"জীবন যুদ্ধ গল্পের শেষ পর্ব"

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের মাঝে জীবন যুদ্ধ গল্পের শেষ পর্ব উপস্থাপন করছি। আশা করি, এই পর্বটি ও আপনাদের ভালো লাগবে।তাই বিলম্ব করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-gabriel-bastelli-1759823.jpgসোর্স



প্রিয়া ও আকাশ তারা একটি হোটেলে খেতে যাই খাবার অর্ডার করে কিন্তু ওখানে থাকার কিছু মানুষ প্রিয়াকে দেখে তাকে অপমান করতে শুরু করে। প্রিয়া মুখ বুজে সেগুলো শুনে যাচ্ছিল প্রতিবাদী করছিল না। কারণ সে মেনে নিয়েছে মানুষ তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করবে কিন্তু আকাশ সেগুলো সহ্য করতে পারছিলো না।তাই সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে আর সেখান থেকে তারা খাবার না খেয়ে সোজা চলে আসে বাড়িতে। বাড়িতে আসার পর প্রিয়া সোজা রুমে চলে যায় খুব কান্না করতে থাকে। আকাশ প্রিয়াকে সামলানোর চেষ্টা করে কিন্তু প্রিয়া কোন কথাই শুনছিল না। শুধু কান্না করে যাচ্ছে এতদিন যা কিছু হয়েছে প্রিয়া সবকিছু মেনে নিয়েছে কিন্তু আজ হোটেলে তাকে এত বাজে বাজে কথা বলেছে যেটা প্রিয়া মেনে নিতে পারেনি।তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার অপারেশন করাবো খুব শীঘ্রই। সকাল হলে তোমাকে নিয়ে আমি ডাক্তারের কাছে যাব।


পরের দিন সকাল হতে তারা দুজনেই ডাক্তারের কাছে যায় আর ডাক্তার তাকে পরামর্শ দেয় অপারেশন করার। অপারেশন করলে ফেসটা যথেষ্ট ঠিক হয়ে যাবে। প্রথমে প্রিয়া রাজি হচ্ছিল না কিন্তু ডাক্তার তাকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করায় এবং কিছু পরীক্ষা করতে বলে। এরপর ডাক্তার তাদের কে বলে ১৫ দিন পর প্রিয়ার অপারেশন হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যেদিন অপারেশন হবে সেদিন আকাশ থাকতে পারবে না প্রিয়ার পাশে। কারণ আকাশের অফিসে একটি বড় মিটিং ছিলো সেখানে না থাকলে অনেক প্রবলেম হবে। আকাশের খুব মন খারাপ হয়ে যায় কারণ এমন একটি মুহূর্তে সে প্রিয়ার পাশে থাকতে পারবে না। আকাশ প্রিয়াকে বলে যে, আমি চাকরি ছেড়ে দেব।প্রিয়া বলে না তুমি চাকরি ছাড়বে না এক দিনের বিষয় আমার কিছুই হবে না কিন্তু তুমি অফিসের মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু আকাশ কোন কথাই শুনতে চাচ্ছিল না কারণ সে ছিল প্রিয়ার পাশে থাকতে চাচ্ছিল। যখন প্রিয়ার কোন কথাই শুনছিল না আকাশ তখন প্রিয়া রাগান্বিত কন্ঠে তাকে বলে আমি তোমাকে বলেছি তুমি সেদিন মিটিংয়ে থাকবে তো থাকবে। আকাশ প্রিয়ার রাগান্বিত রূপ দেখে কোন কথাই বলে না।


দেখতে দেখতে অপারেশনের দিন চলে এলো ডাক্তার তাদের কিছুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছিল কারণ আরো কিছু পরীক্ষা করার ছিল সেগুলো পরীক্ষা করে তারপর অপারেশন করতে হত। তাই তারা অপারেশনের কিছুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ফাইনালি অপারেশনের দিন চলে এলো আর আকাশও সেদিন তার মিটিংয়ে জয়েন হলো। একদিকে মিটিং হচ্ছে অন্যদিকে প্রিয়ার অপারেশন হচ্ছে। আকাশের কিছুতেই মিটিংয়ে মন ছিল না সে সব সময় চিন্তা করছিল প্রিয়ার কথা। আর এমনটি হওয়ারই কথা এটা সবার সাথে হয়ে থাকে কারণ ভালোবাসার মানুষটি যদি খারাপ থাকে তাহলে সব সময় দুশ্চিন্তা হয় কোন কাজেই মন বসতে চায় না। আকাশের ও তাই হয়েছিল সে মিটিংয়ে উপস্থিত ঠিকই ছিলো কিন্তু মিটিংয়ে মন ছিল না। মিটিং শেষ হতেই আকাশ দেরি না করে সোজা চলে যায় হাসপাতালে। হাসপাতালে যেয়ে দেখে এখনো অপারেশন চলছে সবাই দুশ্চিন্তা করছিলো কারণ অপারেশনে অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে।


