শীতের কম্বল কেনার অভিজ্ঞতা || ১০% প্রিয় লাজুক-খ্যাকের🦊 জন্য থাকলো

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.

০৫ই ফাল্গুন, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।

১৮ই- ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার।



মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। শীতের শুরুতে আমরা কম্বল বিতরণ করেছিলাম এবং কম্বল কিনতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেটি আজকে পোষ্ট আকারে শেয়ার করার চেষ্টা করবো।


শীতের কম্বল কেনার অভিজ্ঞতা (1).png

ক্যানভা প্রো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।


প্রতিবছরই আমরা কোন না কোন প্রোগ্রাম করে থাকি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয় আলহামদুলিল্লাহ এবার ও আমরা সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে, এবারের শীতের প্রোগ্রাম করতে সক্ষম হয়েছি। প্রোগ্রামটি হয়েছিল আমাদের শীতের শুরুর দিকেই। প্রোগ্রামের বেশ কয়েকটি দায়িত্ব আমার ছিল তার মধ্যে একটি হলো কম্বলকে কিনে নিয়ে আসা। সেই সময় আমার যে অভিজ্ঞতাগুলো হয়েছিল আজ তা আপনাদের কাছে শেয়ার করব আশা করি ভালো লাগবে


আমরা একটি নির্দিষ্ট দিনে ঠিক করলাম বের হব, তখন পৌষ মাসের মাঝামাঝি একটি সময়। ঠিক করা হলো ভোর ছয়টার দিকে আমরা তিনজন বন্ধু বাসা থেকে বের হব। পছন্দ এবং দাম ঠিক করব কয়েক ঘন্টা পর বাইক এবং গাড়িতে করে আমাদের বাকি বন্ধুরা আসবে এবং কম্বল কিনে আমরা বাসার দিকে রওনা হব।

115.png


কম্বল কিনতে যাওয়ার দিন

সবাইকে বলে দিয়েছি একদম দেরি করা যাবে না, কিন্তু শীতের সকালে আমি উঠতে পারিনা। তার আগের বেশ কয়েকদিন যাবৎ আমি রাত জাগা শুরু করলাম। একটা বদ অভ্যাস হয়ে যায় শীতকালে আমার। তাই রাত্রে আর ঘুমালাম না একবারে ভোরবেলা রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলাম। রেডি হতে হতে বাকি বন্ধুদেরও ফোন করলাম সকালবেলা বের হওয়ার কথা আমাদের তিনজনের, দুইজন আমরা এসে পড়েছি আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করছি।


IMG_20211229_070205.jpg

https://w3w.co/wiggling.ownership.change


একদম সকাল-সকাল রেডি হয়ে বের হয়ে গিয়েছি। এখন আরেকজনের পালা, ওই বন্ধু আসতে একটু দেরি করছে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে বাজার এর দিকে যেতে থাকলাম। কারন ওই বন্ধুর বাসা বাজারের দিকে।

কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পর আমাদের বন্ধু চলে আসলো, শীতের সকাল বেশ ভালই লাগছে। না উঠলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। এই সময়টা মূলত আমি ঘুমিয়ে থাকি, কিন্তু আমার একদমই ঘুম পাচ্ছে না। সারা রাত ঘুমায়নি তাও আমার চোখে ঘুম নেই, একটা অন্যরকম আনন্দ কাজ করছে।


IMG_20211229_071212.jpgIMG_20211229_071203.jpg
IMG_20211229_071315.jpgIMG_20211229_071320.jpg

https://w3w.co/hazelnuts.mulls.bagpipes


কিছু সময়ের মধ্যে বাস চলে আসলো, আমরা বাসে চড়ে রওনা দিলাম। জানিনা ছাত্র এবং বাসের হেলপার দের সাথে কি এত শত্রুতা। আমরা যখন বললাম স্টুডেন্ট, হেল্পার আমাদের বলল সকালবেলা কোন ছাত্র নয়, আমরাও জানি ছাত্র সময় সীমা কতটুকু। কিন্তু এই হেল্পারকে দেখলাম বাসের সকল যাত্রীর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করছে। এমনকি মহিলা মানুষের সাথে ও খুব বাজে ব্যবহার করছে। কারো সাথে যদি মহিলা যাত্রী থাকে সেই পুরুষকে আরো বেশি খারাপ আচরণ করছে, এমনকি ভাড়া নিয়ে বেশ হাতাহাতি ও হয়ে যায় কয়েক জনের সাথে।

ব্যাপার গুলো দেখে আমরা বেশ রাগান্বিত হই এবং আমরা ঠিক করলাম এর সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। আমি সাধারনত খুব ঠাণ্ডা মাথার মানুষ, সহজে আমি রাগ করি না। কিন্তু হেল্পার একটি মেয়ের হাত থেকে টাকা টান দিয়ে নিয়ে যায় ব্যাপারটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। আমরা সঠিক ভাড়া দিতাম কারণ তখন সকাল আটটা বাজেনি, অর্থাৎ ছাত্ররা চালু হয়নি। কিন্তু এই রূপ ব্যবহারের কারণে আমরা হেলপারের সাথে ভাড়া নিয়ে বার্গেনিং করলাম। সে যখন আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে এসেছে। তখন ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র এবং আমরা সকলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠি।

