চাঁদনী রাতের আলোতে খেলার অনুভূতি।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

সবাইকে বিকেলের শুভেচ্ছা।


সবাই কেমন আছেন এই গরমের দিনে? আমি তো অস্থির গরমে কিছুদিন হালকা ঠান্ডা অনুভব করলেও এখন কিন্তু আবার বেশ গরম আবহাওয়া। একদিকে গরমের মাত্রা অনেক বেশি সেই সাথে লোডশেডিং হচ্ছে বেশ বিরক্তিকর একটি পরিবেশ।
আশা করি ব্যস্ত জীবনেও সবাই অনেক ভালো আছেন যদিও একটু গরম। আমিও সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পোস্টের সৃজনশীলতা রক্ষার্থে সব সময় ভিন্ন কিছু শেয়ার করার চেষ্টা করি। নিজের সৃজনশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রেও চেষ্টা করি যাতে ভিন্ন কিছু শেয়ার করার এবং তৈরি করার। তো প্রতিদিনের মতো আজকেও একটি ভিন্ন পোস্ট শেয়ার করব আশা করি সকলের ভালো লাগবে। আমার আজকের যে পোস্ট সেটা হচ্ছে ছোটবেলার একটি চাঁদনী রাতের অনুভূতি।

vecteezy_dark-abstract-winter-forest-background-wooden-floor-snow_22874782_704.jpg

Image Source

চাঁদনী রাত।


এখনকার বয়স এবং ছোটবেলার সেই বয়সের মধ্যে অনেক তফাৎ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির যুগে খেলাধুলা তেমনি করে না ছোট ছোট বাচ্চারা। যদিও খেলাধুলা করে তাও আবার গ্রামের পরিবেশে গেলে দেখা যায়। গ্রামেও এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আছে। যখন চাঁদনী রাত কিংবা পূর্ণিমা রাত হতো তখন পুরো চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়তো জমিনে। তখন এত বেশি গাছপালা কিংবা ঘরবাড়ি ছিল না। এখন তো প্রচুর ঘনবসতি হয়ে গেছে সব দিকে। কিন্তু আমরা যখন ছোট ছিলাম বিশেষ করে আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের গ্রামে খুব ফাঁকা ফাঁকা জায়গার মধ্যে ঘর গুলো ছিল।

তখন চান্দের আলো বেশ সুন্দর করে দেখা যেত। এই চাঁদের আলো মনে হতো যে দিনের তুলনায় চাঁদের আলোর তীব্রতা অনেক বেশি। যখন আকাশে নতুন চাঁদ উঠবে তখন বেশ ভালো লাগতো। চাঁদের এক তারিখ দুই তারিখ তিন তারিখ এরকম করতে করতে যখন ৯-১০ তারিখের দিকে হবে তখন কিন্তু খুব আলো ছড়িয়ে পড়তো চাঁদের। সেই চাঁদের আলোতে গ্রামের সব ছেলেমেয়েরা একত্রিত হতাম আমরা। বিশেষ করে যারা বাড়ির আশে পাশের বন্ধু-বান্ধবীরা থাকতো সবাই একত্রিত হতাম।

তখন আমাদের খেলাধুলার প্রধান আইটেম ছিল হচ্ছে হাডুডু, কানামাছি, লুকিয়ে লুকিয়ে খেলা, স্যান্ডেল নিয়ে পালানো, লাফ দেওয়া খেলা, এছাড়া ও অনেক খেলা ছিল। এই খেলা গুলো ভীষণ প্রিয় ছিল আমাদের। এছাড়াও যখন বাড়িতে নতুন ধান ক্ষেত থেকে ধান আনা হতো সেই ধান মাড়াই করলে সেখান থেকে শুকনো খড় বের হত। সেই খড় পুরো আঙিনার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুকানো হতো। অথবা এক জায়গায় রাখা হতো উঁচু করে। সেই খড় গুলির মধ্যে লাফিয়ে খেলা করা, গড়াগড়ি দেওয়া সবাই মিলে খড়ের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অনেক আনন্দ মুহূর্ত ছিল সে সময় গুলো। খড়ের মধ্যে গড়াগড়ি করতে করতে গায়ে চুলকানি ধরতো এক সময়। যখন গড়াগড়ি করতাম তখন বেশ ভালো লাগতো খড়ের মধ্যে। খেলাধুলা করার পরে একটা গরম ভাব আসতো গায়ে তখন কিন্তু অনেক গা চুলকায় তখন অনেক বিরক্ত লাগত।

