এটিও হতে পারে ঈদের উপহার || ১০% প্রিয় লাজুক-খ্যাকের🦊 জন্য থাকলো
আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.
১৮ই জুলাই, সোমবার।
আ মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।ঈদের আগে আমরা একজন মানুষের জন্য ঈদের উপহার হিসেবে একটি হুইল চেয়ার কিনেছিলাম, সেদিনের সেই অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
মেইন রোডে ফুটপাতে এবং ফুটওভার ব্রিজের উপর অনেক ভিক্ষুক ভিক্ষা করে, সবার সাথেই তেমন কথা না হলেও একজন চাচার সাথে পরিচয় আজ থেকে প্রায় ৩, ৪ বছর আগে থেকে। তার কোন ছেলেমেয়ে ছিল না তিনি সারাদিন যে টাকা তুলতে পারতেন তা দিয়ে তার অসুস্থ স্ত্রী এবং তার সংসার চলবে তো, প্রথম থেকেই চেষ্টা করা তার স্ত্রীকে সুস্থ করার জন্য অল্প অল্প সাহায্য করা।
আমরা সবাই বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে কাজ করতাম, চাচার দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল আমাদের হানিফ ভাইয়ের, তার কাছ থেকে জানতে পারলাম এবছরই তার অসুস্থ স্ত্রী মারা গেছেন। তার স্ত্রীর চিন্তায় সেও প্রায় শুকিয়ে শেষ এবং তারও অনেক অসুখ ধরা দিয়েছে।
এখন আর সে হাঁটতে পারে না সে আমাদেরকে জানিয়েছে যদি তাকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেয়া হতো তাহলে তার চলাফেরা একটু সহজ হতো ।
ঈদের দুদিন আগে এই তথ্যটি আমার কাছে আসে, তখন হাত একদম খালি কিন্তু মানুষের উপকারে আসতে পারলে মনের মধ্যে যে আনন্দ খুঁজে পেতাম তা বোধ হয় ঈদে নতুন কাপড় কিনলেও তেমনটা বোধ করিনা।
ঈদের দুদিন আগে খবরটি আমার কাছে আসে, অর্থাৎ সময় আছে আর মাত্র একদিন তারপরে ঈদ। যদি আমরা একদিনের মধ্যে তাকে এটি গিফট করতে পারি তাহলে হয়তো সে ঈদের দিন রাস্তায় বের হতে পারবে টাকা তোলার জন্য, এসময় প্রায় সবাই গ্রামের বাড়ীতে চলে যায়।
আমার নিজের চলার জন্য হাতে একদম টাকা ছিলনা, কিন্তু একটা হুইল চেয়ারের দাম ছিল বেশ অনেক, খুব খারাপ লাগছিল এই মানুষটাকে হুইল চেয়ার টি দিতে না পেরে। হঠাৎই এক বড় ভাই আমাকে বিকাশে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পাঠায়।
১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও আমি যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই, আগেই বলেছিলাম সবাই গ্রামে চলে গেছে ঢাকা থাকার সুবাদে এ কাজটার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। ভালো কাজ কে কখনো না করতে পারেনি, এত জ্বর নিয়ে যে মানুষটা আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না, সেই আমি চলে গেলাম পঙ্গু হসপিটাল এর সামনে কারণ সেখানেই এই চেয়ার পাওয়া যায়।
আমার সারা শরীর কাপছিল এবং মাথায় প্রচন্ড ব্যথা, একসাথে দুটো নাপা ওষুধ খেলাম, ভাবলাম রাস্তায় যদি আমি অসুস্থ হয়ে যাই তখন কি হবে? তাই আমার এক বন্ধুকে ফোন করলাম ঘুরতে যাওয়ার কথা বললাম তাকে। বন্ধু আসার পর তাকে জানালাম ঘুরতে যাব কিন্তু পঙ্গু হাসপাতাল 😂। বন্ধু আমার রাগ করলো না কারণ মাঝে মাঝেই ইমারজেন্সি কাজের সময় তাকে আমি এভাবেই ডাকি। দুজন মিলে বাসে উঠে রওনা দিলাম।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আমরা পৌছে গেলাম আমাদের গন্তব্য স্থানে, একটু দূরে হাঁটতেই হাসপাতালের সামনে আমরা দোকানগুলো পেয়ে গেলাম, একটা দোকানে গেলাম আমাদের মতই অল্প বয়সে একজন সে দোকানের মালিক। তাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলাম এগুলোর দাম কি রকম হয়? সেই ছেলেটা আমাদেরকে জানালে এগুলোর দাম শুরু হয় ৬০০০ টাকা থেকে ভালো গুলো কিনতে হলে আমাদেরকে ৮-৯ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
