পুরী জগন্নাথ মন্দিরে ভ্রমণ শেষ পর্ব
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে পুরী জগন্নাথ মন্দিরের ভ্রমণ শেষ পর্ব উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সূর্য মন্দিরে যাইতে আমাদের গাড়িতে প্রায় এক ঘন্টার মতন সময় লেগেছিল। সূর্য মন্দিরে যাওয়ার জন্য এখানে গাড়ির টোকেন কাটতে হয়। আর যদি টোকেন না কাটা হয় তাহলে আমাদেরকে হেঁটে তারপরে যেতে হবে। সূর্য মন্দিরটি পাহাড়ের উপরে। এখানে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে পাহাড় কেটে কেটে। পায়ে হেটে গেলে প্রায় আড়াই কিলোমিটার মত যাওয়ার পর সেই গন্তব্য স্থলে পৌঁছানো যাবে। আমরা পায়ে হেঁটে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করলাম না কারণ অনেক উঁচুতে সেহেতু অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। তার জন্য আমরা গাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম। গাড়িটি যখন সূর্য মন্দিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করল তখন বুঝতে পারলাম যে আমরা উঁচুতে উঠতেছি। আমার একটু ভয় করছিল কারণ পাহাড়ের রাস্তায় গাড়িতে আমার কোনদিন চড়ার অভিজ্ঞতা নেই। তাই সবসময় একটু ভয় করছিল যে গাড়িটি উল্টে না যায়। একটা জিনিস বলতেই হবে মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। যেহেতু আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম সে কারণে আমি ঈশ্বরের নাম মনে মনে জব করতে থাকি। জব করতে করতে আড়াই কিলোমিটারের পথ আমরা পাড়ি দিয়ে পৌছে গেলাম সূর্য মন্দিরে।
গাড়ি থেকে নেমে আমার খুবই ভালো লাগছিল । কারণ আমার এই প্রথম পাহাড়ের উপর উঠে কোন মন্দির দর্শন করা। পাহাড়ের উপর থেকে যখন নিচের দিকে তাকাচ্ছিলাম তখন পরিবেশটা এত সুন্দর লাগছিল সে কথা বলা বাহুল্য। আমরা এত উঁচুতে ছিলাম যে উঁচু উঁচু বিল্ডিং গুলো পিঁপড়ের মত লাগছিল। আমি সেখানে কিছু ফটোগ্রাফি করলাম কারন এই পরিবেশে আসার পর যদি ফটোগ্রাফি না করি তাহলে সবথেকে ভুল হবে। হয়তো এই পরিবেশে আমি আর কখনো পাইতে নাও পারি। তাই সঙ্গে সঙ্গে ফোনটি বের করে এই সুন্দর পরিবেশের কিছু ফটোগ্রাফি করলাম।
এখান থেকে তারপরে চলে গেলাম মূল মন্দিরে। মন্দিরে উঠতে গেলে যে সিঁড়ি ভেঙে আমরা মন্দিরে প্রবেশ করছিলাম। সেই সিঁড়ি গুলো পাথর কেটে কেটে একের পর এক সাজিয়ে সাজিয়ে মন্দিরে উঠার পথ করা হয়েছে। মন্দিরের চারি পাশে ঘিরে রাখা হয়েছে। যাতে কোন ভক্ত এই মন্দিরের পাশে গেলে কোন দুর্ঘটনা না হয়। কারণ এখান থেকে একবার ভুলবশত নিচে পড়ে গেলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। মন্দিরের চারিপাশটা গৌতম বুদ্ধের প্রতিচ্ছবি দিয়ে ভরা ছিল। আর কিছু কিছু দেবতাদের মূর্তি এখানে ছিল যেমন মহাদেব, মাতা দুর্গা, পবন দেব হনুমান, কাত্তিকে ইত্যাদি। এখানে এক সাধুর সঙ্গে আমার দেখা হল সেই সাধু আমাকে প্রথমে ধমক দিয়েছিল। কারণ আমি এই মন্দিরের চারিপাশ ঘুরতে ঘুরতে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আমি পাঁচলির উপরে বসে পরি। এখানে বসে বসে আমি এই সুন্দর পরিবেশকে উপভোগ করতে লাগলাম। ঠিক তার একটু পরেই এক সাধু এসে আমাকে ধমক দিয়ে এই পাঁচলির উপর থেকে নামতে বললো। আমি তার সেই রাগান্বিত কণ্ঠ শুনে এবং তার চেহারা দেখে আমি সঙ্গে সঙ্গে নেমে পড়লাম। পরবর্তীতে আমি সাধুকে প্রণাম দেওয়ার পর সেই সাধুটি আমাকে বুঝিয়ে বলল। যে এত উঁচুতে আমি রয়েছি যেখানে একটু অসাবধান হলেই আমার মৃত্যু অবধারিত। তাই উনি আমাকে সাবধান করলেন।
