|| ৫ম শ্রেণির ছাত্রের চটপটি বিক্রি করে বড় বোনকে আম কিনে দেয়ার গল্প ||

প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের ফাউন্ডার এবং সকল দায়িত্বশীলদের। সবাই আমাদের নিয়ে অনেক চিন্তা করেন। আমি একটি বিষয় খেয়াল করে দেখলাম আমরা চাকুরী করলেও আমাদের মালিক পক্ষ এতোটা চিন্তা করে না তার অফিসের একজন মানুষ কতোটা ভালো আছে। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগের দায়িত্বশীলরা সত্যি প্রতিনিয়ত চিন্তা করে যাচ্ছে কিভাবে আমাদের ভালো হবে। যদি কেউ মনে করেন আমি পাম দিচ্ছি তাহলে, আমি বলবো আমি আপনাকে মানুষ মনেই করি না। আপনি দিন শেষে মানুষের মতন দেখতে হতে পারেন তবে আপনি মানুষ না। কারন আমি সত্যি বলেছি এটা আমার আত্নবিশ্বাস।

এই গল্পটা সত্যি অনেক কষ্টের তবে আজ আমি বলতে চাই। আমি গরিবের ঘরে জন্ম নিয়েছি তবে আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করি। আমার বাবা রিক্সা চালিয়ে আমাদের আদর্শ থাকতে শিখিয়েছে। সত্যি বলতে কি বোনের বিয়ের সময় বাবা খুব কান্না করেছিলো কারন বোন একা একা বিয়ে করে ফেলেছিলো। বাবা বোনকে অনেক আদর করতো। আমরা জীবনে কোন দিন বাবার হাতে একটা চড় পর্যন্ত খাইনি আলহামদুলিল্লাহ। বাবা কান্না করছিলো আর বলছিলো তোমরা যখন ছোট ছিলে রিক্সা নিয়ে বাহিরে গেলে আগে চিন্তা করতাম দুই সন্তান এর খাবারের জন্য ডিম এর টাকা আগে উপয়ার্জন করতে হবে। সেই মেয়ে এমন কষ্ট দিলো🥺।

যাই হোক ঘটনাটি শেয়ার করি এবার। আমার বড় বোন মাত্র ১ বছর ১০ মাসের বড়। বাবা তখন স্কুলের সামনে দাড়িয়ে চটপটি বিক্রি করতো। কিন্তু কেনো জানি না বাবার বিজনেস এর খুব খারাপ অবস্থা ছিলো। মাও কাজ করতেন। আমি আর বোন বাসায় একা থাকতাম। মা আমাদের দুপুরে খাওয়ার জন্য বোনকে ২ বা ৩ টাকা দিয়ে গিয়েছিলো একটা ডিম ভেজে আমাদের খাওয়ার জন্য। দুপুরে দেখলাম আমার বোন আমাকে অল্প একটু ডিম দিলো। আমি বললাম আপু তুই বেশি খাবি খা সমস্যা নাই। আপু বলল মাকে বলিস না ডিম রাস্তায় পরে গেছিলো কুসুমটা উঠিয়ে নিয়েছি তোকে ভেজে দিলাম 🥺🥺। আমি বললাম আপু তুই খাবি না? আপু বলে তুই খা ভাই। আসলে খুব ভালোবাসা ছিলো দুই ভাই বোনের মাঝে।

হুট করে একদিন মা আপুকে বলতেছে তোমার বাবার ব্যাবসা খুব খারাপ যাচ্ছে তোমাকে মা পরে আম কিনে দিবো। আমি এই টুকুই শুনেছিলাম পরে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম আপু কি হইছে? আপু আমায় বলল আম খেতে ইচ্ছে করছে খুব কিন্তু মার কাছেতো টাকা নাই।আমার খুব খারাপ লাগলো সত্যি🥺🥺। আমি চিন্তা করলাম আমার বোনের জন্য কিছু একটা করতে হবে। আমি ১০ টাকার ডাবলি কিনলাম, আলু এবং তেঁতুল কিনে ফেললাম। এবার আমি নিজেই সিদ্ধ করে ফেললাম সকাল ভোরে। আমি মনে হয় ১৮/২০ টাকা ইনভেস্ট করি চটপটির দোকানে। সকাল সকাল বসে গেলাম রাস্তায়। বাচ্চারা ১ টাকার ২ টাকার করে নিচ্ছিলো। আমি তখন ক্লাস ৫ এ পড়ি। প্রথম দিন আমার প্রায় ২০ টাকার মতন লাভ হয়। এর পরে আমি কয়েকদিন এমন বিক্রি করলাম। যে টাকা লাভ হয়েছিলো তা দিয়ে আমি আম কিনে বাসায় নিয়ে আসি। বাবা মা আমি বোন সবাই মিলে আম খেয়েছি। সত্যি বলতে ওই ভাবে চুরি করে খাওয়ার কোন ঘটনা আমার নাই। কারন আমি ছোট থেকেই ঢাকা।

গভীর রাত চোখে পানি চলে আসলো সেই ছোট বেলার কথা মনে পরে🥺🥺। দিন গুলো তার পরেও আলহামদুলিল্লাহ ভালো ছিলো। মা একটা কথা বলেছিলো বাবা বাহিরে কেউ কিছু খেলে তাকাবাও না আর মাকে এটাও বলবা না যে মা আমি এটা খাবো। পরশু মা বউকে বলতাছিলো আমার ছেলে মেয়েকে আমি এই ভাবে না করেছিলাম ওরা একদম আমার কথা শুনেই চলেছে। কিন্তু আমার কানে মনে হয় এখনো শুনতে পাই সেই কথা গুলো 🥺🥺। কি দিন থেকে আজ আমার কি দিন চলে আসলো।