আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২৪ || "ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতি"।।
আসসালামুয়ালাইকুম/ আদাব/ নমস্কার।
আমি@samhunnahar।
কক্সবাজার জেলার,বাংলাদেশ থেকে যুক্ত আছি আমার বাংলা ব্লগ এ। প্রথমে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই আমার বাংলা ব্লগের সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন, মডারেটর ভাই ও বোনদের প্রতি প্রতিনিয়ত এমন সুন্দর সুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।এমন সুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় আমরা সবাই আমাদের মনের অব্যক্ত কথা গুলো সবার সাথে শেয়ার করার সুযোগ পেয়ে থাকি।আমার বাংলা ব্লগের এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় হচ্ছে-"শেয়ার করো তোমার জীবনের ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি"।প্রতিযোগিতার বিষয় আমার খুবই ভালো লাগে এবং আমার মনের ভিতর একটা ভিন্ন ধরনের অনুভূতির উপস্থিত লক্ষ্য করি।কারণ সবার জীবনের মত আমার জীবনে ও বন্ধুত্বের কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে যা কখনো মুছে ফেলার মত নয়।তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
“আমার জীবনে ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতির কথা”
জীবনের অনেকটা সময় গ্রামে কাটানো হয়েছে।বলতে গেলে আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগের কথা।তখনকার বাংলাদেশের গ্রামের দৃশ্য, বর্তমান বাংলাদেশের গ্রামের দৃশ্যের মধ্য অনেক তফাৎ লক্ষ্য করা যায়।তখন গ্রাম গুলোর মধ্যে তেমন পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামের অনেক দূর-দূরান্তর থেকে স্কুলে যাওয়া হতো। প্রাইমারী স্কুল শেষ করে আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে একটা হাই স্কুলে ভর্তি হয়।আমাদের পাশের গ্রামের দু'একজন ভাই-বোন ছিলেন একই স্কুলে যেত। হেটে হেটে দূরে স্কুলে যাওয়া হতো। তবে মাঝে মাঝে সিএনজি অথবা রিকশা নিয়ে যেতাম।
আমার বাড়ি থেকে দুই/একটা ঘর পার হয়ে আমার এক দূর সম্পর্কের মামাতো বোন ছিল।যার নাম ছিল মুহছেনা আক্তার। আমাদের দুজনের মধ্যে অনেক গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন আগে রেডি হয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতাম।আবার যখন সেই আগেই রেডি হয়ে যেত তখন আমাদের বাড়িতে এসে বসে থাকতো।দুজনে মিলে গল্প করে অনেক দূর হেটে স্কুলে যেতাম। অনেক ভাল লাগত দূরে হলেও।আবার যখন স্কুল ছুটি হয়ে যেত সেই আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতো। আমার যখন ক্লাস শেষ হয়ে যেত আমি তার জন্য বসে থাকতাম। আমরা দুজন ভিন্ন ভিন্ন ক্লাসে ছিলাম। আমি ছিলাম সপ্তম শ্রেণীতে ও ছিল ষষ্ঠ শ্রেণীতে।যদিও ক্লাস ভিন্ন ছিল কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল।
২জনে স্কুল থেকে আসার পরে যে যার বাড়িতে চলে যেতাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল বেলা আবার চলে যেতাম মুহছেনাদের বাড়িতে। যদি আমি না যাই তাহলে সেই নিজে আমাদের বাড়িতে চলে আসতো।আমাদের বাড়ির এরিয়া টা ছিল অনেক বড় এবং খোলামেলা পরিবেশ।চারপাশে ছিল সুপারির বাগান আর ছিল পাশে একটা পুকুর।সেই সুপারি বাগান আর পুকুরের পাশ দিয়ে দুইজনে দুইটা চেয়ার নিয়ে বসে গল্প করতাম।অনেক ভাল-মন্দ বিষয় তার সাথে শেয়ার করা হতো।আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক কথা সেই জানত এবং তার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করতো।
আমাদের মধ্যে খুব একটা সময় ব্যবধান হত না দেখা করার।যতটুকু পড়া-লেখা আর ঘুম যাওয়া হত সেই সময়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল।সময় পেলেই ছুটে যেতাম মুহছেনাদের বাসায়।আমার সাথে মুহছেনার সম্পর্কটা প্রাইমারি স্কুল থেকে ছিল।তা্দের বাড়ি গিয়ে বসে থাকতাম অথবা সে আমাদের বাড়িতে এসে এভাবে বসে আড্ডা দিতাম। এভাবে আড্ডা দেওয়ার জন্য অনেক সময় আমার মায়ের কাছ থেকে বকুনি খেয়েছি।এমনকি অনেক বার মায়ের হাতে মার ও খেয়েছি।আমার জন্য মুহছেনার ও একই অবস্থা ছিল।
আমি যখন এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে কক্সবাজার শহরে চলে আসি ইন্টারমেডিয়েট পড়ার জন্য তখন তার সাথে তেমন একটা যোগাযোগ হত না।তখন মোবাইলের ব্যবহার তেমন একটা ছিল না। আবার যখন কক্সবাজার থেকে বাড়িতে যেতাম তখন দেখা করার জন্য তাদের বাড়িতে চলে যেতাম।এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্কটা দূরত্ব তৈরি হলো।সেই ও এস এস সি পরীক্ষা দেয়। এইচ এস সি আমাদের এলাকা থেকে দূরে একটা কলেজে থেকে শেষ করে।পরবর্তীতে মুহছেনা এল এল বি করার জন্য চিটাগাং শহরে চলে যায়।এভাবে মাঝে মধ্যে গ্রামে গেলে দুই জনের মধ্যে কথা হত আর দেখান হত।মুহছেনা এল এল বি তে মাস্টার্স কমপ্লিট করে সেই একজন আইনজীবী হয়ে যায় এবং বিয়েও হয়ে যায়।
