ভূতের গল্প পর্ব ৩

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি গল্পের তৃতীয় পর্ব আপনাদের সবার মাঝে উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-pedro-figueras-626163.jpg
সোর্স



আমরা সবাই বসে বসে গল্প করছিলাম এর মধ্যেই ম্যানেজার বাজার থেকে ফিরে এলো। ম্যানেজারকে দেখেই আমরা ম্যানেজারের কাছে চলে গেলাম আর তাকে বললাম রাতের ঘটনা। আমাদের কথা শুনে সে থমকে যায় কোন কথাই বলে না কিন্তু আমরা অনেক জোর করার পর উনি আমাদের এই বাড়ির রহস্যটা বলল। অনেক বছর আগের কথা এ বাড়িতে বসবাস করতো একটি পরিবার সেই পরিবারে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয় মেয়েটি ছিল অত্যন্ত সুন্দরী বাবা-মা নাম রাখে রিয়া। বাবা-মায়ের চোখের মনি ছিল রিয়া খুব আদর যত্ন করে রিয়াকে বড় করে তোলে। রিয়া নাচ করতে খুবই পছন্দ করত সে প্রতিবছর স্কুলে নাচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করত।খুব ভালোই দিনগুলো যাচ্ছিল হঠাৎ এর মধ্যে রিয়া একটি ছেলেকে পছন্দ করে ছেলেটিও রিয়াকে পছন্দ করত। তাদের সম্পর্কের কথা রিয়ার স্কুলের সবাই জানতো তখন তো ফোনের যুগ ছিল না তাই তখন তারা চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করত। একদিন রিয়ার মা রিয়ার রুমে এসে বইখাতা গুছিয়ে রাখছিল তখন সেই চিঠি গুলো দেখতে পায়। রিয়ার মা চিঠি গুলো পড়ে বুঝতে পারে তার মেয়ে একটি ছেলেকে ভালোবাসে সঙ্গে সঙ্গে রিয়ার বাবাকে ঘটনাটি বলে। ঘটনাটি শোনার পর রিয়ার বাবা-খুব অবাক হয়ে যায় কারণ তারা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে তাদের মেয়ে এমন কাজ করতে পারে।


ঘটনাটি শোনার পর রিয়াকে তার বাবা-মা ডেকে প্রশ্ন করে সে কি কোন ছেলেকে ভালবাসে কিনা। বাবা মায়ের প্রশ্নের উত্তর এ রিয়া বলে হ্যাঁ আমি ভালোবাসি অসম্ভব পরিমাণে তাকে ভালোবাসি তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। কথাগুলো শোনার পর রিয়ার বাবার প্রচন্ড রাগ হয় সঙ্গে সঙ্গে রিয়ার মুখে চড় দেয়। রিয়া সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়ে কারণ সে এত বড় হয়েছে কখনো তারা বাবা-মা তার গায়ে হাত দেয় নি এই প্রথম দিয়েছে। রিয়ার বাবা রিয়াকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় তারা মাকে বলে দেয় রিয়া যেন বাড়ি থেকে বের না হতে পারে। এদিকে যখন রিয়ার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে ও দেখতে পারছে না কোন চিঠি যোগাযোগ হচ্ছে না । তখন সে আস্তে আস্তে খাওয়া-দাওয়া সবকিছু বন্ধ করে দিল অনিয়ম করতে করতে সে একটি সময় প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার দেখে বলল অনিয়ম করার ফলে সে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে রিয়ার যত্ন নিতে হবে তাহলে ঠিক হয়ে যাবে। রিয়া এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে হাঁটতে চলতেও পারছিল না শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে দিনগুলো পার করছিল। আর শুধু একটা কথাই বলছিল সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে একবার দেখতে চায়। তার বাবা রিয়ার এই অবস্থা দেখে নিজেকে আর সামলাতে না পেড়ে রিয়ার ভালোবাসার মানুষটাকে আনতে যায়। অনেক কষ্টে আর ভালোবাসার মানুষটির ঠিকানা জোগাড় করে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় তাদের বাড়িতে। রিয়া যাকে ভালোবাসতো তার নাম ছিল শুভ।


