একজন রেল বালকের গল্প
আসসালামু আলাইকুম
আমি @saisan
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন।
গত শুক্রবারে আমি আর আমার ভাই গিয়েছিলাম বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত সীমান্ত এলাকা হিলিতে।হিলি বা বাংলাহিলি দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত। এটি একটি উপজেলা যা প্রশাসনিক ভাবে হাকিমপুর নামে পরিচিত কিন্তু স্থানীয় ভাবে হিলি নামেই পরিচিত। হিলিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর অবস্থিত। সীমান্ত এলাকা বলে সারাদেশে এর পরিচিতি রয়েছে।
Location:https://what3words.com/recalled.decorate.airless
হিলি আমার বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার এর পথ।আমাদের নিয়মিত যাতায়াত হয় হিলিতে। আমি সেখানে স্কুল জীবনের প্রথম তিন বছর এবং শেষ তিনবছর সেখানেই পড়েছি যথাক্রমে হাকিমপুর প্রি ক্যাডেট স্কুল (বর্তমানে হিলি পাবলিক স্কুল) এবং বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। ২০১৩ সাল থেকে প্রায় দেড় বছর আমি সেখানে আমার বড় ফুফুর বাসায় ছিলাম।
তো যাহোক সেদিন আসলে আমরা গিয়েছিলাম একজনের সাথে দেখা করতে।এবং আমরা ঠিক করি যে হিলি রেলস্টেশনে দেখা করবো। তো আমরা যথাসময়ে সেখানে পৌঁছে গেলাম। হিলি স্টেশন থেকে ১০০ মিটার পশ্চিম দিকেই রয়েছে ভারতের সীমানা প্রাচীর। সেদিকে তাকাতেই একটি ছেলে বললো, ''ভাইয়া ওদিকে যেও না বি এস এফ গুলি করে দিবে।ঐদিক ভারতের সীমানা।''
আমি কৌতুক করে বললাম, তাই! আমার তো জানাই ছিলো না। আমি বাড়ি কোথায় বলে মনে হয় বলো তো?
সে বললো আমি জানি তোমার বাড়ি এখানেই
আমি বললাম তাহলে কেন আমাকে তুমি মনে করিয়ে দিচ্ছো?
তোমার বাড়ি কোথায়?
সে বললো স্টেশনে
আমি বললো স্টেশনে কোথায়
সে বললো আমি স্টেশনেই থাকি। ছোট বেলা থেকেই।
তখন ব্যাপার টি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি বা ওভাবে ভাবিনি।
আমরা ওখান থেকে প্ল্যাটফর্ম ধরে উত্তর দিকে৷ এগিয়ে ওখানে একটি বড় তেঁতুল গাছ আছে তার নিচে দাঁড়ালাম। আমার ভাই বললো ''তেঁতুল পাড়বি নাকি?'
আমি দেখলাম নাগালের মধ্যে কোন তেঁতুল নেই।তেঁতুল চাইলে গাছে উঠতে হবে। তো হুট করেই দেখলাম সেই ছেলেটা সেখানে চলে এসেছে।এসে বললো, ''আমি গাছে উঠবো তেঁতুল পাড়তে''। শুনে বেশ খুশিই হলাম বললাম আচ্ছা ওঠো কিন্তু পরে গেলে কিন্তু দোষ দিও না''। ও বললো আমাকে একটু উঠিয়ে দাও তাহলেই হবে আর কোন সমস্যা নাই। ওকে একটু উঁচু করে গাছে উঠিয়ে দিলাম। সে গাছে তেঁতুল পাড়তে উঠে পড়লো ডালে।
কিছুক্ষণ পর এই যে হাতে করে এই তেঁতুল গুলো পেড়ে আনলো।
Location:https://what3words.com/recalled.decorate.airless
তারপর আমরা প্ল্যাটফর্মের একটা বেঞ্চে বসলাম। সেও তেঁতুল গুলো নিয়ে আমার পাশে বসলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ''তুমি এই স্টেশনের কোথায় থাকো?''
তখন সে বললো সে এই স্টেশনে না সে স্টেশনে স্টেশনেই থাকে। তার কোন বাড়ি নেই। তার মা বাবা ও নেই।সে মা বাবার কথা মনে করতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই স্টেশনে থাকে।পরে ট্রেনে ট্রেনে বই বিক্রি করে বেড়ায়। তার পিঠে একটা ব্যাগ। সেটাতে করে সে বই বিক্রি করে বেড়ায়
একটু পরে আমাদের সামনে দিয়ে একজন মিষ্টিওয়ালা যাচ্ছিলো। সে আমাকে বললো ভাইয়া মিষ্টি খাবা?
আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কত টাকা আয় করো? যে আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে। আর তোমার কাছে টাকা আছে?
সে বললো, না! কিন্তু খাওয়াবো
আমি মিষ্টিওয়ালাকে ডাকলাম
এবং ওকেই মিষ্টি খাওয়ালাম। মিষ্টি খেয়ে ও বেশ খুশি হলো। এবং বললো সে আমাকে একটা উপহার দেবে।বলে সে তার ব্যাগ থেকে একটা ইয়ারফোন বের করলো এবং আমাকে দিলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে এটা সে কোথায় পেয়েছে। সে বলল এটা সে ট্রেনেই পেয়েছে। যাহোক সেটা ফোনে লাগিয়ে দেখলাম ওটা নষ্ট।এমনিতেও আমি নিতাম না।তাও ওটা ওকে দিয়ে দিলাম।ও বললো এর পর যদি আমার সাথে ওর দেখা হয় ও আমাকে একটা পাওয়ার ব্যাংক দেবে। একটু পর একটা ট্রেন আসলো।
ও আমার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
সে হয়তো আবার কিছু বই নিয়ে ট্রেনে বিক্রি করে বেড়াবে। কোন স্টেশনে নামবে।
আবার অন্য কোন ট্রেনে উঠে আবার কোন নতুন জায়গায় যাবে।
এভাবে বড় হবে।
হয়তো বড় হয়ে আর এইরকম কাজ করতে হবে না।
হয়তো একদিন সে বড় কোন মানুষ হবে......
আমার আসলে তার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লেগেছে।তার জীবনের গল্প শুনে খারাপ লেগেছে, আবার তার চাল-চলন , কথা শুনে বেশ ভালো লেগেছে।
এই হলো একজন রেল বালকের গল্প
ধন্যবাদ আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে।
ভালো লাগলে জানাবেন তা আমাকে নতুন কিছু শেয়ার করার জন্য অনপ্রেরণা জাগাবে।
বাস্তবিক একটি দিক তুলে ধরেছেন,খুবই ভালো লাগলো। আসলে নাটক সিনেমায় তো অনেক গল্পই দেখি, কিন্ত মানুষের জীবন যে নাটকের চেয়েও নাটকীয় তা এই রেল বালক জলজ্যান্ত উদাহরণ। হিলি আমার পাশের এলাকায়। তাই চিনতেও অসুবিধে হয়নি। আপনি খুব দারুন একটা বিষয় তুলে ধরেছেন, খুবই ভালো লাগছে আমার। শুভ কামনা রইলো ভাই আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই। হ্যাঁ, আসলেই মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।আপনার জন্য শুভ কামনা