গল্প - স্বাভাবিক তবে অদ্ভুত, পর্ব - ২ (এক নারীর গল্প)(শেষ)(এক নারীর গল্প)|| 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা ❤️


IMG_20220113_000351.jpg


আজকে আমি হাজির হয়েছি একটি লিখা নিয়ে। লিখতে ভালা লাগোটা আমার বহুদিন এর। কেও যদি জিজ্ঞেস করে তোমার লিখার কারণ কি? তাহলে আমার একটাই উত্তর আসবে তা হলো জানিনা।
তাহলে আজকের লিখাটা শুরু করি। আজকের লিখার বিষয় হলো একটি গল্প।গল্পের নাম " স্বাভাবিক তবে অদ্ভুত! "


স্বাভাবিক তবে অদ্ভুত - পর্ব ২(শেষ)


এসব শুনে শুনেই রিনা প্রতিদিন জীবন কাটাতে থাকে।একদিন তার স্বামী কাজ থেকে বাসায় এসেই রিনাকে ডেকে বলল এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমের দেওয়ার জন্য। রিনা তখন রাতের খাবারের জন্য সবজি কাটছিলো। এতগুলো লোকের খাবার একার পক্ষে রান্না করাটা একটু কঠিন। যদিও তাকে রান্না করতে হয় না। কিন্তু রান্নার লোককে অনেক কিছুতেই সাহায্য করতে হয় এবং সবকিছু সামলাতে হয় হাতে হাতে। সেই কারণে রিনা আর পানির কথাটি মনে রাখতে পারেনি। একটু পরেই রিনার স্বামী আমি খুব জোরে রিনাকে ডাক দিল। রিনা হাতের কাজ ফেলে তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস পানি নিয়ে স্বামীর রুমে ঢুকলো।

রিনা দেখল তার স্বামীর চোখ-মুখ কেমন যেন লালচে হয়ে আছে। চোখ গুলো মনে হচ্ছে রাগে জল জল করছে।তার স্বামীর এই অবস্থা দেখে একটু এগিয়ে গিয়ে পানির গ্লাসটি তার স্বামীর হাতে দিলো।

কিন্তু হঠাৎ করেই তার স্বামীর হাতে গ্লাস দিতেই রিনার হাত থেকে নিয়ে দূরে ছুড়ে মারল সাথে সাথে। কাচের গ্লাসটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে সারা ঘর ছড়িয়ে পরলো। রীনা আচমকা ঘটনাটির জন্য একেবারেই তৈরি ছিল না। এমন ঘটনার সাথে আগে থেকে পরিচিত ছিল না রিনা। সেই কারণে একটু ভয় পেয়ে গেল এবং কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলো,
কি হয়েছে?
তুমি কেন এভাবে গ্লাসটি ছুড়ে মারলে?
কিন্তু তার স্বামী যা বলল তার জন্য তা শোনার জন্য সে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না।

রিনার স্বামী রাগ রাগ রাগের স্বরে বলল,
তোকে খাওয়াই পরাই কি এই জন্য?
আমার জন্য এক গ্লাস পানিও সময়মতো আনতে পারিস না।
আগে তো খেতেও পারতিনা, এখন আমার জন্য খেতে পেয়ে বেশী দেমাগ হয়েছে। আমার একডাকে আসতে পারিস না,পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সামান্য পানির জন্য তার এই ভালোবাসার মানুষকে এভাবে বদলে যেতে দেখে তার খুব কষ্ট হল। রিনা আর কিছু না বলে গ্লাসের টুকরোগুলো নিতে থাকলো মাটি থেকে। নিতে নিতে গ্লাসের টুকরোগুলোতে রিনার চোখের পানি পরছিল এবং সে ভাবছিল এটার নাম কি জীবন!!

