গল্প - জুলেখা বানুর জীবন ! - পর্ব ৩(সমাজের বাস্তব চিত্র){শেষ}|| 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা ❤️


আজকে আমি হাজির হয়েছি একটি লিখা নিয়ে।
লিখতে ভালা লাগোটা আমার বহুদিন এর। কেও যদি জিজ্ঞেস করে তোমার লিখার কারণ কি?
তাহলে আমার একটাই উত্তর আসবে তা হলো জানিনা।
তাহলে আজকের লিখাটা শুরু করি।
আজকের লিখার বিষয় হলো একটি গল্প।গল্পের নাম " জুলেখা বানুর জীবন ! "


জুলেখা বানুর জীবন ! - পর্ব ৩(শেষ)


IMG_20220128_235236.jpg

রমিজ মিয়া রাস্তা পার হচ্ছিলো লোকটার গাড়িতে উঠার জন্য।লোকটার গাড়ি রাস্তার অন্য পাশে দাঁড়ানো ছিলো।
রাস্তা পার করার সময় হঠাৎ পাশ থেকে একটা ট্রাক এসে মেরে দেয়।
ওই জায়গাতেই সাথে সাথে মারা যায় রমিজ মিয়া।
রমিজ মিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার ও দরকার হয়নি।
কারণ রমিজ মিয়ার মাথাটা একেবারে গাড়ির চাকার সাথে থেতলে গিয়েছিলো।

এরপর জুলেখা বানুকে খবর দেয় এলাকার এক মহিলা।
ওই মহিলাকে রমিজেত বন্ধুই ফোন দিয়ে বলে।
মহিলাটা রমিজ মিয়া বন্ধুর বউ।
জুলেখা বানু পাগলের মতো ছুটে যায়।
ততক্ষণ ওই কাজের জন্য নিতে আসা লোকটা চলে যায়।
কারণ সে ভাবে শুধু শুধু ঝামেলায় জড়ানোর মানে নেই।
এখন রমিজ মিয়ার পরিবার আসলে শুধু শুধু টাকা পয়সা দাবি দাওয়া করবে।আলাদা খরচাপাতি কে করে আবার।

যখন ই রমিজ মিয়া এক্সিডেন্ট করে।
একদম সেই সময়েই ওই লোকটা গাড়ি নিয়ে চলে যায় ওই জায়গা থেকে।
রমিজ মিয়া মানুষগুলার মতো মানুষকে সময় দেওয়ার মতো সময় ওই বড় মানুষদের নেই।
এবং,
থাকলে কিছু টাকাও দিতে হতো।এই যুগে কে আর কাকে টাকা পয়সা দিতে চায়।

জুলেখা বানু পাগলের মতো করতে থাকে।
জুলেখা বানুর আহাজারি,চিৎকারে রাস্তাঘাট কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে।
জুলেখা বানুর যেনো আর কোনো রাস্তা নেই।
জুলেখা বানু শুধু বারবার বলতে থাকে কেনো সে বেঁচে রইলো,কেনো সে বেঁচে রইলো!
কেন সে রমিজ মিয়ার সাথে মরে গেলোনা।
একটু পরে রমিজ মিয়ার দুই সন্তান ও আসলো।
তারাও বাবাকে ধরে কাঁদতে লাগলো,পাগলামি করতে শুরু করলো।
কিন্তু রমিজ মিয়া আজকে আর এসবের কিছুতেই নাই।
সে চলে গেছে অন্য দুনিয়ায়।

এলাকার অন্যান্য মানুষরা আসে।রমিজ মিয়ার ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ টাকে কোনো রকমে ধরে কাপড়ের উপর তুলে।এরপর রমিজ মিয়াকে গোসল করা, জানাজা হয়, এরপর কবর দেওয়া হয় এলাকার গোরস্থানেই।

রাত হতে হতে একে একে সবাই চলে যায় যে যার যার বাড়িতে।জুলেখা আর দুই ছেলে ঘরের দাওয়ায় বসে থাকে অন্ধকারে।
তারা তাদের এই জীবনে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতেছেনা।জুলেখা বানুর,রমিজ মিয়ার কত স্বপ্ন ছিলো

পরেরদিন সকালে উঠে জুলেখা বানু চোখ মুখ মুখে নিজেকে শক্ত করে।কারণ এইভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবেনা।রমিজ মিয়া এবং জুলেখা বানু দুইজনের বড় স্বপ্ন ছিলো দুই ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করবে।এইবার সেই স্বপ্ন জুলেখা বানু নিজেই পূরণ করবে।

