তুমি যে আমার আলো গল্প পর্ব:১০

in আমার বাংলা ব্লগlast month

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন?আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'তুমি যে আমার আলো'গল্পের দশম পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি,আপনাদের সবার গল্পটি ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-jonathanborba-2917382.jpg
সোর্স



সেদিনের পর থেকে সৌরভ চাকরির জন্য হয়রান হয়ে পড়ে। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরির ভাইভা দিয়ে থাকে কিন্তু অবশেষে চাকরি হয় না। কারণ একটাই তার কোন আত্মীয়-স্বজন নাই যে তার জন্য সুপারিশ করবে। একটা সময় চাকরি খুঁজতে খুঁজতে সৌরভ আশা ছেড়ে দেয়। একদিন লাবনীকে বলে তাকে ভুলে যাওয়ার কথা। কারণ তার পক্ষে চাকরি পাওয়ার সম্ভব নয়। সৌরভ লাবনীকে সব ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু লাবনী ও হেরে যাওয়ার পাত্রী নয়। সৌরভকে আরো ভালো হবে তৈরি হতে বলে। কিন্তু সৌরভ বলে সে যতই চেষ্টা করুক তার পক্ষে ভালো কোন চাকরি হবে না। লাবনী বলে তুমি পারবে না আমার বাবার মুখের উপর জবাব দিতে। বাবার সামনে থেকে আমার হাতটি ধরে নিয়ে আসতে। তার জন্য তো তোমাকে পারতেই হবে। সৌরভ লাবনীর কথা চিন্তা করে সে আগের থেকে আরো কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করল।


সৌরভের এই পরিশ্রম দেখে লাবনী ও কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করল। লাবনী তার বাবাকে মিথ্যা কথা বলে। সে বলে সে তার বান্ধবীর বাড়ি কিছুদিন ঘুরতে যাচ্ছে। আসলে সে বান্ধবীর বাড়িতে ঘুরতে যায়নি। লাবনী সৌরভের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। কারন সে জানে সৌরভের কাছে থাকলে সৌরভ মনের দিক থেকে আরো জোর পাবে। কিছুদিন পর এসআই পদের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ দিল। এটি দেখে লাবনী সৌরভকে বলে সে যেন এসআই পদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা দেয়। তার জন্য সৌরভকে আরো পড়াশোনা করতে বলে। এমন ভাবে চলতে চলতে নিয়োগ পরীক্ষা চলে এলো। সৌরভ ভালোভাবেই পরীক্ষা শেষ করল। এখন শুধু রেজাল্টের আশা। পাশ করলেই ভাইভা আর ভাইভার পরেই সৌরভ এসআই হয়ে যাবে। রেজাল্টের দিন সৌরভ বাড়িতেই ছিল। সে জানতো সে কোনদিন হতে পারবেনা। তাই সে বাড়িতেই বসে ছিল। কিন্তু লাবনীর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল সে পাশ করবে। তাই সে চলে যায় রেজাল্ট দেখার জন্য। লাবনীর সৌরভকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। সবাই যখন রেজাল্ট দেখার জন্য ভিড় করে। তখন সৌরভ পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। সে কিছুতেই রেজাল্ট দেখতে রাজি ছিল না। কিন্তু লাবনী তার রেজাল্ট দেখার জন্য মানুষের ভিড়ের মধ্যে যায়।


আর যখন ভিড় থেকে বেরিয়ে আসে তখন সৌরভ দেখে লাবনী কান্না করছে। এই অবস্থায় লাবনীকে দেখে সৌরভ আর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে চলে গেল লাবনীর কাছে। সৌরভ লাবনীকে বলে আমি আগেই বলেছিলাম আমি পাস করবো না তুমি তারপরও শুনলে না। তখন লাবনী সৌরভকে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি পাস করেছ। সৌরভ লাবনীকে আবার বলে কি বললে তুমি? লাবনী বলে সৌরভ তুমি পাশ করেছ। এই কথাটি শোনার পর সৌরভ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না সে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। এদিকে অপূর্ব খবরের পত্রিকা নিয়ে ছুটতে ছুটতে সৌরভের কাছে এলো। অপূর্ব এসে সৌরভ কে বলে দাদা তুমি পাশ করেছ। তুমি এসআই হয়ে গেছো দাদা আজ খুব আনন্দের দিন। তখন লাবনী বলে তোমার দাদা এখনো এসআই হয়নি সবে মাত্র পাশ করেছে এখন আরেকটি পরীক্ষা। আমার বিশ্বাস সেই পরীক্ষাতেও সে পাশ করবে। সৌরভ বলে লাবনী তুমি যদি আমার পাশে থাকো তাহলে শুধু পরীক্ষা কেনো আমি তো পৃথিবী জয় করতে পারি। লাবনী মুচকি হেসে বলে থাক আর বলতে হবে না। লাবনীর হ্যান্ড ব্যাগ থেকে কিছু টাকা অপূর্বকে দিয়ে বলে মিষ্টি নিয়ে আসতে। অপূর্ব দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় মিষ্টি আনতে। আর সৌরভ ও লাবনী তারা দুজনে মার্কেটে যায়। তখন সৌরভ বলে আমরা মার্কেটে কেনো যাচ্ছি। তখন লাবনী বলে। তোমার তো ভালো জামা প্যান্টও নাই কি করে পড়ে তুমি ভাইভা বোর্ডে যাবে। তার জন্য ভালো জামা প্যান্টের দরকার সেগুলো পড়ে তুমি ভাইবা বোর্ডে যাবে।