এদিকে আমি ও কক্সবাজারে একটি চাকরি করতাম বাড়িতে তেমন যাওয়া হত না। আমার ও বিয়ে হয়ে যায়।যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আমাদের মধ্যে আর কথা হয় না, দেখা হয় না কিন্তু স্মৃতি গুলো আজীবন রয়ে গেল। এমন কি তার মোবাইল নাম্বার ও আমার কাছে নেই। কিন্তু স্মৃতি গুলো অনেক অনেক মনে পড়ে।কলেজ জীবন, ইউনিভার্সিটি জীবন, চাকরি জীবনে অনেক বন্ধু আসলো-গেলো কিন্তু তাদের কথা মনে নেই।সেই ছোটবেলার কথা এখনও মনের মধ্যে স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। সেই স্মৃতিগুলো ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে।সেই স্মৃতি কখনো ভুলার মত নয় চেষ্টা করলেও ভুলা যায় না।
আজ এই পর্যন্ত বন্ধুরা। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে “আমার জীবনের ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি” পড়ার জন্য। আবার দেখা হবে/ কথা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই নিজের পরিবারকে নিয়ে ভালো থাকবেন।নিজেকে ভাল রাখবেন।
💖আল্লাহ হাফেজ সবাইকে💖।
#abbcontest-24 #friendship-memories #friendship #krsuccess #bangladesh #amarbanglablog #steemexclusive
আসলে বন্ধুত্ব যে শুধুমাত্র একই শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে হতে পারে তা কিন্তু নয় ভিন্ন শ্রেণীর মধ্যেও বন্ধুত্ব লক্ষ্য করা যায় যেমনটি আপনাদের মধ্যে ছিল। আসলে একটা জিনিস আমার কাছে সব থেকে বেশি খারাপ লাগে সেটি হচ্ছে এত ভালো বন্ধুত্ব কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে সেই বন্ধুগুলোর সাথেই আর যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে ওঠে না ,যেমনটি ঘটেছে আপনাদের জীবনে।
হ্যাঁ ভাইয়া আসলেই ভাল বন্ধু গুলো সময়ের স্রোত এর মত কালের বিবর্তনে কোথায় হারিয়ে যায়। শুধু স্মৃতির পাতায় রয়ে যায়।ধন্যবাদ আপকে মতামত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য।
আপনার মত আমারও সময়ের প্রয়োজনে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করা হয় না। আসলে সব শ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা যায়। সেটা হোক উপরের শ্রেণীর কিংবা নিজের শ্রেণীর। আপনার ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতির গল্পটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগছে। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যআপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
আপু মুহছেনা আমার অনেক ভালো বন্ধু ছিল। আমার শৈশব জীবনের অনেক স্মৃতি ওর সাথে জড়িয়ে আছে। কিন্তু করার কিছু নাই সব স্মৃতি হয়ে পড়ে আছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
একজন প্রকৃত বন্ধু পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
আর আপনি সেই আপনার প্রকৃত বন্ধু পেয়ে দুজন দুজনের মনের কথা শেয়ার করেছিলেন।
তবে আপু লেখাপড়া করতে হলে অনেক কিছু মায়া ত্যাগ করতে হয়। ঠিক তেমনিভাবে আপনি আপনার ফ্রেন্ডকে ছেড়ে কক্সবাজারে ইন্টারমিডিয়েট করার জন্য চলে গেছেন।
আপনারও আপনার ফ্রেন্ডের জন্য শুভকামনা রইল আপু
জীবনে একটা ভালো বন্ধু অনেক দরকার। কিন্তু সেই শৈশবের বন্ধুর কথা কখনও ভুলা যায় না।জীবনে তো অনেক বন্ধু আসলো-গেল কিন্তু তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না। শৈশবের বন্ধুর কথা অনেক বেশি মনে পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে সাবলীল ভাষায় মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আপনার ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতির গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে বন্ধুত্বের স্মৃতিময় দিনগুলো এখন খুব মনে পড়ে, সময়ের ব্যবধানে হয়তো বন্ধুদের পাশে থাকা হয় না, কিন্তু দিনগুলো খুব মনে পরে, আর বন্ধুত্ব তৈরি হয় উঁচু-নিচু ভেদাভেদ না দেখে। এটা মন থেকে তৈরি হয়।
হ্যাঁ ভাইয়া ঠিক বলেছেন আসলেই বন্ধত্বের মধ্যে নেই কোন ভেদাভেদ।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মতামত দিছেন।
Hi, @samhunnahar,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
Your post was picked for curation by @rex-sumon.
Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP