আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৯ || বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতি।
আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.
২৮শে জুন,মঙ্গলবার।
আ মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।সবাই বৃষ্টির দিনের মজার কোন ঘটনা নিয়ে পোস্ট করছেন, আমিও সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছি। কতটুকু মজা হবে তা জানি না তবে সেদিনটি এখনও আমরা মনে পড়ে।
সবার মত আমারও বৃষ্টি খুব ভালো লাগে, যদি সেইদিন আমার কোনো জরুরি কাজ না থাকে 😁। যদি কোন প্রয়োজনীয় কাজ হয় তাহলে কিন্তু বিষয়টা আমি একদমই উপভোগ করতে পারিনা।
আর দশটা সাধারণ বাচ্চার মত বৃষ্টির দিনে আমার ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা নেই, কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে এলাকা ঘুরে বেড়ানোর কোন রেকর্ড আমার ছিলনা, আমি থাকতাম বাসায় সবার নজরে সামনে।
এমনিতে আমারও যে খুব ইচ্ছে করত তা নয়। ছোটবেলা থেকেই বোধহয় একটু রসকষ কম রয়েছে আমার মধ্যে, কারণ বৃষ্টির একটু ছিটেফোঁটা তেই আমার জ্বর ঠান্ডা সর্দি একদম অসুস্থ। তাই ফার্মের মুরগীর মত জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতাম।
আপনারা কি কেউ বৃষ্টির সময় একটা গন্ধ অনুভব করেছেন? বৃষ্টির একটুখানি পরেই হালকা বাতাসের সাথে একটা বৃষ্টির গন্ধ আসে সেই অনুভূতিটা আমার খুবই ভালো লাগে। রাস্তায় রিকশা চলত , গাড়ি চলত ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াত। আমি তাদের আনন্দ তেই আনন্দ পেতাম।
আমার ওইদিনের ফিলিংসটা ছিল মিশ্রণ সেটাকে মজার বলা যায় আবার রোমান্টিক বলা যায়। কি ভাবছেন রস কস বিহীন এই ছেলের আবার রোমান্টিক গল্প কিসের? তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
স্কুল জীবন শেষ করে কলেজ জীবন শুরু করলাম। বাসা থেকে যেসব কলেজে ভর্তি হবার কথা বলল আমি তার একটাতেও রাজি ছিলাম না। তার মধ্যে বেশ নামিদামি কলেজ ও ছিল। কেন যেন আমার মাথায় ভুত চাপল আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য আগ্রহী হলাম।
আমি জানতাম ইঞ্জিনিয়ার মানুষরা হিসাব কষাকষি এবং বেস আনরোমান্টিক হয়ে থাকে। আমিও তাদের দলে একজন হতে চাইলাম। মেয়েরা এই ধরণের ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে একটু কমই আগ্রহী হয়, তাতে আমার কি আমি তো আর রোমান্টিক নই।
কলেজে যাওয়ার পরেই আমার বেশ সাঙ্গোপাঙ্গ হয়ে যায়, আমি সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই, কলেজে আমাদের গ্রুপের একটু বেশি ফেমাস হয়ে যায়, আমরা প্রায় অনেকগুলো ছেলে পেলে একসাথে চলাফেরা করতাম, অন্য ডিপার্টমেন্টের কিছু মেয়েরা আমাদের সাথে যোগ দিল। কারণ আমাদের সাথে থাকলে বড় ভাই কিংবা এলাকার কিছু ছেলেপেলেরা ওই মেয়েদেরকে ডিস্টার্ব করত না। আমাদের ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা ছিল চার-পাঁচজন। আমি সবার সাথেই বেশ মিশুক ছিলাম কিন্তু আমি মেয়েদের সাথে কখনো কথাই বলতাম না।
একটা সেমিস্টার চলে গেল আমার এই লজ্জার মধ্যেই, হঠাৎ করেই আমার এক বন্ধু একটি মেয়েকে প্রপোজ করে এবং তাদের মধ্যে রিলেশন হয়ে যায়, আবার একটা মেয়ে আমাকে প্রপোজ করে আমিও কেন যেন হ্যাঁ বলে দেই। প্রথম রিলেশন কিন্তু আমার মনের বিরুদ্ধে কারণ আমি রিলেশন চাইনি কিন্তু সম্পর্কটা নষ্ট করতে চাইনি, সম্পর্কের খাতিরে আমি এই হ্যাঁ বললাম।