এরপর রিনা ঘরটা সম্পূর্ণ মুছে পরিষ্কার করে ফেলল। এরপর রিনা আবার কাজে চলে গেলো। একটু পরেই সবার খাওয়া-দাওয়া যখন শেষ হলো তখন রিনা তার মাকে ফোন দিয়ে এসব ঘটনা গুলো বলতে লাগল। সে ঘটনায় রিনার মা রিনাকে বোঝাতে লাগলো আবার এটাই যে ব্যপারগুলো স্বাভাবিক। ব্যাপার গুলো তার সাথেও অনেক ঘটেছে। এসব বিয়ের পরে একেবারে নিত্যান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার।
স্বামীর রাগ থাকলে একটু এরকম হয়, এসবের সাথে মানিয়ে নিয়েই সংসার করতে হয়।

রিনা খুব কষ্ট লাগল এসব ভেবেই। এর পরের দিনগুলো এভাবেই যেতে লাগল। কিন্ত একদিন যা হলো তার জন্য রিনা একেবারেই প্রস্তুত ছিল না এবং এসব রিনা কোনদিন ভাবতেও পারেনি।
করলো কি একদিন রিনা খুব আনন্দের সাথে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ পাশেই একটা মেলা শুরু হয়েছে।রিনা মনে মনে ভেবে রেখেছে যে স্বামীকে বলবে একটু মেলাতে নিয়ে যেতে। কারণ বাড়ির সবাই অনেক ঘুরাঘুরি করে কিন্তু কখনই সেই কপাল তার হয়না।

রিনার স্বামী বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে বসতেই রিনা বলল তাকে একটু মেলায় নিয়ে যেতে। কিন্তু তার স্বামী কোন উত্তর দিল না। বুঝতে পারল আজকে তার স্বামীর মাথা খুব গরম রয়েছে সেই কারণে রিনা আর কোনো কথা বলল না।

এরপরে সে রুম থেকে বের হতেই স্বামী ডাক দিলো। তারাতারি স্বামীর সামনে গেল স্বামী তাকে একটি কাগজ খুঁজে দিতে বলল। স্বামীর কাজেরই কিছু একটা কাগজ। কিন্তু কোনভাবেই আর মনে করতে পারলো না যে সে কাগজটি কোথায় রাখল। কাগজটি তার স্বামীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল সেই মুহূর্তে। তবে যখনই তার স্বামী বুঝতে পারল যে রিনা কাগজটি হারিয়ে ফেলেছে!!

সাথে সাথেই কোমড় থেকে বেল্টটা খুলে রিনাকে পিটাতে লাগল এবং বলতে লাগল যে কোন কাজ ঠিকমত পারেনা, তার অনেক লস করছে রিনা। রিনা কে বিয়ে করে সে কোনদিনও সুখী হতে পারেনি। এইসব গরিব ঘরের মেয়েদের বিয়ে করলে এই হয়! কোন কাগজের মূল্য বুঝে না, কোন কিছুর মূল্য বুঝে না।এরপরে শাশুড়ি দরজার সামনে এসে যখন দেখেছে রিনাকে পেটাচ্ছে তখন শাশুড়ি কোন কথা না বলেই সেখান থেকে চলে গেল! এরপরে একটা পর্যায়ে রিনার স্বামী রিনাকে মারা বন্ধ করে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। রিনা আস্তে আস্তে উঠে কি করবে ভেবে না পেয়ে আবার মাকে ফোন দেয়।মা যা বলে সেটা শুনে একেবারে শক্ত হয়ে যায়।

রিনার মা তাকে বলে - এসব একেবারেই স্বাভাবিক কোনো ব্যাপারই নয়। বিয়ের পরে স্বামীর সাথে এসব একটু আধটু হয় এবং এসবের সাথে মেয়েদের মানিয়ে নিতে হয়।

এরপরে রিনা আস্তে করে ফোনটা কেটে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে যেতে লাগল সকলের জন্য নাস্তা বানানোর জন্য।

আমাদের সমাজে এসব ব্যাপারগুলোকে স্বাভাবিক হিসেবে নেওয়া হয়। কিন্তু এই ব্যাপারগুলো কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। এই ব্যাপার গুলো বড়ই অদ্ভুত ব্যাপার!! আমাদের সমাজে আমরা হরহামেশাই দেখতে থাকি জীবনসঙ্গিনীকে এইভাবে মারা, খারাপ কথা বলা একেবারে স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সমাজের নারী-পুরুষদের এসব বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত এবং এসব কাজ যেন একেবারের জন্য বন্ধ হয়ে যায় সেই দিকে নজর দেওয়া উচিত।

সকলকে জানাই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।
নিজেদের মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমার পাশে থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57868.91
ETH 2362.75
USDT 1.00
SBD 2.36