স্পেশ্যাল রেসিপি : বিনা তেলে জলে মুরগির মাংস রান্না।
আসসালামু আলাইকুম/ নমস্কার
প্রিয় বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন আশা করি সকলে ভালো আছেন? আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি আপনাদের দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে। তো বন্ধুরা আজকে আবারো চলে এসেছি নতুন একটি ব্লগিং নিয়ে। সেই দিন @rme দাদার শেয়ার করা বিনা তেলে এবং বিনা জলে মুরগির মাংস রেসিপিটি পড়ে বেশ অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। কারণ আমি মুরগির মাংস রান্না না করলেও কিন্তু অন্যান্য রেসিপি তেল ছাড়া কয়েক বার তৈরি করেছি। তবে সেগুলো জল ছিল কিন্তু তেল ছিলো না। আসলে তেল ছাড়া কিংবা জল ছাড়া রেসিপি তৈরি করা আগেরকার মানুষেরা অনেক বেশি করতো। আমাদের আদিবাসিরা কিন্তু তখন তেলের ব্যবহার করত না। গোটা মুরগি কিংবা অন্যান্য মাছ এবং সব কিছু তাঁরা আগুনে পুড়িয়ে খেতো। তখনও কিন্তু এক প্রকারের খাবারের স্বাদ পেতো তাঁরাও। আগুনের পোড়া পোড়া গন্ধ খাবার অনেক ভালো লাগে খেতে। তাছাড়া ছোট বেলায় অনেক কিছু আগুনে পুড়িয়ে খেয়েছি বেশ মনে আছে। তাই দাদার @rme শেয়ার করা রেসিপি টা দেখে তৈরি করার জন্য একটু সাহস করেছিলাম।
কিন্তু সময় সল্পতার কারণে তৈরি করা হয়েও ওঠেনা যেকোন কিছু। যা সময় থাকে তা ধারাবাহিক কাজ গুলো করতে গিয়ে আগ্রহ থাকার সত্বেও অন্য কাজ গুলো করতে একটু দেরি হয়ে যায়। তো চেষ্টা করলাম দাদার শেয়ার করা বিনা তেলে বিনা জলে মুরগির মাংস রেসিপি তৈরি করার প্রচেষ্টা। অনেক ভালো লেগেছে দাদার রেসিপি টা দেখে। ইতিমধ্যে অনেকেই অনেক সুন্দর সুন্দর রেসিপি শেয়ার করলেন অসম্ভব ভালো লেগেছে। @amarbanglablog কমিউনিটি মানে সব সময় ভিন্ন কিছু শেয়ার করা। ভিন্ন কিছু ক্রিয়েটিভিটি আনার চেষ্টা করা। বেশ ভালোই লাগে দাদার চিন্তা ভাবনা গুলো সব সময় ইউনিক হয়। তো এর মাধ্যমে চেষ্টা করছি রেসিপিটি তৈরি করার। কিন্তু বাচ্চারা খেয়ে দেখলো অনেক মজা হয়েছে। আমি বললাম তেল দিই নাই তো বাচ্চারা খেয়ে বললো আম্মু খেতে অনেক মজার হয়েছে। বেশ তাহলে তারা তো বেশ মজার করে খাওয়া দাওয়া করলো।
তাছাড়া আমিও সেঁকে দেখেছি খেতে ভীষণ ভালো লেগেছে। ঠিক তেল দিয়ে রান্না করলে যেমন মজার হয় তার থেকে আরো বেশি ভালো লেগেছে। এটি নিশ্চয়ই একটি মানসম্মত খাবার কারণ অতিরিক্ত তেল খাওয়ার কারণে আমাদের অনেক ধরনের রোগ হচ্ছে। তাছাড়া তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে তেলের মধ্যে অনেক ভেজাল তেল এখন মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে। তো তেল একদম খাবো না সেটা বলবো না তবে নিয়ম মাফিক কম তেলের মধ্যে যদি রেসিপি গুলো তৈরি করা যায় তাহলে ভাল। বিনা তেলে যদি রেসিপি গুলো তৈরি করা যায় তাহলে ভালো হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে যদি এভাবে বিনা তেলে রেসিপি গুলো তৈরি করা হয় তাহলে খাবারের মধ্যে একটি ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যাবে।