আমরা সকলে অর্ধেক ভাড়া দেই, এবং তার খারাপ ব্যবহার করার কারণে তাকে বেশ কথা শোনানো হয়। আমাদের সাথে বেশ বয়স্ক মানুষরা যোগ দেয়। জানি না ওইদিন ড্রাইভার এবং হেল্পার এর মধ্যে কি হয়েছে। তবে দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে খুব রাগান্বিত। কোনরকম আমরা আমাদের গন্তব্য স্থানে পৌছালাম।


IMG_20211229_080723.jpgIMG_20211229_082420.jpg

https://w3w.co/irritable.loosens.vaulting


আমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল আটটা , আমাদের তিনজনের ক্ষুধা লেগে যায়, আমরা নাস্তা করলাম। তিনজনে চারটা নান রুটি খেলাম এবং ডাল ভাজি ছিল। তুলনামূলক এখানে খাবার মূল্য বেশি মনে হচ্ছে। যেটা আমাদের এখানে ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে হয়ে যায়। সেখানে তো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন প্রায় তার দ্বিগুণ টাকা নিয়েছে। বাড়তি উপকরণের মধ্যে শুধু সালাত দিয়েছিল।


IMG_20211229_084944.jpgIMG_20211229_084952.jpg

https://w3w.co/irritable.loosens.vaulting


আমরা মার্কেটের আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করতে থাকি, তখন দোকান মাত্র খেলা শুরু হয়েছে। আমরা চারপাশ দেখতে থাকলাম এবং ঠিক করতে থাকলাম কোথা থেকে নিলে ভালো হয়। যেহেতু আমাদের অর্ধেক টিম এখনো আসেনি তাই আমরা কোন কিছুর দাম ঠিক করছি না। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।


IMG_20211229_090111.jpgIMG_20211229_090121.jpg

https://w3w.co/buddy.quits.detail


অপেক্ষা করতে করতে আমরা কিছুটা ক্লান্ত, আমরা আশেপাশে চায়ের দোকান খোজা শুরু করলাম, এবং আমরা কয়েকটি দোকান দেখতে পেলাম। আমরা সে দোকানগুলোতে গেলাম চা এবং কেক খেলাম।


IMG_20211229_111824.jpg

https://w3w.co/zooms.irrigate.asset


সেই সকাল বেলা আমরা এখানে এসেছি, কিন্তু আমাদের বাকি বন্ধুদের আসতে বেশ লেট হচ্ছে। তাই আমরা আশেপাশে ঘুরে দেখছি। হঠাৎ আমরা এই হসপিটালের সামনে আসলাম ,দেখলাম অনেক ধরনের পশুপাখি এখানে নিয়ে আসা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। আমরা আগ্রহ সহকারে ভিতরে গিয়ে দেখছিলাম। এখান গরু ছাগল বিড়াল কুকুর ইত্যাদি নিয়ে আসা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। আশেপাশে দেখতে দেখতে আমাদের বাকি বন্ধুরা চলে আসে। আমরাও মার্কেটের দিকে যেতে থাকে কম্বল কেনার জন্য।


IMG_20211229_131052.jpgIMG_20211229_131109.jpg

https://w3w.co/buddy.quits.detail


সকলের পছন্দমত এবং আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমাদের এই কমবে গুলো পছন্দ হয়েছে, এগুলো গার্মেন্টসের ব্লেজার কম্বল। এটি তুলনামূলক মোটা এবং বেশি আরামদায়ক। আমরা এটিকে ঠিক করলাম কেনার জন্য এবং দামাদামি করে আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কিনে নিলাম।


IMG_20211229_171826.jpgIMG_20211229_171833.jpg

অবশেষে যাতায়াতের অনেক ঝামেলা শেষ করে আমরা কম্বলগুলো নিয়ে আসতে পেরেছি, কম্বলগুলো আমার বাসায় রাখা হয়েছে। কারন আমার বাসা হচ্ছে সবার বাসার মাঝখানে। আমরা সবাই বিশ্রাম নিলাম দুপুরবেলা। চিন্তা করলাম সন্ধ্যা বা বিকেলে বিতরণ করতে বের হব।


IMG_20211231_165916.jpgIMG_20211231_165832.jpg

https://w3w.co/reliving.retina.wins


আমরা বিকেলবেলায় বের হয়ে ছিলাম অল্প পরিসরে কিছু নিয়ে, আমরা আশেপাশের কিছু মানুষদের দেয়া শুরু করলাম। প্রথমে আমরা আমাদের আশেপাশের যে অসহায় মানুষগুলো রয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করি। তার পর আমরা একে একে এগুলো বিতরণ শুরু করি।


