গল্পঃ সমাজের অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্প-(পর্ব-১)।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ পরিবার
আশা করি আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল ভাই ও বোনেরা সবাই ভালো আছেন। সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাচ্ছি আমার আজকের ব্লগিংয়ে। আমিও ভাল আছি আপনাদের দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো সময় যাচ্ছে পরিবারকে নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই। শত ব্যস্তার মাঝেও নিজের সুখ গুলো খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি। আসলে সুখ এমন জিনিস কেউ আপনাকে হাতে ধরিয়ে দেবে না। নিজেকে খুঁজে নিতে হবে নিজের সুখ।নিজেকে দৃঢ় ভাবে তৈরি করে নিতে হবে নিজের অবস্থান। যদি সামান্যটুকু কেউ দুর্বলতা খুঁজে পায় তাহলে আপনার সেই সুখ টুকু কেড়ে নিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। তাই নিজের জায়গায় শক্ত থাকুন। নিজের জায়গাকে সব সময় নিরাপদে রাখুন। যাতে তৃতীয় পক্ষ এসে আপনাকে ডিস্টার্ব করতে না পারে হা হা হা।
অনেক কথাই তো বলা হলো এবার মূল কথায় ফিরে আসি। আজকে আমি শেয়ার করব গ্রামের এক অবহেলিত সখিনার গল্প। অবশ্যই আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা জন্মগতভাবে এতিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সেই এতিম মানুষ গুলো সমাজে অনেক বেশি অবহেলিত হয়। অবহেলিত হয় সবচেয়ে তার কাছের আত্মীয় স্বজনদের দ্বাার। তাদের পাশের মানুষ, কাছের মানুষের দ্বারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয়। যদিও সখিনা এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মা-বাবার ছিল সুখে ভরা সংসার। ছিল ধন-সম্পদে ভরা। ছিল চারদিকে ভরপুর জীবন। যখন সখিনা জন্মগ্রহণ করে তখন ঠিক ছয় মাসের মাথায় তার মা মারা যায়। গ্রামের মধ্যে তখন চিকিৎসা ভালো মতো ছিল না। ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারতো না। হঠাৎ করে ডায়রিয়া হয়ে যেত মানুষের।
যেটাকে আমরা ডায়রিয়া বলে জানি তখন সেই রোগকে ওলা বিবি রোগ বলা হত। যার কারণে সখিনার মা এক রাতে ডায়রিয়া রোগ আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এক রাতের মধ্যে। কোন ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না।
সেই দিন রাত থেকে সখিনা এতিম হয়ে পড়ে। অবশ্যই সখিনার আর এক বড় ভাই ছিল। সেও হয়তো দুই তিন বছরের ছিল। ঠিক আমি জানিনা আসলে ঘটনাটি বাস্তব একটি ঘটনা শুনেছি। এভাবে চলতে থাকে। যেহেতু সখিনাদের পরিবার ছিল একটি যৌথ পরিবার। তার দাদা-দাদী, চাচা-চাচি এবং ফুফি ও চাচাতো ভাই-বোন নিয়ে ভরপুর ছিল ঘর। এবং তার বাবা ছিলেন একজন রাজনৈতিক কাজে জড়িত অনেক সম্মানিত ব্যক্তি।
যেহেতু অল্প বয়সে তার স্ত্রী মারা যায় তখন তো সে আর একা থাকবে না। যেহেতু যৌথ পরিবার তাহলে তো বুঝতে পারছেন। যৌথ পরিবারের যেহেতু সবাই থাকেন পরিবারের একটু চাপ ও থাকে অনেক। তাছাড়া এক জনের এক এক কথা। তাছাড়া ছেলে মানুষ একা কি আর থাকা যায়? যেহেতু বিবাহিত একজন মানুষ। তাও এখন বয়স অল্প বাকি জীবন কাটাবে কিভাবে। তাই সখিনার বাবাকে আরেকটা বিয়ে করালেন তার দাদা দাদী। এভাবে চলতে থাকে সখিনাও বড় হতে থাকে তার এক ফুফুর থেকে দুধ পান করে। যদিও তার সেই ফুফুর একটা ছোট বাচ্চা ছিল। সেই ঘর জামাই ছিল তাদের বাড়িতে। সেই ফুফুকে মা বলে ডাকতো সখিনা। সখিনা তার কাছ থেকে বেস্ট ফিডিং করত।