প্রায় ছয় ঘন্টা পর ডাক্তার অপারেশন শেষ করে রুম থেকে বের হচ্ছিল সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেয়ে আকাশ ছুটে যায় ডাক্তারের কাছে আর বলে ডাক্তার বাবু সব ঠিক আছে তো? ডাক্তার সান্তনা দেয় যে সব ঠিক আছে ইটস ওকে। আকাশ বলে আমি কি এখন প্রিয়ার সাথে দেখা করতে পারি। ডাক্তার বলে হ্যাঁ আপনি দেখা করতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় আকাশ আর বেডে প্রিয়াকে দেখতে পায়। প্রিয়ার মুখ সম্পন্ন ব্যান্ডেজ করা ছিলো। আকাশ প্রিয়ার কাছে যে তার হাতটি ধরে বলে তুমি ঠিক আছো তো? প্রিয়া বলে হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।কিন্তু আমার ভয় করছে কারন আমাকে কেমন লাগবে দেখতে। আকাশ বলে তোমাকে যেমনটা লাগবে না কেন তুমি আমার কাছে একই থাকবে। প্রিয়া আকাশের হাতি জোরে চেপে ধরে বলে একটা কথা বলব রাখবে। আকাশ বলে একটা কেন হাজারটা কথা বল আমি তোমার সব কথাই রাখবো। আজ অপারেশনের সময় যত সময় আমার জ্ঞান ছিলো আমি সবসময় তোমার কথা চিন্তা করেছি। তুমি জানো আমার একটুও ভয় করেনি আমার মনে হয়েছে তুমি আমার সব সময় হাত ধরে রয়েছে। আমার একটা ইচ্ছা আমার যখন মুখের ব্যান্ডেজ খোলা হবে সর্বপ্রথম আমার ফেসটা তুমি দেখবে। আর তুমি আমার সামনেই বসে থাকবে কারণ আমি তোমার চোখে আমার নিজের মুখ দেখব। প্রিয়ার মুখে এসব কথা শুনে আকাশ প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে আর বলে তুই সত্যি একটা পাগলি এতোটা ভালোবাসিস তুই আমাকে। আমি ধন্য আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই যে, তোমাকে আমার জীবন সঙ্গী করে দিয়েছে। আমি তোমার কথা রাখবো আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তুমি প্রথম তোমার মুখ দেখবে।


দেখতে দেখতে সেই শুভ ক্ষণটি চলে এলো প্রিয়ার কথা মত আকাশ তার সামনেই বসে ছিলো। প্রিয়া আকাশের হাতটি ধরেছিলো আর ডাক্তার খুব আস্তে আস্তে তার মুখ থেকে ব্যান্ডেজ খুলছিলো। ব্যান্ডেজ খোলা শেষ হলে ডাক্তার প্রিয়াকে বলে এবার আপনি চোখ মেলাতে পারেন। ডাক্তারের কথা মতন প্রিয়া চোখ মিলিয়ে আকাশকে দেখতে পায় আর আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রিয়ার মুখ দেখতে পায়। প্রিয়া আনন্দে আকাশকে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে থাকে। প্রিয়া বলে তোমার মতন একটি মানুষ পেয়েছি আমার জীবনে যার কারণে আমি আবার নতুন একটি জীবন পেলাম অনেক ভালোবাসি তোমাকে। এরপর তারা বাড়িতে চলে আসে আর অপারেশনের কিছু দাগ ছিলো মুখে তা পরবর্তীতে ডাক্তার ওষুধ দেয় আর সেগুলো ব্যবহার করার ফলে প্রিয়ার মুখ থেকে সম্পূর্ণ দাগ মুছে যায় এবং সে এখন একটি নতুন জীবন শুরু করে।

আমি একটাই কথা বলব যে, যাকে ভালোবাসা হয় সব সময় তার সুখের দুঃখে পাশে থাকা উচিত। আজ সে বিপদে আছে তার পাশে থাকবো না। আজ সে সুখে আছে তখন আমি তার পাশে থাকবো এটা করলে কোনদিন ভালোবাসা যায় না। কাউকে ভালবাসতে গেলে সাত্য বিহীন ভালবাসতে হবে যে, ভালোবাসার স্বার্থ রয়েছে সে ভালোবাসায় কোনো আনন্দই নেই। তাই স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসা উচিত আর ভালোবাসার মানুষটির পাশে সব সময় থাকা উচিত।

আজকের গল্পটি এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 6 months ago 

গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনার লেখার হাত বেশ ভালো। ধন্যবাদ আপনাকে।

 6 months ago 

জীবন যুদ্ধ গল্পের শেষ পর্ব আপনি খুব সুন্দর করে সবার মাঝে শেয়ার করেছেন। গল্পটা আমার কাছে এত বেশি ভালো লেগেছে যে কি বলবো। আসলে এটা ঠিক ভালোবাসলে স্বার্থ ছাড়াই ভালোবাসতে হবে। শেষ পর্বটা পড়ার সময় তো আমার নিজের অনেক বেশি চিন্তা হচ্ছিল, প্রিয়ার সাথে সবকিছু ঠিকভাবে হবে নাকি হবে না। তার সাথে সবকিছুই ভালো হয়েছে এবং আকাশ ও শেষ পর্যন্ত তার পাশে ছিল, সব কিছু দেখে খুব ভালো লাগলো। আসলে এরকম সম্পর্ক হলে সারা জীবনই টিকে থাকে। আকাশ এরকম সময়েও প্রিয়ার হাতটা ছাড়েনি এটা দেখে ভালো লেগেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57893.29
ETH 3130.56
USDT 1.00
SBD 2.44