কাজটা আমার জন্য কেমন? আমি কি সত্যি এই কাজ করে ভালো থাকব সেটা দেখি না! কোন জিনিস কেনার আগে মানুষ কি কিনছে সেটা দেখি, কোন জিনিস কেনার আগে সেটা আমার জন্য দরকার কিনা সেটাও ভাবি না। তাই এই গল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- কোন কিছুর বাহিরে সৌন্দর্যকে নয় বরং ভিতরের সৌন্দর্যকেও দেখা উচিত।**

তো বন্ধুরা কেমন লাগলো গল্পটি। ভালো লাগলে অবশ্যই ভোট ও কমেন্ট করবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 67865.46
ETH 3258.03
USDT 1.00
SBD 2.64