তো বন্ধুরা তাহলে শুরু করা যাক আমি কিভাবে দাদার উপকরণ সমূহ অনুসরণ করে রেসিপিটি তৈরি করেছি সেই ধাপ গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করব
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
দেশি মুরগির মাংস | ৫০০ গ্রাম |
নারকেল বাটা | ৫০ গ্রাম |
টমেটো | ২ টি |
পেঁয়াজ | ৩ টি |
রসুন | ২ টি |
সরিষা বাটা | ২ চাম |
আদা বাটা | ৩ চামচ |
আলু বড় সাইজের | ১ টি |
টক দই | ৫ চামচ |
গোটা জিরা | অল্প |
লবণ | স্বাদমত |
লাল মরিচ গুঁড়া | ২ চামচ |
হলুদ গুঁড়া | ১ চামচ |
জিরা গুঁড়া | ১ চামচ |
ধনে গুঁড়া | ২ চামচ |
ধনে পাতা কুচি | অল্প |
গোটা মরিচ কাঁচা মরিচ ৪ টা আর লাল মরিচ ২টা | |
দারুচিনি, তেজ পাতা, লবঙ্গ, এলাচ | অল্প করে |
বিনা তেলে জলে মাংস রান্নার ধাপ সমূহ
ধাপ-১
প্রথমত আপনাদেরকে উল্লেখিত উপকরণ সমূহ নিয়ে দেখালাম। এখন রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি মাংস গুলোকে আগে থেকে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিলাম। সেখানে পরিমাণ মত টক দই দিয়েছি। এছাড়া দিয়েছি পরিমাণ মতো আদা দিলাম সাথে দুই চামচ সরিষা বাটা দিয়েছি। সাথে দুইটা টমেটো নিয়ে হাতে ভালো করে ফেটে দিয়েছি।
ধাপ-২
এর পরে দিয়েছি পরিমাণ মতো লবণ। দিয়ে দিলাম ধনিয়ার গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া এবং লাল মরিচের গুঁড়া। সব উপকরণ গুলো দেওয়া শেষ হয়ে গেলে হাত দিয়ে ভালো মতো মেখে ম্যারিনেট করে রাখলাম কিছুক্ষণের জন্য।
ধাপ-৩
মাংস গুলো ম্যারিনেট করা শেষ হতে হতে অন্য ধাপে চলে এসেছি। এখন অন্যান্য উপকরণ সমূহ রেডি করে নিব। একটা স্টিলের নেট নিয়ে চুলায় বসায় দিলাম। সেখানে সব উপকরণ গুলো ভালো করে আগুনের মধ্যে পুড়িয়ে নিয়েছি।
ধাপ-৪
আগুনে পুড়িয়ে নেওয়ার পরে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে সব উপকরণ সমূহ শিলের পাটায় বেটে নিয়েছি। সাথে নারকেল দিয়েছি এবং নারকেল গুলো বেটে নিলাম।
ধাপ-৫
এখন শিল পাটায় বেটে নেওয়া সব উপকরণ সমূহকে ম্যারিনেট করা মাংসের মধ্যে দিলাম। সব উপকরণ সমূহ দেওয়ার পরে আবার ভালো করে হাত দিয়ে সব উপকরণ মেখে নিয়েছি। মেখে নেওয়ার পরে এখন সরাসরি চুলায় বসিয়ে দিলাম।
ধাপ-৬
চুলার তাপ বেশি বাড়ায় দিব না কারণ বেশি বাড়িয়ে দিলে পুড়ে যাওয়া সম্ভাবনা আছে। কারণ বিনা তেলে এবং বিনা জলে যেহেতু রান্না করা হচ্ছে তাই তাপ লো আঁচে দিয়ে রান্না করতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর নেড়েছেড়ে দিতে হবে যাতে পুড়ে না যায় মাংস গুলো।
