গল্পঃ সমাজের অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্প-(পর্ব-২)।
আমার বাংলা ব্লগ পরিবার,
প্রিয় বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন? আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে আপনাদের দোয়ায়। বন্ধুরা সব সময় ভালো থাকার চেষ্টা করি। আজকে বেশ ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। যখন পোস্ট করতে যাব তখন ঘটে গেল বিপত্তি। তাছাড়া একটি রেসিপি পোস্ট লেখার পরেই সাবমিট করেছি। সেই সাথে ছবি ও আপলোড দিয়েছি কয়েকটি। দুই তিনটি ধাপ লেখার পরে দেখি আর ছবি আপলোড হয় না। ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। তাই আবারও চিন্তা করেছি একটি ক্রিয়েটিভ রাইটিং শেয়ার করি। যেহেতু ছবি আপলোড হচ্ছে না তাই।
যদিও এই গল্পের প্রথম আমি পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। সমাজের অসহায় ও এতিম সখিনার গল্প। যেটি আসলেই খুবই খারাপ লাগার কাজ করে সখিনার জীবনের গল্প গুলো শুনলে। যদিও সখিনার বাবা তার মা মারা যাওয়ার পরেই একটি বিয়ে করেছিল। সেই বউয়ের সাথে তার বাবার এডজাস্ট না হওয়ার কারণেই ডিভোর্স দিয়ে দেই। এবং পরবর্তীতে সখিনার জন্য তার দাদা দাদীরা সখিনা মায়ের ছোট বোন নিয়ে আসে তার বাবাকে বিয়ে করায় দিয়ে। এভাবে সখিনার জীবন চলতে থাকে। সখিনা ও বড় হতে থাকে সবার ভালবাসায়। পাশাপাশি সখিনার বড় ভাই করিমও দেখতে দেখতেই মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে দেয়। মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে সেই ইন্টারমিডিয়েটে পড়াশোনা করে।
সখিনার খালার সংসারে অনেক বাচ্চা-কাচ্চা হয়ে যায়। তখনকার মানুষদের সংসার জীবনে অনেক সন্তান থাকতো। বিশেষ করে যেহেতু যৌথ পরিবার ছিল তাদের বাচ্চা লালন পালন করতে একটু সুবিধা হত। কারণ তারা একে অপরের সন্তানদেরকে এবং কাজকর্মে খুব সহযোগিতা করতেন। দেখতে দেখতে সখিনারও বিয়ে দেওয়ার অবস্থা হয়ে যায়। কিন্তু সখিনা দেখতে খারাপ ছিল না দেখতে মোটামুটি সুন্দর ছিল। তাছাড়া ও সম্ভ্রান্ত ফ্যামিলির মেয়ে যেহেতু বিভিন্ন দিক থেকে প্রস্তাব আসতেই থাকে। সখিনার বাবার প্রথম কন্যা সন্তান তাই সখিনার বাবার অনেক শখ ছিল সখিনা কে খুব বড়সড়ো করে বিয়ে দেওয়ার জন্য।
এছাড়াও গ্রামের আশে পাশের অনেক বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে থাকে। কিন্তু সখিনার বাবা কিছুতে রাজি ছিল না। এক সময় দেখা যায় সখিনার বড় চাচাতো বোনের এক বন্ধু সকিনা কে পছন্দ করছে। ছেলেটি খুবই সুন্দর ছিল দেখতে অনেক ফর্সা হ্যান্ডসাম একজন ছেলে ছিল। প্রথমে বিয়ে দিতে রাজি ছিল না সখিনার বাবা। পরে সখিনার জ্যাঠাতো বোনের হাজব্যান্ডকে তার বন্ধু খুব বেশি জোরাজুরি করলো। জোরাজুরি করার পরে এক সময় সখিনার বাবা রাজি হয় বিয়ে হয়ে যায় ওই ছেলের সাথে। খুবই একটি মজার ঘটনা ছিল যেদিন সখিনার বিয়ে হয়েছিল সেই দিন সখিনার বাবার তিন ভাইয়ের মেয়ে তিনটি বিয়ে দিয়েছিল এক সাথে। অর্থাৎ সখিনার বাবারা ছিল তিন ভাই যৌথ পরিবারে। তারা সখিনা সহ তিন জনই একই বয়সী ছিল।
তিন জনের জন্য একই দিনে বিয়ে ঠিক করে রাখছিল তাই এক সাথে বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু ব্যাপারটা ঘটে গেল সখিনার কপালে। কারণ ছেলেটি এত জোরাজুরি করলো সখিনাকে বিয়ে করার জন্য। পরবর্তীতে দেখা যায় সখিনার সেই হাজব্যান্ড ঘরে থাকতো না। অর্থাৎ ভবঘুরে টাইপের ছিল এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করতো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত এমনকি ৭/৮দিনেও ঘরে আসতো না। কথাই বলে যাদের কপালে দুঃখ থাকে তাদের কপালে দুঃখ গুলো সারা জীবন শেষ হয় না। একদিকে সখিনা তো এতিম সন্তান যদিও খুব আদরে বড় হয়েছে। কিন্তু মায়ের সুখ কি কখনো ভুলা যায়?
