"সরস্বতী পূজার আনন্দ মুহূর্ত ও ফটোগ্রাফি"

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

হ্যালো বন্ধুরা

আপনারা সবাই কেমন? আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি সরস্বতী পূজার আনন্দঘন মুহূর্ত আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করছি।আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।



আমার এখনো মনে পড়ে বছর ঘুরে এই সরস্বতী পূজার একটা দিন সেটার জন্য সব সময় অপেক্ষা করতাম কবে আসবে সরস্বতী পূজা। সরস্বতী পূজা আসলেই মনের ভিতরে একটা অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করে। পূজার দিন সকাল ভরে উঠে স্নান সেরে নতুন জামা কাপড় পড়ে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকতাম আর অঞ্জলি দিয়ে বাড়িতে এসে চিড়া, মুড়ি, মিঠাই, দধি একসাথে মাখিয়ে খেতাম। এটা যেন সরস্বতী পূজার সকাল বেলায় মেইন একটি খাবার হিসেবে থাকতো।হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে সরস্বতী দেবী বিদ্যার দেবী তাই এই দিনটা সরস্বতী দেবীকে ছাত্রছাত্রীরা পূজা দিয়ে থাকে যাতে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগটা আরো বৃদ্ধি পায়। এই পূজাটি স্কুল কলেজেও হয়ে থাকে যেখানে পড়াশোনা হয়ে থাকে আসলে সেই সব প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী দেবীর পূজা করা হয়।

IMG20240215080728.jpg



যাই হোক প্রত্যেক বছর আমি আমার এলাকার একটি স্কুলে এই পূজার দায়িত্বে থাকি। কিন্তু এ বছর আমার কিছু ব্যক্তিগত কারণ থাকাতে। আমি আমার এলাকার স্কুলের পূজাতে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। কারণ হলো এ বছর আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা করা হবে। বাড়িতে সরস্বতী পূজার হওয়ার কারণে আমার একটু ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আমি যেহেতু বাড়ির একমাত্র ছেলে তাই সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার মেইনটেইন করতে হয়েছিল। একটি অনুষ্ঠান করতে গেলে একার পক্ষে কোনদিন করা সম্ভব নয় তাই আমার ভাই বন্ধু সবাইকে আমাকে সাহায্য করার কথা বলি আর তাদের সাহায্যের কারণে মা সরস্বতীর পূজাটা আমি সম্পন্ন করতে পারি।


সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল কিন্তু একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় কোথাও পুরোহিত পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্ট করে একটা পুরোহিত ঠিক করতে পেরেছিলাম কিন্তু পূজার দিন সকালে সেই পুরোহিত আমাকে ফোন দিয়ে বলে সে পূজা দিতে পারবে না কারণ তার একজন আত্মীয় মারা গিয়েছে। কথাটি শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল কারণ একদিকে আমি পুরোহিত পাচ্ছিলাম না যদিও একজন পেয়েছিলাম অনেক কষ্টের ফলে কিন্তু সেও এখন পারবে না। আমি মনে মনে চিন্তা করতে থাকি এ বছর হয়তো মা সরস্বতীর পূজা আমার দেওয়া হবে না। কারণ পূজা সম্পন্ন করতে হলে পুরোহিত অবশ্যই দরকার আর পুরোহিত না হলে পূজা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি বসে না থেকে আবার চেষ্টা শুরু করে দিলাম। একটা কথা সবসময় মনে পড়ছিল যে কষ্ট করলে কেষ্ট অবশ্যই মেলে তার ফল ভালোই হয়। হয়তো অনেক কষ্ট করেছিলাম সেহেতু আমি আবারও একটি পুরোহিত ম্যানেজ করতে পারলাম।


