ভার্সিটির ক্লাস করার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা || ১০% প্রিয় লাজুক-খ্যাকের🦊 জন্য থাকলো।
আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.
১৫ই- জানুয়ারি, শনিবার।
আ মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। ভার্সিটির ক্লাস করার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আজকে তুলে ধরব আপনাদের কাছে আশা করি ভালো লাগবে।
ভার্সিটির প্রথম দিন
আজ ভার্সিটির প্রথম দিন হলেও, ভার্সিটিতে আমরা নতুন নয়। ২০২০ সালে আমি ভর্তি হয়েছিলাম, ক্লাস করেছি অনলাইনে, আমরা নোটিশ পেলাম ১৪ তারিখে আমাদের ভার্সিটিতে ক্লাস করার সুযোগ হবে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে আমাদের এক ব্যাচ বড় এবং আমাদের দুই ব্যাচ ছোট এই পাবলিক গুলো কখনো ভার্সিটিতে ক্লাস করার সুযোগ পায়নি করোনার কারণে।
যখন আমি গ্রুপে জানালাম ১৪ তারিখে আমরা ভার্সিটিতে যাবো, প্রথমে অল্প কিছু মানুষ রাজি হয়েছিল ভার্সিটিতে আসবে, ক্লাস হোক বা না হোক সহপাঠীদের সাথে পরিচয় হওয়ার আগ্রহ থেকেই আমরা ভার্সিটিতে চলে যাই।
বৃহস্পতিবার রাতে হ্যাংআউট শেষ করতে করতে প্রায় ৩ বাজিয়ে ফেলি। রাতে দেরিতে ঘুমাবার একটা অভ্যেস করে ফেলেছি, আবার খুব সকালে উঠতে হবে, রাতে দু'ঘণ্টা ঘুমানোর সময় পেয়েছি, তাও ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারিনি টেনশনে ছিলাম ঘুম থেকে উঠতে পারব কিনা।
ভোর ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম, তখন কুয়াশা অন্ধকার, এমনিতে বেলা ১২ টায় উঠে ছেলেটি আজ ৬ টার সময় ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফেলেছে এবং সাতটার মধ্যে নাস্তা খেয়ে রেডি। এদিকে আমার বন্ধু চলে এসেছে প্রায়।
বন্ধু চলে আসার পর আমরা বাসস্টপে চলে গেলাম, কিছু সময় অপেক্ষা করার পর আমরা বাসে উঠতে পারলাম, ক্লাস শুরু হবে ৮ টা ৩০ মিনিট। আমরা সাতটার সময় বাসে উঠে গেছি, বাসের সর্বোচ্চ আমাদের ১০ মিনিট লেগেছে খিলক্ষেত থেকে বনানী আসছে। শুক্রবার অফিস বন্ধ তাই রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল।
![IMG_20220114_080813.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZw2ornYFtDchsCoxWWBojqGf19qZrqXLNZLioNtPPNRW/IMG_20220114_080813.jpg)
আগেই বলেছিলাম আমরা কয়েকটি ব্যাচ আজকেই প্রথম ভার্সিটিতে ক্লাস করতে এসেছি। আর কেউ কাউকে ঠিকভাবে চিনি না। আমি ও আমার বন্ধু ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, আমাদের গ্রুপে যারা অ্যাড ছিল মোটামুটি সবাই আমাকে চেনে, সবাই আমাকে দেখে আমার কাছে আসে এবং পরিচয় দেয়। একে একে আমরা বেশ অনেক জন হয়ে গেলাম।
এরইমধ্যে আমাদের ক্লাসের সময় হয়ে যায়। আমরা প্রথমে আমাদের টিচারের সাথে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে আমরা আমাদের ক্লাস রুমের নাম্বারটি পায় এবং সেই ক্লাসে গিয়ে অপেক্ষা করি। প্রথম দিন আমাদের পরিচয় পর্ব হয় এবং বিভিন্ন রকমের কথা হয়, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আমাদের প্রথম ক্লাসটি শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ক্লাস শুরু হবে এক ঘন্টা পর, টিচার আমাদের বলেন আপনারা বাইরে থেকে ঘুরে আসতে পারেন। আমরা বাইরে বের হলাম এবং আশেপাশে ঘুরে দেখা শুরু করলাম।
আমরা ভার্সিটি থেকে খানিকটা দূরে চলে আসলাম, দেখছিলাম আশেপাশে কি কি রয়েছে, বেশ খানিকটা দূরে আসার পর আমরা কয়েকটি দোকান দেখতে পেলাম। তারপর সবাই একত্রিত হয়ে একটি দোকানে চা নাস্তা খেলাম।
![IMG_20220114_110005.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmP9U6z62jAwVJKYvTtojjQ4fhJXh9c7hipapMpmi1PiYW/IMG_20220114_110005.jpg)
এতক্ষণের মধ্যে আমাদের পরবর্তী ক্লাস করার সময় হয়ে গেছে, আমরা চলে যাই ভার্সিটির দিকে। এখন আমাদেরকে আবার অন্য একটি ক্লাস রুম দেয়া হয়, কিছু সময়ের মধ্যে ম্যাডাম চলে আসে আমাদের ক্লাস নেয়ার জন্য, এখানেও প্রথম দিন তাই নিয়ম কারণ এবং পরিচয় দিয়েই শেষ হলো।
