ভূতের গল্প শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি গল্পের শেষ পর্ব আপনাদের সবার মাঝে উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-pedro-figueras-626163.jpgসোর্স


আমরা সেদিন রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যার যার রুমে আর গেলাম না কারণ আমাদের সবার ভয় করছিল এই কারণে আমরা সবাই এক রুমে থাকার চিন্তা ভাবনা করলাম।আমরা সবাই মিলে গল্প গুজব করছিলাম আর টিভিতে মুভি দেখছিলাম। হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে যায় চারিদিকে অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না তখন বাড়ির ম্যানেজার একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে আমাদের রুমের সামনে এসে আমাদের ডাক দিল। আমার এক বন্ধু বাইরে যেয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলল আর ম্যানেজার আমাদের চারটে মোমবাতি আর গ্যাস লাইট দিয়ে গেল আর বলল আজ রাতে কারেন্ট আসবে না। কথাটা শোনার পর একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কারণ ওনার কাছে গল্পটি শোনার পর আর আগের দিন রাত্রে ঘটনা গুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল। যাইহোক রুম অন্ধকার ছিল তাই একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রুমটি আলোকিত করলাম।


আমরা ডিসিশন নিলাম আমরা সকালে এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যাব তাই আর রাতে ঘুমালাম না যার যার লাগেজ গোছানোর শুরু করলাম। তখন বাইরে একটি শব্দ শুনতে পেলাম মনে হল কেহ যেন পড়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাইরে চলে এলাম। দেখতে পেলাম ওখানে থালা গ্লাস পড়ে গেছে আর জানলাটি খোলা ছিল। বাইরে হাওয়া হচ্ছিল তাই আমি জানলা বন্ধ করতে গেলাম ঠিক তখন আমার চোখের সামনে জানালার পাশ দিয়ে একটি লোককে যেতে দেখলাম। আমি একটু ভেবে যাই কারণ এত রাতে আর এখানে কে আসবে আমি মনে মনে সেই চিন্তাগুলো করতে থাকি যে হয়তো সেই মেয়ে রিয়া । আমি ভয়ে আর ওদিকে গেলাম না সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজারকে ডাক দিলাম। একটু পরে ম্যানেজারে চলে এলো আমি ম্যানেজারকে বললাম বাইরে কি আপনি ছিলেন? উনি বলল না আমি রুমে ছিলাম। আমি তখন তাকে ঘটনাটি বললাম উনি আমাকে বলল আজ এই দিন টা সেই মেয়েটির জন্মদিন ছিল আর ও প্রতি বছর এই রাতে এসে থাকে। কথাগুলো শোনার পর আমরা সত্যিই ভয় পেয়ে যাই আমি আগে কখনো এসব বিশ্বাস করতাম না কিন্তু আমার চোখের সামনে যখন এসব ঘটনা ঘটছিল বিশ্বাস না করেও কোন উপায় ছিল না। তাই মনে মনে ঈশ্বরের নাম জব করতে থাকি। হঠাৎ চারিপাশ থেকে এক বিচ্ছিরি গন্ধ আসতে শুরু করলো এতটা বাজে গন্ধ যে সহ্য করা যাচ্ছে না দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ভিতর সেই নুপুরের আওয়াজ আর কান্নার শব্দ ভেসে আসছে কানে।


