ছোট্ট ঝুপড়ি,কিছু স্বপ্ন। || 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা ❤️


এই ছবিটা আমার নিজের হাতেই তোলা। ছবির বিষয়বস্তু খুবই সামান্য,ছবিটাও অনেক সামান্য, এমনকি ফটোগ্রাফিটাও সামান্য। তবে ব্যাপাটা অসামান্য,
আমার একটু ঘুরোঘুরি করার শখ। তার জন্যই সেদিন গেলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।এই ঝুপড়ি টা বিশ্ববিদ্যালের ই কোনো একটা জায়গায়।আমার খুব একটা মনে নেই সঠিক জায়গাটা তবে মানুষ আর ঝুপড়িটাকে খুব ভালো করে মনে আছে।


ছোট্ট ঝুপড়ি, কিছু স্বপ্ন


IMG_20211019_211533.jpg


সেদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। দেখা করতে গেলাম বলাটা হয়তো একটু ভুল হবে, আসলে একটু ঘুরতে গেলাম।চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য কতটা মনকাড়া তা কাওকে বলে বোঝানো সম্ভব না।এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম থেকে বেশ অনেকটাই দূরে,একদম গ্রাম সাইডের ওইদিকে।আমরা গিয়েছিলাম সেদিন ট্রেনে করেই। ট্রেনে করে যেতে প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো লাগে।
অনেকক্ষণ ঘুরোঘুরি করে ছোট ভাই থেকে বিদায় নিলাম।এরপর আমি আর আমার দুই বন্ধু এমনি হাঁটছিলাম কথা বলতে বলতেই। দেখলাম একটা ঝুপড়ি দোকান। ভাবলাম একটু যাই, দাঁড়াই। বন্ধু দুজন আবার বললো তারা নাকি সিগারেট খাবে। আমি বললাম তাহলে চল,তোরা সিগারেট খা আর আমি একটু বসি,পা টা খুব ব্যথা করছে।
এরপর বন্ধুরা মনের সুখে সুখ টান দিতে লাগলো।আমিও দোকানের ভিতর বসলাম কারণ আর কোনো বসার জায়গা ছিলোনা। আমি একটা পেপসির বোতল নিলাম খাওয়ার জন্য। আশে পাশে আর কেও ছিলোনা তেমন। কারণ ঝুপড়িটা সব হল গুলো থেকে অনেকটা দূরেই।

হঠাৎ দোকানদার মামা বলে উঠলো,

" আচ্ছা মামা একডা কথা কই?"
আমি বললাম,
" হ্যা মামা বলেন না। "
বললো,
" আইচ্ছা মামা একটা মোটর সাইকেল কত টাহা হইবো?"
আমি এইবার একটু নড়েচড়ে উঠলাম।হঠাৎ মাথায় আসলো এই লোক ঝুপড়ি নিয়ে বসে মোটর সাইকেলের কথা কেনো বলছে!
আমি এইবার একটু কৌতহলি হয়ে বললাম,
" মামা আগে বলেন তো আপনি কি করবেন বাইকের দাম শুনে?"
দোকানদার মামা বললো,
" মামা আপনে কন না দাম কত হইবো?তারপরে কইতাসি। "
আমি বললাম,
" এইতো এক দেড় লাখ হবে। আবার আরো দামিও আছে। "
এইবার দোকানদার মামার মুখে কেমন যেনো বিষণ্নতা লক্ষ্য করলাম।
আমার কথা শুনেই যেনো ভেতরে ভেতরে একটু কষ্ট পেলেন।
আমার তা দেখে আরো বেশি কৌতহল জেগে উঠলো।
আমি এবার আর স্থির থাকতে পারলাম না।
বললাম,
" মামা বলেন না। আপনি কি করবেন মোটর সাইকেল দিয়ে? "
এইবার মামা একটা বড় দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন। আর বলা শুরু করলেন,

" আসলে মামা আমার একটা পোলা আর একটা মাইয়া। আর কপালের কি লিলা আমার! মাইয়াডা পঙ্গু, প্রত্যেক মাসে ডাক্তর দেহান লাগে।
আর পোলাডারে পড়ালেখা করাই।পোলাডা এইবার কলেজে উডলো।
আমার অনেক স্বপ্ন এই পোলারে লইয়া। আমার ইচ্ছা তার বাপ যে বড় জায়গায় ছোড ঝুপড়ি দিছে হেই জায়গায় হে পড়বো। আমার অনেক শখ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পোলা পড়বো। "

তো আমি বললাম,
" ভালোই তো মামা। তাহলে সমস্যা কি? "