এছাড়াও চাঁদনী রাতে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর খেলনা ছিল যেগুলো আমরা সবাই মিলে খেলতাম। এক সময় খেলা করতে করতে সবাই ক্লান্ত হয়ে যেতাম। কখন যে রাত বারোটা পেরিয়ে রাত ১টা কিংবা ২টা বেজে যেত তাও টের পেতাম না। মা কিন্তু চিল্লাতে থাকত তোরা ঘরে চলে আয় অনেক রাত হয়ে গেছে। কার কথা কে শুনে। আমরা ভাই বোন ছোট চারজন ছিলাম। সবাই মিলে এছাড়াও আরো পাশের বাড়ির অনেক ছেলেমেয়েরা ছিল সবাই মিলে ১৫ জন কিংবা ২০ মত থাকতাম আমরা।

তবে খেলাটা কখনো সুন্দরভাবে আমরা শেষ করতে পারতাম না। লাস্ট মোমেন্টে গিয়ে যেকোনো কারণে একজনের সাথে অন্যদের ঝগড়া লেগে যেত। তখন ঝগড়া লাগানোর কারণে খেলাটা ভেঙে যেত। মন খারাপ করে বাসায় ঢুকে পড়তাম ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। কিন্তু সকালটা যে কিভাবে হয়ে যেত বুঝতে পারতাম না ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমানোর কারণে। এমন অনেক শত শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে চাঁদনী রাতকে নিয়ে। সবার জীবনে আশা করি এই মুহূর্তটি আছে যারা বিশেষ করে গ্রামের পরিবেশে বড় হয়েছে।

আমি কিন্তু এখন বসে বসে সেই বিষয়গুলো চিন্তা করি যেগুলো এখন আমাদের বাচ্চারা পাচ্ছে না। সেই সময় গুলো তে আমাদের বাচ্চারা একদম বঞ্চিত হচ্ছে। হঠাৎ গতকাল দেখি আকাশের দিকে তাকাতে অনেক চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। তখন বাচ্চাদের বললাম দেখো দেখো কি সুন্দর চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে বাইরে। তখন জানালা দিয়ে চাঁদের আলো দেখলাম। তখন দেখার ফলে সে স্মৃতিগুলো আমার চোখে ভেসে উঠলো। যা আমি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিলাম। আশা করি আমার চাঁদনী রাতের অনুভূতি গুলো আপনাদের ভালো লাগবে।


24QmLBi2hi5sxeF4rfhXesN4Z3rEWTikWPFADtR6zyMx1Eh2qs4cCyucf3FD7ahStNw2cTHPk2QiaQacbQjJNEWnuhyjY1PXfUUMr27ifyD15nkQhFHksgx6bm9BxYLdCkQDMy8JhQrktZHYy6njdzRU4bQ9b1d2xjCdoVzCDDY85pLPq2s7FhKBwPjpuHdozHaReDxEaFH2aYse13zaqogf9utVshuSban6ex1saRA.png

লেখার উৎসনিজের অনুভূতি থেকে
ইমেজ সোর্সভিকটিজি ডট কম
অবস্থানকক্সবাজার, বাংলাদেশ
রাইটিং ক্রিয়েটিভিটি@samhunnahar
ক্যাটাগরিজেনারেল রাইটিং


সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি বিজিট করার জন্য।

268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png

🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀


আমার পরিচয়
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।

287864753_400308362032280_8045934577883994743_n.gif

Sort:  
 2 years ago 

আপু আপনার লেখাগুলো পড়তে পড়তে আমিও যেন আমার ছেলেবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। ছোটবেলায় আমরা যখন আমার নানু বাড়িতে যেতাম, তখন মামাতো ভাই বোনদের সাথে এরকম চাঁদনী রাতের আলোয় বিভিন্ন খেলায় মেতে থাকতাম। ভীষণই ভালো লাগতো সেই মুহূর্তগুলো, এখনকার দিনে আর সেসব খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের সন্তানেরাও চাঁদনী রাতের আলোয় খেলাধুলার কি রকম মজা হয় তাও জানে না। যাইহোক আপু চাঁদনী রাতের আলোতে খেলার অনুভূতি নিয়ে দারুন সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন, এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমি বসে বসে এসব কিছু ভাবি আমাদের বাচ্চারা চাঁদনী রাতের খেলা দেখে না কিংবা বর্ষাকালের পানিতে আমরা অনেক খেলাধুলা করতাম তাও দেখে না অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ছোটবেলার এই অনুভূতিগুলো মনে করিয়ে দিয়ে আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছে। ছোটবেলার চাঁদনী রাতে আমরাও আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা একসাথে অনেক রাত পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি খেলতাম। চাঁদনী রাতে কাটানোর সময় গুলো আপনার কতটা আনন্দের ছিল এখনই বোঝা যাচ্ছে।

 2 years ago 

অনেক আনন্দ করতাম আপু পূর্ণিমা রাত গুলোতে বেশ ভালোই লাগতো।

 2 years ago 

আপনার পোস্ট পড়ে ছোট বেলার কথা মনে পরে গেল আপু।বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে যখন পরিক্ষা শেষ হয়ে যেত ,তখন কারেন্ট চলে গেলাই আমরা কলোনীর সকল ছেলে মেয়ারা মিলে যে কত রকম খেলা খেলতাম । আর কত যে নতুন খেলা আবিস্কার করতাম । যা আজকাল্ল ছেলে মেয়ারা ভিষন মিস করে ।তাদের কাছ ডিভাইস ছাড়া আর কোন বিনোদন নেই। চাদনী রাতও তারা উপভোগ করে না। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনি ঠিক বলছেন আপু আজকালকার ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা বলতে কিছু জানে না। যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন কত ধরণের খেলা খেলতাম। বেশ ভালই লেগেছে আপনার মন্তব্য পেয়ে।

 2 years ago 

আপু কয়েকদিন হল কিন্তু খুব সুন্দর চাঁদ উঠছে আকাশে। আর জ্যোৎস্নাটাও দারুন হচ্ছে। তবে দিন যত যাচ্ছে আমাদের অতীতগুলো শুধুই অতীত রয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম কেউ এসবের পেছনে ছুটে না। সবাই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত। আমি অবশ্য চাঁদনী রাতে কখনো খেলাধুলা করিনি তবে ক্যাম্পাস লাইফে বন্ধুদের সাথে হলের ছাদে বসে সারারাত ধরে গানের আড্ডা দিয়েছি অনেক।

 2 years ago 

আমরা কিন্তু অনেক খেলাধুলা করেছি চাঁদনী রাতে অনেক ভালই লাগতো। আপনি ঠিক বলছেন এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা আসলে সব কিছুতেই অজানাই থেকে যাচ্ছে।

 2 years ago 

দিলেন তো সেই ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে। কি যে মজা হতো চাঁদনী রাত গুলোতে। ছোট বেলার সব বন্ধুরা মিলে লুকোচুরি খেলতাম। অবশ্য এখন দালান কোঠার ভিড়ে আর চাঁদনী রাত দেখা হয়ে উঠে না। তবে আমাদের সেই সময়কার চাঁদনী রাতের মজা কি আর স্মার্ট যুগের ছেলেমেয়ে বুঝবে।

 2 years ago 

ঠিক বলছেন আপু যখন দালানকোঠা ছিল না বাঁশের ঘর কিংবা টিনের চালের বাঁশের ঘরে বেশ সুন্দর চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়তো অনেক ভালো লাগতো তখন।

 2 years ago 

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.17
JST 0.031
BTC 89601.89
ETH 3380.22
USDT 1.00
SBD 3.05