দিদির ভালোবাসা

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি,আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার প্রতি দিদির ভালোবাসা ছোট্ট গল্প কারে উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোষ্ট লেখাটি শুরু করছি।



pexels-angela-roma-7364145.jpg
সোর্স

একটা বড় বোন থাকলে জীবনে আর কিছু দরকার হয় না এটা আমি মনে করি। আমার এখনো মনে পড়ে সেই ছোট্টবেলার কথা। দিদির সাথে আমার সব সময় ঝগড়া হয়ে থাকতো আমি দিদিকে অনেক মারতাম কিন্তু দিদি আমাকে আজ পর্যন্ত আমার গায়ে হাত তোলেনি শুধু নিরবে আমার নির্যাতন সহ্য করে গিয়েছে। আমি দিদির কাছে যা আবদার করতাম দিদি আমাকে সব সময় সেটি পূরণ করার চেষ্টা করত।


আমার জীবনে সবথেকে দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটেছিল আর তখন দিদি আমাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিল সে বিষয়টি বলছি। আজ থেকে প্রায় সাত থেকে আট বছর আগের কথা আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনটি। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়াশোনা করি। আমি স্কুল শেষ করে বাড়িতে এসে স্নান করে পড়ার টেবিলে পড়তে বসি হঠাৎ বাবা এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমি ভাত খেয়েছি কিনা? আমি বাবার কথার উত্তরে বলি বাবা আমি এখন খাব না এখন একটু পরে তারপর ভাত খেয়ে নিব। কিন্তু বাবা আমাকে আগে খাওয়ার কথা বলল তারপর পড়তে বলল কিন্তু আমি বাবার কথা শুনলাম না । কেন জানিনা সেদিন বাবার হঠাৎ এত কেন রাগ হল আমার উপর সঙ্গে সঙ্গে পড়ার টেবিল থেকে আমার বই খাতা সবকিছু পুকুরে ফেলে দেয় আর সঙ্গে সঙ্গে বলে আজ থেকে আমার পড়াশোনা বন্ধ। এটি বলারও কারণ ছিল কারণ আমি স্কুল থেকে এসে না খেয়ে পড়তে বসতাম আর এর কারণে আমি অসুস্থ হয়ে পড়তাম।


যাইহোক আমার বই কথা ফেলে দিলে আমার প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে যায় আর আমার পরিবারে বাবার উপর কেউ কথা বলে না। আমার প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে যায় সারাদিন কান্না করতে থাকি যে আর স্কুলে যেতে পারবো না ভাই বন্ধুদের সাথে দেখা করতে পারবো না কি হবে আমার। যাই হোক তখন আমার দিদি দিদি মা পরিবারের সবাই আত্মীয়-স্বজন আমার বাবাকে বোঝায় এবং শান্ত হতে বলে। বাবা যখন রাগ ভেঙ্গে গেল তখন বাবা আমার বই খাতা নতুন কিনে দিল আমার তো খুবই ভালো লাগলো আর তখন দিদি আমাকে বলল যে আর যেন এমনটা না হয়। এর দুই বছর পর আমি যখন এইটে পড়াশোনা করি তখন হঠাৎ আমি আমার বন্ধুদের সাথে তাস খেলতে বসি আর ঠিক তখন আমার বাবা বিষয়টি দেখে ফেলে। বাবা বাড়িতে এসে সঙ্গে সঙ্গে দিদিকে ফোন দেয় দিদি তখন পড়াশোনা করার জন্য বাইরে একটি বাসা ভাড়া করে থাকতো। বাবা দিদিকে বলে যে তোমার ভাই নষ্ট হয়ে গেছে তুমি পারলে তোমার ভাইকে তোমার কাছে নিয়ে যাও আমি চাইনা ও আমার কাছে থাকুক। দিদি কথাগুলো শুনে একটু চমকে যাওয়ার কারণ দিদি আমার কাছ থেকে এটা কোনদিন আশা করেনি। যাই হোক দিদি বাবার কথাগুলো শুনে কিছুদিন পর বাড়িতে এসে আমাকে গ্রামের ইস্কুল থেকে নিয়ে যেয়ে শহরের একটি স্কুলে ভর্তি করায়। প্রথম প্রথম আমার খুব কষ্ট হয় কারণ খুব মনে পড়তো গ্রামের ভাই বন্ধুদের কথা।


আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বাবা মাসে যে টাকা দিদির হাতে দিত সে টাকায় আমাদের দুই ভাই বোনের ভালোভাবে হত না। বাবা যে টাকা দিত তার 60% আমার লেগে যেত আর 40% খরচ করতো দিদি। দিদির খুব কষ্ট হতো কারণ দিদির ও কলেজে খরচ ছিল তারও হাত খরচ ছিল তাই দিদি বাড়িতে বাড়িতে ছেলেমেয়েদের পড়ানো শুরু করল। মাস শেষে যে কয় টাকা পেত তা আমার আর দিদির ভালোভাবেই হয়ে যেত। আমি রান্না করতে পারতাম না কিন্তু সব সময় দিদিকে হুকুম করতাম যে আমি এটা খাব ওটা খাব কিন্তু দিদি শত কষ্ট হলেও সেগুলো রান্না করার চেষ্টা করত। কিন্তু আমি তখন দিদির কষ্টটা বুঝতে পারতাম না যখন দিদির রান্না খারাপ হতো তখন ওর সাথে ঝগড়া করতাম অনেক সময় কথা না বলে থাকতাম এমন অনেক দিন হয়েছে যে আমি দিদির সাথে কথা না বলে থেকেছি। তোমার মা সব সময় বলতো যে যখন দিদি বিয়ে হয়ে যাবে যখন তোর কাছে থাকবে না তখন বুঝতে পারবি দিদি হারানোর কষ্টটা। আমি যখন স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে উঠি তখন দিদির বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ।তখন আমি খুবই খুশি হয়ে যাই কারণ আমি তখন একা একা রাজত্ব করব বাড়িতে। আমি তখন স্বাধীন মতন ঘুরতে পারবো দিদিকে আর বলে যেতে হবে না আমি এখানে যাচ্ছি ওখানে যাচ্ছি আমি খুব খুশি হই।


কিন্তু দিদির অভাবটা তখনই বুঝতে পারি যখন দিদি বধু সেজে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছিল। কেন জানিনা মনে হচ্ছিল আমার কি যেন দামি জিনিস হারিয়ে গেল আমার জীবন থেকে। আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল কারণ তখন আমি বুঝতে পারি যে দিদির সাথে আমি যে দুষ্টুমি গুলো করতাম এখন আর ইচ্ছা করলে ও আমি সেই দুষ্টুমি দিদির সাথে করতে পারব না। দিদি আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। আমি কাউকে বুঝতে দেইনি কিন্তু দিদি বুঝতে পেরেছিল যে আমার দিদির জন্য কষ্ট হচ্ছে দিদি আমাকে সান্তনা দেয় কিন্তু আমি দিদিকে বুঝতে না দিয়ে সোজা বাথরুমে চলে আসি। বাথরুমের দরজা আটকে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকি আমার কাছে সেই মুহূর্তটা খুব কষ্টের ছিল কারণ আমি আমার জীবনে আমার প্রিয় আমার দিদিটাকে হারিয়ে ফেলেছি। যে দিদির সাথে সারাটা ক্ষণ ঝগড়া করতাম যে দিদির কাছে মজার মজার খাবার খাওয়ার বায়না করতাম হয়তো এখন আর সেগুলো পারবো না।


ভাই বোনের ভালোবাসা আসলে কখনো বলে বোঝানো যায় না আমি এখনো পর্যন্ত দিদির শ্বশুরবাড়িতে গেলে দিদির কাছে বায়না করি দিদি সেগুলো পূরণ করার সব সময় চেষ্টা করে। শুধু দিদির কথাই বলব না আমার যে দাদা বাবু হয়েছে সেও আমাকে খুব খুব ভালোবাসে। দিদির কাছে যতদিন আমি থাকি ততদিন আমি খুবই ভালো থাকি আর যখন দিদির কাছ থেকে চলে আসি বাড়িতে সত্যি বলতে খুবই খারাপ লাগে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেই না।আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সম্পর্ক হল ভাই বোনের সম্পর্ক কারণ এটি কোনদিন নষ্ট হয় না বরঞ্চ আরো গভীর থেকে গভীর হয়।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 last year 

আসলে প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্টটা অনেক বেশি কষ্টকর। হয়তো সেই মানুষটার কাছে থাকলে আমরা তার মূল্য বুঝি না, কিন্তু সে যখন আমাদের থেকে দূরে থাকে তখনই আমরা অভাবটা বুঝতে পারি। আর আপনি আপনার দিদির অভাবটা বুঝতে পেরেছিলেন ওনার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর। আসলে ভাই বোনের সম্পর্কটা এমন সম্পর্ক যা কখনো কমে না। সব সময় এটি গভীর থেকে গভীর হয়। যাইহোক সম্পূর্ণটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে। অনেক সুন্দর করে আপনি সম্পূর্ণটা লিখেছেন।

 last year 

আসলে ভাই বোনের সম্পর্কের মধ্যে অন্যরকম ভালোবাসা রয়েছে। ভাই বোনের ভালোবাসা কখনোই কমে না দিন দিন ভালোবাসা গভীর হয়। আপনার দিদির সাথে আপনার অনেক বেশি ঝগড়া হতো এবং দিদিকে আপনি খুবই ভালোবাসতেন বুঝতে পারছি। কিন্তু বিয়ের আগে এসব কিছু বুঝতে পারেননি, যখন আপনার দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তখনই ওনার প্রতি ভালোবাসাটা আপনি তিলে তিলে বুঝতে পেরেছিলেন। আসলে প্রত্যেকটা সম্পর্ক এরকম দূরে থাকলে সবাই মূল্য বুঝে। আপনাদের ভাই বোনের সম্পর্কটা যেন সারা জীবন এরকম থাকে এটাই দোয়া করি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 58544.56
ETH 2629.02
USDT 1.00
SBD 2.44