এরপর মামা আবার বললো,
" স্কুল পর্যন্ত আমার পোলাডা বেশি ভালা আছিলো।তয় কলেজে উডার পর থেইকা কেমুন যেনো হইয়া গেছে।
একদিন আমাকে কয় দামী ফোন কিইন্না দিতে। তার কলেজে নাকি সবার বড় বড় ফোন আছে।
হের নাই তাই হের শরম লাগে। আমি অনেক কষ্টে এইজন ওইজন এর তে চাইয়া একডা ফোন কিইন্যা দিছি ২৫ হাজার টাহা দিয়া।
এরপর ফোন কিনন্যা দেওয়ার পর আরো বেশি কেমুন যেনো হইয়া গেছে। হেয় ঘরে তো থাকেই না, উল্ডা মেলা মেলা টাহা চায় প্রত্যেকদিন।
আমি তারে বুঝাই, বাপ আমি হইলাম একডা ঝুপড়ি চালাইন্যা মানুষ।আমি এতো টাহা কই পামু!
হেয় কয় তুমি ঝুপড়ি চালাও এইডা হুইন্যা আমি কি করমু!আমার টাহা লাগবো, আমারে দিবা।
দিতে না পারলে বিয়াইছ কেন!
এই কথা হুইন্না মামা আমি এক্কেরে তবদা খাইছিলাম।আমার পোলা আমারে এসব কয়!তাও চুপ কইরা আছিলাম। তেমুন কিছু কই নাই কষ্ট পাইবো বইলা।
তয় আজ একমাস ধইরা নতুন তাল ধরছে। তার নাকি মোটর সাইকেল লাগবো।
আমি এইবার শক্ত কইরা কইছি আমি দিতে পারমু না। তহন আমার পোলা আমারে কয়, না দিতে পারলে হে ঘর ছাইড়া যাইবো গা।
অনেক কথা কাডাকাডি করছি। তার কথা তারে ওই মোটর সাইকেল না কিইন্না দিলে হেয় আমগো লগে আর থাকবোনা।
আমি হের পা ডাও ধরতে চাইছি,তার মা কাইন্দা কাইন্দা তারে বুঝাইছে।তয় হে আমগো কথা হুনে নায়।
এখন আমি টাহা জোগাড় করতাছি। দশহাজার টাহা হইছে,মাথা কাম গরে না!আমি এতোগুলা টাহা পামু কইত্তে! "

এইবার আমার যেনো রক্ত গরম হয়ে উঠলো।
বললাম,
" মামা গেলে যাবে।দরকার নাই এসব কিনে দেওয়ার। "

মামা মুখে কষ্ট ভরা হাল্কা একটা হাসির রেখা টেনে বলে, " মামা আপনে যেইদিন বাপ হইবেন, হেইদিন বুঝবেন।এহন বুঝবেন না। "

আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম।আমার বাবার মুখটা আমার চোখের উপর ভেসে উঠলো!
আসলেই তো,বাবা গুলো বুঝি এমন হয়!
মনে পরলো আমার আমি একটু কোক পছন্দ করি বলে আমি বাসায় আসতেছি বললেই, আমি যাওয়ার আগে ফ্রিজ ভরিয়ে ফেলে কোকের বোতলে।

এরপর আর কিছু বলিনি দোকানদার মামাকে।
শুধু বললাম,
" মামা সেকেন্ড হেন্ড কম পরবে। ওইটা কিনে দিতে পারবেন।
এইবার মামার চেহারায় একটু হাসি ফুটলো!! "

আনন্দের হাসি!
দুঃখের হাসি নয়!

এরপর আমি বিল মিটিয়ে চলে আসি।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলাম এই বুঝি দুনিয়ার নিয়ম!আমাদের সবার বাবা - মা গুলো এমন কেনো হয়!আমরা যখন যা চাই তখন তাই হাজির করে দেয়।
সৃষ্টিকর্তা থেকে পাওয়া সবচেয়ে দামি জিনিষটা বোধহয় এই বাবা - মা ই!

হঠাৎ কি যেনো মনে হলো! পিছনে ফিরে ঝুপড়িটার একটা ছবি তুললাম।তখন দেখি মামা ঝুপড়িটার বাঁশ ঠিক করছে।ছোট এই ঝুপড়ির ও যত্নের শেষ নেই। তবে এই বাবাটার বড্ড যত্নের অভাব তা টের পেলাম।

আজকে এখানেই ইতি টানছি।


আমি এই কাহিনী থেকে যা শিক্ষা পেলাম


কোনোদিন বাবা মা এর উপর কিছু চাপিয়ে দিতে নেই। তাহলে তাদের যে কতটা কষ্ট হয় তা আমরা সন্তানরা কোনোদিন দেখবো না অথবা, দেখতে দিবে ও না আমাদের।
বাবা -মা কে মন থেকে ভালোবাসুন।