যেই মুহুর্তে আমি তাকে হ্যাঁ বললাম ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের গ্রুপে যুক্ত হলো নতুন একটি মেয়ে, তার নাম ইভা (ছদ্মনাম) সেই মেয়েটা ছিল অন্য ডিপার্টমেন্টের। হঠাৎই আমার মনে হল আমি কেন এই মেয়েটাকে এখন হ্যাঁ বললাম আমার তো নতুন এই মেয়েটা কে বেশি ভালো লাগছে। বাকি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই এই মেয়েটার উপর ক্রাশ খেয়ে গেল।
আগেই বলেছিলাম আমি আনরোমান্টিক, রোমান্টিক এবং স্মার্ট ছেলেপেলেরা কাকে পটানোর চেষ্টা করছে। মনের দুঃখে আমি কোনরকম দিন পার করছিলাম।
একে একে সবগুলো ছেলেদের সে রিজেক্ট করেছে, এভাবে প্রায় বছর খানেক চলে গেল অনেক বন্ধু-বান্ধব ঝরে গেল, আমরা সবাই আবার সিঙ্গেল হয়ে গেলাম। মনে মনে সেই মেয়েটির জন্য একটা অনুভূতি রয়েই গেল আমার।
কখনো তার সাথে আমার তেমন ভাবে কথা হয়নি কারণ আমি ছিলাম খুবই লাজুক, আর সব সময় সে মেয়েটিকে ইমপ্রেস করার জন্য অনেক ছেলেরই রেডি থাকতো, তাই আমি কখনো ভাবি নি তার সাথে আমার কথা হবে কিংবা বন্ধুত্ব হবে।
এভাবে একসময় চলে আসলো বর্ষাকাল। সকাল ১০ টায় ক্লাস সকালে মেঘ করেছিল ঠিকই কিন্তু বৃষ্টি আসেনি। মহাখালী বাস থেকে নামলাম আর সাথে সাথেই বৃষ্টি শুরু, আমি এক দৌড় দিলাম কলেজের সামনে পৌছালাম, সেই মেয়েটির বাসা কলেজের পাশে দেখলাম সেই মেয়ে কলেজের পাশে এক ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কলেজে ঢুকতে হলে তাকে একটু বৃষ্টিতে ভিজতে হবে তাই সে যাচ্ছে না দাঁড়িয়ে আছে।
আমি দৌড় দিয়ে সেই ছাউনির নিচে যাবার পর দেখলাম সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। কি করবো ভাবছি আর কেউ নেই আমার খুবই লজ্জা লাগছিল কিন্তু কেন লজ্জা লাগছিল আমি তা বুঝতে পারছিলাম না।
আমাদের দেখ বৃষ্টি যেন আরেকটু বেশি বেড়ে গেল, ২-৪ মিনিট পার হওয়ার পর মেয়েটি আমার কাছে আসলো বলল এই কেমন আছো? উত্তরে আমি বললাম ভালো আছি, তুমি কেমন আছো এটা বলার আর সাহস হলো না? মেয়েটা ভাবল আমি বোধহয় একটু বেয়াদব, পরে বুঝতে পারল আমি লজ্জা পাচ্ছি। তাই সে নিজের থেকেই আমার সাথে কথা শুরু করল।
একটু লাজুক স্বভাবের হলে এটাই একটা উপকার হয় মেয়েরা নিজে থেকে এসে কথা বলে 😝। গ্রুপে একসাথে চলার পরেও আমরা কেউ কাউকে ভালোভাবে চিনতাম না, সে আমার সবকিছু সম্পর্কে জানতে চাইলো কোথায় থাকি, কি কি করতে ভালো লাগে?
আস্তে আস্তে আমার লজ্জা কাটতে লাগল আমিও তার বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলাম। মনে মনে আমিও তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছিলাম এটা সত্যি কথা 😝। তার ভালোলাগার জিনিসগুলো আমারও ভালোলাগে, তার অপছন্দ জিনিসগুলোও আমার অপছন্দের তালিকায়। এই বৃষ্টির এই সময়টুকু কেন জানো আমার খুব ভালো লাগা শুরু করলো। আমি চাচ্ছিলাম বৃষ্টিটা যেন আরো কয়েক ঘন্টা হয়। বোধ হয় ব্যাপারটা আরো রোমান্টিক হতে পারে 😝।
মেয়েটা তার পরিবার সম্পর্কে বলল তার মনের ইচ্ছে গুলো আমাকে বলল, সে আরও বললো সে পড়াশোনা করার জন্য বাইরে যেতে চায়, তার সাথে তাল মিলিয়ে আমিও বললাম আমার ও বাহিরে গিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা মনের আন্তাজে একটি দেশের নাম বলে ফেললাম মেয়েটিও বলল সেও এই দেশেই যেতে চায়। ব্যাসস আরেকটা তীর মারা হয়ে গেল। মনে মনে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম এবং আজকের এই বৃষ্টি হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলাম।