ধাপ-৭
মাংস গুলোকে সময় দিয়ে রান্না করতে হবে যেহেতু কোন জল দেওয়া হয়নি এবং তেল দেওয়া হয়নি সেজন্য ভিতরে যাতে কাঁচা থেকে না যাই। তো রান্না করা শেষ হয়ে গেলে উপরে ধনে পাতা কুচি দিয়ে নামায় ফেলতে হবে। এবার কিন্তু পরিবেশনের পর্যায়ে রেসিপি।
পরিবেশনা
সত্যি কথা বলতে রেসিপি টি যতক্ষণ রান্না করেছিলাম ততক্ষণ অনেক বেশি টেনশনে ছিলাম। কারণ প্রথম যেহেতু তেল ছাড়া এবং জল ছাড়া মাংস রান্না করলাম খেতে কেমন হয় সেজন্য। কিন্তু রান্না করার পরে যখন সেঁকে দেখলাম খেতে কিন্তু বেশ ভালোই লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাচ্চাদের খেতে ভাল লেগেছে। তেল দিয়ে জল দিয়ে রান্না করলে যে স্বাদ পাওয়া যায় কিন্তু তার চেয়ে ভিন্ন রকমের একটি স্বাদ পাওয়া গেল।
অনেক ভালো লেগেছে রেসিপিটি রান্না করার পরে যখন খেয়ে দেখলাম খাবার পরে যেহেতু ভালো লাগলো তখন। এভাবে কোন কিছু কষ্ট করে করার পরে যদি সফলতা পাওয়া যায় তাহলে সে কষ্ট গুলো আর মনে থাকে না। তো প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আমার আজকের রেসিপিটি আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। প্রিয় দাদার শেয়ার করা রেসিপিটি ফলো করে আজকের রেসিপিটি তৈরি করেছি আশা করি কিছুটা হলেও পেরেছি দাদার উপকরণ সমূহ অনুসরণ করে। কেমন হলো জানাবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
ডিভাইসের নাম | Wiko,T3 |
---|---|
মডেল | W-V770 |
ফটোগ্রাফার | @samhunnahar |
ক্যাটাগরি | রেসিপি |
আজ এখানে আমার লেখা সমাপ্তি করছি। আবার উপস্থিত হব নতুন কোন ব্লগ নিয়ে। সবাই সুস্থ থাকবেন আর ভাল থাকবেন।
💘ধন্যবাদ সবাইকে💘
আমার পরিচয়
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে ভালবাসি। আমি রান্না করতে পছন্দ করি। ভ্রমণ আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। আমি সব ধরনের ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করি। আমি গান গাইতে এবং কবিতা আবৃত্তি করতে ভীষণ ভালবাসি। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
দাদার দেয়া রেসিপি দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। তেল, জল ছাড়া রেসিপি সত্যি ই খুব স্বাস্থ্যসম্মত।খেতে নিশ্চয়ই খুব মজা হয়েছে।ধন্যবাদ রেসিপিটি শেয়ার করার জন্য।
জি আপু খেতে অনেক মজার হয়েছিল অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
https://steemit.com/hive-129948/@samhunnahar/3usnv9
বিনা তেলে জলে মুরগির মাংস রান্না দেখেই সুস্বাদু মনে হচ্ছে। এতো মজাদার রেসিপি ধাপে ধাপে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
জি ভাইয়া খেতে অনেক ভালো হয়েছিল তেল ছাড়া রান্না করছি সেই গন্ধটা মাংসের মধ্যে পাওয়া যায়নি।
