বেঁচে ফিরলাম 😁
আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.
১৯শে ডিসেম্বর,সোমবার।
আ মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।হুট করে চলে গেছিলাম চিটাগাং শহরে, সেখানে পাহাড় এবং প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম, তারই একটু খানিক অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আজকে নিতান্তই নিজের মনের কথাগুলো আপনার সাথে শেয়ার করব, বেশিরভাগ সময়ই হয়তো মুভি রিভিউ, ড্রয়িং, গ্রাফিক্স ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস আপনাদের সাথে শেয়ার করে থাকে, আজকে খানিকটা ভিন্ন রকম।
এত বড় হয়ে গেছে কিন্তু খুব বেশি বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যাওয়া হয়নি। কলেজে থাকতে একটা ট্যুর হয়েছিল সেটাও আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন টিমের সাথে, সেই ট্যুর একটা এক বন্ধুকে হারিয়ে ছিলাম। বন্ধুকে জীবিত অবস্থায় ঢাকা নিয়ে আসতে পারিনি, এই যে মনের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে ছিল আর কোথাও কখনো যাওয়া হয়নি।
ভার্সিটি জীবনে আমি খানিকটা পরিবর্তন নিয়ে আসলাম নিজের জীবনে, সিনিয়র জুনিয়র সবার সাথে মিশে থাকার কারণে সবার নজরে আমি থাকতাম।
আমাদের বড় ভাইরা একটা ট্যুরে যাবে, সেখানে নিতান্তই কাছের কিছু মানুষদের কে ইনভাইট করা হয়েছে। আবেগের বশে সিনিয়রদের মধ্যে আমাকে ইনভাইট করা হয়। আমিও প্রস্তাব রাখলাম আমাকে নিতে হলে জুনিয়রদের মধ্যে থেকেও কিছু ছাত্রদের নিতে হবে।
অনেক ভেবেচিন্তে বড়রা রাজি হয়ে গেল, আমাকে সহ যাওয়ার কথা ছিল পাঁচ জন, সেখান থেকে আমরা হয়ে গেলাম ১৮ জন 😂😆। যাইহোক লাস্ট পর্যন্ত আমরা ১২ জন শেষ পর্যন্ত ট্যুরে গেলাম।
যাইহোক বেশ লম্বা একটা টুর দিয়েছি বড় ছোট সবাই মিলে । প্রথম দিনের কথা আমি এখন বলছি না তা নিয়ে পরবর্তী একটা পোস্ট করা হবে।
এখন চলে আসি মেইন কথাতে, প্রকৃতি যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ংকর। টার্গেট খৈয়াছরা ঝরনা হবে আমাদের শেষদিনের ঘোরাঘুরি তারপর ঢাকায় ফেরত আসবো।
এই ঝর্ণায় যে পাহাড়টি রয়েছে তার ১২ টি স্পটে ঝর্ণার পানি দেখা যায়। অর্থাৎ পাহাড়ে উঠতে উঠতে আমরা ১২ টা ঝরনা দেখতে পাবো শেষ পর্যন্ত।
এখন মজার বিষয় হলেও তখন একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যায় আমাদের সাথে। পাহাড়ের দ্বিতীয় স্পটে আসার পর তৃতীয় স্তরে যাওয়ার জন্য ভুল রাস্তা বেছে নিয়েছিলাম।
