গল্প - জুলেখা বানুর জীবন ! - পর্ব ২(সমাজের বাস্তব চিত্র)|| 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা ❤️


আজকে আমি হাজির হয়েছি একটি লিখা নিয়ে।
লিখতে ভালা লাগোটা আমার বহুদিন এর। কেও যদি জিজ্ঞেস করে তোমার লিখার কারণ কি?
তাহলে আমার একটাই উত্তর আসবে তা হলো জানিনা।
তাহলে আজকের লিখাটা শুরু করি।
আজকের লিখার বিষয় হলো একটি গল্প।গল্পের নাম " জুলেখা বানুর জীবন ! "


জুলেখা বানুর জীবন ! - পর্ব ২


IMG_20220126_174259.jpg


রমিজ মিয়া খেয়াল করলো জুলেখা বানু একটু মন মরা হয়ে আছে।
রমিজ মিয়া জুলেখা বানুকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে, কেনো মন খারাপ?

জুলেখা বানু বলল, আজকে এক বাড়িতে কাজ করছিলো।যতগুলো বাড়িতে জুলেখা বানু কাজ করে সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন দিতো সেই বাড়িতেই।

বাড়িটার মানুষ গুলাও ভালো ছিলো।

আজকে একটা প্লেইট পরিষ্কার করছিলো শোকেস থেকে বের করে।
হঠাৎ!
জুলেখা বানুর হাত থেকে প্লেইটটা পরে যায় হাত ফসকে।
বাড়ির কর্তা এসে শোরগোল শুরু করে দিলো।
প্লেইটটি নাকি তাদের পূর্বপুরুষের, তাও আবার একমাত্র স্মৃতি ছিলো।

সেই স্মৃতি ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়াতে বাড়ির কর্তা রেগে আগুন হয়ে চলে যেতে বলেছে।
বাড়িটার মানুষগুলো ভালোই ছিলো,কাজ চলে যাওয়াতে জুলেখার ই দোষ বলেই মেনে নিলো।

বড়লোকদের বড় বড় ব্যাপার।
তাদের কাছে একটা প্লেইটের দাম ও মাঝেমধ্যে লাখ টাকার সমান।
আবার!
মাঝেমাঝে মানুষের জীবনের দুই পয়সার ও দাম নাই।

এইটা বলে জুলেখা বানু আস্তে করে উঠে স্বামীর পাশ থেকে চলে গেলো।কিছুই খাওয়া হয়নি সারাদিনে তেমন।

চুলায় রান্না চাপানোর জন্য পাকের ঘরে গিয়ে গিয়ে দেখলো,
রমিজ মিয়া দুইদিন আগে কিছু লম্বা সিম এনেছিলো সেগুলোর এক মুঠা আছে, তাও একেবারে শুকিয়ে আছে।
সেই সাথে এক ফালি মিষ্টি কুমড়াও আছে।

জুলেখা বানু চারজনের জন্য ভাত এবং সিম, মিষ্টি কুমড়ার তরকারি উনুনে চাপিয়ে দিলো একে একে।একটাই মাটির চুলা।একসাথে দুই জিনিষ রান্নায় চাপানো যায়না।তাই গরম ভাত ফুটতে ফুটতেই ভাতের ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে জুলেখা বানু ভাবতে লাগলো সুখের কথা!

সুখটা কবে পাবে জুলেখা বানু!

এই জীবন থেকে অভাব ছাড়া কিছুই যেন পায়নি।

এক এক সময় মানুষের ঘরে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে যায়।তাও দুই ছেলের পড়াশোনা চালানোর জন্য সব করতে পারে জুলেখা বানু আর রমিজ মিয়া।

অবশ্য ছেলে দুইটাও যে খারাপ তা না, বাপ মায়ের কষ্ট খুব বুঝে ছেলে গুলা।অভাবের সংসারে কোনোদিন আহ্লাদ পূরণ করতে পারেনি ছেলেদের।সেই নিয়ে দুইটা ছেলের কোনো কষ্ট নেই।
পড়াশোনার জন্য ও যতটুকু না করলেই না ততটুকুই বাপ মা থেকে খুঁজে।