বিনা তেলের চিকেন রেসিপি দেখে যেন মজাদার মনে হচ্ছে। আসলেই এই রেসিপিটি একদম ইউনিক রেসিপি। আর এভাবে রেসিপি তৈরি করা আপনার পোষ্টের মাধ্যমে শিখতে পারলাম।
সত্যি ভাইয়া যখন রান্না করেছিলাম কেমন হবে সেই চিন্তায় ছিলাম কিন্তু রান্নার পরে খেতে অনেক ভালো লেগেছে।
আপনি তো দেখছি অসাধ্যকে সাধ্য করে ফেলেছেন আপু। আসলে তেল এবং জল ব্যবহার না করে মুরগির মাংস রান্না করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। রেসিপিটা দেখে মনে হচ্ছে খেতে অনেক সুস্বাদু হয়েছিল।
একদম ঠিক বলছেন ভাইয়া আপনি আসলেই রেসিপিটি তৈরি করতে অনেক কষ্ট হয়েছে কিন্তু রান্নার পরে খেয়ে সে কষ্ট ভুলে গেছি।
দারুন ব্যাপার।
দাদার দেখানো পথ ধরে চমৎকার একটি রান্না উপহার দিয়েছেন আপু। এভাবে তেল জল ছাড়া আমি কখনো মুরগির মাংস খাইনি। এবার সবার রেসিপি দেখে শিখে নিলাম, ইনশাআল্লাহ সামনে তৈরি করে খেয়ে দেখবো। রেসিপি দারুন ছিল 👌 আশাকরি ভালো কিছু হবে।
নিশ্চয়ই ভাইয়া চেষ্টা করে দেখবেন খেতে কিন্তু ভালো হয়েছে মনে হয়নি যে তেল ছাড়া রান্না করেছি।
বিনা তেলে জলে মুরগির মাংস রান্না রেসিপিটি বেশ মজাদার হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে খেতে খুবই সুস্বাদু হবে। অনেক সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন রেসিপিটির। অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার রেসিপিটি ভালো লাগার জন্য।
আসলে তেল এবং জল ছাড়া রেসিপিটা তৈরি করলেও আসলেই অনেক বেশি সুস্বাদু হয়েছিল এটি। সোনিয়া যখন তৈরি করেছিল আমি তো যখন গিয়েছিলাম তখন ভীষণ ভালো লেগেছিল। আমি তো ছাদের উপরে বসেই খেয়ে নিয়েছিলাম। বুঝতেই পারছি আপনার বাচ্চারাও অনেক বেশি পছন্দ করেছিল এই রেসিপিটা। আসলে দাদার স্পেশাল রেসিপি এটা তো বুঝতেই হবে। যাইহোক আপনি তৈরি করেছেন এটা দেখেই ভালো লাগলো।
জি ভাইয়া সোনিয়া আপুর পোস্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আপনি অনেক মজার করে খেয়েছিলেন আপনি।
বিনা তেলে জলে মুরগির মাংস রান্না দেখে অনেক ভালো লাগলো। বোঝা যাচ্ছে খেতে ভীষণ সুস্বাদু হয়েছে। আপু চমৎকার ভাবে পরিবেশন করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
খেতে অনেক মজার হয়েছিলা আপনি ও ট্রাই করতে পারেন।
বিনা তেলে জলে রান্না করার রেসিপিটার কথা শুনলেই আমার ওই দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি যখন তৈরি করেছিলাম তখন সবাই অনেক বেশি পছন্দ করেছিল রেসিপিটা এবং খেতেও খুব ভালো লেগেছিল। আর সেই স্বাদের কথা মনে তো পড়বেই। আমার তো ইচ্ছে করছে এখনো এই রেসিপিটা শুধু খেতে। তবে আপনি অনেক সুন্দর করে উপকরণগুলো ব্যবহার করে এই রেসিপিটা তৈরি করেছেন। ভালো লাগলো আপনার তৈরি করা রেসিপিটিও।
সত্যি আপু তেল ছাড়া যে রেসিপি এত মজার হয় আমিও তা ভাবতেছি।