মেয়েটা আমার উপর খুব ইমপ্রেস হয়ে যায়, সে নিজে থেকেই আমাকে বলল আমি যেন একটু আগে ক্যাম্পাসে আসি, এবং আমি ক্যাম্পাসে এসেই যেন ওনাকে ফোন করি। এই সুযোগে আমি বললাম আচ্ছা আপনার ফোন নাম্বার তো আমার নেই 😇 সে নিজে আমার ফোনটা হাতে নিলো এবং আমার ফোনে তার নাম্বারটা সেভ করে দিয়ে একটা মিসকল দিল তার মোবাইলেও আমার নাম্বারটা সেভ করল।
এ যেন সোনায় সোহাগা আমার হার্টবিট তখন কত ছিল তা জানি না। শুধু এতোটুকু জানি এত রোমান্টিক আমি হজম করতে পারবোনা। বৃষ্টিটা একটু কমে গেলো মেয়েটা হাসি দিয়ে বলল আমি প্রতিদিন এই সময়টাতেই ক্যাম্পাসে আসি এটা বলেই সে চলে গেল। বুঝতে পারলাম আমাকে এই সময়টাতেই এখানে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।
সময়ের পরিবর্তনে সে পড়াশোনার জন্য বিদেশে চলে গেল, আমি যেমন তেমনই দেশেই থেকে গেলাম কারণ পড়াশোনা নিয়ে আমি খুব বেশি একটা সিরিয়াস ছিলাম না। জানিনা ঘটনাটি মজার কিনা তবে এখনো বৃষ্টি হলে সেই দিনের কথা ভাবতে ভালো লাগে, আরো বেশ কয়েকবার দেখা হলেও সেই প্রথম বৃষ্টি ভেজার অনুভূতিটা একটু বেশি মনে দোলা দেয়।
মনে মনে শুধু এটাই ভেবে যাই সদ্য স্কুল পাশ করার সে আমি নামক ছেলেটি কতই না সহজ-সরল ছিল। 😇
আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
বৃষ্টি ভেজা দিনের অনুভূতি দারুন লাগলো।আপনি লাজুক ছিলেন বলেই সেদিন মেয়েটা নিজে থেকেই আপনার সাথে কথা বলেছিল। এবং আপনার সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহ পোষন করেছিলো নিজের ফোন নম্বরটা পর্যন্ত আপনার ফোনে সেভ করে দিয়েছিল দারুন একটি রোমান্টিক বিষয়।সত্যি খুব উত্তেজনা নিয়ে আপনার অনুভূতিটা পড়লাম।♥♥
ওই দিন গুলো হয়তো চাইলেও বারবার ফিরে আসে না, মানুষগুলো না থাকলেও স্মৃতিগুলো কিন্তু ঠিকই রয়ে যায় আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আহারে মন!! সুন্দর টার দিকে সবাই ক্রাশ খায়। এটাই স্বাভাবিক। তবে আগের মেয়েটির শেষ পর্যন্ত কি হলো সেটা কিন্তু বলেননি। অনুভূতিগুলো শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
সময়ের পরিবর্তনে দূরত্ব বেড়ে যায়, সবাই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় তাই সেদিকে আর বেশিদূর আগানো হয়নি।
এতো দেখি বর্ষায় প্রেম কাহিনি। বিদেশ যাওয়ার পর মেয়েটা কি আর তোমার সাথে যোগাযোগ করেনি? জানতে খুব ইচ্ছা।
বাহিরে যাওয়ার আগে থেকেই আমি যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেই, এখন বর্তমানে কোথায় আছে বা কি অবস্থা আমায় জানা নেই।
বৃষ্টির দিনের মজার অনুভতি আপনি এত সুন্দর এবং গুছিয়ে আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার কাহিনীটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আপনার বৃষ্টিমুখর দিনে এত সুন্দর একটি কাহিনী হয়ে গেছে তা শুনে এবং আমার লাইফের বৃষ্টির দিনের কাহিনী কথা মনে পড়ল। ধন্যবাদ
বৃষ্টির দিন মানেই নিজের স্মৃতি, প্রিয় মানুষ, আর তার কিছু স্মৃতি। বৃষ্টির দিন গুলো সে পাশে থাকলেও রোম্যান্টিক সে না থাকলেও রোমান্টিক।
আপনি বৃষ্টির দিনে সুন্দর ফিলিংস আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। দারুন কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছেন যা মনোমুগ্ধকর। আসলে লাজুক প্রকৃতি ছেলেদের পিছনে মেয়েরা বেশি আড্ডা দিতে পছন্দ করে কথা এবং কথা বলতে ভালোবাসে। তবে যাই হোক খুব ভালো লেগেছে আপনার এত সুন্দর একটি পোস্ট পড়ে।
আমারও তাই মনে হয় আপনার কমেন্ট পড়ে কনফার্ম হলাম, ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।