আমি শাহাদাত হোসেন। আমি একজন বাঙ্গালী এবং নিজেকে এভাবে পরিচয় দিতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছি। আমার শখ ঘুরাঘুরি করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ভ্রমণ,মুভি দেখা, খাওয়া দাওয়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট এসব ই। আমি নিজেকে সবসময় স্বচ্ছ ভাবে সবার সামনে তুলে ধরতেই পছন্দ করি। এবং কোনো ভুল করলে ক্ষমা চাইতে কখনোই দ্বিধাবোধ করিনা। আমি চাই নতুনের সাথে পরিচিত হবো,শিখবো,একসাথে চলবো। আশা করি আপনাদের ভালো কিছু উপহার দিবো।

ধন্যবাদান্তে, @sahadathossen


Sort:  
 3 years ago 

সত্যি ভাইয়া আপনার এই পোস্ট দেখে আমার চোখের কোনে অজান্তেই পানি এসে পড়লো।

আমাদের বাবা মায়েরা কত কষ্ট করে আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে, অথচ আমরা তাদের পরিস্থিতি না বুঝেই কতশত বায়না করে বসি

সত্যি শিক্ষনীয় পোস্ট ছিলো এটা

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

সত্যিই বাস্তবতা এটাই।অনেক ভালো লাগলো আপনার বাস্তব গল্পটি পড়ে আবার একটু কষ্টও হল।যাইহোক প্রকৃতির মাঝে দোকানটি খুবই সুন্দর।ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

ভাইয়া আপনি সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। বাবা মায়ের অবদান আমাদের জীবনে সব থেকে বড় ভূমিকা রাখে। এটি একটা শিক্ষনীয় পোস্ট ছিলো।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

আসলেই ভাইয়া বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমরা আবেগের বসে অনেক রকমের অনেক কিছু না বুঝে করে ফেলে কিন্তু আসলে দুনিয়ায় একমুঠো ভাতের জোগাড় করতে যে কতটা কষ্টদায়ক। তা একজন বাবাই জানে কিন্তু আমাদের ওপর বাবা থাকার কারণেই সেই কষ্টটা বুঝতে পারি না এক সময় আমাদেরও হাল ধরতে হবে। আসলেই খুবই ভালো ছিল

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

সত্যিই অনবদ্য এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।
খুব ভালো লাগলো পড়ে। এই গল্পটা শুধু ঐ দোকানদারের না এরকম আরও অসংখ্য মানুষ রয়েছেন যার একমাত্র পরিবারকে ভালো রাখতে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেন। তারপরও প্রশান্তির হাসি হাসতে পারেন না, দারিদ্রতার কড়াল গ্রাসের জন্য।
খুব ভালো উপস্থাপনা ছিল ভাই ♥️

হ্যা ভাইয়া সঠিক বলেছেন ।
আমাদেশ চারপাশে এমন অনেকেই আছে ।আমার মতে সব পিতা মাতাই এমন।
আপনিও একজন পিতা ,আপনার চেয়ে ভালো আর কে জানবে!
ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

মামা মুখে কষ্ট ভরা হাল্কা একটা হাসির রেখা টেনে বলে, " মামা আপনে যেইদিন বাপ হইবেন, হেইদিন বুঝবেন।এহন বুঝবেন না।

আপনার এই গল্পের ঘটনাটা আমার হৃদয় কে একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই দোকানদার মামা কত কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন আবার একটি মাত্র ছেলে তার জন্য অনেক স্বপ্ন দেখে তার চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছেন অথচ ছেলেটি এসব চিন্তা না করে দিনে দিনে বকে যাচ্ছে। মেয়েটিও পঙ্গু না হলে তিনি মেয়ের পেছনে যদি এই টাকাগুলো ইনভেস্ট করতেন তাহলে হয়তোবা আরো ভালোভাবে মানুষ করে গড়ে তুলতে পারতেন। এরকম কষ্টে দিনযাপন করা মানুষগুলোর ছেলেমেয়ে যখন বকে যায় তখন জিনিসগুলো একেবারেই সহ্য করার মতো নয়।

আপনার জীবন ঘনিষ্ঠ এই বাস্তব কাহিনী এবং এর শিক্ষা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে এবং এরকম পোস্ট মাঝে মাঝে শেয়ার করবেন। অনেক ভালো লেগেছে।

আপনি একজন শিক্ষক ভাই ।আর আপনি যখন এভাবে কমেন্ট করলেন তখন হয়তো আসলেই আমি ভালো কিছুই লিখছি ।
আসলেই ভাই এই একটা জীবন মানুষ কত কষ্ট করে পার করতেছে অনেকেই!
তার উপর যদি সন্তান এমন হয় ।
ভালোবাসা রাখবেন ,চেষ্টা করবো সবসময় ।

খুবই বাস্তব জীবনের কিছু কথা বলেছেন ভাইয়া আমার পুরো গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভাইয়া।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 59214.68
ETH 2622.69
USDT 1.00
SBD 2.44