সৌরভ বলে আজ হয়তো তুমি পাশে না থাকলে আমি এতদূর পর্যন্ত আসতে পারতাম না। কিছুদিন পর বাইবার জন্য সৌরভের দাগ এল। সৌরভ আগে পরেও ভাইবা দিয়েছে কিন্তু আজ তার একটু নার্ভাস লাগছে। সে আগে পরে বড় বড় কোম্পানিতে ভাইবা দিয়েছে কিন্তু এখানে একটু অন্যরকম কারণ এখানে এসআই পদের জন্য ভাইভা নেওয়া হবে। এখানে যারা ভাইভা নিবে তারা অনেক বড় বড় অফিসার। যাই হোক সৌরভের ডাক এল সৌরভ ভাইভা দিতে গেল। ভাইভা বোর্ডে যেগুলো প্রশ্ন তাকে করেছিল সবগুলো প্রশ্নের সুন্দর উত্তর দিয়েছিল সৌরভ। কিন্তু তাকে অফিসাররা বলে চলে যেতে পরবর্তীতে তাকে জানানো হবে তার চাকরিটি হয়েছে কিনা। ভাইবা শেষ করে সৌরভ লাবনীকে ফোন দেয়। দিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে সৌরভ নার্ভাস থাকে কিন্তু লাবনী তাকে ভরসা দেয় যা হবে সেটি ভালই হবে চিন্তা করো না। দুই থেকে তিনদিন পর সৌরভের ফোনে একটি এসএমএস আসে। এসএমএসটি পড়তেই সৌরভের দুচোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। অপূর্ব সেটি দেখতে পায় সঙ্গে সঙ্গে সৌরভ কে বলে দাদা কি হয়েছে। তুমি কান্না কেন করছ? তখন সৌরভ অপূর্বকে বলে সে চাকরিটি পেয়ে গেছে। অপূর্ব আনন্দে সৌরভকে জড়িয়ে ধরে আর বলে দাদা আমি জানতাম তুমি পারবে। কোথায় আছে কষ্ট করলে কেষ্ট অবশ্যই মিলবে। তুমি কষ্ট করেছো তার ফল সৃষ্টিকর্তার তোমাকে দিয়েছে। সৌরভ বলে শুধু সৃষ্টিকর্তা নয় সেই মানুষটি যদি আমার পাশে না থাকতো তাহলে আজ আমি এত দূরে কোনদিনও আসতে পারতাম না। অপূর্ব আনন্দে মিষ্টি আনতে চলে যায়। আর সৌরভ এই সংবাদটি দেওয়ার জন্য লাবনীকে ফোন দেয়। লাবনী এই কথাটি শোনার পর সেও কাঁদতে থাকে। আর বলতে থাকে আমি জানতাম তুমি পারবে। পৃথিবীর সব থেকে হ্যাপি মানুষ আজ আমি। এতদিনের কষ্টের ফল তুমি পেয়েছো। সৌরভ বলে আজ তোমার জন্য সবকিছু আমার সফলতার পিছনের তোমার বড় অবদান। তুমি যে আমার আলো।

আজ গল্পের পর্বটি এখানেই শেষ করছি পরবর্তী পর্বটি খুব শীঘ্রই আপনাদের সবার মাঝে উপস্থাপন করব সেই পর্যন্ত আপনারা সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 70018.15
ETH 3794.54
USDT 1.00
SBD 3.75