বড় ছেলে মাকে বলে সে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে কারখানায় কাজ করবে।
কিন্তু জুলেখা বানু পরিষ্কার মানা করে দেয়।
দুই ভাইকে শুধু পড়াশোনায় মন দিতে বলে। টাকার ব্যবস্থা জুলেখা বানু করবে।
*

এরপরে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে শুরু করে দেয় জুলেখা বানু।রাত দিন এক করে কাজ করতে থাকে, টাকা জমাতে থাকে ছেলেদের পড়ার জন্য।দুই ছেলেও পড়াশোনা ছাড়া দুনিয়ার আর কিছুই বুঝেনা।

এইভাবে দিন যেতে যেতে দুই ভাই বড় হয়।বড় ছেলে চাকরি পাওয়ার পরের মাসেও চাকরি পেয়ে যায় ছোট ছেলেও।জুলেখা বানু মনে মনে স্বস্থির নিশ্বাস নেয়।এখন বুঝি কষ্ট শেষ হলো।বড় ছেলে শহরের ভালো জায়গায় গিয়ে উঠে, ছোট ভাই আর মাকে বলে তাদেরকেও নিয়ে যাবে সব ঠিক করে।

জুলেখা বানু সেই আশাতে বুক বেধে বসে থাকে।কয়েকদিন পর ছোট ছেলে বলে তার শহরের বাইরে কিছু কাজ আছে।সেই কথা বলে ছোট ছেলেও বস্তি ছেড়ে চলে যায়।জুলেখা বানু একদিন দুইদিন করে দিন গুণতে থাকে।ভাবে এই বুঝি দুই ছেলে আসলো।

হঠাৎ এলাকার এক লোক জুলেখা বানুর ঘরে এসে বলে তার দুই ছেলে আলাদা বাসা নিয়ে শহরে থাকে।দুই ছেলেই বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করেছে।এইটা জুলেখা বানু বিশ্বাস করতে পারেনা।

কয়েকদিন পরে বড় ছেলে ফোন দিয়ে জানায়,সে বিয়ে করেছে আর মাকে বলে,
আম্মা তুমি তো এইখানে থাকতে পারবানা, সারাজীবন ওইখানে থাকছো।তোমার বউ ও তোমার লগে থাকতে পারবেনা।বড়লোকের মেয়ে,এসবে অভ্যাস নাই।
তুই থাকো ওইখানে।আমি মাসে মাসে টাকা পাঠাবো আর কোনো অসুবিধা হইলে এই নাম্বারে ফোন দিও।

ছোট ছেলে কোনোদিন ফোন ও দেয়নি।
জুলেখা বানুর এখন বয়স হয়েছে।
চোখেও কম দেখে, কোনোদিন কোনো দরকারে দুই ছেলেকে ফোন করেনি।দুই ছেলেও করেনি।
বড় ছেলে প্রথম কয়েকমাস টাকা দিয়েছিলো।
এরপর আর দেয়নি।এলাকার লোকরা টাকা দেয় অল্প কিছু কিছু সেই দিয়েই চলে যায় জুলেখা বানুর।

কিছু কিছু মানুষের জীবন এমন!।
আমাদের চারপাশে অনেক জুলেখা বানু আছে এমন......

সকলকে জানাই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।
নিজেদের মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমার পাশে থাকবেন।

Sort:  
 2 years ago 

আসলে এই গল্পটা 3 পর্ব পুরোটাই আমি পড়েছি। আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের চারপাশে এরকম অনেকদিন জুলেখা আছে। যারা ছেলে মেয়েকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করে কিন্তু তারপরে তাদের থেকে এরকম ব্যবহার পায়। সত্যি জুলেখা বানুর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। আপনার গল্পটা অনেক উপভোগ করলাম। খুবই ভালো লাগলো।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

অনেক জুলেখা বানু আমাদের চারপাশে আছে।

কথাটা সত্যি । সত্যি বলতে আপনার তৃতীয় পর্ব টি পড়লাম । এত কষ্ট করে পড়ালেখা শেখানোর পরও সেই সন্তান যদি এমন করে তবে পৃথিবীতে বেচে থেকে কি হবে। তবুও জুলেখা বানুরা বেচে থাকে কস্টের মধ্যে দিয়ে। সন্তানদের শুভ বুদ্ধির উদয় আর হয় না । ধন্যবাদ।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 59715.05
ETH 3186.24
USDT 1.00
SBD 2.42