হঠাৎই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল কারণ আমার কাছে আছে এইমাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকা। একদম নরমালটা আমাদের পছন্দ হচ্ছেনা কিন্তু যেগুলো পছন্দ হচ্ছে সেগুলোর দাম অনেক, এদিকে সেই বড় ভাইকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তার ফোন ছিল বন্ধ।
এতক্ষণ শরীরটা ভালো লাগছিল কিন্তু দাম শুনে আমি যেন অসুস্থ হয়ে গেলাম। আশেপাশে একটি বিকাশের দোকান খুঁজলাম তারপরে টাকা তুলে চিন্তা করছি বাকি টাকা কিভাবে ম্যানেজ করব। ঈদের কারণে সবাই হয়ত গ্রামের বাড়ি এবং যারা ঢাকাতে আছে তারা অফিসের কাজে ব্যস্ত। এমত অবস্থায় ফোন করে কারো কাছ থেকে টাকা পাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। অনেকগুলো দোকান ঘুরাঘুরি করলাম ক্লান্ত হয়ে চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে ভাবছি তিন ঘন্টা হয়ে গেল এখন আমাদেরকে একটা ডিসিশনে আসতে হবে।
ব্যক্তিগতভাবে এই চেয়ার আমার পছন্দ হয়েছিল, যদিও হ্যান্ড ব্রেক এর তেমন প্রয়োজন নেই, তবুও এটি দেখে মনে হচ্ছিল বেশ ভালো হবে এটি, কিন্তু এটি সাড়ে সাত হাজার টাকার নিচে বিক্রি হবে না। ডিসিশন নেয়ার মত ফোনে কাউকে পেলাম না, এমত অবস্থায় আমার অ্যাকাউন্ট খালি। যখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আর অপেক্ষা করা যাবে না আমরা আবার সেই প্রথম দোকানে চলে গেলাম এবং দোকানদারের সাথে গল্প করা শুরু করলাম।
ভালো একটি সম্পর্ক তৈরী করার চেষ্টা করছিলাম দোকানদারের সাথে, আমাদের বয়সী হওয়ায় বেশ খানিকটা সময় গল্পগুজব করলাম এবং আমাদের সাধ্যমত একটি হুইল চেয়ার পছন্দ করলাম। এটির দাম ছিল ৬০০০ হাজার টাকা। কোনভাবেই তারা এগুলোর দাম কমায় না কারণ এটা একটা সিন্ডিকেট, এগুলো শুধু মাত্র এখানেই পাওয়া যায় এজন্য কোন দোকানদার দাম কমাতে চায় না। আমাদের জন্য কিছু টাকা কম রাখা হলো অনেক অনুরোধ করার পর।
শেষ পর্যন্ত সে সাড়ে৫ হাজার টাকায় রাজি হলো, বিশেষ অনুরোধে আরো ২০০ কম রাখলেন তিনি, বুঝতে পারছিলাম এটি নিয়ে বাসে করে আসতে পারব না। তিনি ২০০ টাকা কম রাখলে আমরা যেন সিএনজি দিয়ে এটাকে নিয়ে যেতে পারি। তাকে ধন্যবাদ জানালাম এবং তাকে জানালাম এটি আমাদের ক্রয় করার উদ্দেশ্য তিনিও খুশি হলেন।
আমি জীবনে কখনো এত দামাদামি করিনি, যে জিনিসই কিনতাম এক দামে কিনতাম। জীবনের প্রথম এত দামাদামি করলাম কারণ পকেট খালি ছিল। অবশেষে খালি হাতে ফিরতে হয়নি এর জন্য আমি খুবই খুশি আমাদের চেয়ারটি প্যাকিং করা হচ্ছে। খুশিতে একটা ছবি তুললাম 😁।
এটি নিয়ে বাসে ওঠা সম্ভব ছিলনা কারণ অনেক ওজন, অসুস্থ থাকার কারণে আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগছিল। সিএনজি মামার ঈদ ভাড়া শুনে আমার মাথায় আগুন, বললাম মামা অতিরিক্ত ঈদ বোনাস দিতে পারব না, নিজেদের অবস্থা খুব খারাপ। ড্রাইভার রাজি হয়ে গেল আমরা উঠে গেলাম তার সিএনজিতে।