একজন বলল এই গুহার ভিতর দিয়ে যেতে হবে আমরা নতুন ছিলাম বুঝিনি গুহার ভিতর রাস্তা ধরে আমরা হাঁটা শুরু করলাম। যদিও গুহাটা তেমন বড় ছিল না, কিন্তু পরবর্তী রাস্তা একটু অন্ধকার খানিকটা মুভিতে যে রকম দেখি একটু ভয়ঙ্কর তেমন, আমরা যেতে যেতে হঠাৎ এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি হল যেন মনে হচ্ছে আমরা হারিয়ে গেছি, পুরো জঙ্গলের মধ্যে আমরা দশটা মানুষ এখন ফেরার আর কোনো পথ নেই। যতটুকু সময় আমরা অতিবাহিত করেছি এর মধ্যে আমাদের তৃতীয় স্পটে চলে যাওয়ার কথা।
প্রায় ২ ঘণ্টার মত আমরা পাহাড় উপর উঠতে থাকলাম, প্রথমদিকে যদিও ওপরে উঠার কিছু ধাপ ছিল, আমরা হয়তো আরও একটা ভুল স্টেপ নিয়েছি, হঠাৎ করেই আমাদের রাস্তা বেশ অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করলো। এবার আমরা যে রাস্তায় এসে পরেছি সেটা ভৌতিক নয় যেন মরন জাল।
আমরা অনুভব করছি ক্রমশই আমরা এমন রাস্তার মধ্যে যাচ্ছি যেটার মধ্যে পা ফেলার কোন জায়গা নাই। এবং সেটা আস্তে আস্তে ৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে চলে গেল। এ সংখ্যাটা আস্তে আস্তে বেড়েছে প্রথমদিকে আমরা বুঝতে পারেনি।
সাহস দেখিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উপরদিকে উঠে যাচ্ছিলাম। এমন একটা সময় দেখলাম আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি ঠিক এই ভাবে আমরা নিচের দিকে নামতে পারব না। অর্থাৎ আমরা এইরকম একটা অ্যাঙ্গেলে রয়েছে এখানে কষ্ট করে উপর থেকে উঠে যাবে, কিন্তু কোনোভাবেই নিচে আসা যাবেনা। সেইসাথে বুঝতে পারলাম আমরা ভুল রাস্তায় এসেছি।
প্রকৃতি আমাদেরকে বিপদে ফেলেছে আবার প্রকৃতি আমাদের পথে দেখিয়েছে, এরকম খারাপ অবস্থা সেখানে ছোট ছোট বাঁশ জন্মেছিল। প্রথমদিকে এই বাঁশগুলো এবং কাটা গাছগুলো আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটা সময় এই জিনিস গুলোই আমাদের বেঁচে ফিরে আসতে সাহায্য করে, হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন।
পাহাড়ের এমন একটা জায়গায় ছিলাম চার হাত-পা কাজে লাগিয়ে আমরা ব্যালেন্স রাখতে পারছিলাম না। শুধু পিছলে পড়ে যায়নি এই ছোট-ছোট বাঁশ গুলোর কারণে, বলতে গেলে এগুলো খুবই চিকন এবং খানিকটা লতার মতো, এটা আমাদের দড়ি হিসেবে কাজ করেছে। প্রায় দু'ঘণ্টা পর আমরা যে স্থানে পৌছেছি, বুঝতে পারলাম এটা পাহাড়ের অষ্টম তম স্তর। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানের পর আমরা এমন এক ভুল রাস্তায় গিয়েছিলাম এক্কেবারে আমরা অষ্টম স্থানে এসে পড়েছিল। যদিও এখানে আসতে অনেক ঘন্টা লাগার কথা কিন্তু আমরা খাড়াভাবে উঠেছি, তাই খানিকটা তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।
নিজে বেঁচে আছি তার থেকে বড় টেনশন হচ্ছে আমরা ছিলাম ১০ জন্য দ্বিতীয় স্তর থেকে আমরা ১ জন কে হারিয়েছি। যদিও সে নিচে চলে গেছে জানি।
