"বন্ধু" পর্ব শেষ

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন আবারো আপনাদের মাঝে আমার বন্ধুদের নিয়ে কিছু কথা উপস্থাপন করতে চলেছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-budgeron-bach-5157169.jpg

সোর্স

যখন পৃথিবীতে করোনার মহামারী চলছিল ঠিক সেই সময়ের কথা। আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা সেদিন যদি আমার বন্ধুরা আমার পাশে এসে না দাঁড়াতো আজ হয়তো আমি এই পৃথিবীর আলো দেখতে পেতাম না ।আমার বন্ধুদের কাছে আমি সত্যিই খুব ঋণী তারা আমার জীবন ভিক্ষা দিয়েছে। সেই বিষয়টা গল্প আকারে তুলে ধরছি।


আমাদের দেশে করোনার আসার কিছুদিন আগে আমার মা-বাবা দুজনেই আমার দিদির বাড়িতে ঘুরতে যায় আর তার কিছুদিন পরেই দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। ইচ্ছা করলেও মা-বাবা আসতে পারছিল না কারণ খুব নিয়ম কাননের মধ্যে জীবন যাপন করতে হচ্ছিল এ বিষয়টা আমরা সবাই জানি। কিছুদিন পর আমার প্রচন্ড আকারে জ্বর হয় আমি তখন বাড়িতে একা একা কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কারো কাছেও যেতে পারছিলাম না । মনে মনে ভাবতে থাকি না জানি আমার কি হয়েছে ।যদি এর কারনে কারো ক্ষতি হয় তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। আমি থার্মোমিটার দিয়ে নিজের তাপমাত্রা টা মাপি দেখতে পেলাম আমার শরীরের তাপমাত্রা ১০২° আমি মনে মনে খুব ভয় পেয়ে যাই। তাই আমি কাউকে না জানিয়ে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতাম। ওষুধ খাওয়ার পরে একটু হলেও তাপমাত্রা টা কমে যেত আবার পুনরায় জ্বর আসতো শরীরে। এমন কি করতে করতে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না সে শক্তিটুকু আমার ছিল না।


আমার বিছানার পাশে আমার ফোনটি নিয়ে আমি আর না পেরে আমার বন্ধু সত্যজিৎ কে ফোন দেই ওকে ফোন দিয়ে বলি যে বন্ধু আমাকে বাচা। আমার বন্ধুটি কথাটি শুনতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বলে কি হয়েছে তোর আমি বললাম আমার প্রচন্ড জ্বর কিছুদিন ধরে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছি না কিছু একটা কর আমি কারো কাছে যেতেও পারছিনা। আমাদের এলাকায় তখন কালী পূজা হচ্ছিল আমার বন্ধু তখন সেই কালীপূজায় অংশগ্রহণ করেছিল। যখন ও শুনতে পারলো আমার এই কথাটা সঙ্গে সঙ্গে ও আমার বাড়িতে চলে এলো। এসে দেখে আমি বিছানায় জ্ঞান হারিয়ে শুয়ে আছি ও সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জ্ঞান ফিরাবার জন্য চেষ্টা শুরু করল। কিছুক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফিরে এলো আমি দেখতে পেলাম শুধু ও না আমার আরো কিছু বন্ধু আমার কাছে এসেছে। এটি দেখে আমার একটু হলেও নিজের ভেতর শক্তি ফিরে আসে। আমি ওদেরকে বলতে থাকি আমাকে বাঁচা আমি আর মনে হয় বাঁচবো না। ঠিক তখন আমার সব থেকে ক্লোজ বন্ধুটি সত্যজিৎ আমার হাতটি ধরে বলল দোস্ত আমরা আছি তোর কিছুই হবে না তুই শান্ত হ সকাল হলেই তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। সারারাত ধরে আমার বন্ধুরা আমার সেবা যত্ন করতে থাকে সকাল হলে ওরা সবাই আমাকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি আমার জ্বরের কথাটি শুনে আমার বন্ধু আমার বাবা মাকে ফোন দেয়। বাবা মা দুজনেই খুব চিন্তায় পড়ে যায় আমাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে আমাকে বলে তোমার কিচ্ছু হবে না।


যাইহোক সকালে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার আমাকে রক্ত পরীক্ষা করতে বলে। আমি রক্ত পরীক্ষা করলাম কিন্তু রিপোর্টটা আমি এখনো দেখতে পারেনি কারণ আমি সেই অবস্থায় ছিলাম না। আমার মনে মনে ভয় করছিল আমার মনে হয় করোনা হয়েছে আমি আর বাঁচবো না। ডাক্তারের কাছে এলে ডাক্তার আমার রিপোর্ট দেখে আমাকে বলল আপনার টাইফয়েড ধরা পড়েছে। ডাক্তার আরো বলে আর যদি কিছুদিন এমনটা থাকতেন তাহলে আপনার মৃত্যুও হতে পারতো ।যাইহোক নিয়মিত ওষুধ খেলে শরীরের যত্ন করলে আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। ডাক্তারের কথা শুনে আমি একটু শান্তি পেলাম কারন আমি যা ভেবেছিলাম আমার তা হয়নি। আমার বন্ধুরাও খুব খুশি হলো তারা ওষুধ পত্র কিনে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিল । তার দুদিন পর আমার মা-বাবাও দিদিদের বাড়ির সাথেকে চলে এলো। মা-বাবাকে কাছে পেয়ে আর বন্ধুদের কাছে পেয়ে আমি আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করলাম।


আমাদের প্রত্যেকের বন্ধু আছে। বন্ধু এমনই থাকা উচিত,যে বন্ধু বন্ধুর বিপদের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসবে ।তার জীবনের কথা চিন্তা করবে না সেই হলো প্রকৃত বন্ধু। আর যে বন্ধু বন্ধুর বিপদের কথা শুনে বলবে দাড়া একটু পরে আসছি আসলে সে বন্ধ নয় সে স্বার্থের জন্য সে তোমার বন্ধু হয়েছে।


যাই হোক আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করি, গল্পটি আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। আবারো সবার মাঝে হাজির হবো নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। সেই পর্যন্ত আপনারা সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি ধন্যবাদ সবাইকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62149.46
ETH 2438.84
USDT 1.00
SBD 2.68