সিএনজি মামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এলাকায় ঢুকে পড়লাম, ব্রিজে চাচাকে খুঁজে পেলাম না কারণ তিনি নাকি টাকা তোলার জন্য অন্যদিকে কোথাও বেরিয়েছেন, তারপর আমি বাসায় চলে আসলাম এটি কে নিয়ে। আমাদের যে আরও বন্ধুরা রয়েছে তারা অফিস থেকে আসবে রাত এগারোটার সময়। তখন আমরা চাচার বাসায় গিয়ে এটি পৌঁছে দিয়ে আসবো। আপাতত আমার বাসায় নিয়ে রাখা হলো।
বাসায় আসার পর আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাই তারপর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, ডাক্তারের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আমার জ্বর কমে যায়। রাত এগারোটার দিকে আমার সেই বন্ধুরা আসে, তাদেরকে নিয়ে বের হওয়া হয়। বাজারেই তাকে পাওয়া যায় এবং আমরা তার সাথে কথা বলি।
বন্ধুর ফোন থেকে তোলা কারন আমি তখন অসুস্থ
উপহার পেয়ে চাচা বেশ খুশি, তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে যত জন মানুষ ছিল তারাও আমাকে ধন্যবাদ জানালো কারণ আমি এটি কিনতে গিয়েছিলাম, আসলে তখন সত্যিই খুব খুশি লাগছিল মনে হচ্ছিল এটাই বোধহয় আমার ঈদ। আমি সবাইকে বললাম বেশি সময় বাইরে থাকতে পারবো না আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।
তারপর সবাই রিক্সা করে যার যার বাসার দিকে রওনা হলাম এবং এভাবেই কেটে ছিল আমাদের ঈদের আগের দিন।
আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ।
নিঃসন্দেহে একটি ভাল কাজ করেছেন ভাই । আপনার কাজটা দেখে আমার খুবই ভালো লাগলো । আপনি প্রচন্ড জ্বর নিয়েও চাচার জন্য হুইল চেয়ারটি উপহার দিয়েছেন। ঈদের ঠিক আগেই । আপনার জন্য অনেক দোয়া রইল ভাই । দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন আমাদের মাঝেই , মানুষের সেবা করতে থাকেন সেই কামনাই করি ।❤️
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমি এ ধরনের কাজে সব সময় থাকার চেষ্টা করি এবং এটি আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে কারণ তিনটি সংগঠনের সাথে আমি কাজ করছি। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আপনিও মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এই কামনা করছি।
আসলে ভাই মানবতার সেবায় আপনি আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন । আপনার প্রতি ভালোবাসা অবিরাম। নিঃসন্দেহে আপনি একটি মহৎ কাজ করেছেন। আমাদের সবার উচিত এভাবে সমাজের অসহায় দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আপনি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করি।
আলহামদুলিল্লা এখন সুস্থ আছি, আপনারা চেষ্টা করবেন আপনাদের নিজের এলাকায় এই ধরনের কাজগুলো করার জন্য, আমরা যদি নিজের এলাকায় এ ধরনের কর্মসূচি গুলো করতে পারি তাহলে দেশের অনেক পরিবর্তন হবে।
আসলে ভাই হুইল চেয়ার নয় সবখানেই এরকম সিন্ডিকেট রয়েছে যারা দাম কমাতে চায় না ।তবে দোকানদারের সাথে সুন্দর গল্প করার মুহূর্তটি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন এটা ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
গল্প না করে উপায় নেই অনেক দাম চায়, গল্প করে ২০০০ টাকা কমিয়েছি, এটাই লাভ।