"বাংলাদেশে দুর্গাপূজা দেখা ভ্রমণ ও ফটোগ্রাফি পর্ব: ১"
হ্যালো বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশে দুর্গাপূজার দেখার মুহূর্তটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
পূজার আগে থেকেই আমি বাংলাদেশে। ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশে দুর্গা পূজা দেখার। বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই আমার আসা-যাওয়া তাই ওখানে অনেক বন্ধু আমার হয়েছে। যাইহোক আমি যেখানে গিয়েছিলাম জায়গাটি গ্রাম ছিল আমি আগেও আমার একটি পোস্টে বলেছিলাম। এই গ্রামের একটি মন্দির রয়েছে সেখানে গ্রামবাসীরা সবাই মিলে একসাথে দুর্গাপূজার আয়োজন করে থাকে। পূজা আসতেই গ্রামের পরিবেশটা যেন অন্যরকম হতে শুরু করল। কারণ একটাই মা যখন আমাদের মাঝে আসেন তার আগে থেকেই তার আসার আগমনের বার্তা পৌঁছে দেয় সবার মাঝে। কারণ তখন প্রকৃতি নতুন রূপ নেয়।
যাইহোক আগেই বলেছিলাম গ্রামের সবাই মিলে এই দুর্গাপূজার আয়োজন করে থাকে। তাই একদিন গ্রামের সবাই মিলে আলোচনা সভার আয়োজন করে আমিও সেই সভাতে উপস্থিত ছিলাম। গ্রামের মুরুব্বীরা একজনকে এক এক দায়িত্ব দিয়ে দেয় এই সভাতে সবাই সেটি মেনেও নেয়। ওখানকার আমার কিছু বন্ধু দুর্গা পূজার দায়িত্ব পায়। তারা দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজে লেগে পরে কারণ পূজা আসতে বেশি দিন ছিল না। আমাদের ইন্ডিয়াতে যেমন তৈরি কৃত মায়ের প্রতিমা পাওয়া যায় তেমন কিন্তু বাংলাদেশে হয় না। এখানে মায়ের প্রতিমা তৈরি করতে গেলে প্রথমে দক্ষ মৃৎ শিল্পিকে খুঁজে তারপর দুর্গা মায়ের প্রতিমা তৈরি করতে হয়।
যাইহোক অনেক কষ্টের পর গ্রামবাসীরা একজন দক্ষ মৃৎ শিল্পীকে খুঁজে পেল আর তাকেই প্রতিমার গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হল। আমার ছোটবেলা থেকেই মৃৎশিল্পের প্রতি টান রয়েছে। উনি যখন প্রতিমা তৈরির কাজ করতেন আমি তখন তার কাছেই বসে থাকতাম কারণ আমার খুব ভালো লাগতো তাদের এই কাজগুলো দেখতে। খুব নিখুঁতভাবে তারা সুন্দর রূপ দিতে পারে এটি আমাকে খুব ভাবায়। আমি তাদের সাথে মাঝেমধ্যে কাজ করে দিতাম। যাইহোক তাদের সাথে থাকতে থাকতে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠলো। অবশেষে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হলো এখন তার উপর রং দেওয়ার পালা।
বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করার পর অবশেষে প্রতিমার কাজ শেষ হলো এরমধ্যে পূজার প্যান্ডেলের কাজও প্রায় শেষ হয়ে গেল আর কিছুদিন পরেই দুর্গাপূজা। পূজা আসলেই সবার মাঝে আনন্দের সৃষ্টি হয়। হিন্দুদের ১২ মাসে ১৩ পূজা আর তার মধ্যে সব থেকে বড় পূজাটি হল এই দুর্গাপূজা। দুর্গা পূজা আসলেই সবাইকে দেখা যায় নতুন নতুন পোশাকে পূজায় ঘুরতে। পূজার এই পাঁচটা দিন সবাই খুব আনন্দেই কাটায়।
পূজা আসতে আসতে ওখানকার বন্ধুরা মিলে একসাথে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা পূজার এই পাঁচটা দিন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব। আমি বললাম এখানে সব থেকে বড় পূজা কোথায় হয়। তখন আমাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো বেশ বড় পূজা শিকদার বাড়ি ওখানে হয়ে থাকে। তারা বলল বাংলাদেশের সব থেকে বড় পূজা হয়ে থাকে শিকদার বাড়ি, গোনা দিগরাজ,। তাহলে আমরা প্রথমেই শিকদার বাড়ি পূজা দেখব। এখানে প্রথমে যাওয়ার একটাই কারণ ছিল কারণ বাংলাদেশের বড় পূজা এখানে হয়ে থাকে আর এখানে পাঁচশত একটি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। ইন্ডিয়াতে এত প্রতিমা কিন্তু তৈরি হয় না তাইতো এত প্রতিমা দেখার আগ্রহটা সবথেকে বেশি ছিল আমার।
