আসসালামুআলাইকুম/ আদাব
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই?
আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ অনেক অনেক ভাল আছি। আমি সামশুন নাহার হিরা
@samhunnahar। বাংলা ভাষায় ব্লগিং করি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত কক্সাবাজার জেলা থেকে। আমি অনেক অনেক খুশি কারন এমন সুন্দর একটি জায়গায় আমার বসবাস। আমি আরো খুশিএমন সুন্দর একটি কমিউনিটিতে যুক্ত আছি। যেখানে কিনা বাংলা ভাষার এত কদর, এত সম্মান। সত্যি আমি একজন গর্বিত মানুষ নিজের ভাষায় লিখতে পারি, পড়তে পারি, মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। আমি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ নতুন নতুন টপিকস নিয়ে লিখতে পেরে।
আমি আজ লেখার সুযোগ পেয়েছি সেই
“স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞাতা” নিয়ে কিছু শেয়ার করার। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কিছু না কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা অবশ্যই আছে। সবার সুন্দর সুন্দর তিক্ত অভজ্ঞতা পড়ে বেশ ভাল লাগলো। আমি ও আজ আমার স্কুল জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। তাহলে শুরু করা যাক বন্ধুরা------
“আমার স্কুল জীবনের
তিক্ত অভিজ্ঞতা”
সময় টা ছিল আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। প্রথমে বলতে হয়, আমার স্কুলের নাম হচ্ছে
ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। বহুমূখী একটা প্রতিষ্ঠান। অনেক দূর দুরান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আসত এই স্কুলে। প্রতি বছর এই স্কুল থেকে এক ব্যাচে- ১০০ জন ছাত্র- ছাত্রী, সাথে পুরাতন ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে (১৩০-১৫০) জন মত একবারে এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে বের হত। আমি ছিলাম মানবিক বিভাগের ছাত্রী। আমি ছাত্রী হিসেবে তেমন খারাপ ছিলাম না। আমার মানবিক বিভাগে রোল ছিল-০১। এছাড়া ও বিজ্ঞান বিভাগ, কমার্স বিভাগ আলাদা আলাদা ছিল। ছাত্র- ছাত্রীর সংখ্যা ও অনেক ছিল। আমাদের ব্যাচে ছিল-১১৫ জন। এবার মূল কথায় চলে আসি। আমাদের ইংরেজি শিক্ষক ছিল তিন জন। সবাই অনেক অনেক ভাল ছিল মেধার দিক থেকে। সবার বয়স কিন্তু -৪০ এর উর্ধ্বে ছিল।
মুহাম্মদুল হক স্যার এর বয়স ছিল ৫০/৫৫। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সিরাজ স্যার ছিলেন ৪৫ বছরের মত। আর একজন স্যার ছিলেন মুস্তাফিজ স্যার। মুস্তাফিজ স্যার ইংরেজিতে সবার থেকে অনেক ভাল পড়াইতেন। সবাই স্যার থেকে প্রাইভেট পড়তেন। আমি মানবিক বিভাগে ছিলাম আমাদের ক্লাস নিতেন হক স্যার আর সিরাজ স্যার। তাই আমি আমার ক্লাস স্যার থেকে প্রাইভেট পড়তাম। তাই মুস্তাফিজ স্যার থেকে পড়তাম না। আসলেই আমাদের আশে-পাশে এমন কিছু শিক্ষক থাকেন যাদের ব্যবহারের কারনে অন্যান্য স্যারদের মান-সম্মানের ও আঘাত লাগে। কারণ একজন শিক্ষকের উদ্দেশ্য করে বলা মানে তো বুঝতেই পারছেন স্যার তো সবাই। বলতে চাই না, তবুও সুযোগ যখন আসছে বলার তাই শেয়ার করলাম। তার মানে এই নয় শিক্ষকের প্রতি অসম্মান, মোটেও তা নয়।
মুস্তাফিজ স্যারের প্রতি সবাই বিরক্ত ছিল। যারা প্রাইভেট পড়ত, ক্লাসে তাদের থেকে কোন পড়া আদায় করত না। আরা যারা পড়ত না তাদের থেকে পড়া আদায় করতেন। পড়া বলতে পারলে ও কোন না কোন একটা অজুহাত দেখিয়ে মারতে মারতে পুরো পিঠ লাল করে ফেলত। মারা এত স্বাভাবিক ছিল না। মারতে মারতে ক্লাস থেকে বের করে একেবারে মাঠে নিয়ে যেত। ছেলেদের পিঠে মারত আর মেয়েদের কে হাতে মেরে লাল করে ফেলত।
আমার বেলায় হলো কি দশম শ্রেণীর সমাপনী মূল্যায়ন পরীক্ষা অথাৎ টেস্ট পরীক্ষা নিল। ভাল করে দিলাম এক্সাম। কিন্তু আমি ইংরেজি পরীক্ষায় ফেল!! আমার যেহেতু মানবিক বিভাগের রোল-০১ ছিল তাই আমার এই ফেল করাটা স্কুল মেনে নিলনা। ব্যাপার টা হলো আমার পরীক্ষার খাতা দেখছিল এই মুস্তাফিজ স্যার। উনি আমার পরীক্ষায় লেখা খাতায় নাম্বার কম দেন। আমি খুব ভাবতে শুরু করলাম স্যার আমার খাতা কিভাবে চিনলেন!! আমার লেখা দেখে কিভাবে আমার খাতা চিনলেন আমি অভাক হয়ে গেছি। যেখানে দশ দেওয়ার কথা সেখানে আমাকে নাম্বার দেয় ৪/৫ করে। আর ৫ এর জায়গায় ২ নাম্বার এভাবে নাম্বার দিয়ে আমকে ফেল করাই দিলেন। পরে আমাকে স্কুলে ডাকা হয় অফিস রুমে। আমি যেয়ে দেখি আমাকে আমার এক্সাম খাতা দেখানো হচ্ছে। আমি আমার খাতা দেখে অভাক করার মত!! এটা কিভাবে সম্ভব। এত কম নাম্বার পেলাম কিভাবে। দেখে আমি তো আর কিছু বলতে পারছিলাম না, দুচোখ দিয়ে পানি যাচ্ছিল, দাঁড়িয়ে রইলাম।