রিয়ার বাবা শুভর বাড়িতে যে শুভকে ডাক দিতে একটি অল্প বয়স্ক একটি মহিলা বের হয়ে আসে। রিয়ার বাবা সেই মহিলার কাছে শুভর কথা জিজ্ঞাসা করে মহিলা উত্তর দেয় শুভ বাড়িতে নেই। তখন রিয়ার বাবা আবার জিজ্ঞাসা করে আপনি কে? মহিলাটি উত্তর দেয় সে শুভর স্ত্রী। কথাটি শোনার পর বাবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে কিছুক্ষণ পর শুভ বাড়িতে ফেরে। রিয়ার বাবা শুভকে দেখেই জিজ্ঞাসা করে তুমি কি শুভ? শুভ উত্তর দেয় হ্যাঁ আমি শুভ কি হয়েছে বলুন? রিয়া বাবা বলে তুমি কি রিয়াকে চেনো? শুভ বলে কোন রিয়া আমি কোন রিয়াকে চিনি না। আমার সব ঘটনা শুভকে খুলে বলে কিন্তু শুভ সেই সব ঘটনা অস্বীকার করে আর বাবাকে ফিরে যেতে বলে। রিয়ার বাবা ফিরে এসে তার মেয়েকে এইসব ঘটনা গুলো খুলে বলে। রিয়া যখন তার বাবার মুখে তার ভালোবাসার মানুষটির কথা শুনছিলাম যে সে তার সাথে বেইমানি করেছে তখন তার দুচোখ দিয়ে অঝরে জল ঝরছিল। তার বাবা-মা থাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু রিয়া কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সেই রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে যায় তখন সে তার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।


সকালে রিয়ার বাবা-মা যখন রিয়ার রুমে আসে তখন দেখতে পায় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাদের আদরের সন্তানের মৃত্যু দেখে তাদের সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক হয় তাদের ও মৃত্যু হয়। আর তার কিছুদিন পর থেকেই এই বাড়ির মধ্যে অলৌকিক ঘটনা ঘটতে শুরু করে। মাঝেমধ্যে নূপুরের আওয়াজ পাওয়া যায় কেউ যেন ফিসফিস করে কথা বলছে আবার কখনো কখনো কান্না করছে। ম্যানেজারের কাছে ঘটনাটি শোনার পর আমাদের খুবই খারাপ লাগে এবং ভয়ও করতে থাকে। আমার কথা আমার বন্ধুরা যখন মানতে পারছিল না এখন তারাই ভয়ে পাথর হয়ে গেছে। কিন্তু আমার রিয়ার ঘটনাটি শোনার পর খুবই খারাপ লেগেছে আর মনে মনে রাগ হয়েছিল শুভর প্রতি। একটা সময় রিয়ার বাবা-মা ও রিয়ার কথা মেনে নেয় কিন্তু শুভ রিয়ার সাথে বেইমানি করার ফলে রিয়ার মৃত্যু হল এবং তাদের বাবা-মা ও ঘটনাটি সহ্য করতে না পেরে তাদেরও মৃত্যু হল।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 last year 

ভূতের গল্পটির আগের পর্বগুলো আমার পড়া হয়েছিল, যার কারণে এই পর্বটা পড়তে খুব ভালো লেগেছে। যদিও সেই মেয়েটার কথা শুনে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। আসলে যে কোন বাবা-মা সন্তানের এরকম পরিস্থিতি দেখতে পারে না। তাইতো শেষ পর্যন্ত মেয়েটার বাবা শুভকে আনার জন্য চলে গিয়েছিল। কিন্তু শুভ র স্ত্রী কে দেখার কারণে তার বাবা নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিল। আসলে এরকম আঘাত কেউই সহ্য করতে পারে না, তাইতো মৃত্যুর পরিকল্পনাটা গ্রহণ করে। তার আত্মহত্যা দেখে তার মা-বাবাও মারা গিয়েছে সত্যি খুবই মর্মান্তিক ঘটনা এটা। আর তার ফ্যামিলি এভাবেই শেষ হয়ে গিয়েছে।

 last year 

আমার কাছেও খুবই খারাপ লেগেছে রিয়ার কথা শুনে। শুভ তার সাথে বেঈমানি করেছে এটা তো রিয়া একেবারেই বুঝতে পারেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ফ্যামিলি মেনে নিলেও শুভ তো বিয়ে করে ফেলেছিল। মেয়েটা এত কষ্ট সহ্য না করতে পেরে শেষ পর্যন্ত গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল, এটা জেনে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। আর মেয়েদের এরকম আত্মহত্যা দেখে বাবা-মা ও মারা গিয়েছিল। সত্যি এটি একেবারে মর্মান্তিক ঘটনা। এত সুন্দর একটা গল্প পর্বের মাধ্যমে শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 58751.99
ETH 2642.76
USDT 1.00
SBD 2.47