রান্না প্রায় শেষের দিকে।বড় ছেলেটাও বাড়ি ফিরেছে,
এক বন্ধুর বাসায় পড়াশোনা করতে যায় কারণ সব বই কিনলে খরচা পাতি বেশি হয়।
সেই কারণেই বিভিন্ন জনের বাড়ি গিয়ে গিয়ে তাদের বই গুলা নিয়ে পড়ে।
জুলেখা বানু পাটি বিছিয়ে দিলো,ভাত আর তরকারির পাতিল পাটিতে দিয়ে বাপ, ছেলে তিনজনকে খেতে ডাকলো।
সবাই এসে বসলো,
এরপর জুলেখা বানু সবাইকে ভাত, তরকারি বাসনে দিলো।সবাই খাওয়া দাওয়া সেরে নিলো।

সন্ধ্যায় আবার দুই ভাই পড়তে বসলো এবং জুলেখা বানু পাটি বুনতে বসলো।
যেইভাবে টাকা কামানো যায় সব রাস্তা জুলেখা বানু করে দেখছে।তাও কেনো যেন কুলিয়ে উঠতে হাঁপিয়ে যায়।

এশারের আজান পরে গেলে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পরে রমিজ মিয়া আর জুলেখা বানু।
দুই ছেলে রাতে পড়ে অনেক সময় ধরে।
জুলেখা বানু ঘুম থেকে উঠে উঠে অনেকবার বলার পরে এক সময় দুই ছেলে শুতে যায়।
পরেরদিন ফজরের আযান দিচ্ছে, জুলেখা বানু তাড়াতাড়ি উঠে ভাত চুলায় দেয়।তিনবেলা ভাত ছাড়া কিছুই কপালে জুটে না।তাও তাতেই শোকরিয়া করে।
খেয়ে দেয়ে দুই ভাই পড়তে চলে গেছে, জুলেখা বানু কাজে এবং রমিজ মিয়াও কাজে চলে গেছে।

আজকে রমিজ মিয়ার কাজে যেতে ইচ্ছা করছিলোনা একদম ই।গতকাল ও কোনো কামাই হয়নি,
আজকেও না হলে বাজারটাও করতে পারবেনা সামান্য।
সেই কারণে গেলো,
রাস্তায় দাড়াতেই এক লোক এসে কাজের জন্য দরদাম করে গেলো।
১৫ দিনের কাজ পেয়েছে, রমিজের মনটা খুশিতে ভরে গেছে।অনেক টাকাও পাবে,এতোটাকা কোনোদিন একবারে কাজ করে পায়নি রমিজ।
খুশিতে যেনো মনটা নেচে উঠলো।
গরীবের এইটাতেই খুশি।

রমিজ মিয়া রাস্তা পার হচ্ছিলো লোকটার গাড়িতে উঠার জন্য।লোকটার গাড়ি রাস্তার অন্য পাশে দাঁড়ানো ছিলো।
রাস্তা পার করার সময় হঠাৎ..........

[চলবে]

সকলকে জানাই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।
নিজেদের মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমার পাশে থাকবেন।

Sort:  

অনেক সুন্দর একটা গল্প। প্রথম পাঠ পড়িনি তবে দিতে পারে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারলাম না। আপনি আপনার গল্পের মাধ্যমে বাস্তব জগতের চিন্তা ধারা তুলে ধরেছেন। আপনি অনেক ধন্যবাদ আর পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

এই গল্পটির প্রথম পাট আমি পড়েছিলাম এজন্য দ্বিতীয় পাঠ পড়ার আগ্রহ ছিল। দ্বিতীয় পাঠ পড়ে অনেক ভালো লাগলো। রমিজ মিয়া এবং জুলেখা বানুর গল্পটা বেশ কষ্টকর। কিন্তু পুরো গল্পটা পড়ে লাস্ট পর্যায়ে গিয়ে আবার একটা টুইস্ট থেকে গেল। রাস্তায় হঠাৎ কি দেখতে পেলেও রমিজ মিয়া এটা জানার খুবই ইচ্ছে আছে। পরবর্তী পার্টের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 59715.05
ETH 3186.24
USDT 1.00
SBD 2.42