IMG-20220104-WA0005.jpg

IMG_20220101_195331.jpg

আমরা পর্যায়ক্রমে কয়েকদিন রাতের বেলা বের হয়েছি। আমাদের আশেপাশের রাত্রেবেলা ঘুমন্ত অবস্থায় যে মানুষগুলো কষ্ট করে, তাদেরকে চিহ্নিত করে আমরা সে সকল মানুষকে কম্বল দেয়ার চেষ্টা করেছি।


IMG-20220104-WA0003.jpg

IMG-20220104-WA0004.jpg


আমরা কখনো বাইকে কখনো রিকশায় করে পুরা এলাকা ঘুরে বেরিয়েছি। তিন চারদিন ধরে আমরা এই কাজগুলো করছিলাম। আমাদের যথাসাধ্য আমরা অসহায় মানুষদের কে খুঁজে বের করেছি, চেষ্টা করেছি আমাদের দুই এলাকার মানুষদের কে সাহায্য করতে। আমাদের এই এলাকায় বেশ অনেক মানুষ রয়েছে। যেহেতু আমাদের কম্বল সংখ্যা সীমিত, তাই আমাদের বেছে বেছে অসহায় মানুষদের কে সাহায্য করতে হয়েছে।


IMG_20211231_172944.jpgIMG-20220104-WA0033.jpg

আমরা একজন একজন করে মানুষের সাথে কথা বলেছি এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কম্বল প্রদান করেছে। যে মানুষগুলোর সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন আমরা তাদের কাছেই গিয়েছে। বিতরনের সময় ভালো-মন্দ অনেক রকমেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে, কারো কম্বল থাকার পরেও কম্বল দাবি করছে, আবার এমন ও মানুষকে দেখেছি যাকে আমরা কম্বল দিতে গিয়েছি তারা বলেছে না আমরা আগে কম্বল পেয়েছি। সব মিলিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা বেশ ভালো ছিল। মানুষকে সাহায্য করতে পারলে মনের মধ্যে একটি আত্মতৃপ্তি আসে সেটি আমরা উপভোগ করেছি বহুবার।


বিতরনের সময় অনেক ছবি তোলা হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু আমরা এখানে অনেকগুলো মানুষ ছিলাম, কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে ছবিগুলো ফেসবুকে ব্যবহার করে ফেলে। তাই বিতরনের ছবিগুলো আমি এখানে প্রকাশ করিনি। আমার ব্যক্তিগত মোবাইলের যে ছবিগুলো ছিল এবং যা পূর্বে ব্যবহার করা হয়নি শুধু সেগুলো এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।




image.png



আমি কে?

আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।


আমার বাংলা ব্লগ.gif


image.png



logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


image.png

𝕋𝕙𝕒𝕟𝕜 𝕪𝕠𝕦 𝕖𝕧𝕖𝕣𝕪𝕠𝕟𝕖

115.png

Sort:  
 2 years ago (edited)

সর্বপ্রথম বলতে চাই আপনারা অনেক মহৎ একটি কাজ করেছেন। তবে আপনাদের যে অভিজ্ঞতা গুলো এটা আসলে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন পোষ্টের মাধ্যমে। ধন্যবাদ ভাই এগিয়ে যান এভাবে।মানুষের পাশেই মানুষ,মানুষতো মানুষেরই জন্য। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা থাকবে আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য সব সময়।

 2 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

115.png

 2 years ago 

নিঃসন্দেহে ভালো একটি কাজ করেছেন ভাই। আমাদের পাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শীতে অনেক কষ্ট করে। আপনার কম্বল বিতরণের উদ্যোগটা খুবই ভালো লাগলো। মানুষ মানুষের জন্য। আপনাকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই।

 2 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্ট টি দেখার জন্য, আমরা সবসময় চেষ্টা করব মানুষের পাশে থাকার।

115.png

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার এই মানবিক কাজের প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। গরিব নিরীহ মানুষগুলোর শীত নিবারণের জন্য আপনি শীতের কাপড় তাদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন এর থেকে ভালো কাজ আর কি হতে পারে । আমিও ডিসেম্বর মাসে কম্বল কিনতে গিয়েছিলাম আর কম্বল বিতরনের অনুভূতিটা সবচেয়ে অন্যরকম ছিল। যাইহোক আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

 2 years ago 

জেনে খুশি হলাম আপনিও এই ধরনের কর্মকান্ডের সাথে অংশগ্রহণ করেন, আপনার জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা।

115.png

 2 years ago 

ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করতে চাই না। এবং ভালো একটি কাজ অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতাকে জাহির করেছেন। আশা করছি শীতার্ত সেই মানুষগুলোর এই শীতে কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমবে। আর আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।

 2 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য, এবং এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা

115.png

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61111.24
ETH 2687.89
USDT 1.00
SBD 2.61