গল্পঃ সমাজের অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্প-(পর্ব-৩)।
সবাইকে শুভ দুপুর,
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় কমিউনিটির সকল ব্লগার ভাই ও বোনেরা। আশা করি বন্ধুরা আপনারা সকলে ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে। আপনাদের দোয়ায় সব সময় ভালো থাকার চেষ্টা করি। আমি সামশুন নাহার হিরা @samhunnahar. আমি আজ আপনাদের সাথে যুক্ত হয়েছি কক্সবাজার শহর থেকে বাংলাদেশের। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি আপনাদের সাথে নতুন নতুন ব্লগ শেয়ার করার। নতুন নতুন ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আপনাদের সাথে যুক্ত হতে অনেক বেশি ভালো লাগে।
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি @amarbanglablog এমন একটি কমিউনিটি এখানে সব সময় সবার ক্রিয়েটিভিটি গুলোকে অনেক সুন্দর ভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাই সবাই আমরা নিজের ক্রিয়েটিভিটি গুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করি সব সময়। আজকে আমি আবারও উপস্থিত হয়েছি একটি গল্প লেখা নিয়ে। যদিও আমি পরপর দুটি পর্ব শেয়ার করেছি। আজকে আমি শেয়ার করব সমাজের অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্পের তৃতীয় পর্ব। তাহলে শুরু করা যাক বন্ধুরা—---
দ্বিতীয় পর্বে আমি শেয়ার করেছিলাম সখিনার ডিভোর্স হয়ে যায় তার প্রথম সংসারে। তার বাবা জিদের বসে স্বর্ণগুলো একদম নেই নাই। যদিও কিছু স্বর্ণ দিতে চাইছিল তার শ্বশুরবাড়ি থেকে। কিন্তু তার বাবা এক টুকরো স্বর্ণ না নিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে আসে ডিভোর্স দিয়ে। এভাবে চলতে থাকে সখিনার জীবন। এই সমাজে একটা ডিভোর্সি মেয়ের জীবন যাপন কত কষ্টের হয় সেটা আমরা বাস্তবে অনেকের কাছ থেকে লক্ষ্য করেছি। এভাবে সখিনার জীবন চলতেই থাকে। মা হারা একজন মেয়ে তাও আবার সংসার থেকে ডিভোর্স নেওয়া। কত টা ভালো থাকতে পারবে সেটা অবশ্যই আপনারা বুঝতে পারছেন। এভাবে জীবন চলতে চলতে একদিন আবারও সিদ্ধান্ত নিল সখিনার বাবা সখিনাকে বিয়ে দেবে।
কারণ সবাই তো এই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নয়। সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। তাই সখিনার বাবা চিন্তা করল উনি এই পৃথিবীতে জীবন্ত থাকা অবস্থায় সখিনার একটা যেন ব্যবস্থা করে যাই। সেজন্য আবার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যদিও সখিনার কোন সন্তান হয়নি প্রথম সংসারে। কিন্তু তার জন্য যে প্রস্তাব গুলো আসে বিয়ের সব গুলো হচ্ছে বিবাহিত ছেলে। অথবা সন্তানের বাবা এরকমই। কিন্তু করার কি উপায় বাধ্য হয়ে সখিনাকে বিয়ে করতে হবে। যেহেতু তাদের পরিবারটা যৌথ পরিবার ছিল নানা জনের নানান কথা ছিল। আর সখিনা তো এভাবে থাকতে পারবে না একা একা সারা জীবন। তাই সবাই তাকে চাপ দিতে থাকলো। এক সময় আবারও সখিনাকে বিয়ে দেওয়া হল একটা বিবাহিত ছেলের সাথে।
যেই ছেলের বউ আগে মারা গেছিল সেখানে তার একটি সন্তান রয়েছে ছেলে সন্তান। এভাবে জীবন চলতে থাকে সখিনার। সেই বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে আবার শ্বশুরবাড়িতে চলে যায় এভাবে চলছিল। এর মধ্যে সবাই জানতে পারে সখিনার মা হওয়ার সুসংবাদটি। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস সেই সংসারে ও তার সুখের হলো না। অর্থাৎ ওই স্বামীটি এতই খারাপ ছিল তাকে ঠিক মত ভরণ পোষণ দিত না। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ছিল সেই স্বামীর। অনেক কিপটা টাপের ছিল তার স্বামীর। ভাল মত রান্না করতে দিত না। সবাই জানতে পারল তার সেই প্রথম স্ত্রীকে নাকি সেই ঘুমের মধ্যে মেরে ফেলেছিলেন। তার সেই স্বামীর প্রথম সন্তান ছেলেটিকে সখিনা লালন পালন করতে থাকে।