আমাকে এভাবে দেখে অন্যন্য স্যারেরা বললেন চিন্তার কারণ নেই, আমরা তোমার খাতা আবার চেক করেছি। তোমাকে নাম্বার কম দেওয়া হয়েছিল। তোমাকে আমরা পাশ করায় দিছি। তখন আমি চলে আসলাম ঘরে। এরপর এস এস সি পরীক্ষা হল, আর পাশ ও করি। কিন্তু মন থেকে এই পর্যন্ত স্যারের এমন কাজ আমি জীবনে ও ভুলতে পারিনাই। আমাদের স্কুল টা মেইন বাজারের পাশে ছিলো তাই আসা-যাওয়া তে স্যারের চেহারা দেখলে আমার কেমন যেন লাগত আমি বলে বুঝাতে পারবোনা। মাঝে মাঝে খোঁজ নিতাম স্যার কি আগের মতই আছে? শুনেছি বদলায় নি সেই আগের মতই আছে। একজন সিনিয়র স্যার ছিলেন, পড়াত ভাল তাই স্যারের সব কিছু সবাই জানার পর ও সহ্য করতেন।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে যা শেয়ার করার হয়ত সু্যোগ হয় না তাই মনের ভিতর চাপা কষ্ট থেকে যাই। আজ নিজের মনের ভিতরের চাপা কষ্ট টা শেয়ার করতে পেরে বেশ হালকা মনে হচ্ছে। আর এমন কিছু স্যার আছেন যারা প্রকৃ্ত ভাল মনের/ চরিত্রের। অন্যান্য খারাপ প্রকৃতির স্যারদের কারণে ভাল চরিত্রের স্যারদের জীবনকে ও কলুষিত করেন। আমরা চাই আমাদের প্রতিষ্ঠানে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মূখীন আমাদের বাচ্চারা যেন না হয়। সে বিষয়ে আমাদের কঠোর নজর রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।
আজ এই পর্যন্ত, সবার কাছে আশা করি পড়ে ভাল লাগবে। সবাই আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা জানতে পারবেন। তাই নিজেকে একটু হালকা মনে হচ্ছে। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা
আমি সামশুন নাহার হিরা
বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে
@samhunnahar
ঠিক বলেছেন ভাইয়া শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তো এসব নিরবে সহ্য করতে হয়।না হয় সব থেকে জঘন্য কাজ হচ্ছে এই সব অমানবিক কাজ।
কিছু কিছু শিক্ষক আছে যাদের উপর আমাদের অনেক অভিমান। শিক্ষক খুবই সম্মানীয় ব্যক্তি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা এমন কিছু কাজ করেন যাতে করে আমরা কষ্ট পাই। হয়তো আপনার খাতায় কম নাম্বার দেওয়া তার একেবারেই উচিত হয়নি। আসলে একজন স্টুডেন্ট এই পরিস্থিতিতে কতটা কষ্ট পেতে পারে সেটা হয়তো তিনি বুঝতে পারেন না। যাইহোক আপনার জীবনের একটি তিক্ত অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।
হ্যাঁ আপু হয়ত উনার কারণে আমার জীবনটা বরবাদ হত। যদি অন্য স্যারেরা চেক না করতেন খাতা।ধন্যবাদ আপু মূল্যবান সময় দিয়ে আমার তিক্ত অভিঙ্গতার অনুভূতি পড়ার জন্য।
আসলেই আপু কিছু কিছু শিক্ষক আছে এইরকম আমাদের স্কুলেও একজন শিক্ষক ছিল তার কাছে যারা প্রাইভেট পড়তো তারা সবসময় ভাল নাম্বার পেতো আর যারা প্রাইভেট পড়তো না তারা সবসময় কম নাম্বার পেত। সেজন্য বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে ওই স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তো। আপনার লেখাগুলো পড়ে আমারও আমার ওই স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। আসলে শিক্ষকদের কখনো এরকম করা উচিত না ছাত্রছাত্রীদের সাথে। যাইহোক পরে অন্যান্য স্যাররা আপনার খাতা চেক করার কারণে আপনি পরীক্ষায় পাশ করেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপু এই রকম স্যারদের এমন আচরণ বন্ধ করা দরকার ছিল।এসব স্যার সব প্রতিষ্ঠানে আছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মূল্যবান সময় দিয়ে পোস্ট পড়েছেন।
আসলে কিছু কিছু শিক্ষক রয়েছে ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের এভাবেই নষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা করে কোন এক কারণে। তবে যাই হোক আপনাকে যে পাশ করিয়ে দেওয়ানো হয়েছে এতে আমার ভালো লাগলো জেনে। আরো বেশি ভালো লাগলো আপনি মানবিক বিভাগে প্রথম ছিলেন। আমিও মানবিক বিভাগের প্রথম ছিলাম - ২০১১ সালের এসএসসি ব্যাচ।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনি বিষয়টি ভালভাবে পড়েছেন আর মন্তব্য করে সহযোগিতা করেছেন।শিক্ষক হচ্ছেন আমাদের মেরুদন্ড স্বরুপ।এমন কিছু শিক্ষক আছেন যারা অন্যান্য শিক্ষকদের জীবন সহ বিষন্ন করে তুলেন।