আমাদের সবার এমন অবস্থা হয়েছিল কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলাম না। আমি সবাইকে বললাম যে আজ যাই হয়ে যাক না কেন ভুতের সাথে কথা বলবোই। সবারই কাছে এটি কাল্পনিক গল্পই মনে হবে কিন্তু আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি যে পৃথিবীতে জেন পরী অথবা পেট আত্মা এগুলো আছে কিন্তু এরা আমাদের ক্ষতি করে না এরা শুধু আমাদের কাছ থেকে মুক্তি চায়। যাইহোক আমার বন্ধুরা যেতে সাহস পেল না কিন্তু আমি সবাইকে জোর করাতে তারা রাজি হলো কিন্তু আমাকে তাদের সামনে থাকতে বলল । যাই হোক তারপরেও তো ওদেরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলাম কারণ আমারও খুব ভয় করছিল আমি এখনো পর্যন্ত এসবের পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি এই প্রথম। কান্নার আওয়াজ, নুপুরের শব্দ আর মাঝেমধ্যে হাসির শব্দ আছে। আমরা এইসব খেয়াল করে আস্তে আস্তে সেই শব্দের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম যেতে যেতে যে রুমটাতে রিয়া আত্মহত্যা করেছিল সেই রুমের কাছে এসে পৌছালাম। শুনতে পেলাম ভিতরে কে যেন হাঁটছে আর কান্না করছে। আমরা সবাই ফিসফিস করে কথা বলছিলাম হঠাৎ নুপুরের আওয়াজ কান্নার শব্দ বন্ধ হয়ে গেল আমরা সবাই চমকে গেলাম এখন আর নুপুরের শব্দ কেন হচ্ছে না। আমি দরজায় কান দিতেই প্রচন্ড ধাক্কা আসলো আর আমি সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পড়ে গেলাম। আমার বন্ধুরা ঘটনাটি দেখে প্রচন্ড ঘাবড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ওঠায়। আমি সাহস করে আবার দরজাটি খোলার চেষ্টা করি কিন্তু দরজাটি কোনমতেই খুলতে পারছিলাম না।


অনেকক্ষণ চেষ্টার পরে দরজাটি খুলতে পারলাম ।পকেট থেকে ফোনের আলোটা জ্বালিয়ে রুমের ভেতর ঢুকতেই মাকড়সার জাল আমার চোখে মুখে আটকে গেল। আমি এবং আমার বন্ধুরা সবাই ফোনের আলো জ্বালিয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করলাম। আর খুব সাবধানে মাকড়সার ঝাল গুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করলাম। অবাক করার বিষয় হচ্ছে ম্যানেজার আমাদেরকে যেমনটা বলেছিল মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল সেই দড়িটি এখনো সেভাবেই রয়েছে। আর মেয়েটির কিছু ছবি দেয়ালে টানানো রয়েছে আর মেঝেতে যে নুপুরের আওয়াজ আমরা শুনতাম সেই নুপুর দেখতে পেলাম। সম্পূর্ণ ঘর ময়লা আর মাকড়সার জালে বন্ধ ছিল নিঃশ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু খুব কষ্ট করে সেই দড়িটি সেখান থেকে নামালাম আর নুপুর তার পরনের কাপড় সবগুলো একটি ব্যাগের ভেতর রাখলাম। তারপর আমরা সে রুম থেকে বের হয়ে এলাম আর রুমটি বন্ধ করে দিলাম। সকাল হতেই আমরা এ বাড়ি থেকে রওনা হলাম আমরা সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলাম গয়াতে কারন আমরা হিন্দুরা বিশ্বাস করি গয়াতে অস্থি বিসর্জন দিলে সে ব্যক্তি অশুভ আত্মার হাত থেকে রক্ষা পায়। তাই আমরা গয়াতে যে পুরোহিত কে নিয়ে মেয়েটির ও তার পরিবারের শেষ অস্থি সমুদ্রে বিসর্জন দিয়ে দিলাম। এরপর থেকেই সেই বাড়িতে আর কোন রকম শব্দ, কান্না, হাসি পাওয়া যায়নি আর এভাবেই রিয়ার আত্মা মুক্তি পায়।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 last year 

আসলেই পৃথিবীতে জ্বিন, ভূত, প্রেতাত্মা সবই আছে। যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে, এসব এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে আগের দিনে এসবকিছুর আনাগোনা ছিলো প্রচুর। নাটক বা মুভিতে মৃত ব্যক্তির আত্মা মুক্ত হওয়ার দৃশ্য দেখেছিলাম। আপনারা সাহস করে সেই রুমে গিয়ে সবকিছু সংগ্রহ করে, পুরোহিত এর কাছে গিয়েছেন বলে রিয়ার আত্মা মুক্তি পায়। গল্পটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ভাই। আশা করি সামনেও আমাদের সাথে ভূতের গল্প শেয়ার করবেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65738.35
ETH 2677.27
USDT 1.00
SBD 2.91