দূর্গা পূজার সপ্তমীর দিন খুব সকাল সকাল উঠে স্নান করে নতুন পোশাক পড়ে অঞ্জলি দিতে গেলাম। খুবই ভালো লাগছিল কারণ ঢাকের শব্দে আমার নাচতে ইচ্ছা করছিল। যাই হোক ভালোভাবেই মা দুর্গার অঞ্জলি টা শেষ করলাম। তারপর সবাই মিলে মেলার মাঠে ঘুরতে গেলাম অনেক খাবারের দোকান এসেছিল। কোনটা রেখে কোনটা খাব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না শুধু খেতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু যখনই কাছে যাচ্ছিলাম তখনই সব গুলিয়ে ফেলেছিলাম 😀😀😀 একটা কথা আছে যখন পছন্দের খাবার একসাথে পাওয়া যায় তখন কোনটা রেখে কোনটা খাব এটা কিন্তু বোঝা যায় না ঠিক আমার সাথে ও এটাই হয়েছিল। এরপর বাড়িতে এলাম কিছুটা সময় রেস্ট নিলাম কারণ বিকাল হতেই আমরা ঘুরতে যাব সেই বাংলাদেশের সব থেকে বড় পূজাটি দেখতে নাম শিকদার বাড়ি। বিকাল হলেই আমি তৈরি হয়ে নিলাম আর বন্ধুদের সাথে গাড়িতে চড়ে পৌঁছে গেলাম শিকদার বাড়িতে।
শিকদার বাড়ি ঢোকার আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে এখানে প্রচুর লোকের ভিড় হবে কারণ পথে এত পরিমাণে মানুষ দেখেছিলাম যেটি বুঝতে আমার আর বাকি থাকলো না। ভেতরে আসতেই যা ভেবেছিলাম তাই হল আমরা বড় একটি লাইনের মাঝে উপস্থিত হলাম। প্রচন্ড সিকিউরিটি এখানে ছিল খুব নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আমাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। যাই হোক প্রায় দু'ঘণ্টার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে তারপর আমরা মূল জায়গাটিতে উপস্থিত হতে পেরেছিলাম। অনেক বড় জায়গা জুড়ে এই পূজার প্যান্ডেলটি তৈরি করা হয়েছিল। ভেতরে ঢুকতেই নিজের ভেতর একটি শীতলতা অনুভব করতে পারলাম। কারণ এটা একমাত্র তখনই হয় যখন কোন পবিত্র স্থানে আমরা যাই সেটা এক অন্যরকম অনুভূতি যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যাইহোক ভেতরে ঢুকে আমি ফটোগ্রাফি করতে লাগলাম খুব কষ্ট হয়েছিল ফটোগ্রাফি করতে কারণ প্রচন্ড ভিড় ছিল একটু দাঁড়িয়ে গেলে পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছিল খুব কষ্ট করেই ফটোগ্রাফি করেছিলাম।
ক্যামেরা পরিচিতি:oppo
ক্যামেরা মডেল:oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:3.37mm
তারিখ:২১.১০.২০২৩
সময়:০৭.৪৩মিনিট
স্থান: শিকদার বাড়ি, বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পুজাগুলো ইন্ডিয়া থেকে সাজ গোজে একটু অন্যরকম হয়ে থাকে।ঘুরাঘুরি করেছেন দারুন মজাও করেছেন অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
পূজার সময় একটি জিনিস সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়, সেটা হচ্ছে মৃৎশিল্প। যে শিল্পগুলো আজ আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্তির পথে কিন্তু এই সময় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িকেরা সেগুলো তৈরি করে এখানে বিক্রয় করতে আসেন মেলার উপলক্ষে। যাইহোক আমাদের দেশের পূজা উৎসব ভ্রমণ করেছেন আর সেই বিষয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।
হ্যাঁ আপনি অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশে রয়েছেন,সেটা আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম। যাইহোক ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো। তবে বাংলাদেশের চেয়ে কলকাতায় অনেক জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়ে থাকে দূর্গা পূজার সময়। পূজার সময় ফটোগ্রাফি করতে আসলেই খুব কষ্ট হয়,কারণ মানুষের প্রচুর ভিড় থাকে। যাইহোক পোস্টটি দেখে খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।