এভাবে চলতে চলতে বেশ দুই এক বছর চলে যায়। সখিনা কিছুদিন বাপের বাড়িতে থাকে এবং কিছুদিন স্বামীর বাড়িতেই থাকে। তার স্বামীও কোন বদলাতে থাকে না। যেহেতু ছেলে দেখতে খুব সুন্দর ছিল কিন্তু সুন্দর হলে কি হবে ছেলে ঘরে থাকতো না বাইরে ঘোরাফেরা করে সেখানে সময় কাটাতো। এভাবে থাকতে থাকতে এক সময় সখিনার খারাপ লাগা শুরু হলো। তাই সেই বাবার বাড়িতে এসে বিভিন্ন ধরনের নালিশ করতে থাকে। এক সময় সখিনার বাবা সালিশ করলো তার মেয়ে রাখবে না সেখানে।
অনেক বড় একটি শালিস হল যেহেতু তাদের মেয়ে শান্তিতে নেই। মেয়ের স্বামী যেহেতু ঘরেই থাকে না বাইরে ঘোরাফেরা করে সখিনার দেখাশোনা কিংবা ভরণপোষণের কোন দায়িত্ব নিচ্ছে না। শ্বশুরবাড়িতে থাকে অনেক বেশি কাজ করাতো। তাই সখিনার বাবা সিদ্ধান্ত নিল তার মেয়ের ডিভোর্স নিয়ে নেবে। যেহেতু আগেরকার মানুষ অনেক বেশি রাগী মেজাজের ছিল তাই তারা এক কথার মানুষ ছিল।
তখনকার সময় সকিনার বাবা সাত ভরি স্বর্ণ দিয়ে বিয়ে দিয়েছিল। অনেক ভালোভাবে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছিল ফার্নিচার দিয়ে। তখন সালিশের মধ্যে সখিনার শাশুর তাকে স্বর্ণগুলো ফেরত দিচ্ছিল না। অর্থাৎ সাত ভরি স্বর্ণের মধ্যে তাকে অর্ধেক দিতে চাইছিল। কিন্তু সখিনার বাবা কিছুতে রাজি না পুরোপুরি স্বর্ণ নিবে না হয় না এক ভরিও স্বর্ণ নেবে না। এভাবে সখিনার বাবা রাগ করে এক ভরি স্বর্ণও না নিয়ে সখিনাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসলো। এবং ফার্নিচার গুলো ফেরত আনল। সেই ফার্নিচার দিয়ে সখিনার ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে দিল। সেভাবে ছকিনার জীবনে আবারও যন্ত্রণা শুরু হলো।
যেহেতু মা হারা মেয়ে এবং ডিভোর্সি মেয়ে তাহলে বুঝেন অবস্থা গ্রামের। গ্রামের কেন এমনি শহরে হলেও একটা ডিভোর্সি মেয়ের কদর খুবই কম থাকে। তাই তাকে নানান কথা শুনতে হতো সব সময়। এবং সেই অনেক বেশি অপমান সহ্য করেছে। বিশেষ করে সখিনার মায়ের ছোট বোন যেহেতু তার সৎ মা এখন। চাইলেও মায়ের বোন মায়ের মত হতে পারতো। কিন্তু সখিনার সেই খালাও তাকে পৃথক করতে থাকে। সখিনার খালারও অনেক সন্তান ছিল। আমি মনে করি এই পৃথিবীতে শুধু মা ই মা হয় কোন খালা কিংবা কেউ মায়ের সমান হতে পারে না। এভাবে চলতেই থাকে সখিনার জীবন।
বাকি পর্ব আমি আপনাদের সাথে পরে শেয়ার করব সবাই সাথে থাকবেন।
লেখার উৎস | গ্রামের বাস্তব একটি গল্প |
---|---|
ইমেজ সোর্স | কেনভা দিয়ে তৈরি |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | গল্প লেখা |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
আপনার জীবনের গল্পের আজকের পর্ব পড়ে বেশ ভালো লাগলো। গল্পের মাঝে সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। আসলে ডিভোর্সি মেয়েকে সবাই অবহেলা করে। আজকে পর্ব দুর্দান্ত হয়েছে আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