যাই হোক যেহেতু বাড়িতে অনুষ্ঠান করছি সে হেতু খুব বড় করেই করার চিন্তাভাবনা হয়েছিল বাড়ির সবাই। পূজাতে প্রসাদ হিসেবে আমরা করেছিলাম লুচি, আলুর দম, পাতাকপি ভাজি, ফুলকপি ভুনা, চিড়া, মুড়ি, ইক্ষুগুড়, মিষ্টি,দধি, জিলাপি। কিছু জিনিস বাজার থেকে কিনে এনেছিলাম যেমন চিড়া, মুড়ি আর সব করেছিলাম নিজেরাই। কারণ নিজেরা করলে এর আনন্দটা একটু বেশি হয়ে থাকে যেহেতু একটু কষ্ট হয় তাও কিন্তু আনন্দটা অনেক বেশি হয়। সারারাত ধরে আমরা লুচি বানিয়েছিলাম জিলাপি ভিজে ছিলাম।
সবকিছু কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আমাদের সকাল পর্যন্ত সময় লেগেছিল লুচি ভাজি শেষ করতে।

IMG20240214044120.jpg

IMG20240214043733.jpg

IMG20240214043719.jpg

IMG20240214043708.jpg

IMG20240213233122.jpg

IMG20240213233111.jpg

IMG20240213233059.jpg

IMG20240213233033.jpg

IMG20240213233010.jpg



সারারাত জেগেছিলাম সকাল হতেই শরীরটা যেন আর পারছিল না ইচ্ছা করছিল একটু বিশ্রাম নিতে। কিন্তু একটু রেস্ট নেওয়ার সময়টুকু পেলাম না আটটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পুরোহিত মশাই ফোন দিয়ে বলল তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে। তাই আর দেরি না করে একটু ফ্রেশ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাইক বের করে চলে গেলাম পুরোহিত আনতে। আর বাড়িতে সবাইকে বলে গেলাম পূজার সরঞ্জাম গুলো গুছিয়ে রাখতে যাতে পুরোহিত আসার সঙ্গে সঙ্গে পূজা শুরু করতে পারে।
৩০ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল পুরোহিত মশাইকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসতে। পুরোহিত আসার সঙ্গে সঙ্গে সবাই শঙ্খ বাজিয়ে উলুর ধ্বনি করে পুরোহিত মশাই কে বরণ করে নিল। কিছুক্ষণ পর পুরোহিত তার পূজার কাজ শুরু করে দিল। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম বাড়িতে অসংখ্য লোকের ভিড় জমে গিয়েছে সবাই নতুন জামা নতুন কাপড় পড়ে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছে। আমি দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে স্নান সেরে নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পড়ে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম।
IMG20240215080640.jpg

IMG20240215080540.jpg

IMG20240214110949.jpg
ক্যামেরা পরিচিতি:oppo
ক্যামেরা মডেল:oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:3.37mm
তারিখ:১৪.০২.২০২৪
সময়:০৯.৩৪মিনিট


অঞ্জলি দেওয়া শেষ হতেই সবাই প্রসাদ খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে প্রসাদ দেওয়ার জন্য আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে প্রসাদ বিতরণ করা শুরু করলাম। প্রসাদ বিতরণ করতে করতে দুপুর একটা বেজে গিয়েছিল। আমার ইচ্ছা ছিল যে সকাল সকাল প্রসাদ বিতরণ শেষ করে বন্ধুরা মিলে সবাই পূজা দেখতে বের হব কিন্তু সেটা আর এ বছর হয়ে উঠল না। পরের বছর দেখব এই বলে নিজের মনটাকে শান্ত করলাম। বাড়িতে পূজার অনুষ্ঠান করে খুবই ভালো লেগেছিল সত্যি বলতে এত লোক হয়েছিল পূজার দিন বাড়িতে আমি কল্পনাও করতে পারিনি আমার ভালো লাগছিল যে এত লোককে আমি পূজার প্রসাদ খাওয়াতে পেরেছি।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 6 months ago 

বাড়িতে এমন পুজোর অনুষ্ঠান করতে পারলে তো আসলেই অনেক ভালো লাগে। সরস্বতী পুজোর এই দিনটাতে আমাদের সকলেরই একটা আলাদা রকম এক্সপেক্টেশন থাকে। আসলে আমাদের এখানেও একই সমস্যা, পুরোহিত পাওয়া যায় না ঠিকঠাক সময় মত। তোমরা সারা রাত জেগে যে এত কাজ করেছিলে তাতে তো অনেক কষ্ট হবেই, সেটা বোঝা যাচ্ছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61020.40
ETH 2603.09
USDT 1.00
SBD 2.65