বিভিন্ন সময় দোষ দেখিয়ে সেই ছেলেটাকে যত্ন করে না অবহেলা করে এই বাহানা গুলো ধরে মারধর করতে থাকে সখিনাকে। এক সময় সখিনা সহ্য করতে না পেরে আবারও বাবার বাড়িতে চলে আসে। তখন সখিনার গর্ভে সন্তান ছিল। এমন গর্ভবতী একজন মেয়েকে এত খারাপ ভাবে মারধর করা দেখে তার বাবা আরও বেশি রেগে যায়। তারা আবার সিদ্ধান্ত নিল সখিনাকে সেখানে আর পাঠাবে না। সখিনার স্বামীর প্রথম সংসারের যে একটি সন্তান ছিল সেটা অনেক দুষ্ট প্রকৃতির ছিল। তবে তার স্বামী তা বোঝার চেষ্টা করত না অযথা সখিনার উপর রাগ দেখাতো। ছোট বাচ্চারা কত জ্বালাতন করবে তা তার স্বামী বুঝতো না।
এভাবে দেখতে দেখতে সখিনার সন্তান দুনিয়াতে আসার সময় হলো। একদিন সখিনার বাবার ঘরে তার এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। সেই ছেলের জন্ম হওয়ার খবর শুনে তার বাবা ছুটে আসে দেখতে। কিন্তু একজন বাবার অনেক দায়িত্ব থাকে তার সন্তানের জন্য। কিন্তু তার হাজবেন্ড এত নিকৃষ্ট ভাবে আসলো তার সন্তানকে দেখতে। সবাই ব্যাপারটা অনেক খারাপ চোখে দেখলো। একজন বাবা তার সন্তানের জন্য একটা গেঞ্জি হলেও তো আনতে পারতো। যেহেতু সেই কিপটা টাপের ছিল তাই তার এই অবস্থা। তার সন্তানকে দেখে তার স্বামী চলে যায়। কিন্তু তার স্বামী বারবার আসতে থাকলো সখিনাকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য।
অবশেষে বিচার সালিশ করে সখিনাকে আবারও পাঠিয়ে দিল স্বামীর বাড়িতে। কিন্তু সেখানে তাদের সংসারের সুখের হয় না। কারণ তার স্বামী খুব একজন খারাপ প্রকৃতির মানুষ ছিল। তার স্বভাব ভালো ছিল না। সকিনার সাথে সব সময় দুর্ব্যবহার করতেন। আবারও মারধর করতে থাকে তার আগের ঘরের সেই সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন বাহনা নিয়ে। এভাবে থাকতে না পেরে সখিনা চলে আসে তার বাবার বাড়িতে। একদিন সেই সংসারও ভেঙ্গে যায় সখিনার। সন্তান সখিনার কাছে ছিল। সখিনার কোন ইনকাম ছিল না কোন কিছু ছিল না। একটা সন্তানকে বড় করা এত সহজ ব্যাপার ছিল না সখিনার কাছে।
একদিকে সখিনার সেই সৎ মায়ের অর্থাৎ সখিনার খালার অনেক জন সন্তান হয়। কারণ আগেরকার মানুষের অনেক সন্তান থাকতো। সেই সংসারের ভাই বোন আবার সখিনা এবং তার সন্তান সবকিছু মিলিয়ে সংসার খরচ বহন করা সখিনার বাবার কাছে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। যেহেতু সখিনার বাবারা অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজন ছিলেন। তাদের সম্পদ ছিল অনেক বেশি। এক সময় সেই জায়গা সম্পদ বিক্রি করতে থাকে সখিনার বাবা। সকিনার বাবা এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু সখিনার বাবার একটা চিন্তা থেকে গেল সখিনার কি হবে সে ব্যাপারে।
বাকি পর্ব আমি আপনাদের সাথে পরে শেয়ার করব সবাই সাথে থাকবেন।
লেখার উৎস | গ্রামের বাস্তব একটি গল্প |
---|---|