কিন্তু উপরে আসতে আসতে দেখলাম আমরা মাত্র চারজন এখানে আসতে পেরেছি বাকি পাঁচজন এর কোন খবর নেই, এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে হয়ে যাবে ভাব, এরকম ভয়ঙ্কর রাস্তা আমরা কোনভাবেই আর নিচে নামতে চাইছিলাম না আমাদেরকে অন্য পথ বেছে নিতে হবে।
দুর্দান্ত সাহস দেখিয়ে আমাদের এক বড় ভাই আবার একইভাবে নিচের দিকে গিয়েছে। এবং রাস্তা দেখিয়ে তাদেরকে উপরে নিয়ে এসেছে। সবাই একত্রে হবার পর আমরা কি যে আনন্দ পেয়েছি তার বুঝেতা পারবো না বা প্রকাশ করতে পারবো না। এরপর আমরা সঠিক রাস্তা পেয়েছি কিন্তু আর আমরা উপরে যাওয়ার সাহস পায়নি এখন নিচে ফেরার পালা।
আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
ভয়ংকর ভ্রমণের বর্ণনা শুনে তো একেবারে হৃদয় কেঁপে উঠলো। এরকম পরিস্থিতিতে সত্যি কোন কিছু করার থাকে না। একবার যদি ভুল রাস্তায় কেউ যায় তাহলে ফেরার পথ খুঁজে পাওয়া সত্যি অনেক মুশকিল হয়ে যায়। অবশেষে সবাই একত্রিত হয়েছেন জেনে সত্যিই ভালো লাগলো। প্রথমে তো অনেকটা ভয় পেয়েছিলাম। এর আগে আপনি আপনার এক বন্ধুকে হারিয়েছেন জেনে সত্যি খারাপ লাগলো ভাইয়া। আসলে এই ভয়ঙ্কর জায়গা গুলোতে গেলে খুবই রিস্ক থাকে। যাই হোক আপনি সুস্থ আছেন এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
জি আপু এখন তো হেসে হেসে গল্প বলছি তখন অনেক টেনশনে ছিলাম, নিজে বাঁচার পরেও টিমের অন্য সবার কথা নিয়ে অনেক চিন্তা করছিলাম। আল্লাহর রহমতে সবাই ফিরে এসেছেন সুস্থভাবে হাজার হাজার শুকরিয়া।
প্রথমেই আপনার কলেজের বন্ধুর কথাটি শুনে অনেক কষ্ট পেলাম। তারপরও চেষ্টা করবেন পাহাড়ি অঞ্চলে কোন গাইড নিয়ে যাওয়ার জন্য কারণ প্রতি বছর এই এই সকল ঘটনার কারণে অনেকের অনেক বড় বড় ক্ষতি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পড়ে জানতে পারলাম আপনারা সবাই ভালো হবেই ফিরে আসতে পেরেছেন। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভয় লেগেছিল জানিনা আপনাদের মধ্যে তখন কেমন অনুভূতি হচ্ছিল, যাইহোক আল্লাহতালার কাছে আপনাদের সকলের জন্য প্রার্থনা করছি যদিও আপনারা সুস্থ ভাবে বাসায় ফিরেছেন।
আমরা সবাই বেশ টেনশনে ছিলাম, আমি শুধু এতোটুকু চিন্তা করছিলাম এখন ভয় পাওয়া যাবে না, বিশ্বাস রাখতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমি যতটা সামনে এগিয়ে যেতে পারবো আমার পথ খুঁজে পাবো।
ভাইয়া আপনার এত ভয়ংকর ভ্রমন কাহিনি পরে মনে হচ্ছিল আমি কোনো ভোতিক মুভি দেখছি। আমি কখনো স্কুল কলেজ থেকে ভ্রমনে যাইনি আর এখন আপনার এই ঘটনা শুনে সেই স্বাদ মিটে গিয়েছে। আপনি তো বেঁচে ফিরেছেন। আমি মনে হয় মরেই যেতাম। আপনার এই ঘটনা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক সবাই আবার একসাথে মিলেছেন জেনে ভালো লাগলো। আমি এমন ঘটনা সিআইডিতে দেখেছিলাম। আমার মনে হয় এমন জায়গায় ভ্রমণ করতে না যাওয়াই ভালো। ধন্যবাদ।