এভাবে বড় হতে থাকে সখিনা। সবার ভালোবাসায় বড় হতে থাকে। যদিও সবাই অনেক ভালবাসত আদর করত কিন্তু সখিনার একটি অভাব থেকে গেছে সেটা হচ্ছে তার মায়ের অভাব। যত বড় হতে থাকে তার মায়ের কথা জানতে পারে মা মারা গেছে ছয় মাস বয়সে। কিন্তু আগেরকার মানুষ মেয়েদেরকে তেমন পড়ালেখা করাত না। সখিনার বড় ভাইকে পড়ালেখা করাতেন তার বাবা। সখিনার বড় ভাই করিম সেই পড়ালেখায় অনেক ভালো ছিল। তাকে গ্রাম থেকে দূরের একটি মাধ্যমিকে স্কুলে ভর্তি করায় দেওয়া হয়। যেহেতু সেই প্রাইমারি পর্যায়ে পড়ালেখা শেষ করে। সেই মাধ্যমিক স্কুলে অনেক ভালো রেজাল্ট করত সব সময়। তার বাবা যেহেতু আরেকটা বিয়ে করেছে সেই বউয়ের ও একটা কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সখিনার বাবার সেই স্ত্রীর সাথে তেমন ভালো সম্পর্ক ছিল না।
সে কারণে তার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দেয় কিছুদিন পরে। এভাবে চলতে থাকে সখিনাদের পরিবার। মাঝে মধ্যে সখিনা তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে যাইতো। কিন্তু সখিনার অনেক ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করার। যদিও মাঝে মধ্যে চুরি করে গ্রামের পাশের প্রাইমারি স্কুলে যেত। কিন্তু তার দাদা দাদী একদম সহ্য করতে পারতো না সে বিষয়ে। এমনকি সখিনারা তখন থামি পড়তো। তখন সেলোয়ার কামিজ পড়ার প্রচলন ছিল না। তারা লুকিয়ে লুকিয়ে সেলোয়ার কামিজ সেলাই করলো সব চাচাতো বোনেরা মিলে। অনেক বড় একটি যৌথ পরিবার ছিল।
সেখানে অনেক চাচাতো বোনেরা ছিল ভাইয়েরা ছিল। বেশ ভালো একটি পরিবারে সখিনা বড় হতে থাকে। তবে তার দুঃখের একটি বিষয় হচ্ছে তার মা ছিল না। যদিও সবাই তাকে ভালোবাসতো। কিন্তু মাঝে মধ্যে সেই অনেক কষ্ট পেতো। তার সেই কষ্ট গুলো কাউকে বোঝাতে পারতো না সখিনা। এভাবে চলতে থাকে সখিনার বাবার সংসার। যেহেতু প্রথম স্ত্রী মারা গেল। এবং দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দিল। এখন সখিনার বাবাকে আর বিয়েতে বসতে পারেনা অনেকদিন হয়ে গেল।
এভাবে চিন্তা করতে করতে সখিনার দাদা দাদী সখিনার বাবাকে প্রস্তাব দিল তার স্ত্রীর ছোট বোনকে বিয়ে করার জন্য। অর্থাৎ সখিনার মায়ের ছোট বোনকে বিয়ে করার জন্য। যেহেতু সখিনার মা ছিল সখিনার নানুর বাড়ির মধ্যে প্রথম কন্যা সন্তান। এবং তাদের অনেক ছোট ভাই বোন ছিল। তখন সখিনার দাদা দাদী সিদ্ধান্ত নিল সখিনার খালাকে তার বাবার জন্য বউ করে আনবে। যেহেতু তার দুটি সন্তান আছে হয়তো তার খালারা তাদেরকে ভালোভাবে দেখে নিতে পারবে তাই চিন্তা করল। এভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিন সখিনার বাবার সাথে সখিনার মায়ের ছোট বোনের সাথে বিয়ে হয়ে যায়।
যদিও সখিনার খালা বয়সে খুবই ছোট ছিল। কিন্তু তখনকার মানুষ কন্যা সন্তানকে ১১/১২ বছরে বিয়ে দিয়ে দিত। এভাবে তাদের সংসার চলবে থাকে…………
বাকি অংশ পরে চলবে—-------------
লেখার উৎস | গ্রামের বাস্তব একটি গল্প |
---|---|
ইমেজ সোর্স | কেনভা দিয়ে তৈরি |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | গল্প লেখা |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
![268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmUD3WR1TT66vwU4urXWaDDDT53AxDyK2LK8qqZmeDdiKb/268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png)
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
এটা ঠিক বলেছেন আপু নিজেকেই নিজের সুখ খুঁজে নিতে হয়। আমিও মনে করি নিজের দুর্বলতা কখনোই কাউকে দেখানো উচিত নয়। সখিনার জীবন কাহিনী পড়ে বেশ খারাপ লাগলো। দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আপু।
অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে সময় দিয়ে আমার শেয়ার করা গল্পটি পড়ার জন্য।
https://twitter.com/nahar_hera/status/1757062831411978519?t=sXEyWRBxizefwHy6bIW0iQ&s=19