ইমেজ সোর্স | কেনভা দিয়ে তৈরি |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | গল্প লেখা |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্প লিখে শেয়ার করেছেন। আসলে মেয়েটির মা হারা এবং মেয়েটি ডিভোর্স হয়েছে সত্যি জেনে বেশ খারাপ লাগলো। আসলে আমাদের সমাজে ডিভোর্সের সংখ্যা এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিচার এবং সালিশে সখিনাকে আবারও স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে তিনি সেই সংসারে সুখ খোঁজে পেয়েছিলেন না। আসলে নিজের মানুষ যদি কষ্ট দেয় তাহলে কখনোই সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না। ধন্যবাদ আপু গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
অনেক ভালো লেগেছে আমার লেখা গল্পটি আপনি সময় দিয়ে পড়লেন।
https://twitter.com/nahar_hera/status/1764383482346979463?t=uDFfar0UUsX8DUBWe9GUhg&s=19
খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন৷ আসলেই এখনকার সমাজে ডিভোর্সের পরিমাণ অনেক বেশি পরিমাণ দেখা যাচ্ছে৷ যেখানেই যাই সেখানেই ডিভোর্সের কথা শোনা যায় এবং এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে৷ আপনার এই গল্পের মধ্যে সখীনা মেয়েটির মা নেই এবং এই মেয়েটির ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে শুনে খুব খারাপ লাগলো৷ পরবর্তীতে বিচারের মাধ্যমে তাকে আবার স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হলো এবং স্বামীর বাড়িতে গিয়েও সে সুখ খুঁজে পেল না৷ আসলে যদি নিজের মানুষেরা নিজেদেরকে কষ্ট দেয় তাহলে তার থেকে দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না৷ অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি গল্প শেয়ার করার জন্য৷
আসলে আমাদের পৃথিবীতে এমনই যাদের কপালে সুখ থাকে না তাদের সুখ কোন দিক থেকেই হয় না। যা সখিনার জীবনে ঘটে যাচ্ছিল।
অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্পটা যত পড়তেছি, ততই অনেক বেশি খারাপ লাগতেছে আপু। আপনার শেয়ার করা এই গল্পটার আগের দুইটা পর্ব আমার পড়া হয়েছিল, আজকে তিন নাম্বার পর্ব পড়লাম। সকিনার আগের স্বামীর থেকে তাকে ডিভোর্স দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং কি পরবর্তীতে আবারো বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওখানে তার একটা সৎ ছেলে ছিল। তার সেই হাজব্যান্ড ও ভালো ছিল না শুনে সত্যি খারাপ লাগলো। একসময় সেখান থেকেও তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন তার বাবা অসুস্থ আর তাকে নিয়ে চিন্তাটা অনেক বেশি তার বাবার। দেখা যাক শেষ পর্যায়ে কি হয় সখিনার জীবনে। সে কি নিজের সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করতে পারবে কিনা??
সখিনার দ্বিতীয় বিয়েটি ভেঙ্গে যাওয়ার মূল কারণ হলো ছোট্ট শিশুটি। আসলে তার বাবার বুঝার উচিত ছিল যে ছোট বাচ্চাদের কথা না শোনাই উচিত যে কোন মানুষের কাছে। ছোট মানুষ কত আর বুঝে বলেন?
সখিনার জীবনের গল্পটা যত পড়তেছি ততই খুব খারাপ লাগতেছে সখিনার জন্য। সখিনার অন্য জায়গায় বিয়ে হলেও সেই জায়গার সংসারটাও ভেঙে গিয়েছে। এগুলো দেখে সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছে। সখিনা কিভাবে নিজের জীবনটা অতিবাহিত করবে এটাই তো সে জানে না। অন্যদিকে তার বাবাও অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। এমনকি প্রতিনিয়ত সখিনার জন্য তো চিন্তা আছেই। তবে এটা কামনা করি যেন সখিনার জীবনে পরবর্তীতে ভালো কিছু হয়। দেখা যাক এখন শেষ পর্যায়ে কি হবে।
সখিনার জীবনটা এমনই ছিল আরও করুন গল্প অপেক্ষা করতেছে। ধন্যবাদ আপনাকে সময় দিয়ে পড়ার জন্য।