মেয়েদের জন্য আরও বেশকিছু পাহাড় রয়েছে, তবে আমরা যে পরিস্থিতিতে ছিলাম সেখানে কোন মেয়েমানুষের যাওয়াটা আসলেই ঠিক হবে না বা তারা পারবেও না, কারণেই পাহাড় জিনিসটা খুব সহজে আপনার এনার্জি লস করে দেবে আর একবার মনে ভয় ঢুকলে কখনোই আগানো সম্ভব না।
আমারও কলেজ জীবনে তেমন একটা ট্যুরে যাওয়া হয়নি তবে একবার গিয়েছিলাম।কিন্তু আপনার ট্যুরে যাওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা পড়ে তো আমি একদম চমকে গেছিলাম।আপনারা তো সেই ভৌতিক গল্পের ভৌতিক পাহাড়ে গিয়ে পড়েছিলেন মনে হয় হা হা হা।যাক শেষমেষ অনেক কষ্টের বিনিময়ে সব বন্ধুরা একত্রে মিলিত হয়ে বেঁচে ফিরেছেন সেটা হচ্ছে অনেক পাওয়া।বিষয়টি জানতে পেরে অনেক ভাল লাগলো।
কি আর বলবো মুভির মতো হলেও প্রথমদিকে ভয়টাকে ইনজয় করেছিলাম, কিন্তু আস্তে আস্তে যখন ব্যাপারটা মনের নয় শারীরিক একটা প্রেসারের মধ্যে চলে আসলাম, যখন ব্রেইন এবং শরীর দুটোই খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন বেশ টেনশনে ছিলাম, পরিবেশটাই অন্যরকম হয়ে গেল।
কি বলবো ভাই আসলে অনেকটা ভৌতিক এবং ডিসকভারি চ্যানেলের কিছু চিত্র আপনার এই পোস্ট পড়ার মাধ্যমে মাথায় ঘুরছিল। আপনার লেখাগুলো পড়ছি আর আমার মাথায় কাল্পনিকভাবে সে দৃশ্যগুলো যেন ভেসে উঠেছে। যেমনটি ডিসকভারি চ্যানেলে দেখতাম। যাই হোক অনেক বেশি মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে। এরকম পোস্ট আরো শেয়ার করবেন এই কামনা করি।
অবশ্যই আপনারাও কিছু ছবি দেখতে পারবেন আমার পরবর্তী পোস্টে, তবে মেইন পার্ট গুলোর ছবি তোলা হয়নি কারণ ওই পরিস্থিতিতে পেছনে তাকানোর তাও কঠিন বিষয় ছিল, মোবাইল বের করে ছবি শুধুমাত্র কল্পনাতেই ভাবা যায় ।
আগামী পর্ব আসলে দয়া করে আমাকে একটা মেনশন দিবেন যদি আমি মিস করে পেলি।ধন্যবাদ আপনাকে
ডিপ্লোমা প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু আমারও ট্যুর বলতে ঐ একটাই ক্লাস টেনে থাকতে দিয়েছিলাম। কিন্তু ট্যুরে গিয়ে আপনার ঐ বন্ধুর মৃত্যু টা সত্যি দুঃখজনক। এমনটা হলে মনে ভয় ধরে যাওয়া একেবারে স্বাভাবিক। তবে আবার শেষমেষ যে সিনিয়রদের সঙ্গে একটা ট্যুরে গিয়েছেন দেখে ভালো লাগল। তবে বেশ অ্যাডভেঞ্চার রোমাঞ্চকর ছিল আপনার ট্যুর টা।।
কখনোই আপনাকে কলেজ ভার্সিটি এরকম টুর অফার করবে না। বন্ধুবান্ধব এবং বড় ভাইদের নিয়ে আপনার প্ল্যান করতে হবে এবং সেটা সাকসেস করতে হবে।