জি ভাইয়া একজন ডিভোর্সি মেয়ের কত করুন কাহিনী তা আমি ধাপে ধাপে শেয়ার করব আপনাদের।
https://twitter.com/nahar_hera/status/1761089892111761751?t=12NtVSCGibdGF2CnpkmZhw&s=19
একটা মেয়ের জীবন কতটা যুদ্ধ করে পার করতে হয় তার বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে আপনার এই গল্পের ব্যাখ্যা যদিও বাস্তব জীবনেও এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। আর হ্যাঁ, সবশেষে যে কথা বললেন মায়ের বিকল্প আসলে কোন কেউই হয় না।
অনেক করুন কাহিনী ভাইয়া এখনো অনেক গল্প বাকি আছে সাথে থাকবেন আশা করি।
মাঝে মাঝেই নেট ও সার্ভারে সমস্যার জন্য এমনটা হয়।যাইহোক আপনি বাস্তব ঘটনা নিয়ে গল্পটি লিখেছেন।কথায় আছে-মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি।কিন্তু এক্ষেত্রে সৎ মায়ের পরিচয় দিয়েছে সখিনার মাসি।তাছাড়া মা তো মা-ই হয়, তার ভাগ্যেই খারাপ স্বামী জুটে গেল।পরবর্তীটা সখিনার কি হলো এবং তার শাশুড়ি গহনা ফেরত দিয়েছিল কিনা সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম, ধন্যবাদ আপু।
সার্ভার ডিস্টার্বের কারণে আপু সঠিক সময়ে কাজ গুলো করতে না পারলে অনেক বেশি টেনশনে থাকি। ধন্যবাদ আপনাকে সময় দিয়ে আমার পোস্ট পড়ার জন্য।
আসলে একজন মায়ের জায়গা কেউই কখনো নিতে পারে না। এবং কি মায়ের ভালোবাসা কেউ কখনো চাইলেও দিতে পারেনা। কারণ নিজের মায়ের মত কেউই আমাদেরকে ভালোবাসতে পারবে না। আর ঠিক তেমনটা সখিনার কপালে হয়েছিল। বিয়ের পরও সখিনার দুঃখের সময় গেল না। আর শেষ পর্যন্ত তার বাবা তাকে নিয়ে এসেছিল তার হাজবেন্ডকে ডিভোর্স দিয়ে। আর এরপর থেকে সখিনা আরো বেশি কষ্টে ছিল বুঝতে পারতেছি। অনেক সুন্দর করে আপনি এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করেছেন। আশা করছি গল্পটার তৃতীয় পর্ব শীঘ্রই সবার মাঝে ভাগ করে নিবেন।
হ্যা ভাইয়া বিস্তারিত পড়েছেন আপনি ভালো লেগেছে। তবে সখিনার জন্য আরও অনেক খারাপ কিছু অপেক্ষা করেছিল যা আমি পরবর্তীতে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
মা তো মা ই হয় তাই না। মায়ের অভাব কেউ কখনোই পূরণ করতে পারে না। সখিনার মা মারা গিয়েছিল, আর তার বাবা বিয়ে করেছিল। কিন্তু তার সৎ মা কখনো মায়ের আদর দিতে পারেনি। সখিনার খালাকে বিয়ে করার পরও তার খালা মেয়ের মত করে আদর করেনি। আসলে মা হয় মায়ের মত। তার জায়গা কেউ কখনো নিতে পারে না। মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়ার পরও মেয়েটার ডিভোর্স হয়ে যায়। তার হাজবেন্ড তার উপর অত্যাচার করত এইজন্য। যাই হোক প্রথম পর্ব না পড়লেও দ্বিতীয় টা পড়ে ভালো লেগেছে আবার খারাপ লেগেছে।
মায়ের অনুপস্থিতিতে বুঝতে পারি আসলে মা পৃথিবীতে কতই আপন জন। সখিনার জীবনের করুন কাহিনী খুবই খারাপ ছিল আপু। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।