এতদিন আমাদের সকলের একজন সিআর ছিল এখন যেহেতু আমাদের দুইটি গ্রুপ হয়ে গেছে, তাই আমাদের গ্রুপে একজন নতুন সিআর এর প্রয়োজন। সবাই একজোট হয়ে আমার নাম বলল, এবং আমাকে নির্ধারণ করা হলো। দায়িত্বটি আমার কাছে নতুন কারণ কখনো স্কুলে ক্যাপ্টেন হয়নি। বাকি সবাই জব করে তাই তাদের উপর প্রেসার দেয়নি, দায়িত্ব টা আমি নিলাম।
প্রায় একটা বেজে গেছে, আমাদের ক্লাস শেষ হইলো আমরা নামাজের জন্য বের হলাম। এলাকা নতুন তাই মসজিদ খুঁজে পাচ্ছিনা। সবার কাছে জিজ্ঞাসা করতে করতে, জানতে পারলাম কিছু দূরে একটি মসজিদ রয়েছে। আমরা হাটতে থাকি।
খানিকটা পথ হাঁটাহাঁটি করার পর, আমরা একটি মসজিদের সন্ধান পেলাম। নামাজ প্রায় শুরু হয়ে যাবে ৫ মিনিটের মধ্যে। আমরা অজু করে নামাজের জন্য একটি জায়গায় খুজলাম রাস্তার মধ্যেই নামাজের পাটি বিছানো ছিল, আমরা নামাজ শেষ করে, আশেপাশে হোটেল এর খোঁজ করতে থাকলাম। দুপুর হয়ে গেছে প্রায় সকলেরই খিদে লেগেছে। আমরা বনানী রাস্তার অপর সাইডে কিছু বিরিয়ানির দোকান ও রেস্তোরাঁ দেখেছিলাম। আমরা সেদিকে চলে গেলাম এবং একটি বিরিয়ানির দোকানে বসলাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা যখন ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল, তখন খেয়াল করে দেখলাম দূরের কুয়াশাগুলো এখনও দেখা যাচ্ছে। তাই ফুটওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুললাম।
তারপর আমরা আমাদের বাকি ক্লাস শেষ করলাম, কাজ শেষ করে আমরা অফিস রুমে কিছুসময় জন্য অপেক্ষা করলাম স্যারের জন্য। আমাদের কিছু প্রয়োজনীয় কাজ ছিল।
আমরা আমাদের বাকি কাজ শেষ করে ভার্সিটি ঘুরে দেখছিলাম, এখানে খেলাধুলা করার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা আছে, তবে খেলার সরঞ্জাম গুলো যার কাছে থাকে সে আজ আসেনি। তাই আমরা খেলতে পারিনি তাছাড়া নতুন সবাইকে চিনিও না। তারপর আমরা লাইব্রেরীতে কিছু সময় বসে ছিলাম।
লাইব্রেরীতে কিছু সময়
আমি পড়াশোনায় ভালো ছাত্র না হলেও, লাইব্রেরীতে যেতে আমার বেশ ভালো লাগে, পড়াশোনার বই থেকে আমার লাইব্রেরির অন্য বই গুলো বেশি আকৃষ্ট করে, বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস গুলো, হিমু , আজ হিমুর বিয়ে, হিমু ও রাশিয়ান পরী ইত্যাদি এগুলো আমি পড়েছিলাম তা অনেক আগে হিমু নিয়ে যতগুলো বই ছিল এবং আমি যতগুলো বই পেয়েছিলাম সবগুলো পড়া হয়েছে।
এখানে লাইব্রেরীতে এসে দেখলাম গল্প-উপন্যাসের বই নেই, ইংরেজিতে প্রকাশিত সকল ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং বই, কিছু কিছু ছোট বই কিছু কিছু বেশ বড় মোটা, লাইব্রেরীতে এসেছে এজন্য মোটামুটি ভালো লাগছে কিন্তু আমার পছন্দ মত বই নেই এজন্য মনটা একটু ভার হলো।
পুরো লাইব্রেরী সবগুলো বই চোখ বুলিয়ে গেলাম, হঠাৎ এক কোণে বড়জোর ৩০ থেকে ৪০ টা হবে যেগুলো ছিল গল্প উপন্যাসের বই। যাক এগুলো থাকলেই লাইব্রেরীতে মাঝে মাঝেই আসা হবে। আমি ওইখান থেকে একটি বই নিয়ে বসলাম।
বেশ কয়েকটি পেজ পড়লাম, এরমধ্যে বিকেল প্রায় হয়ে গেল। আমরা আস্তে আস্তে ভার্সিটি থেকে বের হলাম। সবাইকে বিদায় জানিয়ে আবার বাসে চড়ে নিজের এলাকায় দিকে রওনা হলাম। ক্লান্ত শরীর কিছুদূর হাঁটতেই আমাদের স্কুল টা, অনেকদিন হলো স্কুলের সামনে যায় না। তাই ভার্সিটি থেকে সোজা চলে গেলাম স্কুলের সামনে।
আর বেশী দেরি করলাম না তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলাম। শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছিল ঘুম ঘুম ভাব লাগছে অনেক, শরীর ছিল খুবই ক্লান্ত। এলাকার বন্ধুদের সাথে এক ঝলক দেখা করে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
এভাবেই আজকে আমার ভার্সিটির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ছিল, ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
টুইটার পোস্ট লিংক
খুব দারুণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন আমাদের সামনে। আর আপনাদের খাওয়া-দাওয়ার দৃশ্য গুলো দেখে বোঝাই যাচ্ছিল আপনার কতটা এক্সাইটেড ছিলেন আজকের প্রথম ভার্সিটি ক্লাসের জন্য। শুভকামনা রইল আপনাদের জন্য। 🖤
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। সত্যিই আমরা খুব এক্সাইটেড ছিলাম ঐদিন।
আসলে দিন টা অনেক ভালো কেটেছিল।
হুম ভাইলোই ছিলো, দিনটা