এখানে একটা সমস্যা হয়েছিল যে আমার ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই এখানকার অনেক কিছুই আমি ফটোশুট করতে পারলাম না। এতে আমার খুব মন খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু যে টুকু পেরেছি আপনারা দেখলে বুঝতে পারবেন যে মন্দিরের উপর থেকে পরিবেশটা কত সুন্দর লাগছিল। আমরা যখন মন্দিরে পৌঁছেছিলাম তখন সূর্য লাল বর্ণ ধারণ করেছিল। তখনকার এই দৃশ্য যেন এই মন্দিরটি কে আরো সুন্দর করে তুলেছিল। আমার তখনই মনে হয়েছিল যে আসলে এই মন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছিল এই সৌন্দর্যের জন্য।
ক্যামেরা পরিচিতি:oppo
ক্যামেরা মডেল:oppo A73 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:4.05mm
তারিখ:১৬.০১.২০২৪
সময়: ০৫.৪৬মিনিট
স্থান: ওড়িশা
মন্দিরের আরো কিছু সময় থাকার পর আমরা হোটেলে উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। হোটেলে আসার পর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ সারাটা দিন অনেক জার্নি করেছি। সকালে উঠেই জানতে পারলাম আমাদের যাওয়ার সময় চলে এসেছে। তাই নিজেদের জামা কাপড় সব কিছু গুছিয়ে ফেললাম। দশটার দিকে আমাদের রুম চেকিং হবে হোটেলের ম্যানেজার আমাদের ফোন করে জানিয়ে দিল। কিন্তু আমাদের ট্রেনের সময় ছিল রাত 9 টার সময় তাই আমাদের আরো কিছু সময় এখানে থাকতে হবে। আমরা হোটেলের ম্যানেজারকে বিষয়টি খুলে বললাম উনারা বিষয়টি বুঝতে পারলেন তারা আমাদের একটি রুমে থাকতে দিলেন। আমরা এখন সবাই এক রুমেই রইলাম, ট্রেনের সময় না হওয়া পর্যন্ত। আর এই সময়টা আমরা বসে থেকে ব্যয় না করে। আমরা চলে গেলাম সমুদ্রে শেষবারের মতন সবাই মিলে স্নান করতে। সেদিন সবাই মিলে স্নান করেছিলাম খুব মজা করেছিলাম। আমি তো সমুদ্রে নেমে উঠতেই চাচ্ছিলাম না কারণ সমুদ্রের ঢেউ খেতে খুবই ভালো লাগছিল। যারা সমুদ্রে নেমে সমুদ্রের ঢেউ খেয়েছেন একমাত্র তারাই বুঝতে পারবেন যে সমুদ্রে নেমে সমুদ্রের ঢেউ খাওয়ার মজার আনন্দটা। অনেকটা সময় এখানে থাকার পর আমরা আবার রুমে ফিরে এলাম ফ্রেশ হয়ে কিছুটা সময় যার যার মতন বিশ্রাম নিলাম এবং সন্ধ্যা আটটার দিকে আমরা সম্পূর্ণভাবে হোটেলটি ছেড়ে আমরা একটি গাড়িতে উঠে আমরা ট্রেন স্টেশনে এলাম। এরপরে ট্রেনে উঠে যার যার সিটে এসে বসলাম। ট্রেনে রাতের খাবারটি খেয়ে যার যার সিটে যে ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রথম দিনের মতন আমার ঘুম হলো না কারণ সেই আবারো ট্রেনের উপরে আমার সিট পড়েছিল। যার কারণে আমি সঠিকভাবে শুতে পারছি না বসতে ও পারছি না। সারারাত ফোনে মুভি দেখে সময়টা পার করে দিয়েছিলাম। সকাল ছয়টা নাগাদ আমরা ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। তারপর আমাদের গাড়িতে করে আমরা বাড়িতে ফিরে এলাম এবং বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটি ঘুম দিলাম। অবশেষে এটুকুই বলবো পুরীতে ভ্রমণ আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল। অনেক অজানা কথা সেগুলো জানতে পারলাম। অনেক অজানা কিছু দেখতে পারলাম। বাড়িতে আসার পর খুবই মিস করছিলাম পুরীতে থাকার সেই সময় গুলো।
পুরী জগন্নাথ মন্দিরে ভ্রমন করতে গিয়ে আপনি খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন এবং সেগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন দেখে আমার অনেক ভালো লাগলো । আপনি সেখানে অনেকগুলো ফটোগ্রাফি করেছেন যা প্রতিটা ফটোগ্রাফি অসাধারণ সুন্দর ছিল একটা ফটোগ্রাফি একেক রকম সুন্দর্য। আপনার এই পুরী জগন্নাথ মন্দিরের ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে আমাদের এই পুরী জগন্নাথ মন্দির দেখার সৌভাগ্য হয়ে গেল। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।